ঈসা আ: সম্পর্কিত আকিদা
লিখেছেন লিখেছেন দিয়া বৃষ্টি ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৯:১৫:২৮ রাত
১৯১) অর্থাৎ তাদের অপরাধ করার দুঃসাহস এতই বেড়ে গিয়েছিল যার ফলে তারা আল্লাহর রসূলকে রসূল জেনেও হত্যা করার পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং গর্ব করে বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর রসূলকে হত্যা করেছি। ওপরে আমরা দোলনার ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছি তা থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ইহুদীদের জন্য ঈসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতে সন্দেহ করার কোন অবকাশই ছিল না। এছাড়াও তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে থেকে যে উজ্জ্বল নিশানীগুলো প্রত্যক্ষ করেছিল (সূরা আলে ইমরানের ৫ম রুকূ’তে ইতিপূর্বে এটি আলোচিত হয়েছে) তা থেকে তিনি যে আল্লাহর রসূল এ বিষয়টি সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিল। কাজেই দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তারা তাঁর সাথে যা কিছু করেছিল তা কোন ভুল বুঝাবুঝির ভিত্তিতে করেনি বরং তারা ভালোভাবেই জানতো যে, এই অপরাধ তারা এমন এক ব্যক্তির সাথে করছে যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পয়গাম্বর হয়ে এসেছেন।
কোন জাতি এক ব্যক্তিকে নবী বলে জানার ও মেনে নেয়ার পরও তাকে হত্যা করেছে, আপাতঃ দৃষ্টিতে এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার বলে মনে হয়। কিন্তু দুনিয়ার বিকৃত জাতিদের রীতিনীতি, কাজ-কারবার এমনই বিস্ময়করই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায় ও পাপ কাজের সমালোচনা করে এবং তাদের অবৈধ কাজে বাধা দেয়, এমনকোন ব্যক্তিকে তারা নিজেদের মধ্যে বরদাশ্ত করতে পারে না। নবী হলেও এই ধরনের লোকেরা হামেশা অসৎ, দুশ্চরিত্র ও পাপাচারী জাতিদের হাতে কারাযন্ত্রণা ও মৃত্যুদণ্ড ভোগ করে এসেছেন। তালমুদে লিখিত হয়েছেঃ বখতে নসর বায়তুল মাক্দিস জয় করে সুলাইমানী হাইকেলে প্রবেশ করলেন এবং সেখানে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলেন। যে স্থানে কুরবানী করা হয় সে স্থানের ঠিক সামনে দেয়ালে এক জায়গায় তিনি একটি তীরের নিশানী দেখলেন। তিনি ইহুদীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের নিশানী? ইহুদীরা জবাব দিল, “এখানে আমরা যাকারিয়া নবীকে হত্যা করেছিলাম। তিনি আমাদের অসৎকাজের জন্য তিরস্কার করতেন। অবশেষে তার তিরস্কারে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা তাকে হত্যা করেছি।” বাইবেলে ইয়ারমিয়াহ নবী সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ বনী ইসরাইলদের অসৎ কর্মসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর হযরত ইয়ারমিয়াহ তাদের এই মর্মে সতর্ক করে দিলেন যে, এসব বদ কাজের প্রতিফল হিসেবে আল্লাহ অন্য জাতিদের হাতে তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন। এর জবাবে তার বিরুদ্ধে দোষারোপ করলোঃ “এই ব্যক্তি ‘কালদানী’ জাতির সাথে হাত মিলিয়েছে, তাদের সাথে যোগসাজশ করেছে। এই ব্যক্তি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” এই অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হলো। এমনকি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের শূলে চড়াবার ঘটনার মাত্র দুই আড়াই বছর পূর্বে হযরত ইয়াহ্ইয়ার (আ) ব্যাপারটি ঘটে গিয়েছিল। ইহুদীরা সাধারণভাবে তাকে নবী বলে জানতো। অন্তত তাকে জাতির সবচাইতে সৎলোক হিসেবে মানতো। কিন্তু যখন তিনি হিরোডিয়াসের (ইহুদী রাষ্ট্র প্রধান) দরবারের অন্যায় ও অসৎকাজের সমালোচনা করলেন তখন আর তাকে বরদাশত করা হলো না। প্রথমে তাকে কারারুদ্ধ করা হলো তারপর রাষ্ট্র প্রধানের প্রেমিকার দাবী অনুযায়ী তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হলো। ইহুদী জাতির এই অতীত রেকর্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করার পর একথা মোটেই বিস্ময়কর মনে হয় না যে, তাদের ধারণা মতে তারা হযরত ঈসা মসীহকে (আ) শূলে চড়াবার পর বুকে ঠুকে একথা বলেছেঃ “আমরা আল্লাহর রসূলকে হত্যা করেছি।”
১৯২) এটি আবার প্রসঙ্গক্রমে আগত একটি অন্তরবর্তী বিচ্ছিন্ন বাক্য।
১৯৩) এ আয়াতটি দ্ব্যর্থহীনভাবে একথা প্রমাণ করে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে শূলে চাড়াবার আগেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। আর ঈসা মসীহ (আ) শূলবিদ্ধ হয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন বলে খৃস্টান ও ইহুদীরা যে ধারণা পোষণ করে তা নিছক একটি ভুল বুঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআনে ও বাইবেলের তুলনামূলক অধ্যয়ন করে আমরা জানতে পারি, সম্ভবত পীলাতুসের আদালতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকেই পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু যখন সে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনিয়ে দিল এবং ইহুদীরা ঈসা মসীহের মতো পূণ্যাত্মার প্রাণের চাইতে একজন দস্যূর প্রাণকে অধিক মূল্যবান গণ্য করে নিজেদের সত্য বিরোধিতা ও বাতিল প্রীতির চূড়ান্ত প্রমাণটিও পেশ করে দিলো, তখন কোন এক সময় আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। পরে ইহুদীরা যে ব্যক্তিকে শূলে চড়ালো সে ঈসা ইবনে মারয়াম ছিল না। সে ছিল অন্যকোন ব্যক্তি। কোন অজ্ঞাত কারণে তারা তাকে ঈসা ইবনে মারয়াম মনে করে নিয়েছিলেন। তবুও এতে তাদের অপরাধের পরিমাণ হ্রাস হবে না। কারণ যাকে তারা কাঁটার টুপি পরিয়ে ছিলেন, যার মুখে থু থু নিক্ষেপ করেছিল এবং যাকে লাঞ্ছনা সহকারে শূলে চড়িয়েছিল তাকে তো তারা ঈসা ইবনে মারয়ামই মনে করছিল। ব্যাপারটি কিভাবে তাদের কাছে সংশয়িত হয়ে গিয়েছিল তা জানার কোন উপায় আমাদের আয়ত্বে নেই। যেহেতু এই পর্যায়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহের কোন উৎস আমাদের জানা নেই তাই ঈসা ইবনে মারয়াম ইহুদীদের কবলমুক্ত হয়ে যাওয়ার পরও তারা ঈসা ইবনে মারয়ামকেই শূলবিদ্ধ করেছে বলে যে সংশয় পোষণ করছিল নিছক ধারণা, আন্দাজ-অনুমান ও জনশ্রুতির ভিত্তিতে তার স্বরূপ নির্ধারণ করা কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়।
১৯৪) মতবিরোধকারী বলে এখানে খৃস্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। ঈসা আলাইহিস সালামকে শূলে চড়াবার ব্যাপারে তাদের কোন একটি সর্বসম্মত মত বা বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে বহু মতের প্রচলন রয়েছে। তাদের এই অসংখ্য মতই প্রমাণ করে যে, আসল ব্যাপারটি তাদের কাছেও সংশয়পূর্ণই রয়ে গেছে। তাদের একদল বলেঃ যে ব্যক্তিকে শূলে চড়ানো হয়েছিল সে ঈসা মসীহ ছিল না। ঈসার চেহারায় সে ছিল অন্য এক ব্যক্তি। ইহুদী ও রোমীয় সৈন্যরা তাকে লাঞ্ছনার সাথে শূলে চড়াচ্ছিল। আর ঈসা মসীহ সেখানে কোনো এক স্থানে দাঁড়িয়ে তাদের নির্বুদ্ধিতায় হাসছিলেন। অন্য এক দল বলেঃ শূলদণ্ডে ঈসা মসীহকেই চড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু শূলদণ্ডে তাঁর মৃত্যু হয়নি বরং নামিয়ে নেয়ার পর তাঁর মধ্যে প্রাণ ছিল। আর একদল বলেঃ তিনি শূলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আবার প্রাণ লাভ করেছিলেন। এরপর কমপক্ষে দশবার নিজের বিভিন্ন ‘হাওয়ারী’দের সাথে সাক্ষাত করে তাদের সাথে আলাপ করেছিলেন। চতুর্থ আর একদল বলেঃ শূলের ওপর ঈসার মানবিক দেহের মৃত্যু ঘটেছিলো এবং তাকে দাফনও করা হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে খোদায়ীর যে আত্মা ছিল তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। পঞ্চম দলটি বলেঃ মরার পর ঈসা মসীহ আলাইহিস সালাম এই জড়দেহসহ জীবিত হয়ে গিয়েছিলেন এবং সশরীরেই তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, আসল সত্য ঘটনাটি তাদের জানা থাকলে সে সম্পর্কে এতগুলো পরস্পর বিরোধী কথা ও মত তাদের মধ্যে প্রচলিত থাকতো না।
১৫৮.) বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন।১৯৫ আল্লাহ জবরদস্ত শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়।
১৯৫) এ প্রসঙ্গে এটিই হচ্ছে প্রকৃত সত্য। আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাষায় এটি ব্যক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে দৃঢ়তা সহকারে যে সুস্পষ্ট বক্তব্য পেশ করা হয়েছে তা কেবল এতটুকু যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করতে ইহুদীরা কামিয়াব হয়নি এবং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন ওঠে কিভাবে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। কুরআনে এর কোন বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়নি। কুরআন যেমন একথা বলে না যে, আল্লাহ তাকে এই জড়দেহ ও আত্মাসহকারে পৃথিবী থেকে তুলে নিয়ে আকাশ রাজ্যের কোথাও রেখে দিয়েছেন আবার তেমনি একথাও বলে না যে, পৃথিবীতে তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছিল কেবল তাঁর রূহটি ওপরে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাই কুরআনের ভিত্তিতে এর কোন একটি দিককে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ ও অন্য দিকটিকে চূড়ান্তভাবে বর্জন করা যেতে পারে না। কিন্তু কুরআনের বর্ণনাভংগী সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে একথা সুস্পষ্ট অনুভূত হয় যে, উঠিয়ে নেবার ধরণ ও অবস্থা যাই হোক না কেন ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে আল্লাহ অবশ্যি এমন কিছু ব্যাপার করে থাকবেন যা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক পর্যায়ের। তিনটি বিষয় থেকে এই অস্বাভাবিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
একঃ ঈসা আলাইহিস সালামকে এই জড় দেহ ও প্রাণ সহকারে উঠিয়ে নেবার ধারণা খৃস্টানদের মধ্যে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। আর খৃস্টানদের একটি বড় দল যে হযরত ঈসাকে ‘খোদা’ বলে ধারণা করতো এটিই ছিল তার একটি অন্যতম কারণ। কিন্তু এতদসত্ত্বেও কুরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় শুধু যে এর প্রতিবাদই জানায়নি তাই নয় বরং খৃস্টানরা এ ঘটনাটির জন্য যে ‘উঠিয়ে নেয়া’ (Ascension) শব্দটি ব্যবহার করে থাকে কুরআনেও হুবহু সেই একই শব্দ ব্যবহার করেছে। কোন একটি চিন্তার প্রতিবাদ করতে চেয়েও তার জন্য এমন ভাষা ব্যবহার করা যা ঐ চিন্তাকে আরো শক্তিশালী করে-এটা কুরআনের মতো দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উপস্থাপনকারী কিতাবের রীতি ও মর্যাদার সাথে মোটেই খাপ খায় না।
দুইঃ যদি ঈসা আলাইহিস সালামকে উঠিয়ে নেয়া তেমন ধরনের কোন উঠিয়ে নেয়া হতো যেমন প্রত্যেক মৃত্যুবরণকারীকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়ে থাকে অথবা এই উঠিয়ে নেয়ার অর্থ যদি শুধু সম্মান ও মর্যাদার উন্নতি হতো যেমন হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ ورفعنآه مكاناعايا (আর তাঁকে আমি উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছিলাম) তাহলে এখানে কথাটা বলা অধিক যুক্তিযুক্ত হতো। যেমনঃ “নিঃসন্দেহে তারা ঈসাকে হত্যা করেনি বরং আল্লাহ তাঁকে প্রাণে বাঁচিয়ে নিয়েছেন। তারপর তাঁকে স্বাভাবিক মৃত্যুদান করেছেন। ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করতে চাইছিল কিন্তু আল্লাহ তাঁকে উন্নত মর্যাদা দান করেছেন।”
তিনঃ যদি এই উঠিয়ে নেয়াটা যেমন তেমন মামুলি ধরনের উঠিয়ে নেয়া হতো, যেমন প্রচলিত নিয়মে কোন মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা বলে থাকিঃ “আল্লাহ তায়ালা তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন”, তাহলে এর উল্লেখ করার পর আবার “আল্লাহ মহাশক্তিধর ও জ্ঞানী” এই বাক্যটি বলা সম্পূর্ণ অসমীচীন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তো। যে ঘটনায় আল্লাহর জবরদস্ত শক্তি ও জ্ঞানের অস্বাভাবিক প্রকাশ ঘটে একমাত্র তেমন কোন ঘটনার পরই এ ধরনের বাক্য উচ্চারণ করা উপযোগী ও সমীচীন হতে পারে।
এর জবাবে কুরআন থেকে কোন যুক্তি প্রমাণ পেশ করতে চাইলে বড় জোর এতটুকু বলা যায় যে, সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ متوفيكশব্দটি ব্যবহার করেছেন (৫৫ আয়াত)। কিন্তু সেখানে ৫১ নং টীকায় আমরা একথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছি যে, স্বাভাবিক মৃত্যু অর্থে এ শব্দটির ব্যবহার তেমন সুস্পষ্ট নয়। বরং এ শব্দটি থেকে ‘প্রাণ হরণ’ এবং ‘প্রাণ ও দেহ উভয়টি হরণ’ করা অর্থ হতে পারে। কাজেই আমরা ওপরে যে সমস্ত কারণ ও নিদর্শন বর্ণনা করেছি সেগুলো নাকচ করে দেবার জন্য এটি মোটেই যথেষ্ট নয়। ঈসা আলাইহিস সালাম স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন বলে যারা দাবী জানিয়ে আসছে তারা হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে, প্রাণ ও দেহ হরণ করার ব্যাপারে توني শব্দটির ব্যবহারের আর কোন নজির আছে কি? কিন্তু মানব জাতির সমগ্র ইতিহাসে প্রাণ ও দেহ হরণ করার ব্যাপারটি যখন মাত্র একবারই সংঘটিত হয়েছে তখন এই অর্থে মানুষের ভাষায় এ শব্দটির ব্যবহারের নজির দাবী করা একবারেই অর্থহীন। ভাষার মূল আভিধানিক পরিসরে এ শব্দটির এ ধরনের অর্থ ব্যবহারের অবকাশ আছে কি না এখানে কেবল এতটুকুই দেখা দরকার। যদি অবকাশ থেকে থাকে তাহলে একথা মানতে হবে যে, কুরআন সশরীরে উঠিয়ে নেয়ার আকীদার দ্ব্যর্থহীন প্রতিবাদ জানাবার পরিবর্তে এ শব্দটি ব্যবহার করে এই আকীদাটির সহায়ক কারণ ও নির্দশনগুলোর সংখ্যা আরো একটি বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যথায় যেখানে পূর্ব থেকেই সশরীরে উঠিয়ে নেবার আকীদা বর্তমান ছিল এবং যার ফলে ঈসাকে খোদায়ী শক্তির অধিকারী মনে করার আকীদা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, সেখানে, ‘মৃত্যু-এর ন্যায় সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন শব্দ ব্যবহার না করে ‘ওফাত’-এর ন্যায় দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করার কোন কারণ ছিল না।
অসংখ্যা হাদীসেও সশরীরে উঠিয়ে নেবার আকীদাকে আরো শক্তিশালী করেছে। এ হাদীসগুলোতে হযরত ঈসা ইবনে মারয়াম আলাইহিস সালামের পুনর্বার দুনিয়ার আগমন ও দাজ্জালকে হত্যা করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। (সূরা আহযাবের তাফসীরের পরিশিষ্টে আমি এ ধরনের সমস্ত হাদীস একত্র করে দিয়েছি)। এগুলো থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের দ্বিতীয় বার আগমনের ব্যাপারটি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মৃত্যুর পর তিনি পুনর্বার জীবিত হয়ে এই মরজগতে ফিরে আসবেন অথবা আল্লাহর এই বিশাল সাম্রাজ্যের কোথাও তিনি আছেন এবং সেখানে থেকে আবার এই দুনিয়ার ফিরে আসবেন-এ দু’টির মধ্যে কোন্টি এখন অধিকতর যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়? যে কোন বিবেকবান ব্যক্তি নিজেই এর মীমাংসা করতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভালো করে পড়ে মন্তব্য করতে হবে
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
১। কোর আনের সূরা নিসা ৪:১৫৯ আয়াত
وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا
অর্থ: আর আহলে-কিতাবদের মধ্যে যত শ্রেণী রয়েছে তারা মৃত্যুর পূর্বে সবাই ঈসার উপর ঈমান আনবে । আর কেয়ামতের দিন তাদের জন্য সাক্ষীর উপর সাক্ষী উপস্থিত হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন