সিলেবাসের পাঠ্য যখন যৌনতা !

লিখেছেন লিখেছেন সুভাঙ্গিকার ১৬ আগস্ট, ২০১৪, ১০:০৫:৪১ রাত



লোক মুখে শুনা, অধ্যয়ন কিংবা চলার পথে হাজারো অভিজ্ঞতায় বোধ করি প্রকৃতির শিক্ষা বলে নাকি একটা কিছু নিশ্চয় আছে। ধর্ম বিশ্বাসের ভিন্নতায়, এসবের পিছনে কেও আল্লাহ, কেও ভগবান, আবার কেও গডের আশীর্বাদ আছে বলে মনে করেন। যে যাই বলুক, এ রকম কোন একজনের ইশারায় যে এসব চলছে, তা অবিশ্বাসীর সংখ্যা খুব বেশী হবেনা। প্রকৃতির শিক্ষা এমন, যা কিনা অনেক সময় চার দেয়ালের কোন প্রতিষ্ঠানেও দেওয়া সম্ভব হয়না। পৃথিবীর প্রথম সংসার পেতেছিলেন আদম ও হাওয়া (আঃ) সে শিক্ষার বলেই। হাজার হাজার বছর আগে মহা সমুদ্রে নূহ আঃ এর জাহাজ নির্মাণ সে শিক্ষার বিকল্প ছিলনা নিশ্চয়। কোন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে না পড়লেও বাবুই পাখীর শৈল্পিক নিদর্শন কি আমাদের কোন শিক্ষাই দেয়না! ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে সযত্নে বড় করা মা মুরগীর দৃশ্যও কি কিছুই মনে করেনা! বাবার অস্তি মজ্জা নিংড়ানো এক ফোঁটা নাপাক পানি আর মায়ের ডিম্বাণুর মিলনে যে আমার সৃষ্টি, আমি কি কখনো জিজ্ঞেস করেছি এই শিক্ষাটা তারা কোথায় পেয়েছিলো? অর্ধ শিক্ষিত দাদা-দাদির ঘরে ডজন খানিক চাচা ফুফুর জন্ম নিয়েও কি কেও কখনো বিস্ময় বোধ করেছি? তারও পূর্বে দাদার, মূর্খ দাদার আমলের সংসার, সামাজিক অবস্থা, মূল্যবোধ, নীতি নৈতিকতা, অতিথিওতা ইত্যাদি কাহিনী কি কখনো কোন বশেখের সন্ধ্যায় দাদার মুখ থেকে শুনা হয়েছে?

এত বেশী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও লালিত মূল্যবোধের জোরে তারা বেশ ভালোই ছিল। ছিলনা ইভটিজিং, পরকীয়ার হারও এমনটা না, ধর্ষণ! সেটাতো গ্রাম ছাড়া অবস্থা। সময় বদলেছে। আমরা আধুনিক হয়েছি। ডিজিটাল জালের যুগ এখন! বদলেছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাও। নীতি নৈতিকতা, মূল্যবোধ সব পালটে গেছে সব! দের দুইশ ধর্ষণ, দুই চারশ পরকীয়া, হাজার খানেক ইভটিজিং আর স্বেচ্ছায় অবৈধ যৌনচারের তো অভাব নাই এই ছোট্ট মানচিত্রের অ্যাফেয়ার্সে! সব কিছু মিডিয়াতে আসেনা সম্ভবও না। অলি গলি, রাস্তার মোড়ে, পার্কে, রেস্টুরেন্ট, ক্লাব, আমতলা জামতলা, প্রতিষ্ঠানের সিরিতে, ক্লাসের ব্রেঞ্চে কোথায় নাই সে উস্রিংখলের দল? যারা উত পেতে বসে আছে টিজ করার জন্য ! আজকের মেয়েরাও কম না!

অনেক আলোচনা সমালোচনার পরেও ২০১৪ ইং শিক্ষা বর্ষ হতে ষষ্ঠ শ্রেণী- নবম শ্রেণী পর্যন্ত “শারীরিক শিক্ষা” নামে একটি বই সিলেবাস ভুক্ত করা হয়। সচেতনতার নামে জুরে দেওয়া প্রতিটি অধ্যায়ে, কমল মতি তরুন তরুণীদের কুরুচিপূর্ণ যৌন আকংখাই জাগ্রত করছে বলে মনে করেন শিক্ষা সচেতন প্রায় সকল মানুষ। অনেক শিক্ষক বইটি পড়াতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। অনেক অবিভাবক বইটি দেখে স্তম্ভিত হয়েছে ! মিডিয়াতে সেই থেকেই এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। অনেকি ভাবছিলেন আগামী শিক্ষা বর্ষ থেকে হয়তো এর একটা সুরাহা হবে নিশ্চয়। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি দৈনিকে অনুসন্ধানী এক প্রতিবেদনে আমাদের আবারো ভাবিয়ে তুলেছে। এ যেন মরার উপর খারার ঘা!

অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগে এমনিতেই ইঁচড়ে পাকা এরা। তার মধ্যে আবার ঘটাকরে শিক্ষাদীক্ষা। “শারীরিক শিক্ষা” নামক বইটির রেশ কাটতে না কাটতেই খবর বেড়িয়েছে এখন নাকি “নিজেকে জান” নামক আরও একটি বই বাচ্চাদের দেওয়া হয়েছে, যা কিছু পাশ্চাত্য ঘেঁষা এন জি ও দের তৈরি। বইটিতে যা আছে তা কোন রুচি সম্পন্ন মানুষ উচ্চারণ করতে পারেনা। প্রেম করা থেকে শুরু করে শরীরের অঙ্গ পত্তঙ্গের অনু পরমাণুর গঠন এবং তার ব্যবহার খুব ভালো করেই শিখান হচ্ছে! সমস্যা ফিল করলে জন্ম নিরোধক পিল বা কনডমের ব্যবহার এবং বাচ্চা প্রসবের সময় মায়ের ঐ ছোট্ট জনি পথের কি অবস্থা হয় কেন হয় কীভাবে হয় তাও!

পাশ্চাত্তের অধিকাংশ মানুষের ধর্ম বিশ্বাস হোল খৃষ্টান। ইসা আঃ ছিলেন এই ধর্ম প্রচারক। যা নবী মুহম্মদ সাঃ এর বহু পূর্বে। ইসা আঃ এর জন্ম দুনিয়ার প্রচলিত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছিলনা এটা সবার জানা। এটা ছিল আল্লাহ পাকের বিশেষ নিদর্শন, যার বিষদ বর্ণনা সুরা বনি ইসরাইলে দেওয়া হয়েছে এভাবে, সে সময়কার লোকেরা যখন প্রশ্ন তুলেছিল, কি ভাবে এটা সম্ভব যে, স্বামী ছাড়াই শুধু মরিয়মের গর্ভে ইসা এলো? আল্লহ এর সুন্দর জবাব দিয়েছেন “যে রব কোন কিছু ছাড়াই আদম সৃষ্টি করেছিলেন তিনিই তার ইচ্ছাতে কোন পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই মরিয়মের গর্ভে ইসাকে তৈরি করেছেন”। কালক্রমে এ চির সত্য ভুলে গিয়ে সুবিধাভুগি আধুনিক খৃষ্ট বাদীরা বলছে ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য মতে, যীশু যেহেতু বাবা ছাড়াই জন্ম গ্রহন করে এত মর্যাদা লাভ করেছেন, এটা নিশ্চয় পূর্ণের কাজ। এজন্যই বিবাহ বহির্ভূত বাচ্চাদান তাদের কাছে এক ধরনের ফ্যাশন। স্কুল পড়ুয়া ১২/১৩ বছরের ছেলে মেয়ে অবৈধ শিশুর জন্ম দিয়ে আবার সেলফিও দেয়! ধর্ম বিশ্বাস হেতু এটা তাদের জন্য শোভা পেতেই পারে! (যদিও সামাজিক অবক্ষয় রোধে তাদের বোদ্ধাদেরও ভুল পালটাতে শুরু করেছে) কিন্তু আমাদের কি হল? কিসের আশায় বা কিসের নেশায় আমরা এর ফ্রি লাইসেন্স দিচ্ছি?

আজ আর এত বেশী ভাববার সময় নেই। দেশ ও জাতীর বিরুদ্ধে এ যে এক গভীর ষড়যন্ত্র ভ্রমহীন পাগলও তা বুজে গেছে। মিশনারি সুবিধা ভুগিরা প্রতিটি কাজেই হস্তক্ষেপ করছে। সুকৌশলে মগজ ধোলাই করে আগামীর মেধা শূন্য জাতি তৈরির পাঁয়তারা এটি। আমাদের ধর্ম বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং জাতীয়তা বোধ ধ্বংসের নগ্ন হস্তক্ষেপ এসব। প্রায় দুশ বছর দাস বানীয়ে রেখেও যাদের খায়েশ মেটেনি, এবার তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে সংস্কৃতিতে অশ্লীলতার রেকর্ড সৃষ্টিকারী পাশের বাড়ির গুষ্টিটিও!

