মহিলাদের নামায-পদ্ধতি পুরুষের নামাযের মত নয়।

লিখেছেন লিখেছেন হুসাইন হামদী ২০ জুলাই, ২০১৪, ১২:৩৩:২৮ রাত

মহিলাদের নামায-পদ্ধতি পুরুষের নামাযের মত নয়

নারী-পুরুষের শারীরিক গঠন, সক্ষমতা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নানা বিষয়ে যেমন ‎পার্থক্য রয়েছে, তেমনি পার্থক্য রয়েছে ইবাদতসহ শরীয়তের অনেক বিষয়ে। ‎‎যেমন, সতর। পুরুষের সতর হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত, পক্ষান্তরে পরপুরুষের ‎সামনে মহিলার প্রায় পুরো শরীরই ঢেকে রাখা ফরয। নারী-পুরুষের মাঝে এরকম ‎পার্থক্যসম্বলিত ইবাদতসমূহের অন্যতম হচ্ছে নামায। তাকবীরে তাহরীমার জন্যে ‎হাত উঠানো, হাত বাধা, রুকু, সেজদা, ১ম ও শেষ বৈঠক ইত্যাদি ক্ষেত্রগুলোতে ‎পুরুষের সাথে নারীর পার্থক্য রয়েছে। তাদের সতরের পরিমান যেহেতু বেশী, ‎তাই যেভাবে তাদের সতর বেশী রক্ষা হয় সেদিকটিও বিবেচনা করা হয়েছে এ ‎‎ক্ষেত্রগুলোতে। মুসলিম উম্মাহর প্রায় দেড় হাজার বছরের অবিচ্ছিন্ন আমলের ‎ধারা তাই প্রমাণ করে। বিষয়টি প্রমাণিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ‎ওয়াসাল্লামের হাদীস, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছারের ‎মাধ্যমেও। ‎

প্রথমে আমরা এ সংক্রান্ত মারফূ’ হাদীস, এবং পরে পর্যায়ক্রমে সাহাবায়ে কেরাম ‎ও তাবেয়ীগণের ফতোয়া ও আছার উল্লেখ করবো।‎

মারফু’ হাদীস

‎১.‎‏ ‏তাবেয়ী ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব র. বলেন,‎

‏…. أن رسول الله – صلى الله عليه وسلم – مر على امرأتين تصليان، فقال: ‏اذا سجدتما فضما بعض اللحم الى الأرض، فإن المرأة ليست في ذلك كالرجل. ‏‏(كتاب المراسيل للإمام أبو داود)‏

একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযরত দুই মহিলার পাশ ‎দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে ) বললেন, যখন ‎‎সেজদা করবে তখন শরীর যমীনের সাথে মিলিয়ে দিবে। কেননা মহিলারা এ ‎‎ক্ষেত্রে পুরুষদের মত নয়।” (কিতাবুল মারাসীল, ইমাম আবু দাউদ ৫৫, হাদীস ৮০)‎

প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আলেম নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‎“আওনুল বারী” (১/৫২০) তে লিখেছেন, ‘উল্লিখিত হাদীসটি সকল ইমামের ‎উসূল অনুযায়ী দলীল হিসেবে পেশ করার যোগ্য।’

মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আমীর ইয়ামানী ‘সুবুলুস সালাম শরহু বুলুগিল ‎মারাম’ গ্রন্থে (১/৩৫১,৩৫২) এই হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে পুরুষ ও ‎মহিলার সেজদার পার্থক্য করেছেন।‎

‎২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত,‎

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- :্র إِذَا جَلَسْتِ الْمَرْأَةُ فِى الصَّلاَةِ وَضَعَتْ ‏فَخِذَهَا عَلَى فَخِذِهَا الأُخْرَى ، وَإِذَا سَجَدْتْ أَلْصَقَتْ بَطْنَهَا فِى فَخِذَيْهَا كَأَسْتَرِ مَا ‏يَكُونُ لَهَا ، وَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَيَقُولُ : يَا مَلاَئِكَتِى أُشْهِدُكُمْ أَنِّى قَدْ ‏غَفَرْتُ لَهَا গ্ধ.‏‎ ‎رواه البيهقي في السنن الكبرى ٢/٢٢٣ في كتاب الصلاة (باب ما ‏يستحب للمرأة من ترك التجافي في الركوع والسجود)، وفيه أبو مطيع البلخي ‏وقال العقيلي فيه : كان مرجئا صالحا في الحديث.‏

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহিলা যখন নামাযের মধ্যে ‎বসবে তখন যেন (ডান) উরু অপর উরুর উপর রাখে। আর যখন সেজদা ‎করবে তখন যেন পেট উরুর সাথে মিলিেেয় রাখে; যা তার সতরের জন্যে অধিক ‎উপযোগী।‎‏ ‏আল্লাহ তাআলা তাকে দেখে (ফেরেশতাদের সম্বোধন করে) বলেন, ‎ওহে আমার ফেরেশতারা! তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম। ‎সুনানে কুবরা, বায়হাকী ২/২২৩, অধ্যায়: সালাত, পরিচ্ছেদ: মহিলার জন্যে রুকু ও ‎‎সেজদায় এক অঙ্গ অপর অঙ্গ থেকে পৃথক না রাখা মুস্তাহাব। এটি হাসান হাদীস।‎

‎৩. হযরত ওয়াইল ইবনে হুজর রা. বলেন,‎

جئت النبي صلى الله عليه و سلم فقال : فساق الحديث. وفيه: يا وائل بن ‏حجر إذا صليت فاجعل يديك حذاء أذنيك والمرأة تجعل يديها حذاء ثدييها. ‏‏(رواه الطبراني في الكبير جـ ٢٢ صـ ١٩-٢٠ )‏

আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে দরবারে হাজির হলাম। তখন ‎তিনি আমাকে (অনেক কথার সাথে একথাও) বলেছিলেন: হে ওয়াইল ইবনে ‎হুজর! যখন তুমি নামায শুরু করবে তখন কান বরাবর হাত উঠাবে। আর মহিলা ‎হাত উঠাবে বুক বরাবর। (আলমুজামুল কাবীর, তাবারানী ১৯-২০/২২, এই ‎হাদীসটিও হাসান) ‎

উল্লিখিত হাদীসগুলো থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে যায়, কিছু কিছু হুকুমের ক্ষেত্রে ‎মহিলার নামায আদায়ের পদ্ধতি পুরুষের নামায আদায়ের পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। ‎বিশেষত ২নং হাদীসটি দ্বারা একথাও বোঝা গেল যে, মহিলার নামায আদায়ের ‎শরীয়ত নির্ধারিত ভিন্ন এই পদ্ধতির মধ্যে ওই দিকটিই বিবেচনায় রাখা হয়েছে যা ‎তার সতর ও পর্দার পক্ষে সর্বাাধিক উপযোগী।‎

উল্লেখ্য, এই সব হাদীসের সমর্থনে মহিলাদের নামায আদায়ের পদ্ধতির পার্থক্য ‎ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে এমন আরো কিছু হাদীস রয়েছে।

(চলবে)

বিষয়: বিবিধ

৭৭৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File