নেতা বা নেতৃত্ব নির্বাচন

লিখেছেন লিখেছেন ডোনা ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:০৭:৪১ সকাল

নেতা বা নেতৃত্ব নির্বাচন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারন একজন নেতা একটি দেশ, একটি দল কিংবা একটি সমাজকে সামনেবা পিছনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শতকরা ৮০ ভাগ দায়ভার বহন করে। আর সেটা যদি হয় ইসলামী রাস্ট্র বা ইসলামী সংঘঠনেরনেতা বা নেতৃত্ব নির্বাচন তবে সেটার গুরুত্ব আরো বহুলাংশে বেড়ে যায় বৈকি। কারন একজন অপরিপক্ক কিংবা অনেক বেশীমানবিক দূর্বলতা সম্পন্ন কেউ নেতা বা নেতৃত্ব দানের জন্য নির্বাচিত হলে সেটা রাস্ট্র কিংবা দলকে পিছনে টেনে নেওয়ার সাথেসাথে আপাময় জানসাধারনের কাছে ইসলামকে প্রশ্নাতীত করে তুলে।

দুঃখজনক হলে ও সত্য যে, অনেক সময় ইসলামী দলের এই নেত্বত্ব নির্বাচনে কর্মীরা দায়সারা কিংবা খামখেয়ালী আচরন করেথাকে, যথেস্ট বুদ্বিমওা ও চুলচেরা বিশ্লষন করে না। যেমনটি করে থাকে নিজের চাকুরী, ব্যাবসা কিংবা দুনিয়াবী অন্যান্য কাজে।এতে করে কর্মী তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারনে ব্যাক্তিগত ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সাথে সাথে দলকিংবা সমাজকে যোগ্য নেত্বত্ব নির্বাচনে সহযোগিতা না করায় দল কিংবা সমাজ ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে।

আসুন, কুরান-হাদীসের আলোকে জেনে নেই, নেতৃত্ব নির্বাচনে সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তিকেই বাছাই করা র কিছু বৈশিস্ট:

আল্লাহ্ তায়ালা সূরা ইমরানের ১৫৯ আয়াতে নেতার গুণাবলী বর্ণনা করেছেন

“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারাআপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবংকাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহর উপর ভরসা করুনআল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন”।

নেতৃত্বের জন্য একজন নেতার প্রয়োজনীয় গুনাবলী:

১। কোমল হৃদয় সম্পন্ন

২। অনুসারীদের ত্রুটিকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা।

৩। পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

৪। দৃঢ় সংকল্প

৫। আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখা।

নেতার গুণাবলী সম্পর্কে আরো বলেছেন আরো বলেছেন, লুকমান ২৩, তাওবা ১২৮, আশ শোয়ারা ২১৫, আহকাফ ৩৫।

নেতৃত্বের পরই নেতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কর্তৃত্ব প্রদান। মানে যোগ্য ব্যক্তিদের কে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ীরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান। এই ব্যাপারে রাসূল সঃ বলেন, যে সেনাবাহিনীতে এমন ব্যক্তিকে নেতা নির্ধারণ করলো, যারচাইতে সেনাবাহিনীতে আরো যোগ্যতর ব্যক্তি রয়েছে, সে আল্লাহ্ ও তার রাসূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো। বিশ্বাসঘাতকতাকরলো মুসলিমদের সাথে। (আল হাকিম)

এখানে স্বজনপ্রীতি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।

ওমর ফারুক রাঃ বলেন, যে মুসলিমদের কোন ব্যাপারে (নির্বাহী) দায়িত্ব পেয়ে এমন ব্যক্তিকে কর্মকর্তা নিযুক্ত করে, যার সঙ্গেতার স্নেহের সম্পর্ক আছে। কিংবা সে তার স্বজন। তবে সে আল্লাহ্ ও তার রাসূল এবং মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।(শরিয়তী রাষ্ট্রব্যবস্থাঃ ইবনে তাইমিয়া) কর্তৃত্ব বা নেতৃত্ব চাওয়ার বিষয় নয়। আর যে তা চাইবে সে সবচেয়ে বেশী অযোগ্য।

একদা রাসূল সঃ দরবারে কিছু লোক উপস্থিত হয়ে তাঁর পক্ষ হতে শাসন কতৃত্ব প্রাপ্তির অনুরোধ জানালো। জবাবে রাসূল সঃবললেন, যারা স্বেচ্ছায় কর্তৃত্ব চায়, আমরা এমন লোককে কোন কিছুরই কর্তৃত্ব দেই না। (বুখারী ও মুসলিম)

সূরা মায়েদায় ১০৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, হে মুমিন গণ! তোমরা নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন থাকো।তোমরা সঠিক পথে থাকলে গোমরাহ ব্যক্তিরা তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।

কর্তা ব্যাক্তিরা হবে আমানতদার, বিশ্বস্ত, তাকওয়ার গুনে আলোকিত। তারা পার্থিব সামান্য চাহিদার বিনিময়ে হক্কুল্লাহকে কখনোইবিসর্জন দেবে না। তারা তাদের মন থেকে অবশ্যই মানুষের ভয় সম্পূর্ণ বের করে দিবে।

আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, তোমরা মানুষকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় করো এবং সামান্য তুচ্ছ মূল্যের বিনিময়ে আমার আয়াতবিক্রি করা পরিহার করো। আল্লাহর নাযিল করা আইন অনুযায়ী যারা ফায়সালা করে না তারাই কাফের। (সূরা মায়েদাঃ ৪৪)

সব ধরণের সিদ্ধান্ত কিংবা ফয়সালা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী হতে হবে। নতুবা কর্তা ব্যক্তিদের জাহান্নামীহতে হবে। এই সম্পর্কে রাসূল সঃ বলেন, শাসক ও বিচারকদের তিন ভাগে ভাগ করা হবে। এর মধ্যে দু’ভাগই জাহান্নামী হবে,এক ভাগ হবে জান্নাতি। অতঃএব যে ব্যক্তি সত্য কে অনুধাবন করে ন্যায়বিচার করবে সে জান্নাতী হবে। (আহলুস সুন্নাহ)

কর্তা ব্যক্তিরা কখনোই ভীরু, পাপাচারী এবং নিষ্ঠুর হবে না। হযরত ওমর রাঃ এই দোয়া সবসময় করতেন, হে আল্লাহ্ তোমারকাছে পাপাচারীর নিষ্ঠুরতা এবং ভীরুর অক্ষমতা থেকে পানাহ চাই।

কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী মুসলিম শাসকের ৪টি কাজ

১। নামাজ কায়েম করা

২। যাকাত আদায় ও বন্টন

৩। সৎ কাজের আদেশ

৪। অসৎ কাজের নিষেধ।

ওমর রাঃ ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় নিয়োজিত কর্মচারী ও গভর্ণরদের উদ্দেশ্যে যে সরকারী ফরমান লিখে পাঠাতেনসেগুলো তে লেখা থাকতো, “আমার কাছে তোমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নামাজ। যে ব্যাক্তি নামাজের হেফাযত করলোসে দ্বীনের হেফাযত করলো। যে নামাজ নষ্ট করলো সে অন্যান্য কাজও বেশী নষ্ট করবে। ” আল্লাহ্র রাসূল বলেন, “নামাজ হচ্ছেদ্বীনের স্তম্ভ”। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যখন এই স্তম্ভটির হেফাযত করবে তখন নামাজ তাকে অশ্লীলতা এবং সকল গর্হিত কাজ ওদূর্ণীতি থেকে রক্ষা করবে। অন্যান্য ইবাদতের কাজেও নামাজ সহায়তাকারী হবে। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন “নিশ্চয়ই নামাজ সকলপ্রকার অশ্লীলতা ও খারাপ কাজ হতে দূরে রাখে।”এই ব্যাপারে আল্লাহ্ আরো বলেছেন সূরা বাকারার ১৪৫ ও ৫৩ নং আয়াতে।

আল্লাহ সুবাহানাতাল্লাহ আমাদেরকে নেতা বা নেতৃত্ব নির্বাচনে সঠিক ভূমিকা রাখার তৌফিক দান করুন। আমীন।

(C&P from M. Altaf Hossain's post in DAHUK)

বিষয়: বিবিধ

১১১০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

257629
২৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:২৯
কাহাফ লিখেছেন : সুন্দর ও প্রয়োজনীয় পোস্টের অবতারণায়........অনেক ধন্যবাদ।
257631
২৪ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৮:৫২
হতভাগা লিখেছেন : পোস্টে যা বলেছেন তা তো ভালই । কিন্তু ...

এতদ অন্চলে নানা মুনীর নানা মত । এখানে সবাই নেতৃত্ব করতে চায় । ফলে কেউ কাউকে মানে না ।
257679
২৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:২২
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ খুব ভালো লাগলো লিখাটি।
257779
২৪ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:০৬
ডোনা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
257957
২৫ আগস্ট ২০১৪ রাত ০২:০৪
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : লিখায় যা উল্লেখ করেছেন তা ঠিকই কইছেন কয় হেই কথা মানে কন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File