সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদীঃমুর্খদের অপবাদ ও কিছু প্রশ্ন!!!
লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার সাদমান ০৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:১৪:২২ রাত
কোনোপ্রকার বাজে মন্তব্য করে নিজের জন্ম ও বংশপরিচয় তুলে না ধরার অনুরোধ রইলো......
আল্লামা মওদুদীর বক্তব্য : "এটি একটি সূক্ষ রহস্য যে মহান আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করে প্রত্যেক নবী থেকে কোন না কোন সময় তাঁর হেফাজত উঠিয়ে নিয়ে দু'একটি ভুল ত্রুটি হতে দিয়েছেন, যাতে মানুষ নবীদেরকে খোদা না বুঝে। (তাফহীমাত ২/৪৩)
মাওলানা আশরাফ আলী থানবীর বক্তব্য : "কোন কোন সময় নবীদের থেকে ভুল ত্রুটি হওয়ার যে ঘটনাসমূহ কুরআনে উল্লেখিত হয়েছে এগুলো প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর হেকমত ও রহমত। এর মধ্য এক বড় ফায়দা এও যে মানুষের মনে যেন নবীদের খোদা হওয়ার সন্দেহ না হয়।"
(মাজালিসে হাকীমুল উম্মাতঃ মুফতী শফী, ৬৫ পৃষ্ঠা)
প্রিয় পাঠক ! আল্লামা মওদুদী আর মাওলানা থানবীর বক্তব্যের মাঝে কী অমিল পাওয়া গেছে ? না। তবুও এই কারণে আল্লামা মওদুদী কাফের। কিন্তু মাওলানা থানবী কাফের নন।
উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা সুলাইমান নদভীর বক্তব্য : "মানুষ হিসেবে তাদের থেকেও ভুল ত্রুটি হতে পারে । কিন্তু আল্লাহ তাঁর ওহীর দ্বারা এসমস্ত ভুল ত্রুটিরও সংশোধন করে থাকেন।"
(সিরাতুন্নবী ৪/৭০)
আল্লামা নদভীকে কিন্তু এই কথা বলার কারণে কেউ কাফের বা ভ্রান্ত বলে না। কিন্তু মওদুদী বললে !!!
ফারায়েয শাস্ত্রের ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর বক্তব্য : "আম্বিয়া কিরাম নবুওত প্রাপ্তির পর থেকে ইচ্ছাকৃত কবীরা ও সগীরা গুনাহ থেকে পবিত্র। কিন্তু ভুলবশতঃ কবীরা ও সগীরা গুনাহ হতে পারে।"
(ইছমতে আম্বিয়া,২৮পৃষ্ঠা)
"আদম (আঃ) অবাধ্য হয়ে ছিলেন। আর অবাধ্য হওয়াকে আমরা কবীরা গুনাহ মনে করি।" (ইছমতে আম্বিয়া,৩৬পৃষ্ঠা)
এই কথাটি মওদুদী বললে কেমন হত ? আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা : "ভুলবশতঃ কবীরা গুনাহ হওয়ার ব্যাপারে অধিকাংশ আলেমদের মত হলো তা জায়েয ও সম্ভব। এমনকি জমহুর উলামার মতে নবীদের থেকে ছগীরা গুনাহ ইচ্ছাকৃতও হতে পারে।"
(কওমী ও আলীয়া মাদ্রাসায় পাঠ্য আকীদার কিতাব শরহে আকাঈদে নসফীঃ ইছমতে আম্বিয়া)
পাঠক ! চিন্তা করুন, মওদূদী বলেছেন ভুল হতে পারে। তাতেই তাঁকে ভ্রান্ত, কাফির ইত্যাদি বলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একশ্রেণীর কাওমী মূর্খ ও মিথ্যাবাদী আলেম অপবাদ দেয় তিনি নাকি নবীদেরকে নিস্পাপ মনে করেন নি ! তাদের দলিল : উপরোল্লেখিত মওদূদীর বক্তব্য। অথচ যেসকল ইমামরা গুনাহ হতে পারে বলেছেন তাদেরকে কিছু বলা হয়না। এবার কী বুঝতে পেরেছেন এই বিষয় বিতর্কের কারণ ও সত্য ?
মাওলানা হোসাইন আহমাদ মাদানী' মাওলানা মওদূদীর এই বক্তব্যের জন্য বলেছেন "এবার বলুন জামায়াতে ইসলামী ও এর প্রতিষ্ঠাতা মুসলমান কিনা ?" (মওদুদী দস্তর)
এ থেকে বুঝা যায় মওদূদীর জ্ঞানের পরিধি হোসাইন আহমদ মাদানীর চেয়ে কত বেশী ছিল !
জামায়াত ইসলামী তার একমাত্র অপরাধ ? নাকি প্রাণের নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জীবনকে পূর্ণাঙ্গভাবে অনুসরণ করার প্রচেষ্টাই তার ভূল ? নাকি শুধু বিরোধীতা করার জন্য খন্ডিত বক্তব্য প্রচার করে বিতর্ক সৃষ্টি করা !!!
আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।
(সংগৃহীত)
বিষয়: বিবিধ
২৭৪৬ বার পঠিত, ৪০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খইর
এ থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে একজন স্বাভাবিক ভাবেই বুঝতে সক্ষম হবেন, এক্ষেত্রে উভয়ের চিন্তা ও সিদ্ধান্তই সঠিক ছিলো, তাস্বত্ত্বেও সিদ্ধান্তগত দূরত্বের ফলেই এই দ্বন্দের উদ্ভাব।
অপরদিকে, আমরা যদি হাদীসের দিকে তাকাই, সেখানে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-থেকে আমীর মুআবিয়া (রাযি.) সম্পর্কে প্রশংসা মূলক বাণী দেখতে পাবো। যদিও জঙ্গে সিফফিন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)নিজেই ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, কিন্তু তিনি একবার মুআবিয়া (রাযি.) সম্পর্কে কোন কঠিন মন্তব্য করেননি। উদাহরন স্বরূপ-
“হে আল্লাহ! তাকে পথপ্রদর্শক ও পথপ্রাপ্ত করে দাও এবং তার মাধ্যমে মানুষকে হিদায়াত দান করো।” (জাওয়ামিউস সাহীহ, খ:২, পৃ: ২৪৭)
এমনকি তাঁর নিকট খিলাফতের দায়িত্ব অর্পিত হওয়াও রাসূল (সাঃ)-এরই ভবিষ্যৎবাণী ছিলো। একবার হযরত মুআবিয়া (রাযি.) রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য অযুর পানি নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- ওযু সমাপন্তে তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, ”মুআবিয়া! তোমার হাতে যদি শাসনক্ষমতা অর্পিত হয় তাহলে তখন তুমি আল্লাহকে ভয় করে চলবে এবং ইনসাফ কায়েম করবে।” (আল ইসাবাহ, পৃ: ৪১৩)
অপরদিকে. যাঁর সাথে এই লড়াই, সেই আলী (রাযি.) কী বলেন মুআবিয়া (রাযি.) সম্পর্কে? কিতাবে উল্লেখ আছে, সিফফিনের যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে আপন অনুগামীদের লক্ষ্য করে হযরত আলী (রাযি.) বলেছিলেন, “হে লোকসকল! মুআবিয়ার শাসনকে তোমরা না-পছন্দ করো না। কেননা তাকে যেদিন হারাবে সেদিন দেখবে ধড় থেকে মুন্ডুগুলো হানযাল ফলের মতো কেটে কেটে পড়ে যাচ্ছে।” (আল বিদায়া, খ:৮, পৃ:
সুতরাং এই যুদ্ধের সূত্র ধরেও আমীর মুআবিয়া (রাযি.)-কে সমালোচনার লক্ষ্য করাটা গ্রহনীয় না।
শেষে আমি একটি হাদীস উল্লেখ করবো, যেটি এই বিষয়ে আমাদের আরো সর্তক হতে উদ্বুদ্ধ করবে-
রাসূল (সাঃ)- ইরশাদ করেন- “ যখন দেখ সাহাবীদের সমালোচনা হচ্ছে তখন তুমি নীরব থাক, যখন দেখ নক্ষত্রের সমালোচনা হচ্ছে তখনও তুমি নীরব থাক। যখন দেখ তাকদীর সম্পকের্ আলোচনা হচ্ছে তখন তুমি নীরব থাক।” (তাবরানী ২/৭৮ আব ু নাঈম লিখিত আল হুলিয়াত ু ৪/১০৮ আসসিলসিলাতুচ্ছাহিহা ১/৩)
এই হাদীসটিকে সামনে রেখে শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নজদী (রহ.) বলেছেন-
বাহ্যিক দৃষ্টিতে বুঝা যাচ্ছে যে সাহাবীর মর্যাদার বিষয়ে শরীয়তের ধারাবাহিক প্রমাণ নেই তাকে মন্দ বলা ফাসেকী। তবে হ্যাঁ যদি রাসূলের সাহচার্য কেন্দ্রিক কোন মন্দ বলে তাহলে সে কাফের। (আর রদ্দু আলা আর-রাফেজা- ১৯)
বিঃদ্রঃ- ভাই, আমি কিন্তু উসমানী না। আমার বংশগত উপাধি খান আলবী।
জাযাকাল্লাহু খইর।
এছাড়াও ঐ কিতাবের ঐ খন্ডেই কিন্তু মুয়াবিয়া(রাঃ) এরবং আমর ইবনুল আস(রাঃ) নিয়ে কম লেখা নাই; সেখানে যতদূর মনে পড়ে এমনও আছে দ্বৈত-লড়াই এ হযরত আলী(রা) আমর ইবনুল আস(রাঃ) কে শুইয়ে ফেলেছিলেন – হত্যা করেন নি, কারণ তার লজ্জাস্থান প্রকাশ হওয়ার কারণে আলী(রাঃ) এর মনে দয়ার উদ্রেক হয়েছিল। মুয়াবিয়া(রাঃ) কে দ্বৈত যুদ্ধে আহ্বান জানালে এবং আমর ইবনুল আস(রাঃ) তাকে অংশগ্রহণ করতে বললে – কি বলেছিল তাও আছে, এছাড়াও সে খন্ডেই হযরত আলী(রাঃ) – মুয়াবিয়া(রাঃ) এবং আমর ইবনুল আস(রাঃ) সম্বন্ধে কি কি বলেছিলেন – তা কিন্তু বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে।
তবে আমার বলতে হবে যে আমি এসবের কিছুই জানি না, ঐ ধরনের কিছু বইয়ের লেখা ছাড়া, আল্লাহ-ই ভালো জানেন এ সম্বন্ধে – তাই তার উপর ছেড়ে দেয়াটাই ভালো।
যাই হোক, ভাইকে অনুরোধ করবো আবদুল মা'বুদ রচিত আসহাবে রাসূলের জীবন কথা এবং ইমাম বুখারী রচিত তারীখটি পড়ে দেখতে।
আর সে ভুলের শিকার মুয়াবিয়া(রাঃ)-ও হতে গিয়েছিলেন – আহত হয়ে অল্পের জন্য বেচে গিয়েছিলেন, আর আমর ইবনুল আস(রাঃ)-ই খুব সম্ভবত, মসজিদে হাজির না হওয়ার কারণে পুরোপুরি সেটার শিকার হওয়া থেকে বেচে গিয়েছিলেন।
আশা করি আপনার রেফার করা বই সংগ্রহ করে পরবো।
ইতিহাসের আলোকে আমরা একেকজন একেক মত দিতে পারি সেটাই স্বাভাবিক, এবং সেটাই আমরা দিচ্ছি – অথচ আমরা কেউ সেসবের সাক্ষী না! তবে আমি ওই কিতাব পড়া ছাড়াও আরও যাদের সাথে আলোচনা করেছি – তাদের মধ্যে হাফেজ এবং অন্যান্য জানাশোনারাও ছিলো; আমি যা বলেছি – তাদের সিদ্ধান্তও অনেকটা এরকম-ই পেয়েছি, সবার মত-ই সেসব ইতিহাসের আলোকেই, একজনের কাছে যা গ্রহণযোগ্য আরেকজন সেটা বর্জন করেন। তবে আল-বিদায়া নিয়ে এতো সমালোচনা নেই বলে শুনেছিলাম – তাই সেটাই গ্রহণ করেছিলাম।
সূরা ফাতিহা-তে তো আমরা পড়ি দাল্লীন মানে পথভ্রষ্ট, একই ভাবে সরা আদ-দুহা-তে তো নবী(সাঃ) কে আল্লাহই বলেছেনঃ ওয়া ওয়াজাদাকা দাল্লান ফাহাদা ....
এরকমের আরো অনেক বিষয়বস্তুই রয়েছে যেগুলো মাওলানা মওদূদী রহঃ সোর্স দিয়েছেন সেসকল বইয়েরই যেগুলো কওমী মাদ্রাসার তালিকাভুক্ত বই অথচ সেগুলো নিয়ে কোন সমস্যা নেই,সমস্যা হচ্ছে মওদুদী রহঃ কি কারণে সেগুলো কোট করলেন?
আলোতে থাকুন
ভালোতে থাকুন।
আপনার ব্যাপারটাও যদি কোন ফালতু-ভঙ্গী না হয়ে সত্যিকারের গাম্ভীর্য্যপূর্ণ ভাব হয়ে থাকে; অতিসত্বর এ সব ব্যাপারে আপনার পোষ্ট আশা করছি!
এখানে মওদূদী পাইলেন কোথায়?
মন্তব্য করতে লগইন করুন