আপনার কি নামাযে মন বসেনা?
লিখেছেন লিখেছেন সীমান্ত_ঈগল ১৬ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:১৯:০৬ রাত
আপনার কি নামাযে মন বসেনা? লেখাটি পড়ুন এবং প্র্যাকটিস করুন, ভাল ফল পাবেন ইনশাআল্লাহ...
[quote] আপনার কি নামাযে মন বসেনা? এর এক নাম্বার কারণ হলো নামাযে আপনার খুশু ও খুযু (ভয় ও বিনয়) নেই।অথচ, খুশু ও খুজু সহ নামায পড়া “ফরয”। নামাযে খুশু ও খুযু অর্জন করার অনেকগুলো উপায় আছে।তার মধ্যে একটা হলো, আপনি যখন নামায শুরু করবেন তখন এমনভাবে দাঁড়াবেন যেনো আপনি আল্লাহ্কে দেখতে পাচ্ছেন। যদি এই অনুভূতি আনতে না পারেন তাহলে অন্তত মনে মনে এই ধারণা রাখবেন, অবশ্যই আল্লাহ্আপনাকে দেখতে পাচ্ছেন। একে বলা হয় “ইহসান” – ইবাদত এমনভাবে করা যেনো আপনি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছেন।
দ্বিতীয় এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হচ্ছে – আপনি নামাযে যা কিছু পড়ছেন, তাসবীহ, তাহলীল, দুয়া, সুরা, ক্বিরাত – যাই পড়েন না কেনো বা রুকু সেজদা যাই করেন না কেনো – মনোযোগের সহিত করবেন। এমন যেনো না হয় – মন্ত্রের মতো পড়ে গেলেন আর যন্ত্রের মতো কাজগুলো আদায় করে গেলেন। অথচ আপনার মন পড়ে রয়েছে অন্য দিকে যেমনঃ
আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কত রান করলো, কে কয়টা গোল দিলো, ব্যবসা ভালো না মন্দ যাচ্ছে, কেনাবেচা ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, আড্ডা, বন্ধু বা নাটক সিনেমা, সিরিয়ালের কোন চরিত্র কি করছে ইত্যাদি।।
আর তখন দেখবেন, নামায কয় রাকাত করেছেন কিনা মনে করতে পারছেন না, সিজদা ২-৩ বার করে ফেলবেন।
আপনি যখন “আল্লাহু আকবার” বা আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ বলবেন তখন, যেনো এর অর্থের দিলে লক্ষ্য রেখে, অন্তরে আল্লাহর প্রতি সম্মান, ভয় ও ভালোবাসা রেখে সেটা বলবেন, বলার মধ্যে যেনো দায়সারা ভাব না থাকে।
রুকু যখন করবেন, সিজদা যখন করবেন – শরীর ও অংগ প্রত্যংগের মাঝে ভয় বিনয় ও নিজেকে আল্লাহর সামনে নত করার উদ্দেশ্যে করছেন – এই কথা মাথায় রেখে করবেন।
আর যেই দুয়া ও সুরা পড়ছেন, সেইগুলোর অর্থ বুঝে বুঝে সেই অনুযায়ী তেলাওয়াত করবেন বা বলবেন। যা বলছেন সেইগুলো নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে বলবেন – তোতাপাখির মতো মন্ত্র জপ করবেন না।
আজকে আমি সুরা ইখলাসের শব্দার্থ দিয়ে দিচ্ছি।
ছোটোবেলার মতো নোট করে এর অর্থগুলো মুখস্থ করুন। এতে আপনার সুরার অর্থটা যেমন জানা হলো, আর ভবিষ্যতে যখন নামাযে তেলাওয়াত করবেন – তখন প্রত্যেকটা ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড চিন্তা ভাবনা করে, বুঝে তেলাওয়াত করবেন। এইভাবে প্রত্যেকটা বিষয় যখন আপনি বুঝে শুনে বলবেন, যা বলছেন এবং যা করছেন সেই দিকে মনোযোগ দিয়ে করবেন – তখন দেখবেন মন অন্য দিকে যাবেই না বা গেলেও সাথে সাথে মনোযোগ ফিরিয়ে আনা কঠিন হবেনা।
সুরা ফাতেহার অর্থঃ
বিসমিল্লাহ-হির রাহমানির রাহীম
পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু।
বা = শুরু করা, ইসমি = নামে, আল্লাহ
বা + ইসমি + আল্লাহ = বিসমিল্লাহ = আল্লাহর নামে শুরু
রাহমান = পরম করুণাময়
রাহীম = অসীম দয়ালু
১. আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন
অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।
আল = সমস্ত, হা’মদ = প্রশংসা, লিল্লাহ = আল্লাহর জন্য
আল + হা’মদু + লিল্লাহ = আলহামদুলিল্লাহ = সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য
রব্ব = প্রতিপালক, পালনকর্তা, মালিক
আ’লামীন = জগতসমূহ।
২. আর-রাহমানির রাহীম
অর্থঃ যিনি পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু।
রাহমান = যিনি স্বভাবে খুবই করুণাময়
রাহীম = যিনি কর্মে অত্যন্ত দয়ালু
৩. মালিকি ইয়াওমিদ্দীন
অর্থঃ যিনি বিচার দিনের মালিক।
মালিক = মালিক, প্রভু
ইয়াওম = দিন
আদ্দীন = বিচার, প্রতিদান
৪. ইয়্যাকানা’আবুদু ওয়া ইয়্যাকানাসতাঈ’ন
অর্থঃ আমরা শুধু তোমার ইবাদত করি এবং আমরা শুধু তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি।
ইয়্যাকা = শুধু তোমার
নাআ'বুদ = আমরা ইবাদত করি
ওয়া = এবং
ইয়্যাকা = শুধু তোমার
নাসাতাঈ’ন = আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি
৫. ইহ দ্বীনাস-সিরাতাল মুস্তাকীম
অর্থঃ আমাদেরকে সরল সঠিক পথ দেখাও
ইহদিনা = আমাদেরকে দেখিয়ে দিন
সিরাত থেকে সিরাতাল = স্পষ্ট পথ বা রাস্তা
মুস্তাকীম = সোজা, একেবারে সরল
৬. সিরাতাল্লাযীনা আনআ’মতা আ’লাইহিম
অর্থঃ তাদের পথ যাদেরকে আপনি নেয়ামত দান করেছেন
সিরাত+আল্লাযীনা = সিরাতাল্লাযীনা
সিরাত থেকে সিরাতাল = স্পষ্ট পথ বা রাস্তা
আল্লাযীনা = যাদের
আন+আ’মতা আনআ’নমতা = আপনি নেয়ামত দান করেছেন
আন = আপনার, আ’মতা = নেয়ামত দান করেছেন
আ’লাইহিম = যাদের উপর
৭. গাইরিল মাগদুবি আ’লাইহিম ওয়ালা-দ্বোয়াল্লিন
অর্থঃ তাদের পথ নয় যারা আপনার অভিশাপপ্রাপ্ত হয়েছে আর তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। (আমিন)
গাইরিল = তাদের পথে নয়
মাগদুব = যারা অভিশাপপ্রাপ্ত (তারা হচ্ছে ইয়াহুদীরা)
আ’লাইহিম = যাদের উপর
ওয়া = এবং, লা = না, নয় = ওয়ালা
দ্বোয়াল্লিন = পথভ্রষ্ট (তারা হচ্ছে খ্রীস্টানরা)
আমিন = হে আল্লাহ তুমি আমাদের দুয়া কবুল করো।
সুরা ইখলাসের শব্দার্থঃ
বিসমিল্লাহ-হির রাহমানির রাহীম।
আয়াত নাম্বার একঃ ক্বুল হুয়া-ল্লাহু আহা’দ।
ক্বুল = বলুন (say)
হুয়া = তিনি (he)
আল্লাহু = আল্লাহ্
আহাদ = এক/অদ্বিতীয় (one and only)
আয়াতের অর্থঃ (হে নবী) আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ্, এক ও অদ্বিতীয়।
আয়াত নাম্বার দুইঃ আল্লাহুস-সামাদ।
আল্লাহু = আল্লাহ্,
আস-সামাদ = যার উপরে সমস্ত কিছু নির্ভরশীল কিন্তু তিনি সমস্ত কিছু হতে অমুখাপেক্ষী (absolute and eternal) – এটা আল্লাহর একটা নাম।
আয়াতের অর্থঃ আল্লাহ্ সমস্ত কিছু হতে অমুখাপেক্ষী, কিন্তু সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী।
আয়াত নাম্বার তিনঃ লাম ইয়ালিদ ওয়া-লাম ইউলাদ।
লাম = করেন নি বা দেন নি (did not)
ইয়ালিদ = জন্ম দেওয়া (to give birth)
ওয়া = এবং (and)
লাম = করেন নি বা দেন নি (did not)
ইউলাদ= জন্ম নেওয়া (born)
আয়াতের অর্থঃ তিনি কাউকে জন্ম দেন নি, তাঁকেও কেউ জন্ম দেয় নাই।
আয়াত নাম্বার চারঃ ওয়া-লাম ইয়া কুল্লাহু কুফুওয়ান আহা’দ।
ওয়া = এবং
লাম = করেন নি বা দেন নি (did not)
ইয়া কুল্লাহু = তার মতো বা তার সমান (like him)
কুফুওয়ান = সমান, (কুফু থেকে কুফুওয়ান, কুফু অর্থ হলো সমতা)
আহাদ = এক ও অদ্বিতীয়।
আয়াতের অর্থঃ এবং তাঁর মতো আর কেউ নেই।[/quote]
[collected]
পূর্বে প্রকাশিত- http://forum.tarunnobd.com/viewtopic.php?id=1702
বিষয়: বিবিধ
১৩২৭ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খুবই গুরুত্ত্বপূর্ণ পোস্ট।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন