জলবতী মেয়ে জলের ওপারে আবাস ছেঁড়া জালের ফাঁস গলে জলজ স্বপ্নেরা
লিখেছেন লিখেছেন কামরুল হাসান অপু ২৪ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৫৬:৩১ বিকাল
জলবতী মেয়ে জলের ওপারে আবাস ছেঁড়া জালের ফাঁস গলে জলজ স্বপ্নেরা স্ফীত,স্তম্ভিত প্রদোষকালে কোথায় হারিয়ে যায় জলের অতলে নদীর অব্যবহৃত জলে না কি আলেয়ার তীর ঘেঁষে উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বাসে ভেসে চলে কচুরীর দাম ঠেলে এক আধবার মাথা তোলে সম্রাজ্ঞীর গর্বোদ্ধত অহংকারে সূর্য আর কাঁশবন সমানুপাতিক দূরত্বে হৃদয় মেলে থাকে পায়ের পাতায় জলস্পর্শ লেগে আছে,জলবতী মেয়ে জলের গভীরতম প্রহেলিকা থেকে দীর্ঘসূত্রীতায় দীর্ঘসূত্রীতায় সান্ধ্য ঘাটে শব্দ ও স্রোতের মধ্যে স্মৃতিও বিস্মৃতির অতলে ক্রমশঃ ডুবে যাচ্ছে শতচ্ছিন্ন জাল আর ডুব সাতাঁরের প্রাক্কালে তোমার অর্ধনগ্ন স্তন ঢেকে দেয় নীলচে জলের বুদবুদ ২. কতদিন মুখোমুখি বসিনি আমরা অকাতরে ভেসে যেতে দিয়েছি বিমূর্ত সময়ের লগ্ন মিথ্যের রুপালী আলো ফসফরাসের মতো জ্বলে ওঠে বুকে ঢেকে দেয় সমস্ত শরীর-মন বুকের মধ্যে যে ছবি আঁকা ছিল তার নামও এখন মনে নেই আপাদমস্তক জুড়ে কেবলই যাওয়ার পালা ফিরে আসবো? সে পথ প্রতিধ্বনিহীন আমাকে উগড়ে ফেলে অস্তিময়ী চেতনাহীন গ্রামের মধ্য রাতের নিষ্ঠুর অবাস্তবতায় এক রৌদ্রনভস্তল থেকে আরেক অমাবশ্যায় যেন আমি অযোগ্য পথিক অবেলার সুমন্ত পথের ৩. কতদিন ছুঁয়ে দেখিনি তোমাকে ঘুমের সময় কত গল্প জমে থাকত;কখন চোখ বন্ধ হয়ে আসত সুস্থির শ্বাস-প্রশ্বাসে কেউ-ই টের পেতাম না পরাভূত অন্ধকারে স্বপ্নের ভেতর উঠে এসেছিল সেই গান যে গানের সুর ভুলে গিয়েছিলাম ঘেরাটোপের মধ্যে বিচিত্র ভাষার কথকতা ঠেলে শুদ্ধ এক ধ্বনি আমাদের টেনে নিয়েছিল প্রথম সাগরস্নানে আসন্ন জোয়ারে দীর্ঘ বালুতট শূণ্য পড়ে ছিল ঝাউবনের তলায় স্ফুট চলাচলে শেষ অস্থিরতা ডুবে গিয়েছিল সমুদ্দুরের অতলে আমাদের পূরাতন যে নাম সে নামে ডেকে যায় উত্তুরে বাতাস পরিযায়ী পাখিরা ফিরবে বলে অপেক্ষায় ছিল হাওরের জলাভূমি আর কিছু চোরা পাখি শিকারী,___তাদের আশা মিটে গিয়েছিল গোধূলি বেলায় অনুপম মেঘে মেঘে ডানা ভাঙা পাখির মতোন সময়েরর কেন্দ্রে উড়ে যাবার প্রাক্কালে কে যেন জিজ্ঞেস করেছিল,'ক'টা বাজে?' আমি বলতে পারিনি সময়ের প্রারম্ভে দাঁড়িয়ে ৪. 'জলবতী,তোমার অতীত নেই।' নীল সমুদ্র যখন তার প্রমত্ত সঙ্গীতে আমাদের বিমোহিত করে যায় ঢেউয়ে ঢেউয়ে প্রতিচ্ছায়া ভাঙে দুঃস্বপ্নে দুঃস্বপ্নে কাটে অবসিত রাতের প্রহর আর আমি তোমার আঙুলে জলস্পর্শ করি,___ কারণ সুস্পষ্ট ভাবে জানিঃ কখন দিগন্তে ডুবে যাবে চন্দ্রাহত আষাঢ়ে পূর্ণিমা যে সব স্বপ্নেরা কাল ছুটে গিয়েছিল কুয়াশা মোড়ানো পথে আজ তারা ফিরে এসেছে অনুবর্তিতারুপে পরিদৃশ্যমান স্বপ্ন ছিল সৃষ্টিরও আগে আকাশে নক্ষত্র ছিল না তবুও মৃত নক্ষত্রের আলো আজো ঢুকে পড়ে বুকের ভেতর হৃতশূণ্যতায় তুমি গেয়ে ওঠ বিরহীবিধুর গান জলবতী,তোমার অতীত আজ শূণ্যতাময় প্রান্তরে ৫. আদিগন্ত চেনাপথগুলো সব ঢেকে আছে ঝরাপাতাদের অবিমৃশ্য চলাচলে রোদ কুয়াশা মাখানো সকালের পথ কেবলই ধ্বসে পড়ে পায়ের তলায় অথবা শিশির লেগে থাকে মৃত মানুষের চোখে,____এই পথেই অনন্ত যাত্রা! কতদিন ভেবেছি সমস্ত রাত,পুরণো পাতার শব্দে অবলীন বিবশ হয়েছিলাম এত নিগূঢ় প্রশ্নের কৌতুহলে আমি অটুট দাঁড়িয়ে থাকি জলের কিনার ঘেঁষে একদিন জেনে নেব,'ডুবসাতাঁরে ডুবসাতাঁরে কতদূর যেতে পারে,জলবতী?' ৬. প্রদোষকালের অন্ধকারে জল থেকে গাঢ়তর জলে কেন ডুবে যাও, জলবতী? জল কি তোমার সব ব্যথা শুষে নেবে? তবে বালির পাহাড় ভেঙে ডুবসাঁতারে ডুবসাঁতারে কতদূর যেতে চাও? গন্তব্যহীন,ডাঙার সজীবতা কি এতোই অবসাদগ্রস্ত? পরান্মুখ পৃথিবী যখন কেঁপে ওঠে আমাদের যুগল শিৎকারে। উন্মত আকাঙ্খা ধ্বসে পড়ে মিলিত দেহের নীচে; উচ্চকিত প্রেমের আবেশে মগ্ন রাত্রি তার নিষ্ফলতা ছুঁড়ে দেয় দূরস্খলিত তারার দিকে আর প্রাকৃতিক দুঃখজটাজাল নিয়ে তুমি নেমে যাও জলের গভীরে অর্ধনগ্ন শরীর তোমার ঢেকে দেয় নীলচে জলের স্তর। ভাঙন প্রবল তীরে আমি অটুট দাঁড়িয়ে থাকি। ৭. জলজ গুল্মেওর মতো কেনে ভেসে যাও,জলবতী শৈবাল কি সব ব্যাথা বোঝে ডুবসাঁতারে ডুবসাঁতারে আর কতদূর যেতে চাও সহজিয়া ভাষা ভুলে যখন কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকারে সব গ্রাম মিশে এক হয়ে যায় পাস্তুরিত জাগতিক বোধে মাছ ধরার বড়শি হাতে ডুবিয়ে দিয়েছি নিরিবিলি,একাকী সময় জলের গভীরে চোখ রেখে দেখেছি জলের বুদবুদ নিখাত পাতালছায়া ঘিরে রাখে কেউ বোঝে না নীলচে স্রোত টেনে নেয় গাঢ়তর পাপ তোমার চোখের জ্বলজ্বলে ঘৃণা জলের প্রচ্ছদে অবিরাম ভেসে যায়,ভেসে যায় কিছুই বলার নেই যদি হঠাৎ নিজের ছায়া প্রশ্ন করে আরুঢ় পৃথিবী সূর্যমুখী ফুল ছুঁয়েও দেখে না প্রহরে প্রহরে তবে কেন নিজের বিরুদ্ধে এত ঘৃণা যে স্বপ্নেরা একদিন ছুঁয়ে গিয়েছিল চোখের পাতায় স্বপ্ন ফোঁটার প্রাক্কালে আজ সেখানে নির্ঘুম রাত কাটে আমার শরীরে লেগে থাকে লোনা জল যে আকাশ ভরে আছে শূণ্যের ভেতর তার মধ্য থেকে নেমে আসে ডানাভাঙা হাঁস রোদ উঠলেই উড়ে যাবে ৮. নীলচে জলের স্রোত ধূয়ে নেয় কত দুঃখ পাপ শিল্পের আবেগে তর্কাতীত সকল প্রশ্নের বৃন্তে আমার অন্যায্য প্রেম অনিবার্য পরিণামে জলবতীর জলজ দেহ শুষে নেয় ভূতূড়ে সন্ধ্যায় কালো চুল খুলে দিলে জলবতীর পিঠের প্রান্তে নেমে আসে রাত্রির জরা-জটিল অন্ধকার জলের সহজ স্তরগুলো ভেসে যায় চনমনে রক্তের মতোন জঠরে ফুলের ছায়া---পিঙ্গল কুসুম পাথরে পাথরে ক্ষয়ে যাওয়া---প্রতিপদের চাঁদ অপলক সব দেখে এইসব ছবি এঁকে যাবো আজ ধূ ধূ সৈকতের বালিতে---নদীর বুক থেকে যতোই ডাকুক,জলবতী আমি শুয়ে থাকব জোছনা বুকে চেঁপে ৯. যে নদীর ধারে তোমার আবাস---সে নদীর জল অবিরাম প্রশ্নপাতে জর্জরিত করে নিঃসীম নিঃসঙ্গ শূণ্যতায় কেন কেঁপে ওঠে রাত্রির হৃদয়?তার ফেনায়িত ঢেউয়েরা পা ভিজিয়ে প্রশ্ন করে,আমি যদি জল থেকেই পৃথক তবে কেন জরাজটিল অরণ্যে বৃক্ষ নই?ছায়াপথের অজস্র শূন্যতার মধ্যে খসে পড়া নক্ষত্রের মতো এতো মূঢ় অভিমান বুকে অপ্রপ্যনীয়ের অতৃপ্তিতেই কি এই ডানা গুঁজে বসে থাকা? জলবতীকে ফুলের সাজে সাজানোর জন্যে দু'হাতে ঘুমন্ত খ্রীষ্ট গাছে ফুটে থাকা ফুলগুলো ছিঁড়েছিলাম তা এই মাতৃসমা জলে কিভাবে ভাসিয়ে দেবো?বোধনের কাল পার হয়ে গেলে সবুজ পাতার মতো পিচ্ছিল শরীর নিয়ে যদি জলবতী ফিরে আসে দৃষ্টি নন্দন প্রান্তবেলায়? ১০. জলের ঘেরাটোপের মধ্য থেকে উঠে এসেছ।শরীরে মৎস্যগন্ধ। কবিতার ভাষা আর শব্দ,বিন্যাসিত ছন্দ,--- ভেসে যেতে দিয়েছ প্রবল পরাক্রান্ত স্রোতে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে জোয়ারের টানে দক্ষিণ,দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে। বিহিন্দিজালের পাতায় আটকে থাকে আমাদের আত্মজৈবনিক প্রেম। ১১. জলের নৈকট্যে আর কত,জলবতী জলে পুড়ে গেছে তোমার শীতল দেহ, তোমার সৌন্দর্য্যবোধ,গ্রন্থ-অবমাননা---সবই জলে। জলের ভেতর থেকে চোরা হাতছানি,---- চিৎসাঁতারে চিৎসাঁতারে একদিন নদীর ওপারে চলে যাব। ১২. নদীর ওপার থেকে কারা হেঁটে আসে?আমি তাদের চিনি না। তাদের পায়ের জোড়াশব্দ মিলিয়ে যাবার পর শুকতারা উঠে আসে,ধীরপায়ে; অধিকতর জটিল তার কেশ বিন্যাস।সার্বজনীন ভাবনার মহাকাশে সান্দ্র সুদূরিমা।মেঘের আড়ালে ইতস্তত শস্যচ্ছবি। সহজতর স্রোতের অনুগত নৌকা ঠেলে,জলবতী আজো তোমার পৌঁছুতে দেরী হল।নীলচে জলের স্তরে স্তরে জোঁক ও ছত্রাক, কন্দফুল ও শামুক,----অনুবর্তিতায় আতপ্ত নিবিড়। আমাদের খেলা ছিল জলে।আরো দূরে জলের গভীরে স্বচ্ছতার কাচে শীতল মুখচ্ছবির অবশেষ।চিতাভস্ম,বৈধব্য,উল্কির ছাপ ধুয়ে দেয় নদীজল। যদি এইখানে কবিতার শেষ আর জীবনের শুরু হত,--- 'তুমি কি পাগল?' বলে জলকেলীতে মেতেছ। আমি ভুলে যাই সমুদ্র সঙ্গীত,পূর্বজন্ম,কবিতা,দ্বিঘাত রাশিমালা। একদিন ঠিক জলের ঐকান্তিকতা থেকে দূরে চলে যাব। ১৩. এক বৃষ্টির সকালে জলবতী আমাকে দেখিয়েছিল সেই সব যুবাপুরুষ;অন্তিম সাঁতারের প্রতিযোগী নদীর জলজ স্রোতে কচুরীপানা,ভাসছে মুখোমুখি,___ শুধু অন্যদের কথা ভেবে উঁচু আশ্রয়ের মাটি থেকে চারিদিকে জলের প্লাবিত প্রতিরোধে আমি হিমস্রোত কেটে এগিয়ে গেলাম প্লাবনের জল উঠে এল ধানক্ষেতে,অন্ধকার সিঁড়ির দরজা খুলে উঠোনের জমানো জলের বুকে নীল আলো কেঁপে ওঠে প্লাবিত প্রান্তর,চিরদিনের স্রোতের মূর্ত ভালোবাসা অপ্রাকৃত ভাষার অন্তরালের উন্মুখর সমাহিত উন্মোচনে নিমগ্ন নদীর তীর,স্পন্দিত বালির ধূ ধূ আলো সংশোধিত সকালের কত দেরী,জলবতী চারণ খড়েরা একদিন শুনেছিলঃসমর্পিত যুগ্মধ্বনি ১৪. সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত আজ সব নদীর সহজতর স্রোত, সব সমর্পন ফেলে কোথায় দাঁড়াবে,জলবতী? প্রবল বর্ষনে ভাঙে পাড়,ভাঙছে ভাসানের গানে। আমাদের প্রিয় মিথ্যেগুলো মিশছে দিগন্তপাড়ে,নদীর ঢেউয়ে। নিজেকে শালপাতায় মুড়ে অর্ঘ্য দিয়েছি,'গ্রহণ করো,দেবী।' বলে কত রাত অব্দি দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি।শুনেছে অন্ধ কবি ও বাউল। একতারার করুণ সুরে শোনা যায়...। আলোভাঙা চোখের সজল চাহনীতে বিদায়ের বিদীর্ণ প্রবাল, তোমার ধারাল মুখ জ্বালিয়ে দিয়েছে সবটুকু সন্ধ্যাবেলা। নিভৃত ধ্যানের তাপে বিকশিত---কোথায়,একাকী ভালোবাসা? ঘরের ভেতর এত দীর্ঘকাল কেটে গেল,তবু অন্ধকার ভরা কররেখা, আকাশে-মাটিতে এত রৌদ্ররশ্মি,রক্তধারা নেমে আসে মেঘ থেকে। অতীত আসক্তি ভেঙে এতদূর চলে এসেছ,---প্রবাসী নৌকাগুলো বালু ও পাথরে ভর্তি।আলোকিত স্বরের নৌকাগুলোর অনিঃশেষ যাত্রা। যদি যেতে চাও তবে জলবতী,শব্দ না করেই খুলে ফেলো খিড়কি দূয়ার। ১৫. ঝলসানো পাখির পালক উড়ে এসে পড়ে শরীরে,পায়ের কাছে নদীর দু'ধারে কুঁড়ে,পাটকাঠির দেয়াল, খড়ের ছাউনি,লাউয়ের ডগা,___ আগামী বর্ষায় ভেসে যাবে এই স্বপ্নে ভেঙে যায় ঘুম। অন্ধকার থেকে উঠে আসে তরলীকৃত অপমানের স্তুপ। দূরের জানালা খোলা,আলো এসে পড়ছে,বাইরে। তোমার দু'চোখে ঘুম লেগে আছে,ঠোঁটের দু'কোণে হাসি আমার আহত চোখ জ্বলে ওঠে হলুদ পরাগে। অঘোরময় আকাশে মরা মেঘ,বৃষ্টি নেই আমরা শূণ্যের অভিবাসী। মারী ও মড়ক ধূয়ে নেয় প্লাবনের অনিশ্চিত জলরাশি আর আমার গলিত দেহ বারোমাসি স্রোতে ভেসে গেলে জলহীন উপবাসে থেকো,সারাবেলা। ১৬. পায়ে পায়ে ধ্বংস এগিয়ে আসছে তবু ফিরে আসি শ্মশাণের দ্বার থেকে জ্বলন্ত চিতায় জল ঢেলে নেমে আসি ডোমের চিৎকার,চডালের হেতালের লাঠি আমার পেছনে পেছনে দৌড়াতে থাকে পালিয়ে যে যাব তেমন জায়গা নেই 'আমার দক্ষতা পালানোতে--বলেছিল জলবতী যমুনার কালো জলে জলবতী সাঁতরায় তার খোলা পিঠে উঠে বসে কামট,কাছিম আঙুল হারানো হাতে আমি তুলে নেই কাঁকড়া ও কুঁচো অন্তিম পাথর থেকে লাফ দেবার মুহূর্তে আমার মাথার চুলে বেঁকে গিয়েছিল বাতাসে,সীমানাহীন জলে নেমে এসেছিলাম জলবতীর মাথা কাধে নিয়ে সেবারই পালাতে পারি নি ১৭. দরিদ্র প্রয়াসে সকালবেলায় জেগে শুনি কাকের চিৎকার কাল রাতে স্বপ্ন দেখেছিঃজ্বলন্ত অগ্নিকুন্ড ঘিরে প্রেতের উচ্ছ্বাস,হাতে নরমুন্ড একশিলা পাথর;সোমত্থ পুরুষের বুকে আমরা জেনেছি---সব সমর্পন সমুদ্রের দিকে,রিক্ত নদী শুকিয়ে মরেছে ঘাটে ঘাটে,বালুচরে আটক নৌকার সারি ভাঙা বৈঠা শুয়ে,শরীরে রৌদ্রের ঝলসানো তাপ জল থেকে মুখ তোলো নীল জলে কালের শ্যাওলা---মুছে যাবে প্রতিপূরণের অহংকারে পিচ্ছিলতা ভরা সিঁড়িগুলো জলের গভীরে নেমেছিল গোড়ালিতে সেই সর্বনাশ এখনও লেগে আছে জনহীন পারে ভিক্ষার অমরবাটি হাতে দাঁড়িয়েছি ঠিক এমনই কথা ছিল প্রবল বর্ষণ,উপসাগরের নষ্ট জল---- যতটুকু চেয়েছিলে ডাঙায় তাড়ানো জলচর আমার চোখের দিকে তাকাও,দেখেছঃ লবণ ও ঘাম,অজস্র শেকড়-বাকরের আঁকিবুঁকি রেখার ভেতর পথ খোঁজে সেখানে বৃথাই ধূলি ওড়ে ১৮. উন্মার্গের গোধূলি,শায়িত সন্ধ্যাবেলা,--- তুমি জলে নেমেছ,রাতের বুকে কর্কট,মিথুন জল লঙ্ঘনের খেলা ভেঙে উলঙ্গের সেই আকর্ষণ আজো ঘিরে রেখেছে তোমাকে জল-জলান্তরে বেড়ে উঠেছে যে লতা তুমি তার ঘ্রাণ নাও শৈবালের সন্তান,প্রবাল দ্বীপ,--- সমুদ্রের জলে চিরদিনের ঘূর্ণির টান দূর নক্ষত্রের উন্মীলনে অগ্নির স্ফুলিঙ্গ বহৃৎসবে মেতেছে জ্যোতির্মন্ডল শেষ চুম্বনের মতো নিঃশ্বাস ফুরোলে নক্সাহীন ধূসর পাথরে আলো ফেলে হলদেটে চাঁদ ঔপনিষদিক রাত,যুথবদ্ধ ঝাউগাছ ফিরে যায় ক্লান্ত জোনাকীরা হাঁটু মুড়ে বসে আছ সৈকতের আরুঢ় বালিতে ইহলৌকিকতা ভেঙে স্মৃতি থেকে বিস্মৃতির ভেতরে ক্রমশঃ শব্দ ও স্রোতের উর্ধ্বে উঠে যাচ্ছে দ্ব্যর্থক সময়
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন