ঘটনা ক্রমে যদি আপনার ছেলে যেনা কারি রূপে আবির্ভূত হয়.....! ✔✔✔ আব্দুর রহিম
লিখেছেন লিখেছেন নুর আয়শা আব্দুর রহিম ১৯ জুলাই, ২০১৬, ০২:৪৮:০৭ রাত
যৌতুক ব্যাধির বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আমাকে সচেতন চেষ্টা করেছেন বেশ কিছু পাঠক!!
তারমধ্যে অন্যতম বিষয় হচ্ছে মোহরানা..!
তাদের অভিযোগ মোহরানার অংক দিন দিন যে হারে বাড়তেছে সেই হিসেবে যৌতুকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা পুরুষের উপর বোঝা চাপানোর মত!!
বুঝা গেল তারা যৌতুক আদায় করে মোহরানার ভার কমাতে চাহে...!
প্রথমে বলতে চাই সেই বিবাহ ইচ্ছুক যুবককে, আপনি একটি অপরাধকে অন্য একটি ইসু দিয়ে মোকবেলা করতে পারেন না। যদি এমনটি করেন তা হলে দু'দিকে চাপাচাপির মাত্রা বেড়েই চলবে। ফলাফল আসবে ধারাবাহিক অরাজকতা। বেড়ে চলবে যৌতুকের ভাইরাস, বেড়ে চলবে মোহরানার বোঝা!
মোহরানার বোঝাকে যদি নিয়ন্ত্রণে আনতে চান, (যদিও আমি মোহরানাকে বোঝা মনে করিনা!) তাহলে যৌতুকের চাহিদা মন থেকে দূর করতে হবে। আপনি যখন যৌতুকের চাহিদার লিষ্ট ধরিয়ে দেন -হাজার বরযাত্রী, উন্নত মানের ফার্নিচার, ১২৫ সিসি হোন্ডা, প্রাইভেট কার, টিভি, ফ্রিজ, বিদেশে চাকরি, নগদ টাকা ইত্যাদি.... তখন অভিভাবকের কাছে মেয়েটিকে বোঝা মনে হয়, অভিভাবকের পাশাপাশি মেয়েটির মনেও ক্রোধ তৈরি হয়! ক্রোধ থেকে আসে মোটা অংকের মোহরানার প্রস্তাব!
প্রস্তাব থেকে দরকষাকষির এক পর্যায়ে ধারণ করা হয় মোটা অংকের মোহরানা....। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতিতে মোহরানা ব্লেকমেইল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। মোহরানা ইসলামী সংস্কৃতি অপরিহার্য অংশ হলেও তা আমাদের প্রচলিত সংস্কৃতিতে ব্লেকমেইল হিসেবে ব্যবহারীত হচ্ছে! মূলত মোহরানার নিয়ম হচ্ছে যা ধার্য করা হয়েছে তা কনেকে নগদে পরিশোধ করা, তা না করে গহনা-পোশাকে যা ব্যায় হয় তা বাদ দিয়ে মোহরানার বড় অংশ বাকি হিসেবে রেখে দেয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাকি টাকা আদায় করা হয়না।
মোহরানার বাকি রাখা অংশটাকে সংসারের অমিল বা তালাক পর্যায়ের সময়ে ব্লেকমেইল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়! যা কোন ভাবে কাম্য নয়। একটি সংসার তালাকের পর্যায়ে যাওয়ার পথ খুব সহজে তৈরি হয়না, মতের অমিল, হিংসা প্রতিহিংসা, অবাধ্যতা, যৌতুক ইত্যাদির কারণে একটি সংসার তালাকের পর্যায়ে চলে আসে। একটি সংসারে একে অন্যকে দৃশ্যমান বা লিখিত তালাক দেয়ার আগে মানসিক তালাক হয়ে যায়। আবার অনেক মেজাজ গরম পুরুষকে দেখা যায় ১..২...৩...তালাক শুনিয়ে দেয় তার সহধর্মিণীকে! মানসিক তালাক আর মৌখিক তালাক হয়ে যাবার পরও তাদেরকে বিচ্ছিন্ন হতে বাঁধা প্রদান করে মোটা অংকের মোহরানার টাকা....!
মানসিক বা মৌখিক ভাবে তালাক হয়ে যাবার পর মোহরানার মোটা অংকের টাকাকে বাঁধা হিসাবে দাড় করানো ইসলামিক আইনের পরিপন্থি! মৌখিক তালাক হবার পরে তালাকপ্রাপ্তার সাথে ঘর করা নিসিদ্ধ হয়ে যায়। এই নিসিদ্ধ কাজটি মোটা অংকের মোহরানার কারণে যেনার সহযোগি হিসেবে কাজ করে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে বড় অংকের মোহরানার টাকা পুরুষের মৌলিক অধিকার খুন্ন করে, মোহরানার টাকা আদায় করতে অপারগ হয়ে তালাক দেয়া স্ত্রীর সাথে ঘর করে অনেক কাপুরুষ। তাই সাধ্যের ভেতরে মোহরানার টাকা ধার্য্য করা উচিত।
এমন কোন সংসার নেই যেখানে মনমালন্য নেই, সুতরাং বাস্তবতার দিকে বিচক্ষণতার দৃষ্টি দিয়ে নিজের অবস্থান অনুযায়ী জীবন সঙ্গী খুঁজে বিয়ের আয়োজন করা অত্যন্ত জরুরি। যেখানে খুবই কম খরচে বিবাহ সম্পাদন করা সম্ভব হয়, রাসুল (সাঃ) কম খরচের বিবাহ অনুষ্ঠান খুবই পছন্দ করতেন। যৌতুক মুক্ত থেকে বিবাহ সম্পন্ন করাও অত্যন্ত জরুরি। সমর্তের বাইরে যেন মোহরানা ধার্য্য করা না হয়, সেই দিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
অভিভাবক গণের প্রতি অনুরোধ যৌতুকে দরকষাকষি করতে গিয়ে আপনার আদরের সন্তানকে মোহরনার বড় বোঝা চাপিয়ে দিবেননা। ঘটনা ক্রমে যদি আপনার ছেলে যেনা কারি রূপে আবির্ভূত হয় তা হলে হাশরের ময়দানে আপনাকেও জবাবদিহিতা করতে হবে।
পাঠক আপনার আমার মাঝে সচেতনতা তৈরি হোক এটাই প্রত্যাশা।
বিষয়: বিবিধ
১১৫২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটা আমাদের নিকাহনামায় একটা ধারা হিসেবেই স্থান পেয়ে গেছে - যে ধার্য্য করা মোহরানার কিছু বিয়ে পড়ার আগেই উসূল করবে , আর বাকিটা পরে সুবিধা মত সময়ে উসুল করবে ।
এই সুবিধামত সময় ১৫ / ২০ বছরেও আসে না । কিন্তু এর ফাঁকে স্ত্রীরা যে স্বামীর কাছ থেকে ফি বছর - গিফট্ হাতিয়ে নেয় , হিসেব করলে দেখা যাবে যে সেটা দেনমোহরের বাকী অংশের চেয়েও কয়েকগুন বেশী । এবং স্বামী বেচারা ফরয নামাজ না পড়ে শত শত রাকআত নফল নামাজ পড়ার মত ফরয কাজ দেনমোহরের বাকী অংশ না দিয়ে স্ত্রীকে মাত্রাতিরিক্ত লাক্সারী দিয়ে যাচ্ছে।
স্ত্রীও স্বামীকে বলে না যে - এসব গিফট না দিয়ে তুমি বরং আমাকে দেনমোহরের টাকা দিয়ে দাও ।
এটা সে পাবেই - আজ না হোক কাল । বা না দিলেও পরকালে স্বামীকে কাঁচকি দিয়ে ধরার সুযোগ আছে । সেটা বরং উহ্য রেখে সে এই নীতি ফলো করে - নগদ যা পাও হাতে পেতে নাও । এসব লাক্সারী নেবার কোন হিসাব অন্তত স্ত্রীকে দিতে হয় না।
দেনমোহরের বাকী টাকা পেয়ে গেলে স্বামী থেকে ইচ্ছেমত খসানোর সুযোগ সে হারিয়েও ফেলতে পারে । তাই কোন মেয়েই - হোক সে আধুনিকা বা পিছিয়ে থাকা - স্বামীর থেকে লাক্সারী না বাগিয়ে আগে দেনমোহরের বাকী অংশ উসুলের জন্য তাগাদা দেয় না।
*******************************************************
আর , আমি সবসময়েই যৌতুক নেবার পক্ষে । কারণ যৌতুক নেওয়া হয় মেয়ের বাবার কাছ থেকেই, মেয়েকে বাবা যে লাক্সারীতে রেখেছে সেই পেস ধরে রাখার জন্যই যৌতুক নেওয়া হয় । কারণ ২/৩ বছর ধরে চাকরী করা একজন ২৬/২৭ বছরের যুবকের ২৪/২৫ বছর ধরে চাকরি করা একজন মধ্য বয়সী লোকের মত ব্যাংক ব্যালান্স হবে না ।
না হলে হঠাৎ করে লাক্সারীর মাত্রা কমে গেলে বাবার সেই আদূরে মেয়ের মাথা বিগড়ে যাবে । ফলে স্বামীর/শশুড়বাড়িতে অশান্তির সৃষ্টি করবে , যেটা মেয়ের বাবার জন্য সন্মা্নজনকও হবে না ।
তাছাড়াও , যে কোন সুখী (বাহ্যিক দৃষ্টিতে) মুসলমান পরিবার মানেই শরিয়তপরিপন্থীভাবে চলা পরিবার। কারণ শরিয়ত সন্মতভাবে সংসারে যেখানে বসিং করার কথা স্বামীর সেখানে স্ত্রীরাই বসিং করে । অথচ স্বামী যেহেতু তার জন্য ব্যব করে সেহেতু তাকে স্বামীর অনুগত হয়েই চলার কথা আল্লাহ বলে দিয়েছেন পবিত্র ক্বুরআনে।
সাংসারিক জীবনে শরিয়তকে ফলো করার ক্ষেত্রে মনুষ্য আইন নারীর ফেভারে কাজ করে বিধায় সংসারের শান্তির জন্য পুরুষদের বাধ্য হয়েই এই ছাড় দিতে হয় যেটার জন্য পরকালে আল্লাহ তাকে জিজ্ঞাসা করবেনই - কেন তার বিধান ফলো করলো না সংসারের ক্ষেত্রে ?
নারীরাও কি স্বামীর অনুগত না হয়ে শরিয়ত পরিপ্থীভাবে স্বামীর উপর বসিং করার জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করবে না ?
বিয়ে শরিয়ত মোতাবেক হলেও সংসার চলে শরিয়তপরিন্থীভাবে । এক্ষত্রে স্ত্রীরাই শরিয়তকে অমান্য করে ।
শরিয়তকে ফলো করার দূর্বলতা কি শুধই পুরুষ মানুষদের একার ? এসব অনাচারের জন্য কি আল্লাহ শুধু পুরুষ মানুষদেরই দোষারোপ করবেন ? অন্যায়ের সূত্রপাত যারা করলো সেই নারীরা কি সেফ থেকে যাবে সংসার পুরুষের রিসপনসিবিলিটি ছিল বলে ?
ন্যায্য অধিকার যখন হারাচ্ছেনই তখন তা টাকার বিনিময়ে নয় কেন ?
আমও হারাবে আবার ছালাও হারাবে - জোর করে এতটা বোকা বানানো হয় কেন পুরুষ মানুষদের ? শরিয়ত মানলে সবদিক দিয়েই মানা উচিত । না মানলে অন্যকেও সেই সুযোগ থেকে কেন বন্চিত করা ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন