ভালোবাসার ৭ রং

লিখেছেন লিখেছেন ব্লগার কাকা ২৪ জুলাই, ২০১৪, ০৩:৩২:৫৮ দুপুর

খুব কষ্টে তিন হাজার

টাকা জমিয়েছি।

এই ঈদে ইতি কে কিছু দিব বলে।

নিতে চায়নি আমি দিচ্ছি।এক প্রকার জোড়

করেই

দিচ্ছি বলা যায়।মেয়েটা খুব

ভাল।

এই যুগে এমন মেয়ে পাব ভাবতেও

পারিনি। কখনো কোনো কিছু আবদার

করে না।একটুতেই

সন্তুষ্ট

থাকে।

ঈদের বাজারে তিন হাজার

টাকা কিছুই না। তবুও

স্মৃতি হিসেবে দিতে চাইছি।

বাসায় চলে যাব কালকে তাই

আজকেই ইফতার

পরে TFC এর সামনে ডাকলাম।

ইফতার করে তিন হাজার টাকা বুক

পকেটে নিয়ে বের হলাম।

প্যান্টের পকেটে নিয়ে রিস্ক

নিলাম না।

রাজশাহি তে তেমন ছিনতাই

কারী নেই তবুও সাবধানের মার নিয়ে নেই।

খুব সাবধানে চারপাশ দেখেই

হাটছিলাম।

কোথা থেকে এক ছোট

ছেলে সামনে হাজির।

ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম। --ভাই কিছু দ্যান না ভাই খুব

খিদা লাগসে

ভাত খামু।

অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছিলাম

না ছেলে টাকে

আলো তে নিয়ে এসে দেখলাম আসলেই

খিদা লেগেছে চোখ মুখ দেখেই

বোঝা যাচ্ছে।

কত কাল পুরাতন এক প্যান্ট আর

একটা ছেড়া জোড়াতালি দেয়া জামা।

-রোজা করছিলি?ইফতার করিস নি?

--আমাগো রোজ।গোটা বছরই

তো না খাইয়া থাকন

লাগে।

-কি খাবি?

--ভাত খামু। -চ তোকে ভাত খাওয়াবো।

কাছেই একটা রেস্টুরেন্ট ছিল।

নিয়ে গেলাম

খাবারের অর্ডার দিলাম।

বেশি কিছু না ভাত,মাংস আর

ডাল। ছেলেটা পা ঝুলিয়ে বসে আছে নিষ্পাপ

চেহারা নিয়ে।

আর এদিক ওদিক দেখছে এর

আগে মনে হয় এমন

রেস্টুরেন্টে ঢুকেনি।

-তোর নাম কি? --সূর্য

জন্মের সময় ওর মা হয়ত অনেক

আশা নিয়ে নাম

রেখেছিল ছেলে বড়

হয়ে পরিবারের আলো হবে।

-বাসায় কে কে আছে? --মা আর ছুট বইন

-বাপ নাই?

--না,আমাগো রাইখা কই যেন

ভাইগা গেছে।

ততক্ষনে খাবার চলে এসেছে।

ছোট ছোট মুঠ করে ভাত মুখে ভরছে।

অর্ধেক খাওয়ার পর

থেমে গিয়ে পকেট

থেকে একটা পলিথিনের ব্যাগ

বের করল।

-কি করবি? --মা আর বইন

টা না খাইয়া আছে ওগো লাইগা নিয়া যামু।

-তুই আগে পেট ভরে খা।

আমি দেখছি।

একটা পার্সেলের অর্ডার

দিলাম। ইতি কল দিয়েছিল।

দাড়াতে বললাম।এই মেয়েটার

ধৈর্য দেখে মুগ্ধ

না হয়ে পারি না।

ভাল তো সবাই

বাসতে পারে অপেক্ষা করতে পারে কয়জন? কিন্তু এই মেয়েটা পারে।এই টাই

ওর বিশেষ গুন।

ছেলেটার খাওয়া দেখে মনের

মধ্যে কেমন

জানি ভাল লাগা কাজ করে গেল।

এর আগে এত তৃপ্তির সাথে কাউকে খেতে দেখেনি।

খাওয়া শেষে পার্সেল নিয়ে বিল

দিয়ে বের

হয়ে এলাম।

-ঈদে কি কিনলি?

প্রশ্ন টা করেই বুঝতে পাললাম স্থান কাল ঠিক

আছে ব্যক্তি ঠিক নাই।

--আমাগো ঈদ..?

আসলেই তো এদের আর ঈদ

কি কষ্টের মধ্যে জন্ম

কষ্টেই জীবন টা শেষ হয়ে যাবে।

-তোর বোন কত বড়?

--পাচ বৎসর।

কথা বলতে বলতে দোকানের

সামনে নিয়ে গেলাম।

ওর অজান্তেই ওর জন্য একটা হাফ গেঞ্জি হাফ

প্যান্ট ওর ছোট বোন টার জন্য

একটা লাল

জামা আর

ওর মার জন্য একটা শাড়ি।-

তোরা থাকিস কোথায়?

তোদের বাসায় নিয়ে যাবি?

--হ যাবো না ক্যা আহেন আমার

লগে।

রোদের পিছু পিছু হাটছি।

-তোর মা কিছু করে না? --হ করে ম্যানসের বাড়িতে কাম

করে।

-ঐ হানে আমাগো বাড়ি।

দুরে একটু

আলো দেখা যাচ্ছে ঐটাই মনে হয়,

--মা খুব খুশি হইব আপনাকে দেইখা।

-কেন?

--আমাগে এইহানে বড় বড় মানুষ

আহে,ছবি তুইলা লইয়া যায় আর

ট্যাহা দিয়া যায়।

বুঝলাম, সাংবাদিকরা আসে রিপোর্টের

জন্য

ছবি তুলে আর

কিছু টাকা দিয়া যায়।

আলো টার কাছাকাছি যেতে এক

মেয়ের কান্নার

শব্দ কানে আসল।

--ছোট বইন টা খাওনের

ল্যাইগা কাঁদতাছে।

-মা...মা...দেহ

কারে লইয়া আনছি। মনে হচ্ছে এদের সাথে আমার

রক্তের সম্পর্ক

আছে।

গরিব মানূষ রা সবাইকে আপন

করে নিতে পারে সহজেই আমরাই

পারি না আমরাতো সব সময় স্বার্থ খুজি।

এক মহিলা ঘর থেকে বের

হয়ে আসল।

এটাকে ঘর বলা যায় না।

পলিথিন আর কাপড়

দিয়ে মোড়ানো। পিছন পিছন ছোট একটা মেয়ে।

অন্ধকারে তেমন বুঝতে পাললাম

না।

মহিলার বয়স খুব বেশী হলে ৩৫

থেকে ৪০ হবে।

সূর্য আগ্রহ নিয়ে ওর মাকে ওর রেস্টুরেন্টে খাওয়ার

কথা বলছে।

ওর মা একবার আমার দিকে আর

একবার ওর

দিকে তাকাচ্ছে।

চারপাশ টা দেখলাম। এতটা কষ্টে জিবন পার

করার

ক্ষমতা আল্লাহর এদের কেই

দিয়েছে।মনে হল কত

সুখেই না আছি।

বাড়ির পাশের মানুষ না খেয়ে কাঁদে আর

আমরা....

সুখেই আছি....!!

আসার আগে খাবারের প্যাকেট

আর জামা কাপড় কিনেছিলাম

দিয়ে আসলাম। --আপনার বড়

ছেলে দিচ্ছে মনে করে নিয়ে নেন।

আর একহাজার টাকা দিয়ে আসলাম

ঈদের দিন

খরচ

করার জন্য। সূর্যের মায়ের মুখ

থেকে কোনো কথা আসল না।

শুধু আবছা আলোতে চোখের পানির

ঝিলিক

দেখতে পেলাম।

দাড়ালাম না বেশিক্ষন কান্না আবার

ছোয়ছে রোগ আমিও কেঁদে দিব।

সূর্যকে বলে আসলাম

কোনো প্রবলেম হলে বলিস

আশে পাশেই থাকি।

সাথে সাথেই রিক্সা নিয়ে TFC সামনে।

পকেটে আর ১০ টাকা আছে।

ঐ দশ টাকা দিয়ে একটা গোলাপ

কিনে ইতির

সামনে দাড়ালাম।

--Sorry...অপেক্ষা করানোর জন্য। -তোমার জন্য অপেক্ষা করতে ভাল

লাগে আমাকে।

Sorry বলনা।চোখ লাল কেন?

কাঁদছিলা নাকি?

--কই নাতো।

-অন্যের কাছে মিথ্যা বললে পার পাবা কিন্তু

আমার কাছে না।বুঝেছ মিস্টার?

তারপর আর কি?

সব কিছু খুলে বললাম।

শুনে ইতি তো খুশি।

-আমার কোনো গিফটের দরকার ছিল না।ঐ

পরিবার

টার মুখে হাসি দরকার ছিল।

--তবুও তোমার জন্য ছোট

একটা গিফট।

তারপর রোমান্টিক মুডে গোলাপ টা সামনে ধরলাম।

১০ টাকার গোলাপেই ইতি খুশি।

ইতি দেখতে কার কাছে কেমন

জানিনা তবে তার

মন টা অনেক সুন্দর।

দুই জন দুইদিকে চলে গেলাম। ঈদের পর দেখা হবে এই শর্তে।

যেতে যেতে মনে বললাম

--গর্বিত তোমার বয়ফ্রেন্ড

হিসেবে

ইতিও মনে হয় বলল

-গর্বিত তোমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে।

[এই ঈদে কার

মুখে হাসি ফুটালেন?]

বিষয়: সাহিত্য

১০৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File