“হামাসের আধ্যাত্মিক গুরু শেখ আহমাদ ইয়াসিন একটি জনপ্রিয় বিপ্লবের নাম”

লিখেছেন লিখেছেন ডোনা ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৩১:২৬ দুপুর

গওহার নঈম ওয়ারার লেখা -“হামাস কেন এত জনপ্রিয়? বিকল্প টাইটেল হতে পারে –“হামাসের আধ্যাত্মিক গুরু শেখ আহমাদ ইয়াসিন একটি জনপ্রিয় বিপ্লবের নাম”

[দয়া করে পড়ুন গওহার নঈম ওয়ারার লেখা “হামাসের আধ্যাত্মিক গুরু শেখ আহমাদ ইয়াসিন একটি জনপ্রিয় বিপ্লবের নাম”এর চুম্বুক অংশ]

হামাসের আধ্যাত্মিক গুরু শেখ আহমাদ ইয়াসিনের জন্ম ১৯৩৭ সালের পয়লা জানুয়ারি ইসরায়েল অধিকৃত আশকালন শহরের কাছেই এক ছোট গ্রাম আল জুরায়। তিন বছর বয়সে পিতাকে হারিয়ে শেষে মায়ের পরিচয়েই বড় হয়েছেন গর্বের সঙ্গে। আহমদ ইয়াসিন বাবার নামে পরিচিত না হয়ে তিনি পরিচিত হন আহমদ সা’দা হিসেবে- তার মায়ের নাম ছিল সা’দা আল হাবেল।

১৯৪৮ সালে তাদের গ্রাম ইসরায়েলের দখলে চলে গেলে দশ বছরের বালক আহমেদের জায়গা হয় গাজার আল সাথি শরণার্থী শিবিরে। চার ভাই আর দুই বোন নিয়ে শুরু হয় তাদের শিবির জীবন। বেড়ে ওঠার প্রতিটা সময় তিনি লক্ষ করেছেন শরণার্থী শিবিরের কষ্টের দিকগুলো।

শরণার্থী শিবিরে জীবনের দু’বছরের মাথায় যখন তার বয়স মাত্র বারো, বন্ধুর সঙ্গে কুস্তি খেলতে গিয়ে মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড আঘাত পান। টানা পঁয়তাল্লিশ দিন তার গর্দান প্ল্যাস্টার করে রেখেও শেষ রক্ষা হয় না। আহমাদ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যান। বারো বছরের বালক তার বন্ধুর হাতে চোট পেলেও দুই পরিবারের মধ্যে যাতে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে না ওঠে তার জন্য কারোর কাছেই আব্দুল্লাহ আল খতিবের নাম বলেননি- বলেছিলেন-ব্যাঙ ব্যাঙ খেলতে গিয়ে নিজে নিজেই চোট পেয়েছেন।

কায়রোর বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশোনা করার ইচ্ছা ছিল। ভর্তিও হয়েছিলেন। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আর অসুস্থতার কারণে তাকে শরণার্থী শিবিরে ফিরে আসতে হয়। অনেকটা আমাদের আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্রের মতো। সেই ফেরা তার শাপেবর হয়। বাড়িতে বসে পড়ে ফেলেন দর্শন,রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান,অর্থনীতি আর ধর্মের নানা বিষয়। প্রকৃত পণ্ডিত হয়ে ওঠেন। মসজিদে জুমার নামাজ পড়ানোর জন্য ডাক আসে তার;তার খুৎবার বয়ান ছিল খুবই জ্ঞানগর্ভ আর দৈনন্দিনের সমস্যাকে সহজে তুলে ধরার এক নৈপুণ্যে ভরা শিল্প। মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনত সেসব। মানুষ খুঁজে নিত কোন মসজিদে আহমদের বয়ান হবে। তরুণদের আকৃষ্ট করত তার আধুনিক রূপক আর তথ্য ব্যবহারের ক্ষমতা।

বক্তৃতা,খুৎবায় মানুষের ঢল নামলে পেট চলে না পেট চালানোর জন্য চাই একটা চাকরি বা ব্যবসা,কোনোটাই তার কাছে ধরা দেয় না। শেষ পর্যন্ত চাকরি মেলে এক প্রাথমিক স্কুলে- আরবি শেখানোর চাকরি। স্কুলের হেড মাস্টার মোটেও রাজি ছিলেন না। সাধারণ শিক্ষকদের পক্ষেই ক্লাসে শান্তি বজায় রাখা যখন কঠিন সেখানে হুইল চেয়ারে বসা এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কীভাবে সামাল দেবে? পরে বিস্ময়ের সঙ্গে তিনি লক্ষ করেন,তার আশঙ্কা কতটা ভুল ছিল। ছাত্রদের কাছে তিনি হয়ে যান হ্যামিলনের বংশীবাদক- সবচেয়ে চঞ্চল ছাত্রটিকেও বশীভূত করে ফেলেন শিক্ষক আহমদ। শুধু ক্লাসে নয়,ছাত্ররা তার পিছু পিছু মসজিদেও যেতে থাকে। অনেক অভিভাবকের আপত্তি ছিল ক্লাসের বাইরে তাকে অনুসরণের কিন্তু তিনি ক্রমশই সবাইকেই তার অনুরাগী করে তোলেন।

অনেকের মতে,অন্যের কষ্ট অনুধাবনের এক অলৌকিক ক্ষমতা ছিল তার। আসলে তিন বছর বয়সে পিতা হারিয়ে দশ বছর বয়সে শরণার্থী হয়ে- বারোতে এসে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে এ দুয়ারে ও দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে তিনি এতোটাই জীবনঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন যে,তাকে এক কথা দু’বার বলতে হতো না। অনেক সময় বলতেই হতো না তিনি বুঝে নিতেন মুখ দেখে। তারপর ছিল তার অপরিসীম জ্ঞান আর আধুনিক বিশ্ব সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা।

২০০৪ সালের ২২শে মার্চ ফজরের নামাজ পড়া অবস্থায় হামাসের প্রতিষ্ঠাতা আহমাদ ইয়াসিনকে তার হুইল চেয়ারে আকাশ থেকে গোলা ছুড়ে হত্যা করে ইসরায়েল আরও মজবুত করেছে হামাসের প্রতি সাধারণ মানুষের হামদর্দীকে। দু’লাখ লোকের ঢল নেমেছিল তার শেষকৃত্যে। গাজার কোনো পরিবার ছিল না যাদের কেউ না কেউ ছিল সে মিছিলে খ্রিষ্টান-মুসলমান নির্বিশেষে। হে আল্লাহ! তুমি শেখ আহমাদ ইয়াসিনকে জান্নাতুল ফেরদাউসের খাঁচ মেহমান হিসাবে গ্রহণ করে নাও। আমিন!

বিষয়: বিবিধ

১৬৭৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254575
১৫ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:৫৩
কালো পাগড়ী লিখেছেন : অনুপ্রেরণার বাতিঘর।
254617
১৫ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০০
শাহজাদা ইয়ামেন লিখেছেন : মানুষটা সারা জীবন লড়াই করে গেছে নির্যাতিতের অধিকার আদায়ে । স্যালিউট গুরু, তোমার মত নেতা সব প্রলেতারিয়েতের প্রয়োজন ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File