ধর্মীয় সাংস্কৃতি Vs দেশীয় সাংস্কৃতি
লিখেছেন লিখেছেন নওরীন তারান্নুম মিম ২৬ জুলাই, ২০১৪, ০৭:৪৫:৪১ সন্ধ্যা
আসসালামু আলাইকুম!
শুরুতেই বলি রাখি,লেখার উদ্দেশ্য কারো ধর্মানুভুতিতে আঘাত দেওয়া নয়। কারন মহান আল্লাহ তা'আলা বলেছেন__
"ধর্ম নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি নেই।"__(সূরা আল-বাকারাহ:২৫৬)
মহানবী (স ও বলেছেন এক ধর্মের লোকের ঘাড়ে অন্য ধর্ম জোর করে না চাপাতে। যাক,আসল কথায় আসি__ধরুন আপনি কোন এক নির্দিষ্ট ধর্মের লোক এবং কোন নির্দিষ্ট এক দেশে আপনার বসবাস বা অবস্থান,আপনার মত একই ধর্মের আরও কম বেশী কিছু সংখ্যক লোক ঐ একই দেশে অবস্থান করছে। এখন যদি আপনার অবস্থানরত দেশের সংস্কৃতি আপনার অনুসরনীয় ধর্মীয় সংস্কৃতির অনেকটা বিরুদ্ধচারন করে। তখন আপনার ক্ষেত্রে কোনটি গ্রহনযোগ্য বা পালনীয়? আপনার দেশীয় সংস্কৃতি নাকি আপনার ধর্মীয় সংস্কৃতি???
ইসলামে শূকরের মাংস খাওয়া হারাম এখন আপনার দেশীয় সাংস্কৃতি যদি এটি ভক্ষনে অভ্যস্ত হয়,তবে আপনি মুসলিম হয়ে দেশীয় সাংস্কৃতির চর্চায় কি শূকরকে হালাল ভাবে গ্রহন করবেন? নাকি ইসলামি সংস্কৃতিমতে একে হারাম বলেই বর্জন করবেন?
যারা হিন্দু তারা কি গোমাংস ভক্ষন করবেন? নাকি তালে তাল মিলিয়ে শূকর,গরু একসাথে গুলিয়ে ভোজন করবেন? ৩টির যেকোন ১টি তো করতেই হবে।
প্রকৃত যে মুসলীম সে দেশীয় সংস্কৃতির তাড়নায় শূকর ভক্ষন হতে বিরত থাকবেন। আর প্রকৃত হিন্দু ও গোমাংস ভক্ষন করবেন না। কিন্তু দুইটির মাঝামাঝি কিছু ভেজাল লোক আছেন,যারা যুগের সাথে,দেশের সংস্কৃতির সাথে তাল মেলাতে আর আধুনিকতার চর্চা করতে শূকর আর গরু দুটোকে একসাথে জগাখিচুড়ি করেই ভক্ষনে ব্যতিব্যস্ত। এই শ্রেণীর লোক নিজের ধর্মের সাথে অন্য ধর্মকে গুলিয়ে সৃষ্টি করে নতুন এক ধর্ম যার কোন বাবা-মা নেই। এবার সেই ধর্মকেই অনুসরন করেন তারা। এভাবে একসময় সেটা প্রচলিত আঞ্চলিক বা দেশীয় সাংস্কৃতির রুপ ধারন করে। এখন যারা এই সকল কাজগুলো করছেন এবং মানছেন তাদেরকে আপনি কোন ধর্মের লোক বলবেন??? আমার মতে এদের ধর্ম হিসেবে আপনি যাই উল্লেখ করুন না কেন তারা ভেজাল! আধুনিক সংস্কৃতির চর্চাকারী বা শ্রেনীভুক্ত ব্যক্তিগন এটা জানেন না যে, সর্বকালের সর্বযুগের সকল ধর্মের & সকল দেশের সাংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম,রীতি-নীতি আগেই ইসলাম দিয়েছে। অন্যধর্ম এই নিয়ম নীতি দিয়েছে কিনা আমার জানা নেই,যদি দিয়ে থাকে তবে আমি বলব তা চর্চা করুন। কিন্তু ইসলামে এটা থাকার পরও যেসকল মুসলীম আধুনিক সংস্কৃতির চর্চায় নতুন নিয়ম-নীতির উদ্ভাবন করে তাদের কে কি বলা চলে??? নিজের অস্তিত্ব ভুলে হাতে হাত মেলানোই কি আধুনিকতা? কে আপনাকে সৃষ্টি করেছেন,তিনি আপনাকে কি বিধান দিয়েছেন এটা ভুলেই কি তাল মিলিয়ে চলতে হয়? নিজের সাংস্কৃতি ছেড়ে অন্যের সাংস্কৃতির চর্চা-ই কি তালমিলিয়ে চলার নমুনা? তারা কি জানেনা যে পরষ্পর সহনশীলতা,সম্মান,শ্রদ্ধা,ভালবাসা প্রদর্শনই সকল দেশের সকল ধর্মের মানুষের সাথে তাল মিলিয়ে চলা। ইসলাম তো বলেছেই যে__
"হে মানব! নিশ্চয় আমি তোমাদের কে একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও গোত্রভুক্ত বানিয়েছি, কেবল এজন্য যে, তোমরা যেন পরষ্পর পরষ্পরকে চিনতে পার।"___(সূরা-আল হুজুরাত:১৩)
এই আয়াত ভাবার্থ তো সকলের সাথে পারষ্পারিক সম্পর্ক কে নির্দেশ করে। তাই বলে নিজ বেশ ছেড়ে অন্যের বেশ ধরা নয়। বিপদে পাশে দাড়ানো,সুখ-দু:খের ভাগিদার হওয়া,সাহায্য-সহানুভূতি প্রকাশ করা,ভাল ব্যবহার করা এগুলোই যথেষ্ট যেকারো সাথে পারষ্পারিক সম্পর্ক তৈরী ও তাল মিলিয়ে চলার জন্য। কিন্তু আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন,আপনি আপনার নিজস্ব সংস্কৃতি মানুন। আর মুসলীমদের কে বলি আপনারাও ইসলামী সংস্কৃতি বৈ ময়না পাখির মত অন্য সংস্কৃতির বেশ ধরে তাদের বুলিতে কথা বলবেন না। মহানবী (স বলেছেন __"যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরন করে সে ব্যক্তি সেই জাতির ই অন্ত:র্ভুক্ত হবে"।__(সুনানে আবু দাউদ)
এখন আপনারাই বলুন কার অনুকরন অনুসরনে কার অন্ত:র্ভুক্ত হবেন??? না হিন্দু,না মুসলীম,না বৌদ্ধ বা খ্রীষ্টান! তাল মেলানোর নামে সবগুলার সংমিশ্রনে পুরাই ভেজাল। নিজে নামধারী মুসলীম হয়ে নিজ ধর্মকে ভেজালে পরিনত করবেন না। অবশ্যই পিউর হোন,আর না পারলে পিউর হওয়ার চেষ্টার ধারা অব্যহত রাখুন। কিন্তু বিরুদ্ধচারন না করার অনুরোধ রইল!
বিষয়: বিবিধ
১১৯৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন