যুদ্ধাপরাধী এবং সর্বোচ্চ বিক্রিত অটোবায়োগ্রাফি ' দ্যা রেলওয়ে ম্যান'
লিখেছেন লিখেছেন রাজিবুল হাসান ০২ নভেম্বর, ২০১৪, ০৫:৫৪:৫৩ বিকাল
যুদ্ধাপরাধী এবং সর্বোচ্চ বিক্রিত অটোবায়োগ্রাফি ' দ্যা রেলওয়ে ম্যান'
==============================
প্রতিটি যুদ্ধই রেখে যায় অনেক গভীর ক্ষত।
এমন অনেক ক্ষত থাকে যা হাজারো চেস্টাতেও ভুলা যায় না। আর তা থেকে জাগে প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা।
তেমনি একটি ক্ষত ভুলতে পারেনি ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জাপানীজদের হাতে ধরা পরা বৃটিশ রেডিও ম্যান এরিক লুমেক্স।
৪০ বছর আগের ঘটনা(অটোবায়োগ্রাফি লেখার সময়ের হিসেবে)
বৃটিশ মালায়া(এখন মালয়েশিয়া) থেকে আটকৃত আরো হাজারো সৈন্যের সাথে সিংগাপুর থেকে একটি একটি ট্রেনে করে এরিক লুমেক্সকেও পাঠানো হয় বার্মা-থাইল্যান্ড সিমান্তে রেল স্থাপনের কাজে।
সেখানে কয়েকজনের সহযোগিতায় রেডিও বানিয়ে বৃটিশ সরকারের সাথে যোগাযোগের চেস্টা করে তারা। ঘটনাটি ধরা পরে যায় জাপানিদের কাছে। আর সেই অপরাধে বন্দী করা হয় এরিককে। পশুর খাচায় ঢুকানো সহ বিভিন্ন কায়দায় টর্চার করা হয় তাকে। টর্চার সেলের তদারকির দায়িত্বে ছিল জাপানি অফিসার নাগাসী। যুদ্ধ শেষ হয়ে যায় কিন্তু এরিকের সপ্নে এখনো আসে সেই দিনগুলো। এমনকি চল্লিশ বছর পরও পিছু ছাড়েনি সেই সব বিভত্স দিনগুলি। এরিকের স্ত্রী এইসব দেখে রিতিমত ভয় পেয়ে যায় যে তার সামী কি দিনে দিনে পাগল হয়ে যাচ্ছে? সে প্রতিজ্ঞা করে যে করেই হোক তার সামীকে সুস্থ সাভাবিক জিবনে ফিরিয়ে আনবেই। তার সেই চাওয়া থেকে সে জানতে পারে তার সামীকে টর্চার সেলে রেখে টর্চার করা নাগাসি এখনো বেচে আছে। থাইল্যান্ডে ২য় বিশ্ব যুদ্ধ নিয়ে নির্মিত একটি যুদ্ধ যাদুঘর পরিচালনা করেন তিনি।
সামীকে সেই ঠিকানা সহ একটি ধারালো ছুরিও দেন তিনি। এই আশায় যে সামীর ক্ষোভের ব্যাক্তিটিকে যদি উনি ধরাশায়ী করেন তাহলেই উনার সামীর মুক্তি মিলবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এরিক ছুরি সহ থাইল্যান্ড এলো চল্লিশ বছর পর্। সামনাসামনি হলো নাগাসির্। জানতে চাইলো তাকে কেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে এরেস্ট করা হয়নি? চল্লিশ বছর পরও নাগাসি চিনতে পেরেছিল এরিককে। জবাবে নাগাসি সত্যি কথাটিই বলেছিল যখন সকল জাপানি সৈনিকদের বন্দি করা হচ্ছিল, তখন সে তাদেরকে বলেছিল যে সে দুভাষীর কাজ করত। এরিক তাতে রেগে গিয়ে নাগাসিরা যেভাবে টর্চার করত নাগাসিকেও সেই ভাবে টর্চার করতে চাইল। চাইল সাথে আনা ছুরিটা দিয়ে নাগাসির ইহকাল গুটিয়ে দিতে ,কিন্তু পারল না এরিক।
হাতের নাগালে আসা, চল্লিশ বছর যাবত যার মৃত্যু কামনা করে আসছে সেই নাগাসির জান সে কবচ করতে পারল না। ক্ষমা করে দিল নাগাসিকে। তারপর তাদের দুজনকেই একসাথে ঘুরতে দেখা গিয়েছে থাইল্যান্ডের রাস্তায়।
কেন পারল না, এরিক?
আমার ধারনা সময় মানুষকে অনেক ক্ষতই ভুলিয়ে দিতে পারে। আমাদের আদম্য প্রতিশোধ স্পৃহার মাঝেও সময় তার পলিমাটির স্তর ফেলে দিতে পারে। আর এরিক সেই পলিমাটির স্তর ঠেলে বেড়িয়ে এসে খুন করতে পারেনি নাগাসিকে।
*পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিক্রিত অটোবায়োগ্রাফি দ্যা রেলওয়ে ম্যান নিয়ে একটি ছবিও নির্মিত হয়েছে.
The Railway Man
ছবিতে অভিনয় করেছে অস্কারজয়ী নিকোল কোডম্যান এবং কলিন ফার্থ।
বিষয়: বিবিধ
১২৬৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন