একটি ঈদের পোশাক ও দু' টি আত্মহত্যাঃ নেপথ্যে যারা!
লিখেছেন লিখেছেন কাজী সুমাইয়া সুলতানা ২৮ জুলাই, ২০১৪, ০৫:০৬:৩৮ বিকাল
প্রতি বছর মেয়েদের পোশাকের নিত্য নতুন ট্রেন্ড বাজারে আসে বিভিন্ন ভারতীয় নায়িকার নামে। কিন্তু এবার কি এমন হোল যে আত্মহত্যা করতে হবে? জীবনে কখনো এমন কথা’তো শুনিনি!! আসুন দেখি ঘটনা বিশ্লেষণেঃ
“ঘটনাঃ ১
তুলিঃ আব্বু আমাকে পাখি ড্রেস কিনে দাও।
আব্বুঃ পাখি ড্রেস কিরে মা?
তুলিঃ ঐ যে ‘বোঝে না সে বোঝে না’ নাটকে পাখি আছে না, ও যেই ড্রেস পরে, এবার ঈদে ঐ ড্রেস বাজারে এসেছে আমাকে কিনে দিতেই হবে যেভাবেই হোক।
আব্বুঃ মা আমার কাছে তোমার পোশাক কিনে দেয়ার মত টাকা নেই!
তুলিঃ বেশ কিনে দিতে হবেনা। ( অতঃপর বাড়ির পেছনের পেয়ারা গাছে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা)”
“ঘটনাঃ ২
নিরাঃ টাকা দাও পাখি ড্রেস কিনবো।
মৃদুলঃ ড্রেস তো সব ঈদেই কিনো, কিন্তু পাখি ড্রেস মানে কি?
নিরাঃ আরে তুমি জানো না ঐ যে ‘বোঝে না সে বোঝে না’ নাটকে নায়িকা পাখি যেগুলো পরে...
মৃদুলঃ ওহ আচ্ছা বুঝেছি। কিন্তু ঐ ড্রেস তো তুমি পরতে পারবানা। কারন তুমি তো পাখির মত না। তোমার যা স্বাস্থ্য তাতে মানাবে না। দেখেত উগ্র লাগবে। তাছাড়া তোমার তো বয়স হয়েছে এত বড় বড় ২ বাচ্চার মা হয়ে.. এসব ছেলেমি ছাড়ো.।
নিরাঃ এত বড় অপমান আমি সুন্দর নই? বয়স হয়েছে মানে কি, আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি? আমার কোন সখ, আহ্লাদ নেই? আমার বয়সে কেউ পরে না? পাশের বাড়ির ভাবি কেনেনি? ( অতঃপরঃ গলা সপ্তমে চড়িয়ে ঝগড়া করতে করতে ডিভোর্স)”
উপরের দুটো ঘটনায় কাল্পনিক হলেও সবাই জানে, বাংলাদেশে অলরেডি দু’জন কিশোরী মেয়ে আত্মহত্যা করেছে এবং একজন গৃহবধূ তার স্বামীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে । আপাত দৃষ্টিতে সবাই দেখছে একটা ড্রেসকে কেন্দ্র করে ৩ টা জীবন ঝরে গেছে। বিষয়টা কারো কাছে অদ্ভুত, কারো কাছে ফানি, কারো কাছে লজ্জার।
পাখি নামের এই পোশাক নতুন নয়। দু’বছর ধরে বাজারে চলছে তবে এই নামে ছিলনা। এর আগেও আনারকলি বা জিপসি নামে এই পোশাকের রমরমা বাণিজ্য চলেছে। আমি আমার আপুর ৯০ এর দশকের পিকচার গুলোতে দেখেছি এই পোশাকে। ফ্যাশন এমনি, বার বার ঘুরে ফিরে আসে। আমার আম্মু এক সময় যা পরেছে ,আমিও পরেছি নতুন নামে। হয়ত একটু ভিন্ন ডিজাইনে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে পোশাকের আড়ালে মুল ক্রেজ হল, ‘পাখি’ চরিত্রটি। আমরা জানি বাঙালি অতি আবেগি জাতি, আবেগে হুঁশ থাকেনা। এর আগে সিনেমার নায়কের মৃত্যুর খবরে হারপিক খেয়ে হলেও অনেকে আত্মহত্যা করেছে। এদেশে নাটকের চরিত্রের ফাঁসি বন্ধ করতে রাজধানীতে মিছিল হয়েছে। এই হল সোনার বাংলা! যায় হোক তো এই আবেগি জাতিকে নাটক, সিনেমা দিয়ে কতখানি প্রভাব ফেলা যায় সেটা জেনেই হয়ত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন।
ভারতীয় নাটক, সিনেমা আমাদের ধারনার থেকেও গভীরে আসন গেড়ে বসেছে উপরের ঘটনা গুলোই তার প্রমাণ। তাদের নাটক,সিনেমার মুল থিমই হল,কুটনামি,পরকীয়া,অশ্লীলতা ব্যাভিচার প্রভৃতি। আত্মহত্যা, ডিভোর্স পত্রিকায় এসেছে তাই জানা গেছে। কিন্তু পরকীয়া, ব্যাভিচার, কুটনামির খবর আসেনা।
ঘরে ঘরে আমাদের মা, ভাবি, ছোট বনেরা নিজের অজান্তেই যে এসব নাটকীয় চরিত্রের কাছে নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছে তাতে আমাদের দুই ধরনের বড় মাপের ক্ষতি হয়ে গেছে।
একঃ এই ধরনের নারীরা যাদেরকে জন্ম দিচ্ছে আর লালন পালন করছে এবং করবে সেই প্রজন্মের চরম নৈতিক অধঃপতন। আদর্শ গত ভাবে দেউলিয়া, মানসিক ভাবে দাস প্রজন্ম।
দুইঃ ভারতীয় কালচার মন মগজ দখলের মাধ্যমে তাদের পণ্য দ্বারা চারিদিক দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে ফেলছে । আমরা জায়নিজম ঠেকাতে পণ্য বয়কট করার যে চেষ্টা করছি, নিজের বাড়ির পাশে তার থেকে শাক্তিশালি হিন্দুইজম এর রসদ যোগাচ্ছি।
ফিলিস্তিনরা টানেল বানিয়ে মিসর থেকে রসদ জুগিয়ে হলেও টিকে আছে। আমাদের সব দিকেই ভারত। কোন টানেল দিয়ে ভবিষ্যতে রোখা যাবেনা তাকে।
তাই এই জাতিকে সচেতন করতে প্রয়োজন, মেয়েদের জন্য বেশি বেশি মসজিদ গমন। ব্যাপক হারে মসজিদ সংস্কৃতিই পারে আমাদেরকে জলসা সংস্কৃতির হাত থেকে বাঁচাতে। এই মসজিদ ভিত্তিক নারী সমাজই জন্ম দেবে সালাউদ্দিন আইউবি, জয়নব গাজ্জালিদের। আর একমাত্র তাঁরাই পারে এই দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে।
বিষয়: বিবিধ
১১৭১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন