▓▓▓▓ অপরূপ মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ▓▓▓▓ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের এক লীলা নিকেতন
লিখেছেন লিখেছেন প্রবাসী ব্লগার ২২ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:৫৯:৫০ বিকাল
প্রকৃতির অপরূপ লীলা নিকেতন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের একমাত্র জলপ্রপাত মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। এটি দেখতে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন অনেক লোকের সমাগম ঘটে এখানে। পর্যটকের মনে অনাবিল আনন্দ জাগিয়ে তোলা এক ঝর্ণা মাধবকুণ্ড ঝর্ণা। পাহাড়ী কন্যা মৌলভীবাজারের সৌন্দর্য্যকে আরও মনোরম করেছে এই জলপ্রপাত।
হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন জড়ো হয় মাধবকুণ্ডে, এই ঝর্ণার রূপে মুগ্ধ হতে। মাধবকুণ্ড ঝর্ণা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা। এটি সিলেট বিভাগের অহঙ্কারও বটে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত এই জলপ্রপাতটি প্রায় ২০০ ফুট উচ্চতা থেকে প্রবাহিত হয়। পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি এর গা বেয়ে অবিরাম ধারায় সাঁ সাঁ শব্দে নীচে পড়ছে। অবিরাম পতনের ফলে নীচে সৃষ্টি হয়েছে কুন্ডের আর কুন্ডের প্রবহমান স্রোতধারা শান্তির বারিধারার মতো মাধবছড়া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মাধবকুন্ডের নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে শ্রীহট্টের রাজা গঙ্গাধ্বজ ওরফে গোবর্ধন পাথারিয়া পাহাড়ে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ শুরু করলে সেখানে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মাটির নীচে একজন সন্নাসীকে দেখতে পান। তখন তিনি উক্ত সন্ন্যাসীর পদবন্দানা ও স্তুতি শুরু করলে সন্ন্যাসী তাকে নানা উপদেশসহ মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথিতে তাকে এ কুন্ডে বিসর্জন দিতে নির্দেশ দেন। সন্ন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র তিনবার মাধব, মাধব মাধব নামে দৈববাণী হয়। সম্ভবতঃ এ থেকেই মাধবকুণ্ড নামের উৎপত্তি। আবার কারো কারো মতে মহাদেব বা শিব এর পূর্ব নাম মাধব এবং এর নামানুসারেই তার আবির্ভাব স্থানের নাম মাধবকুণ্ড।
এ কুন্ডের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে শিবমন্দির। যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের। এর বৃহৎ অংশ জুড়ে রয়েছে ছড়া। ছড়ার উপরের অংশের নাম গঙ্গামারা ছড়া আর নীচের অংশের নাম মাধবছড়া। পাহাড়ের উপর থেকে পাথরের উপর দিয়ে ছুটে আসা পানির স্রোত দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে হঠাৎ খাড়াভাবে উঁচু পাহাড় থেকে একেবারে নীচে পড়ে যায়। এতে দু’টি ধারা সৃষ্টি হয়। একটি বড়, একটি ছোট। বর্ষাকালে ধারা দু’টি মিশে যায়। জলরাশি যেখানে পড়ছে তার চতুর্দিকে পাহাড়, নীচে কুণ্ড। কুন্ডের মধ্যভাগে অনবরত পানি পড়ছে। এই স্থান অনেক গভীর।
কুন্ডের ডান পার্শ্বে একটি পাথরের গহবর বা গুহার সৃষ্টি হয়েছে। ১৩৪২ সালে বিষ্ণুদাস সন্ন্যাসী মাধবকুন্ডের পশ্চিমাংশে কমলা বাগান তৈরি করেন, সেই কমলার বাগান আজও আছে। মূল জলপ্রপাতের বামপার্শ্বে প্রায় ২০০ গজ দূরে আরো একটি পরিকুণ্ড নামের জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেও অনবরত পানি পড়ছে। কিন্তু সেখানে খুব কষ্ট করে যেতে হয়। যাতায়াতের কিছু সুবিধে করে দিলে সেটি দেখতেও অনেকেই ভিড় করবে।
থেকে মাধবকুণ্ডের দূরত্ব প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার। কুলাউড়া রেলস্টেশন থেকে বাসে মাধবকুণ্ড যেতে সময় লাগে ৪০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা। কুলাউড়া থেকে মাধবকুণ্ডের মধ্যকার এই ভ্রমণ বড়ই সুখকর। চারপাশে সবুজের ছড়াছড়ি। সবুজ চা বাগান আর পাখিদের কলতান পর্যটককে করে বিমোহিত। উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা পথ দেবে রোমাঞ্চকর অনুভূতি। সরু পথের দু'পাশের গাছগুলো ছায়া দিয়ে পর্যটককে নিয়ে যাবে মাধবকুণ্ড পর্যন্ত।
ঝর্ণাটির প্রথম দর্শনে অন্তত প্রকৃতি-প্রেমিকরা কিছুক্ষণের জন্য হলেও নির্বাক হবেন। ভিক্টোরিয়া কিংবা নায়েগ্রা জলপ্রপাতের কথা ভুলতে চাইবেন। চোখের সামনে উঁচু পাহাড় থেকে পতিত স্রোতধারা আর কানে বাজবে শুধু ঝরঝর ঝরঝর শব্দ। বন ঘেরা এ জলপ্রপাতে মন মতো গোসল করতে কোনও বাধা নেই।
যে কালো পাহাড়টি থেকে সুন্দরী ঝর্ণাধারা ঝরছে, সে পাহাড়টিতে চড়তে একটু কষ্ট করতে হবে। দুর্গম পথ। ২০০ ফুট উচ্চতা নেহাত কম নয়। ওপর থেকে দেখলে নিচের মানুষগুলোকে মনে হবে পিপীলিকার মতো। এত উঁচুতে দাঁড়িয়ে পতিত জলধারা দেখার আনন্দই অন্যরকম। পুরো প্রপাত প্রাঙ্গণে প্রকৃতি খেয়ালখুশিমতো যত্রতত্র ফেলে রেখেছে বিশাল বিশাল শিলাখণ্ড।
মাধবকুণ্ডে রয়েছে চমৎকার রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন মোটেল। রাতে থাকার জন্য আছে জেলা পরিষদ বাংলো। তবে বাংলো পেতে আগেই মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ অফিস থেকে অনুমতি নিতে হবে। এখানে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার সুবিধার্থে একটি রেষ্টুরেন্ট, রেষ্টহাউস ও বসার জন্য কিছু শেড নির্মাণ করেছে।
শীতকালে এখানে শতশত পর্যটকের আগমন ঘটে। পর্যটকদের জন্য আরো কিছু সুযোগ সুবিধে নিশ্চিত করা গেলে এখানে পর্যটকদের আগমণ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে উদ্বেগের বিষয় প্রতি বছর মাধবকুণ্ড এলাকায় পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে ও কুন্ডে সাতার দিতে গিয়ে ২/৩ জন মারা যাচ্ছে।
বিষয়: বিবিধ
১৫২২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
মন্তব্য করতে লগইন করুন