রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সম্মান অর্জনের জন্য বিয়ে করবে আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন... ইসলামী দৃষ্টিতে বিয়ে.....

লিখেছেন লিখেছেন নুর আয়শা আব্দুর রহিম ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:১১:৪৪ রাত



সুখময় জীবন গঠনের প্রথম ধাপ হচ্ছে স্বামী ও স্ত্রী। আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণ এবং মানসিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ হচ্ছে বিয়ে। আর বিয়ে-শাদি হচ্ছে প্রত্যেক মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা।্ এ চাহিদা পূরণার্থেই ইসলামী শরিয়ত বিয়ের হুকুম আরোপ করেছে। মানব জাতিকে অবৈধ-মিলন তথা লিভ-টুগেদার থেকে বিরত রাখা এবং যৌন চাহিদা মেটানোর জন্যই মহান রাব্বুল আলামিন বিয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। আমাদের আদিপিতা হজরত আদম আ: পৃথিবীতে আগমন করার আগে তিনি কী যেন একটি শূন্যতাবোধ করছিলেন। তার এ শূন্যতা তথা মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্যই মহান রাব্বুল আলামিন হজরত আদম আ:-এর পাঁজর থেকে সৃষ্টি করলেন হজরত হাওয়া আ:কে। ফলে আদম আ:-এর অশান্ত মন প্রশান্তিতে ভরে ওঠে এবং জান্নাতের হিমেল ছায়ায় তাদের পবিত্র বিয়ে সংঘটিত হয়। ওই বিয়েতে বরযাত্রী (অতিথি) হিসেবে আসন গ্রহণ করেন ফেরেশতারা এবং খুতবা পাঠ করেন স্বয়ং মহান রাব্বুল আলামিন। আর এটাই হচ্ছে সর্বপ্রথম বিয়ে। এখান থেকেই বিয়ের প্রচলন শুরু হয়।

ইমাম আহনাফ তথা হানাফি মাজহাব মতে বিয়ে হচ্ছে সুন্নতে মুয়াক্কাদা। বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা:-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। প্রাপ্তবয়স্ক ও সামর্থ্যবান হলে কালবিলম্ব না করে বিয়ে করে নেয়া ঈমানি দায়িত্ব। বিয়ে শুধু জৈবিক চাহিদাই নয় বরং একটি মহান ইবাদতও বটে। বিয়ে দ্বারা দ্বীন-দুনিয়ার কল্যণ সাধিত হয়।

হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বিয়ে করল তার অর্ধেক ঈমান পূর্ণ হয়ে গেল, সে যেন বাকি অর্ধেক পূর্ণ করার চেষ্টা করে’ (মিশকাত শরিফ)।

রাসূল সা: আরো ইরশাদ করেন, ‘বিয়ে হলো ঈমানের অর্ধেক, যে ব্যক্তি মতা থাকা সত্ত্বেও বিয়ে করল না সে আমার দলভুক্ত নয়।’ মহানবী সা: ইরশাদ করেন, ‘ইসলামে বৈরাগ্য নেই এবং বৈরাগ্য জীবনযাপন করাকেও রাসূল সা: নিষেধ করেছেন’ (দারেমি শরিফ)।

হাদিসে বলা হয়েছে, ‘স্বামী-স্ত্রী যখন তাদের গোপন কামরায় বসে একান্ত আলাপ করে, হাসি খুশি থাকে, তার সওয়াব নফলের মতো।’

বিয়ের দ্বারা পাপকর্ম থেকে রা পাওয়া যায়। জৈবিক চাহিদা পূরণ হয়। নৈতিক চরিত্রের হিফাজত হয়। বংশ পরম্পরা অব্যাহত থাকে। সুখময় সমাজ ও আদর্শ পরিবার গঠন সম্ভব হয়। মানসিকভাবে মন সুস্থ থাকে। মনে প্রশান্তি আসে। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক গভীর হয়। বিয়ের ফজিলত অপরিসীম।

ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেয়া পিতার দায়িত্ব। যদি পিতা না থাকে তাহলে তার অভিভাকের কর্তব্য হলো ছেলেমেয়েদের ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে দেয়া। বিয়ে যেহেতু সবার জন্য অত্যাবশ্যক তাই মহান রাব্বুল আলামিন অতি সহজে বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিয়ের মধ্যে ব্যয়বহুল ও অতিরিক্ত আড়ম্ভরতাকে নিষেধ করা হয়েছে। এ জন্যই আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা: তাঁর নিজ কন্যা হজরত ফাতেমা রা:-এর বিয়ের অনুষ্ঠান অত্যন্ত সাদাসিধেভাবে সম্পন্ন করেছিলেন। হুজুর সা: সাহাবাদের ডেকে নিজেই খুতবা পড়ে ফাতিমার রা:-এর বিয়ে পড়িয়ে দেন এবং উপস্থিত মেহমানদের মাঝে খুরমা ও খেজুর বণ্টন করে দেন। এ বিয়েতে মোহর ধার্য করা হয়েছিল মাত্র ৪০০ মিছকাল (দশ দিরহাম)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে, সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না’ (মিশকাত শরিফ)।

কিন্তু বর্তমান সমাজে কনের প থেকে বড় অঙ্কের মোহর এবং বরের প থেকে মোটা অঙ্কের যৌতুক নিয়ে বিয়ে-শাদিতে চলছে দরদাম তথা বাড়াবাড়ি। অথচ উভয়টি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে নাজায়িজ তথা হারাম।

হজরত উমর রা: বলেন, ‘হে মুসলমান সম্প্রদায়! তোমরা বিয়ে-শাদিতে মোটা অঙ্কের মোহর, জাঁকজমক এবং যৌতুক দাবি করো না, কেননা আল্লাহর কাছে এটার কোনো মর্যাদা তথা মূল্য নেই, যদি থাকত তাহলে রাসূল সা: তাঁর মেয়ে ফাতেমা রা:-এর বিয়েতে করতেন’ (তিরমিজি শরিফ)।

ইসলামী শরিয়তে যৌতুক নেয়া ও দেয়া হারাম। যৌতুকের কারণেই অনেক সোনার সংসার ভেঙে যায়, সংসারে আশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। বিয়েতে যদি আপন পিতা নিজ মেয়ের সাথে স্বেচ্ছায় বরের চাওয়া তথা দাবি ছাড়া সাংসারিক প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস দিয়ে থাকেন তাহলে সেটা যৌতুক হবে না; বরং এটা জেহেজ (উপঢৌকন বা হাদিয়া) হবে।

কিন্তু নিজের ওপর বোঝা হয় কিংবা বরের চাহিদা বা দাবি মেটাতে যা দেয়া হয় এটা হবে যৌতুক। সমাজে প্রচলিত যৌতুকের কোনোরূপ বৈধতা শরিয়তে নেই। তার কোনো অস্তিত্ব মহানবী সা:, খোলাফায়ে রাশেদিন, সাহাবায়ে কেরামদের যুগে ছিল না। যার কারণে এটা হচ্ছে নাজায়েজ (হারাম)। যৌতুকের নেশা সমাজে মহামারী আকারে প্রকাশ পাচ্ছে। সমাজের জন্য এক মহাবিপদ ও সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে যৌতুক। কন্যার পিতা কারো কাছ থেকে টাকা হাওলাত বা কর্জ করে, কিংবা সুদের ওপর নিয়ে যৌতুকের (বরের) চাহিদা মেটায়। বর্তমান সমাজে বিয়েতে যৌতুক না দেয়াকে অপমান মনে করা হয়।

অথচ রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সম্মান অর্জনের জন্য বিয়ে করবে আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন, আর যে ব্যক্তি বিয়েতে যৌতুক দাবি করবে সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা দরিদ্রতা ও কঠিন আজাব ছাড়া আর কিছুই দেবেন না।’ আমাদের সমাজ আজ যৌতুকের জন্য পাগল, অথচ রাসূল সা: তাঁর মেয়ে হজরত ফাতেমা রা:-এর বিয়েতে কোনো যৌতুক দেননি বা সাহাবায়ে কেরামরাও বিয়েতে কোনো যৌতুক দাবি করেননি।

নবী-রাসূল ও সাহাবায়ে কেরামদের আদর্শই হচ্ছে আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। প্রিয় নবী সা: তাঁর নিজের মেয়ের বিয়েতে কোনো যৌতুক দেননি, তবে জেহেজ (উপঢৌকন) হিসেবে যা যা দিয়েছিলেন নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো :

১. দু’টি ইয়ামানি চাদর, ২. একটি বিছানা, ৩. দু’টি খেজুরের ছাল ভর্তি বালিশ, ৪. একটি পেয়ালা, ৫. দু’টি আটা পেষার চাক্কি, ৬. একটি পানি রাখার মাটির পাত্র, ৭. একটি চৌকি ও ৮. একটি কম্বলÑ এগুলোই ছিল ফাতেমা রা:-এর বিয়ের উপঢৌকন (সুবহানাল্লাহ)।

আসুন, আমরা এ সমাজ থেকে যৌতুকপ্রথা প্রতিরোধ করি এবং শরিয়তের আলোকে বিয়ে-শাদি সম্পন্ন করি। আল্লাাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দিন। আমিন।

✔✔এহসান বিন মুজাহির

বিষয়: বিবিধ

১৫১৬ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

264171
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:১৯
মামুন লিখেছেন : খুব সুন্দর একটি বিষয় অনুপম লিখনির দ্বারা মূর্ত হয়েছে।
অনেক ভালো লাগলো। বিবাহ সম্পর্কে রেফারেন্স গুলো জেনে তথযভান্ডার আরো সমৃদ্ধ হল। আর যৌতুক প্রথা যে একটু কু-প্রথা, সেটিও স্পষ্ট হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা আপনাদের। Rose Rose Rose Good Luck
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৩৭
207675
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আপনাকেওও ধন্যবাদ।
264173
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৪:২৮
বাজলবী লিখেছেন : তথ্য সমৃদ্ধিযুক্ত ইসলামের অালোকে লেখাটি ফুটিয়ে তুলেছেন। ধন্যবাদ।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৩২
207724
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : Yahoo! Fighter Yahoo! Fighter
264177
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৫:০৩
কাহাফ লিখেছেন : পৃথিবীর সবচেয়ে আদি সম্পর্ক হচ্ছে বিয়ে।বিয়ে নিয়ে প্রচলিত অনৈসলামিক কার্যকলাপ মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।আল্লাহ সবাই কে এবিষয়ে সঠিক বুঝ দান করুন.......আমিন।
অনেক ধন্যবাদ এমন সুন্দর পোস্টের জন্যে।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৩৩
207725
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আমিন
264188
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:২৪
বুড়া মিয়া লিখেছেন : ভালো বিষয় নিয়ে লিখেছেন, ভালো লাগলো।
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:৩৩
207726
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : Yahoo! Fighter Yahoo! Fighter
264242
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩০
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৩৮
207928
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : ধন্যবাদ
264248
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৩২
চোথাবাজ লিখেছেন : ‘যে ব্যক্তি সম্মান অর্জনের জন্য বিয়ে করবে আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন... ইসলামী দৃষ্টিতে বিয়ে...
264392
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ১২:৩১
এবেলা ওবেলা লিখেছেন : ভাইয়া ভাবী-- এই পোষ্ট কে লিখেছেন -- শিরোনামে লেখেন নাই ০০ তাই কি কমেন্ট করব ভাবতাছি-- At Wits' End At Wits' End At Wits' End At Wits' End Waiting Waiting
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:৪০
207929
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : নিচে নাম দেয়া আছে দেখুন।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৭:৩২
207955
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : @ওবেলা ভাইয়া, আপনিও কি তাহলে আমার মত Tongue শিরোনাম দেখে সরাসরি কমেন্টএর ঘরে চলে আসেন? Day Dreaming আজকেই নিশ্চি হলাম Tongue
264426
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৫৪
আফরা লিখেছেন : শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ ।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২৭
208041
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : আপনাকে ও ধন্যবাদ।
264462
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সকাল ০৮:৩১
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : খুবি ভালো শেয়ার। Rose Rose
আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা: তাঁর নিজ কন্যা হজরত ফাতেমা রা:-এর বিয়ের অনুষ্ঠান অত্যন্ত সাদাসিধেভাবে সম্পন্ন করেছিলেন। হুজুর সা: সাহাবাদের ডেকে নিজেই খুতবা পড়ে ফাতিমার রা:-এর বিয়ে পড়িয়ে দেন এবং উপস্থিত মেহমানদের মাঝে খুরমা ও খেজুর বণ্টন করে দেন। এ বিয়েতে মোহর ধার্য করা হয়েছিল মাত্র ৪০০ মিছকাল (দশ দিরহাম)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা রা: থেকে বর্ণিত রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হচ্ছে, সুন্নতি বিয়ে, অর্থাৎ যে বিয়েতে খরচ কম হয় এবং কোনো জাঁকজমক থাকে না’ (মিশকাত শরিফ)


খুবই সুন্দর - ভালো লাগলো অনেক Good Luck Good Luck যাজাকাল্লাহু খাইর Rose Good Luck Good Luck Rose
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:২৮
208043
নুর আয়শা আব্দুর রহিম লিখেছেন : মন্তব্যের জন্য. ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File