ভুলে গেলে চলবেনা

লিখেছেন লিখেছেন সায়েম ০৭ আগস্ট, ২০১৪, ১২:৪৫:৪০ দুপুর

আমেরিকা বা বৃটেন, ইহুদী হোক বা খ্রীষ্টান অথবা মুশরিক তাদের কেউ মুসলমানের আপন নয়। ইসলামের বিরুদ্ধে সকলেই একমত। বৃটেন ও আমেরিকার দেওয়া অস্ত্রের সাহায্যে গাজায় আমার মা-বোন ভাই ও অবুঝ শিশুদের উপর বুলেট বোম ছোঁড়া হচ্ছে। তাদের কেউ উপরে উপরে পানি ঢালার কাজ করলেও তলে তলে ঠিকই তাল গাছ কাটার কাজে লিপ্ত। শেখ সাদীর ভাষায় “একে দুয্দ বাসদ একে পরদা দার“ কেউ চোর বা কেউ পাহারাদার। এরা রক্ত-পিপাসু প্রতিনিয়ত এদের রক্তের প্রয়োজন। একেক সময় একেক স্থানে রক্ত-প্রবাহ চালু রেখে এরা তাদের মনের জাল মিটায়।

আপনি লক্ষ্য করুন টুইন টাওয়ার হামলার নামে নাটক মঞ্চায়িত করে সম্পূর্ণ বিনা অজুহাতে নিরস্ত্র নিরীহ আফগানী জনগণের উপর হামলা করে তারা কম প্রাণহানী করেনি। অথচ আজ পর্যন্ত আফগানের কারো বিরুদ্ধে সত্যিকার অভিযোগের প্রমাণ পেশ করতে পারেনি।

মারনাস্ত্র নিমূলের নামে ইরাকী জনগণের উপর যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল আবু গুরাইবের সেই লোমহর্ষক নির্যাতনের দাগ এখনও মুসলমাদের অন্তর থেকে মুছে যায়নি।

লেবাননে তারা কত বনী আদমের রক্ত ঝরিয়েছিল? ভিয়েতনামে কি কান্ড ঘটিয়েছিল? বসনিয়ায় কি পরিমাণ মুসলিম নিদন করেছিল? চেচনিয়ার মুসলমানদের উপর কি অত্যাচার চালিয়েছিল? ভারতবর্ষে মুসলমানদের উপর কি নির্মম অত্যাচার তারা করেছিল এসব কিছু এখনো আমাদের অন্তর থেকে মুছে যায়নি।

অভিশপ্ত শিয়ারা যখন সিরিয়ায় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তখন তারা নিরীহ সুন্নি মুসলমানদের বিপক্ষে গাধা বসারকে সাহস যুগিয়েছিল। বর্তমানে আরেক বধ্যভুমির নাম ইরাক যেখানে সুন্নি মুসলমানদের উপর পৌত্তলিক শিয়াদের নির্মম নির্যাতন চলছে।

বার্মার সামরিক জান্তা আরাকানের মুসলমানদের রক্তে সাগর রঞ্জিত করলেও ইহুদী খ্রীষ্টান লবির দাদাগিরী সেখানে কার্যকর কোন ভুমিকা পালন করেনি।

পৃথিবীর সবচে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়ার পূর্বতিমুরে হাতেগোনা কতিপয় খ্রীষ্টানের আন্দোলনের নাটকে দিখন্ডিত হল ইন্দোনেশিয়া। দক্ষিন সুদান নামে জন্ম নিল আরেকটি খ্রীষ্টান রাষ্ট্র অথচ সেখান খ্রীষ্টানদের চেয়ে অনেক বেশী মুসলমান ইউরোপ আমেরিকার প্রত্যেকটি খ্রীষ্টান রাজ্যে বসবাস করেন সেখানে তো কোন মুসলমান দেশ গঠন হয়না।

কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলনের কাহিনী আজীবন শুনে আসতেছি কিন্তু কই কেউ কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে কোন কথা বলেনা! অথচ পূর্বতিমুর না প্রসিদ্ধ কোন খ্রীষ্টান দেশের চাইতে বেশী মুসলমান কাশ্মীরে বাস করেন। সেখানে তো তাদের জন্য পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের জন্য কোন দাদাগিরী নেই।

মুসলিম দেশগুলোতে বিক্ষিপ্তভাবে সাধারণ জনতার কিছু সংঘটন মুসলমান ও ইসলামের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্দোলন করলেও তাদের উপর সরকারি সহায়ত তো নাই ই বরং উল্টো তাদের উপর দমন নিপিড়ন চলতে থাকে।

আজকের আমার দেশের অন লাইন কপি থেকে কিছু অংশ তুলে ধরলাম, এ থেকেও কিছুটা ধারনা নেওয়া যাবে।

সারা বিশ্বেই মুসলমানরা মারা যাচ্ছে। কেউ মরছে আগ্রাসী শক্তির হাতে, কেউ স্বৈরশাসকদের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে। ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে মারা যাচ্ছে আরো বেশি মুসলমান। অনাহার, দারিদ্র্যের কারণেও অকালেই ঝরে যাচ্ছে বহু মুসলমানের জীবন।

কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই। এসব বন্ধে নেই কোনো যোগ্য নেতৃত্বও। বস্তুত বিশ্বের ১৬০ কোটি মুসলমান আজ নেতৃত্বাহীন।

নেতা হয়ে যারা দেশ শাসন করছেন তাদের বেশিরভাগই স্বৈরাচার, অপদার্থ, দুর্নীতিবাজ ও পাশ্চাত্যের পদলেহী, সর্বোপরি মুসলমান নামধারী মাত্র। ইসলামী চেতনা বড়জোর তাদের প্রাসাদের দেয়ালের শোভা বর্ধন করে, নিজেদের জীবনধারায় মহান এই ধর্মের কোনো প্রতিফলন ও চর্চা নেই।

বেশিরভাগই মুসলিম দেশের শাসকই জনগণের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছেন। তাদের পেছনে জনগণের কোনো ম্যান্ডেট নেই। মুসলিম বিশ্বের মুরব্বি সৌদি আরবের ক্ষেত্রে একথা যেমন সত্য, তেমনি সত্য বাংলাদেশসহ বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রেই।

মুসলিম বিশ্বে গণতন্ত্রচর্চার অভাব বড়ই প্রকট। কোনো কোনো দেশে সংবিধানে গণতন্ত্রের কথা লেখা থাকলে বাস্তবে তার কোনো রূপায়ণ নেই।

এই যখন মুসলিম বিশ্বের শাসকদের অবস্থা তখন তাদের জনগণের উন্নতির আশা করা বাতুলতা বৈকি।

উন্নতি তো পরে, আগে দরকার বেঁচে থাকা। সেটাই এখন মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে দুশ্চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুসলমানদের জীবন এখন পৃথিবীর সবচেয়ে কম দামি বস্তু। বিশ্বের সর্বত্র প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক মুসলমান যুদ্ধ, রাজনৈতিক সহিংসতাসহ নানা মানবসৃষ্ট কারণ মারা যায়। অথচ মুসলিম বিশ্ব নীরব। জনগণেরও এসব মৃত্যু গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।

ফিলিস্তিনে ইহুদিদের হাতে মারা যাচ্ছেন অসহায় নারী-পুরুষ-শিশু। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে মুসলমানদের রক্তস্রোত থামছেই না। ইরাকের মুসলমানরা মরে রাস্তায় পড়ে থাকছে। সিরিয়ায় হাজার হাজার মানুষ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ক্ষমতার বলি হয়েছেন, হচ্ছেন। সুদান, মালি, নাইজেরিয়া, মিসর, লিবিয়ায় মুসলামদের জীবন যেন খেলনায় পরিণত হয়েছে। বসনিয়া ও চেচনিয়ায় মুসলমানদের অকাতরে জীবন দিতে হচ্ছে।

অথচ এসব বন্ধে মুসলিম দেশগুলোর নেতারা নির্বিকার। গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার নিন্দা জানানোরও সাহস দেখাতে পারেনি বেশিরভাগ মুসলিম প্রধান দেশের শাসকরা।

এর কারণও আছে। বর্তমানে বেশিরভাগ মুসলিম শাসকদের হাতই তাদের জনগণের রক্তে রঞ্জিত। জনগণের কল্যাণসাধন তাদের উদ্দেশ্য নয়। তাদের অহর্নিশ কাটে ক্ষমতা দখল ও ধরে রাখার ফন্দিফিকিরে।

মুসলিম বিশ্বের বেশিরভাগ শাসকই জনগণের ওপর চেপে বসেছেন। কোনো কোনো দেশে নামবর্সস্ব গণতন্ত্র থাকলেও নির্বাচনের প্রতি অনাস্থা সংকটকে আরো গভীরতর করেছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সমপ্রতি তুলনামূলক একটি ভালো নির্বাচন হলেও ক্ষমতালিপ্সুদের জন্য তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন আছে, মালদ্বীপে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। বাংলাদেশে নির্বাচনকে তামাসায় পরিণত করা হয়েছে। মালয়েশিয়া, তিউনিশিয়া, ইরান, নাইজেরিয়ায় নির্বাচনী ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র নিয়ে সংকট আছে।

অমুসলিম বিশ্বেও মুসলমানরা মার খাচ্ছে। চীনের জিনজিয়াং, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, ফিলিপাইনের মিন্দানাও, মিয়ানমারের রাখাইন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে সংখ্যালঘু মুসলমানদের জীবনে এখন ঘোর অন্ধকার।

অথচ মুসলমানদের জন্য কথা বলার মতো বলতে গেলে কেউ নেই। মুসলমানদের পবিত্রতম স্থান মক্কা ও মদিনা শাসনকারী সৌদি আরবের রাজতান্ত্রিক শাসকদের গদি এখন টলটলায়মান। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ে আছেন বাদশা আবদুল্লাহ। আগে বিভিন্ন মুসলিম দেশের সংকটে মাঝে মাঝে তিনি ভূমিকা রাখতেন। এখন হাঁটছেন তার উল্টোপথে। নিজের বংশানুক্রমিক শাসনকে টিকিয়ে রাখতে মিশর ও ফিলিস্তিনের গণহত্যার পক্ষ নিয়েছেন তিনি।

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহাথির মোহাম্মদ একজন আধা স্বৈরশাসক হলেও মুসলিম বিশ্বের ইস্যুতে কথা বলতেন। তার দেশ এখন শাসন করছেন কারচুপির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা একজন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে মুসলমানদের পক্ষে কথা বলেন একমাত্র তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তার বিরুদ্ধে সৌদি আরব, ইসরাইল, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত একাট্টা।

এ অবস্থা চললে ভবিষ্যতে মুসলমানদের ব্যাপারে কোনো নেতাই হয়তো কথা বলতে সাহসী হবেন না।

এরদোগান নিজের দেশের সমস্যার সমাধান করেছেন, বিশ্বসভায় দেশকে মহীয়ান করেছেন। কিন্তু এক এরদোগান দিয়েই তো আর অর্ধশত মুসলিম বিশ্বের সমস্যার সমাধান হবে না। দরকার আরও অর্ধশত এরদোগান।

কিন্তু তেমন কোনো সম্ভাবনা বা সুযোগ নেই। অর্থব মুসলিম নেতাদের শাসন এতোটাই ভয়ঙ্কর যে কোনো এরদোগান তৈরি হতে দিতেও তারা প্রস্তুত নয়। মালয়েশিয়ার আনোয়ার ইব্রাহিম এর বড় প্রমাণ। বিচারের নামে ওই দেশের সরকার তার ওপর কী অবিচারটাই না করে চলেছে।

এ অবস্থায় মুসলিম বিশ্ব আজ নেতৃত্বহীন। তাদের সামনে ঘোর অমানিশা।

বিষয়: বিবিধ

১৩১০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

251878
০৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : মাইনাস
251894
০৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:২৩
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন : মাহাথির মোহাম্মদকেও প্রায় অকেজো করে রাখা হয়েছে, ও আই সির প্রেসিডেন্ট থাকাকালে তিনি অনেক দূর এগিয়েছিলেন

আমি অনেক ভাবি, কিভাবে এতো নিচে নেমে গেলাম আমরা? আমরা কুটচাল জাননা বা পারিনা বলে? প্রোপায়ান্ডায় পারদরশী নয় বলে?

তাহলে এবার ষড়যন্ত্রের ট্রেনিং নিই আসুন
০৭ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৫৯
196072
কাহাফ লিখেছেন : সহমত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File