এতকিছু ঘটার পরেও দায়িত্বশীলদের নীরব ভুমিকা আমাদেরকে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। অনেকি প্রশ্ন তুলেছেন পরিমল- পান্না মাস্টাররা কি এসবেরি অংশ ছিল? প্রাথমিক পরিকল্পনায় ভুল থাকায় থিওরিকেল জ্ঞান দানের আগেই হয়তো প্রাকটিকেল শুরু করানো হয়েছিল তাদের দাড়া! ভঁয় হচ্ছে, তাহলে কি আবার এদের আবির্ভাব হবে? কদিন পরে কি এসবের ভিডিও সিডিও ক্লাসে দেখানো হবে? এর পর প্রাকটিকেল ক্লাস? অতঃপর অতিরিক্ত মার্কস পেতে প্রায়ভেট - টিওশন এবং শহরবন্দর, পারামহল্লা সব খানের বাসাবাড়ি বা ফ্লাটে ফ্লাটে টানানো হবে সুদৃশ্য কোচিং সেন্টারের ডিজিটাল সাইনবোর্ড? যাদের বাহারি বৈশিষ্টের স্বাভাবিক পয়েন্ট হবে এরকম যে, এখানে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দারা যৌন শিক্ষার প্র্যাকটিস করানো হয়! পরিমল পান্না মাস্টার এমনকি সেক্স স্টার খ্যাতো এঞ্জেলিনা মারকেল এবং রোকোদের দাড়াও মাঝে মধ্যেই সুপার প্র্যাকটিস করানো হবে!

সরকারকে অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে। সচেতনতা বাড়াতে হবে। পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষা জোরদার করতে হবে। আর যাই হোক মানুষ গড়ার কারিগর “শিক্ষক” তোমায় ভুল করা চলবে না।

বিষয়: বিবিধ

১৪৬২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254996
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:১৪
রিদওয়ান বিন ফয়েজ লিখেছেন : ধন্যবাদ এত সুন্দর করে লিখার জন্য .।.।।। Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck Good Luck
১৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৩৫
199265
সুভাঙ্গিকার লিখেছেন : আপ্নাকেও
255005
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৩৭
মাহফুজ আহমেদ লিখেছেন : চিন্তার বিষয়!!
255007
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৫০
একাকী মানুষ লিখেছেন : ভাইরে, সবই বিধর্মীদের ষড়যন্র ।পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই আছে যেখানের শতকরা ৯৯% মেয়েরা ওর্না ছাড়া বাহিরে বের হতে লজ্জা পায় ।কিন্তু এ লজ্জাবোধ আর কত দিন থাকবে জানি না ।আপনি যা লেখছেন তা যদি সত্য হয় তবে কিয়ামত বেশি দেরি নাই, কারন আমার ধারনা পৃথীবিতে একমাত্র বাংলাদেশই আছে যেখানে সর্বাধিক খাটি মুসলমান আছে, টুপি ওয়ালা ,দাড়ি ওয়ালা আছে যাদের জন্য এই দুনিয়া টিকে আছে ।
255010
১৬ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৫৬
বাজলবী লিখেছেন : সুন্দর লিখেছেন। অামাদেরকে এ শিক্ষার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে। না হলে শিশু কিশোরা নৈতিক শিক্ষা হারিয়ে অন্ধকারে পা দিবে। ধন্যবাদ।
১৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৩৭
199267
সুভাঙ্গিকার লিখেছেন : অবশ্যই চেষ্টা চালাতে হবে
255035
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০১:০৫
কথার_খই লিখেছেন : যৌনতা ছড়িয়ে দিতে পারলে বর্তমান সরকারেরই লাভ, তাই তারা এটা পাঠ্যবইয়ে যুক্ত করেছে; এটা নিয়ে আরোও একটি বিতর্ক এখানে.... http://www.somewhereinblog.net/blog/habib123best/29967407
255092
১৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৪:৩০
কাহাফ লিখেছেন : যৌনতা ছড়িয়ে ওরা নৈতিকতা শেষ করতে চায়.....
১৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৮:৩৮
199268
সুভাঙ্গিকার লিখেছেন : Worried

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File