মেধাবীরা মূল্যায়নহীন।
লিখেছেন লিখেছেন রাজপথের সৈনিক ০৪ আগস্ট, ২০১৪, ১১:১৫:১৬ রাত
আপনি মেধাবী হতে পারেন।
প্রতিটি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ সফলতার
স্বাক্ষর রেখে ছাত্রজীবনের
ইতি টানতে পারেন। তাই
বলে আপনি সহজে চাকরি পাবেন
ভেবেছেন? আপনার
যোগ্যতা বলে আপনি ইচ্ছা করলেই আপনার
পছন্দ কিংবা অপছন্দের
সরকারি চাকরি পাচ্ছেন না। সফলতার
সাথে ছাত্রজীবন শেষ করা আপনার দায়িত্ব
ছিল। এখন রাষ্ট্র আপনার জন্য আরও কিছু
বাড়তি দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিবে।
আপনার
পিতা কিংবা দাদা কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল
েন? যদি উত্তর না হয় তবে আপনার
চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা ৩০% হারালেন।
আপনি যদি নারী না হন তবে আরও ১০%
হারালেন। যদি আপনি দেশের
২১টি বিশেষ জেলার জন্মগ্রহণ
না করে থাকেন তবে আরও ১০% হারালেন।
সর্বশেষ আপনি যদি ক্ষুদ্র
নৃগোষ্ঠী কিংবা আদিবাসিদের অন্তর্ভুক্ত
না হন তবে আরও ৫% হারালেন। অর্থাৎ
দেশের সর্বোচ্চ সম্মানের চাকরি পাওয়ার
ক্ষেত্রে আপনি মাত্র ৫৫%
সম্ভাবনা হারিয়েছেন! ভাবছেন আপনার
যে মেধা তা দিয়ে বাকি ৪৫%
বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হয়ে আপনি ঠিকই
আপনার অবস্থান তৈরি করতে পারবেন।
এখানেও কিছু গোপন কথা আছে। মাত্র ৪৫%
সুযোগের মধ্যে আপনাকে আরও কিছু সমস্যার
মোকাবিলা করতে হবে। চাকরির
ক্ষেত্রে উপরোক্ত ৫৫% অধিকার আপনার কাছ
থেকে রাষ্ট্র কেড়ে নিলেও বাকি ৪৫%
রাষ্ট্র কেড়ে নিচ্ছে না। প্রথা,
স্বজনপ্রীতি এবং অনৈতিকতা এখানে অন্তর
ায় সৃষ্টি করে রেখেছে। আপনি সহজ কিছু
প্রশ্নের উত্তর না মিলাতে পারলেই আপনার
কপালে চাকরি জুটছে না। প্রথম প্রশ্নÑ
আপনার বাবার ব্যাংক-ব্যালেন্স
কতোটা স্বাস্থ্যবান? যদি স্বাস্থ্যবান হয়
তবে চাকরি পাচ্ছেন আর যদি রোগা হয়
তবে আপনাকে দুঃসংবাদ শোনার জন্য
অপেক্ষা করতে হবে। দ্বিতীয় প্রশ্নÑ আপনার
কোনো মামা-চাচা আছে কি?
আপনি যদি ভেবে থাকেন এরা সংকীর্ণ
অর্থের মামা-চাচা তবে আপনার
ভাবনাকে বদলাতে হবে। এ মামা-
চাচাকে অবশ্যই বিশেষ অর্থের মামা-
চাচা হতে হবে। আপনাকে চাকরি দেয়ার
ক্ষমতা কিংবা আপনার জন্য সুপারিশ করার
ক্ষমতা এদের অবশ্যই থাকা চাই। উপরোক্ত
সবগুলো কিংবা গুরুত্বপূর্ণ দু-
একটি যোগ্যতা যদি আপনার
থেকে থাকে তবে আপনি এদেশে চাকরি পা
ওয়ার জন্য উপযুক্ত। যদি উত্তর নৈতিবাচক হয়
তবে আপনার শিক্ষাজীবনে অর্জিত সনদ
চেয়ে চেয়ে দেখা এবং যতœ
করে কোনো গোপন স্থানে তালাবদ্ধ
রাখা ছাড়া অন্য কোনো উপকার
করতে পারবে না। এটাই আপনার জন্য দেশের
পক্ষ থেকে সবচেয়ে বড় বাস্তবতা। উপরোক্ত
যোগ্যতা যদিও দেশের হাতেগোনা কিছু
মানুষের। তবে সেই অল্পসংখ্যক মানুষের
অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে রাষ্ট্র
অবলীলায় সিংহভাগ মানুষের অধিকার হরণ
করেছে।
শিক্ষাজীবন সমাপান্তে চাকরি চরম আরাধ্য
বিষয়। শিক্ষা অর্জনের প্রকৃত লক্ষ্য, উদ্দেশ্য
যাই হোক না কেন বাংলাদেশে উচ্চ
শিক্ষা অর্জনের একমাত্র উদ্দেশ্য মানসম্মত
সরকারি চাকরি লাভ।
একটি চাকরি একটি পরিবারকে প্রতিষ্ঠা দে
য়। ব্যক্তি জীবনকে উন্নতকরে। সকল
যোগ্যতা থাকার পরেও একজন
শিক্ষার্থী যখন তার আকাক্সিক্ষত
চাকরি লাভে ব্যর্থ হয় তখন তার ওপর রাজ্যের
সকল হতাশা ভর করে। সৎ
পথে জীবিকা নির্বাহ করার সুযোগ
হারানোর পর অন্ধকার জগৎ
তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। ন্যায়ের
পথে থেকে যেভাবে যশ-খ্যাতি, টাকা-
পয়সা অর্জন করা সম্ভব তার চেয়ে অনেক
সহজে, অতিদ্রুত অবৈধভাবে সব কিছু অর্জন
করা যায়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের
সবচেয়ে নামকরা ছাত্রটি রাষ্ট্রের জন্য
বিপজ্জনক হওয়ায় অনেকে অবাক হন। তার
বিপথে যাওয়ার মূল কারণ অনেকেই
খোঁজেন না। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার
অর্জিত শিক্ষা এবং বিবেক
কাজে লাগিয়ে ন্যায়ভাবে জীবিকা নির্ব
াহ করতে চায়। কিন্তু জীবিকা নির্বাহের
ক্ষেত্রে ন্যায়ের রাস্তাগুলো যখন তার জন্য
রুদ্ধ হয়ে যায় তখন সে হিংসাত্মক
এবং আক্রমণাত্মক হয়ে পড়েন। সমাজ ও
রাষ্ট্রের প্রতি ঘৃণা জন্মে। এ
ঘৃণা তাকে এমন কতগুলো কাজ করতে প্রলুব্ধ
করে যার বদৌলতে শুধু ব্যক্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়
না বরং পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রও
মারাত্মকভাবে হুমকির সম্মুখীন হয়।
অন্যায়কারীকে ঢালাওভাবে আমরা সকলেই
দোষ দিতে থাকি কিন্তু কেন সে অন্যায়
করছে তার প্রকৃত কারণ আমরা কখনও খুঁজি না।
বিষয়: রাজনীতি
৯৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন