ভাষা সৈনিকের গল্প শুনি
লিখেছেন লিখেছেন দিয়া বৃষ্টি ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১০:২৭:৪৫ সকাল
রক্তের লাল কাপড়ে মোড়ানো একুশ।
যাদের আন্দোলন সংগ্রামের নিরন্তন
লড়াইয়ে পাওয়া আমার মায়ের
ভাষা বাংলা। যাদের ত্যাগের
রক্তিম শিখরে লেখা আমাদের উজ্জ¦ল
দিশা ৫২। জাতির স্বাধিকার
আন্দোলনের ভিত্তিতো সেই
ভাষা আন্দোলনই। জাতির সেই
শ্রেষ্ঠসন্তান, বীরসেনানী শহীদদের
প্রতি আমাদের বিন¤্র শ্রদ্ধা ও সালাম।
২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস। বিশ্বের
১৯০টি দেশে এখন প্রতি বছর
২১শে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপিত হ”েছ।
বর্তমানে বিশ্বের ৩০ কোটিরও
বেশি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলে।
এ বিশাল অর্জন একান্ত-ই আমাদের। কিš‘
যাদের ত্যাগের
বিনিময়ে পাওয়া আমাদের মুখের
বাংলা ভাষা। আমরা একবারও
কি ভেবে দেখেছি? ভাষা শহীদ আর
সৈনিকদের আমরা যথাযোগ্য মর্যাদায়
ভূষিত করতে? পেরেছি তাদের যথাযথ
সম্মান করতে? এই লড়াইয়ে প্রথম
কাতারের-ই একজন অধ্যাপক গোলাম
আযম। তিনি আজকের এই দিনেও
কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে আবদ্ধ।
৯০ বছর উর্ধো যার বয়স। বার্ধক্যে জনিত
নানা রোগে যিনি আক্রান্ত। ডান
পায়ে সায়াটিকা ও বাম
হাঁটুতে আর্থরাইটিস। ব্লাডপ্রেসারসহ
নানা অসুখের কারণে রোজ নিয়মিত
ওষধ খেতে হয়। অন্যের কারো সাহায্য
ছাড়া চলা যার প্রায় অসম্ভব। ডান
হাতে ক্র্যাচ ভর দিয়ে বাম হাত
একজনের
কাঁধে রেখে যিনি মসজিদে যেতেন।
সেই মানুষটি মসজিদেও নামাজ আদায়
থেকে বঞ্চিত দীর্ঘ কয়েক বছর।
এটি অমানবিক!! মানবাধিকারের সুস্পষ্ট
লঙ্গন নয় কি?? বিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত
ভাষার জন্য জীবন দেয়ার ইতিহাস
আমরাই কায়েম করতে সক্ষম হয়েছি।
আবার বিশ্বের ইতিহাসে সম্ভবত আমরাই
প্রথম যারা একজন
ভাষাসৈনিককে কারাগারে আবদ্ধ
করে রেখেছি।
এই জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন
ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম।
স্বমহিমায় উদ্ভাসিত একজন মানুষ। নিজ
যোগ্যতা বলে তার ঐতিহাসিক সাক্ষর
তিনি নিজেই। তিনিই তার উপমা।
প্রাচ্যের অক্রফোর্ড হিসেবে খ্যাত
ডাকসু’র সাবেক জিএস। সময়ের
সাড়াজাগানো ছাত্রনেতা গোলাম
আযম। বর্তমান সময়ের আন্দোলন
সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু,
বিশ্বব্যাপি সমাদৃত, কেয়ারটেকার
সরকারের রূপকার, ভাষাসৈনিক, বিশ্ব
ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ,
মজলুম মানবতার বলিষ্ঠ কণ্ঠসর,
জননেতা অধ্যাপক গোলাম আযম। আজ
তিনি নিজেই একটি ইতিহাস,
একটি আন্দোলন, একটি চেতনা আর
বিশ্বাসের স্মৃতির মিনার
হয়ে আমাদের মাঝে দন্ডায়মান।
অধ্যাপক গোলাম আযম একজন সৎ,
ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, খ্যাতিমান অহিংস
রাজনৈতিক নেতা,
যিনি আন্তর্জাতিকভাবে শ্রদ্ধেয়
পন্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এই
মেধাবী চৌকস ও অভাবনীয় নেতৃত্বের
গুণাবলীসম্পন্ন ক্ষণজন্মা মানুষ ১৯২২
সালে ঢাকার লক্ষীবাজারে নানার
বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ম্যাট্রিক ও
ইন্টারমিডিয়েট ঢাকা থেকে পাস
করেন তিনি। স্কুল-কলেজের
গন্ডি পেরিয়ে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড
হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে বিএ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ
পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে সম্পৃক্ত
হন ছাত্র আন্দোলনের সাথে। ১৯৪৭-৪৮ ও
৪৮-৪৯ সালে পরপর দু’বছর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ
(ডাকসু)-এর জিএস (জেনারেল
সেক্রেটারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন
করেন।
’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়
অংশ নিয়ে পাকিস্তান সরকার
দ্বারা কারা নির্যাতিত হন। এই মহান
নেতা ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের
অন্যতম সংগঠক ছিলেন। শেখ মুজিব কর্তৃক
’৬৬ সালের ছয়
দফা দাবি তৈরিতে অংশ নেয়া ২১
সদস্যের অন্যতম। ১৯৫৪ সালে যোগদান
করেন
জামায়াতে ইসলামীতে এবং প্রত্যক্ষভাবে শুরু
করেন রাজনৈতিক জীবন।
পাকিস্তানে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭১ সাল
পর্যন্ত সকল গণতান্ত্রিক
আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। কপ (ঈঙচ-
ঈড়সনরহবফ ঙঢ়ঢ়ড়ংরঃরড়হ চধৎঃু), পিডিএম
(চউগ- চধশরংঃধহ উবসড়পৎধঃরপ
গড়াবসবহঃ), ডাক (উঅঈ- উবসড়পৎধঃরপ
অপঃরড়হ ঈড়সসরঃঃবব)
ইত্যাদি আন্দোলনে জনাব শেখ মুজিবুর
রহমানসহ অন্য সকল দলের নেতাদের
সাথে অংশগ্রহণ
করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
রাজনৈতিক কারণে ১৯৬৪ সালেও
তাকে কারাবরণ করতে হয়েছিল।
ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযম
একটি আন্দোলন, একটি জাগরণ,
একটি বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নাম।
একটি চেতনা ও বিশ্বাসের
গগনজোয়ারী বিশ্বাসের কণ্ঠস্বর।
বিশ্বব্যাপী সমাদৃত কেয়ারটেকার
সরকার ফর্মুলার রূপকার। মেধা ও
নৈতিকতার সমন্বয়ের একটি সম্ভাবনাময়
দেশগড়ার চেতনার অগ্রপথিক।
জাতির জীবনে প্রফেসর গোলাম আযম
এক জীবন্ত কিংবদন্তি। অধ্যাপক
গোলাম আযম বিশ্বব্যাপী উ”চারিত
একটি আওয়াজ। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭
সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার
যে সংগ্রাম শুরু হয়, তার
সাথে তিনি প্রথম থেকেই
প্রত্যক্ষভাবে ছিলেন।
ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার
কারণে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর
রোষানলে পড়ে তাকে হাজতবাসসহ শত
সহস্র নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। এ
দেশের ছাত্র-জনতা যখন
বুঝতে পারে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করে,
বাংলা ভাষাকে নির্বাসনে পাঠানোর
যে আয়োজন করছে, তা বাস্তবায়িত
হলে বাংলা ভাষাভাষী সংখ্যাগরিষ্ঠ
মানুষ কার্যত অশিক্ষিত
জনগোষ্ঠীতে পরিণত হবে। এমন এক
প্রেক্ষাপটে তৎকালীন পূর্ব
পাকিস্তানের জনগণ বিশেষ
করে ছাত্ররা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার
জন্য আন্দোলন শুরু করে। ১৯৪৮ সালের ১১
মার্চ থেকে এই সাহসী বীরপুরুষ
প্রত্যক্ষভাবে ভাষা আন্দোলনে শরিক
হন। এই দিন রাষ্ট্রভাষা বাংলার
দাবিতে হরতাল পালিত হয়। হরতাল সফল
করতে অধ্যাপক গোলাম আযম ডাকসুর
জিএস হিসেবে ছাত্রদের সংগঠিত
করেন, বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত
করে পিকেটিংয়ের জন্য রাজধানীর
গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অব¯’ান নেন।
হরতালে পিকেটিংয়ের সময় তাকেসহ
১০-১২ জনকে তেজগাঁও থানা পুলিশ
গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ
বিক্ষোভের মূলে ছিল প্রধানত
ছাত্ররা। ভাষার দাবিতে প্রথম
গণবিক্ষোভ, ধর্মঘট বা হরতাল এবং ১১
মার্চ ঐতিহাসিক মর্যাদা পাওয়ার
দাবি রাখে। (সূত্রঃ সোনার বাংলা)
অধ্যাপক গোলাম আযম এক
সাক্ষাৎকারে বলেছেন-” ১৯৪৮
সালে পাকিস্তানের প্রথম
প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান
ঢাকায় আসেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
জিমনেসিয়াম মাঠে ছাত্রদের
উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তাকে ২৭ নভেম্বর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজের
পক্ষ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার
দাবি সংবলিত একটি ঐতিহাসিক
স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ
স্মারকলিপি প্রণয়নের দায়িত্ব ছিল
তৎকালীন ছাত্রনেতা সলিমুল্লাহ
মুসলিম হলের
ভিপি (পরবর্তীতে বিচারপতি) আব্দুর
রহমান চৌধুরীর ওপর।
স্মারকলিপিটি ডা’কসুর
কাউকে দিয়ে পেশ করার
ব্যাপারে চারটি হলের ছাত্র সংসদের
নেতৃবৃন্দ ঐকমত্যে পৌঁছেন। ডা’কসুর
ভিপি ছিলেন অরবিন্দু বোস।
তিনি যেহেতু হিন্দু তাই
তাকে দিয়ে পাঠ করালে সরকার
বিষয়টিকে ভিন্নভাবে চিত্রিত
করতে পারে। এই দিক
বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয় ডাকসুর
জিএস অর্থাৎ আমার ওপর দায়িত্ব অর্পিত
হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার কথাটি ছিল
শেষের দিকে। এর
আগে প্রাদেশিকতায় আমরা বিশ্বাস
করি না এমনভাবে আঞ্চলিকতার
নিন্দার কথা বলা ছিল এ
প্যারাটি পড়ার সময়
ছাত্রছাত্রীরা তুমুল করতালি দেয়।
করতালি শেষে আমার
কানে এলো লিয়াকত আলীর
স্ত্রী রানা লিয়াকত তার
স্বামীকে বলছেন,
‘ল্যাঙ্গুয়েজকে বারে মে সাফ
বাতা দেনা।” তার কথা শোনার পর
আমি লেট মি রিপিট দিস বলে আবার
ভাষার দাবি সংবলিত
প্যারাটি পড়লাম। আবার মুহুর্মুহু
করতালি শুরু হলো। আমি এবার করতালির
জন্য একটু বেশি সময় দিলাম।
আমি লিয়াকত আলী খান
এবং রানা লিয়াকত আলী খানের খুব
কাছে বসেছিলাম। আমি পরিষ্কার
বুঝতে পারলাম বিষয়টিকে খুব
ভালোভাবে নেননি তিনি।
আমি মনে মনে ¯ি’র করলাম
বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার
বিরুদ্ধে কোন মন্তব্য তিনি তার
বক্তব্যে করলে আমি সাথে সাথে প্রতিবাদ
করে স্লোগান দেব। কিš‘ তিনি খুব ঝানু
রাজনীতিবিদ হিসেবে উপ¯ি’তির
মনোভাব
উপলব্ধি করে বিষয়টি চেপে গেলেন।
তার মনে ক্ষোভ থাকলেও এমনটি তার
স্ত্রী অনুরোধ করার পরও ভাষার
প্রসঙ্গে কোনো কথা বলেন না। শুধু
বক্তব্যেও একপর্যায়ে ক্ষোভের
সাথে বলেন, ইফ ইট ইস নট
প্রোভিনসিয়ালিজম, দেন হোয়াট ইস
প্রোভেনসিয়ালিজম? তার এ
কথাগুলো শুনে আমরা মনে করেছিলাম
তিনি হয়তো ভাষার ব্যাপারে আরও
কিছু বলবেন। কিš‘ না তিনি এ
প্রসঙ্গটি এড়িয়ে গেলেন। আমার আর
স্লোগান দেয়া হলো না।” ১৯৫২
সালে পল্টন ময়দানের এক জনসভায়
খাজা নাজিমুদ্দিন ছাত্রদের
সাথে করা সাত দফা চুক্তির
তোয়াক্কা না করে ঘোষণা করলেন
বাংলা নয় উর্দুই হবে পাকিস্তানের
একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।
তিনি রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে কায়েদে আযমের
বক্তব্যেরও পুনরাবৃত্তি করার পরই শুরু হয়
প্রতিবাদ বিক্ষোভ।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার
দাবি”
১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার
অন্যায়ভাবে তার জন্মগত নাগরিকত্ব
অধিকার হরণ করলেও পরবর্তীতে, ১৯৯৪
সালে, সুপ্রিম কোর্টের সর্বসম্মত
রায়ে নাগরিক অধিকার ফিরে পান
এবং তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ
মিথ্যা প্রমাণিত হয়। এখন নতুন করে সম্পূর্ণ
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে আবার সেই একই
অভিযোগের অবতারণা করা হ”েছ।
স্বাধীন বাংলাদেশে ত্রিশ বছর
জামায়াতে ইসলামীর
রাজনীতিতে থেকে সর্বশেষ স্বে”ছায়
অবসর গ্রহণকারী পদের ও ক্ষমতার
প্রতি নির্লোভ একজন বর্ষীয়ান
রাজনীতিবিদ অধ্যাপক গোলাম আযম।
উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের
অনেক স্মরণীয় ঘটনার
সাথে সরাসরি জড়িত। এ প্রবীণ মজলুম
জননেতা ও বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ।
ইসলামী আদর্শের
ভিত্তিতে মানবজীবনের যাবতীয়
সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে সুখী সমৃদ্ধ
বাংলাদেশ গড়ার
সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণপুরুষ।
আজ জীবন সন্ধিক্ষণে এ
সংগ্রামী নেতা জাতীয় ও
আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আর অপপ্রচারের
শিকার। ষড়যন্ত্রকারীরা মিথ্যার
কালো পর্দার আড়ালে তার
স্বর্ণোজ্জ্বল অনেক
অবদানকে ঢেকে রাখার অপপ্রয়াস
চালা”েছ নিরন্তনভাবে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রফেসর
গোলাম আযম সবচেয়ে আলোচিত
ব্যক্তিত্ব। গণতন্ত্র উত্তরণে ৯০ এ তার
কেয়ারটেকার
পদ্ধতি জাতিকে দিয়েছিল মুক্তির
দিশা। ১১ জানুয়ারি ২০১২
কারাগারে যাওয়ার আগে জাতির
উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন-
১৯৮০’র দশকে এবং ১৯৯০
সালে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৯৪
থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কেয়ারটেকার
সরকারের দাবিতে বিএনপি’র
বিরুদ্ধে আন্দোলনে জামায়াত ও
আওয়ামী লীগ যুগপৎ আন্দোলন করেছিল।
সকল আন্দোলনকারী দলের
লিয়াজোঁ কমিটি একত্রে বৈঠক
করে কর্মসূচি ঠিক করতো। তখন তো কোন
দিন আওয়ামী লীগ জামায়াত
নেতৃবৃন্দকে যুদ্ধাপরাধী মনে করেনি।
ফেব্রুয়ারি ১৯৯১-এর নির্বাচনের পর
সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ
জামায়াতের
সহযোগিতা প্রার্থনা করে আমার নিকট
ধরনা দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের
নেতা আমির হোসেন আমু সাহেব
জামায়াতের
সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ
সাহেবের
মাধ্যমে আমাকে মন্ত্রী বানাবার
প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। তখনও
তো আওয়ামী লীগের মনে হয়নি যে,
জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধাপরাধী!
পরবর্তীতে, আওয়ামী লীগ মনোনীত
প্রেসিডেন্ট
পদপ্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার
চৌধুরী জামায়াতের সমর্থন লাভের
আবদার নিয়ে যখন আমার
সাথে সাক্ষাৎ করেন, তখনও তো তাদের
দৃষ্টিতে জামায়াত নেতৃবৃন্দ
‘যুদ্ধাপরাধী’ ছিল না। এরপর এমন
কী ঘটলো যে আওয়ামী লীগ ও কতক বাম
দল জামায়াতকে ‘যুদ্ধাপরাধী’
আখ্যা দিয়ে জামায়াতকে নির্মূল
করার জন্য জেহাদে নামলেন? এরূপ
দু’মুখো নীতি কোনো সু¯’ রাজনীতির
পরিচয় বহন করে না।”
”আমি জীবনে চারবার
জেলে গিয়েছি। জেল
বা মৃত্যুকে আমি ভয় পাই না।
আমি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পাই
না। শহীদ হওয়ার জযবা নিয়েই
ইসলামী আন্দোলনে শরিক হয়েছি।
মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দিলে শহীদ
হওয়ার মর্যাদা পাবো ইনশাআল্লাহ।”
বিশ্বনন্দিত মজলুম নেতার এই সাহসী ও দৃঢ়
উ”চারণ এখন বিশ্বমুুসলিম উম্মাহর পথের
দিশা।
অধ্যাপক গোলাম আযম কখনও এমপি,
মন্ত্রী কিছুই হননি সুযোগ থাকার পরও।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভিনব
এবং নির্যাতিত ব্যক্তি অধ্যাপক
গোলাম আযম। ব্যক্তিগত খুঁটিনাটি,
চাওয়া-পাওয়া বৃহত্তর স্বার্থে তার
ত্যাগ এমন বহু বাস্তবতা এখন দৃশ্যের
অন্তরালে। যিনি ক্ষমতায় না থেকেও
ক্ষমতাসীন সকলের অপবাদের দায়ভার
কাঁধে পড়েছে। যিনি দেশ, জাতি ও
মানবতার কল্যাণে সব সময়
ভূমিকা রেখেছেন কিš‘ তার
বিনিময়ে সব সরকার থেকে উপহার
পেয়েছেন কারাবরণ। বিশ্বজুড়ে তার
অসম্ভব খ্যাতি,
তাকে নিয়ে আন্তর্জাতিক
অঙ্গনে কৌতূহলের শেষ নেই। সব সময়ই
ঐতিহাসিক সত্য বর্তমান অব¯’ায় উপনীত
হওয়ার ক্ষেত্র। তার আত্মনির্মাণ
এবং বিকাশের ক্ষেত্রে বেশকিছু
চিন্তা হিসেব নিকেশ ছিল সুদুর
প্রসারী। বিশেষ করে ভারতের
আগ্রাসন ও অধিপত্যবাদের
ক্ষেত্রে অধ্যপক গোলাম আযমের ৪২ বছর
পূর্বের ভাবনা আজকের সবচেয়ে সত্য ও
বাস্তবতা। এখন আমাদের নতুন
প্রজন্মকে ভাবিয়ে তুলছে তার
জীবর্দ্দশায়ই। এ আরেক গোলাম আযম
আমাদেও মাঝে উপ¯ি’ত। অধ্যাপক
আযমের দেয়া কেয়ারটেকার
ফর্মূলা দেশে-বিদেশে সমাদৃত ও
প্রশংসিত। ছাত্রছাত্রীদেও পাঠ্য
বইয়ের অন্তভূক্ত। রাজনৈতিক চেতনায়
খুবই সংকীর্ণ শেখ হাসিনার পক্ষে এমন
গোলাম আযমকে মানা খুবই অসম্ভব। তার
উদ্ভাবন, চিন্তা, আবিস্কার
তাকে টিকিয়ে রাখবে শতাব্দী থেকে শতাব্দী।
আওয়ামীলীগ ব্যাক্তি গোলাম
আযমকে আটকিয়ে রেখে তার
রেখে যাওয়া আদর্শকে স্তদ্ধ
করতে পারবে না। সমকালীন ¯’ানীয় ও
আন্তর্জাতিক ঘটনাপ্রবাহে তার অনেক
কর্মই আজ ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।
প্রিয়পাঠকবৃন্দ, সবমিলিয়ে আজ
আমাদের মাঝে এমন এক গোলাম আযম
উপ¯ি’ত যার প্রজ্ঞা, লেখনি, চিন্তা,
রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি, ক্ষমা;
মহানুভবতা, নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্য
এবং সহনশীলতার মতো যাবতীয় মহৎ
গুণাবলির বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর
মাঝে কালোত্তীর্ণ। নির্যাতিত-
নিপীড়িত, নিষ্পেষিত জনতার
অধিকার এবং মর্যাদাবোধ সম্পর্কে এক
আবহ তৈরি করতে সাহায্য করেছে, যার
উদাহরণ নিকট অতীতে বিরল, একবিংশ
শতাব্দীর উষালগ্নে মানবাধিকার,
গণতন্ত্র, ইসলাম, জাতিগত অধিকার
এবং সচেতনতা, পারস্পরিক
মর্যাদাবোধ নিয়ে বিশ্ব যখন চরম
সঙ্কটের মোকাবিলা করছে, ঠিক
তেমনি একটি মুহূর্তে নিজের
কর্মমহানুভবতার মাধ্যমে সমহিমায়
নিজেকে এমনই এক প্রতীকে রূপায়িত
করেছেন ভাষাসৈনিক অধ্যাপক
গোলাম আযম। তা নিকট অতীতে খুবই
বিরল।
বাংলার বুকে লক্ষ-কোটি মানুষ এখন
ইসলামের পতাকাতলে সমবেত। পঞ্চান্ন
হাজার বর্গমাইল তার পদচারনায় মুখরিত
হয়ে দ্বীন কায়েমের চেতনায় দৃঢ়
প্রতিজ্ঞ। যারা জীবন
দিতে জানে কিন্ত মাথা নত
করেনা এক আল্লাহ
ছাড়া কারো কাছে। যারা চিরদিন
গোলাম আযমকে মনে রাখবে, চিরদিন
ভালবাসবে, সম্মান
করতে থাকবে নিজের গরজে। তার
লেখনী ইসলামের পথে উজ্জীবিত
করবে শতাব্দীর পর শতাব্দী। অনাগত
যুবকদের জন্য হবে নতুন পথের
দিশা এবং ঘটবে নব উত্থান।
যাকে শ্রদ্ধা পেতে রাষ্ট্রের কোন
আইনের প্রয়োজন পড়বে না। অধ্যাপক
আযমের সবচেয়ে বড় সফলতা হ”েছ
বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক
দলগুলো বিভিন্ন সময় তার সহযোগীতা ও
পরামর্শ নিয়েছে। আর তার আবিস্কৃত
কেয়ারটেকার সরকার আদায়ের
আন্দোলনে সবয়ের ব্যাবধানে সব
রাজনৈতিক দলগুলো একই আওয়াজ
তুলেছে। ভাষার জন্য আত্মত্যাগ স্বীকার
করেও ভাষার মাসেও তিনি বন্দী।
এটি আমাদের ব্যর্থতা, জাতির জন্য
লজ্জাজনক। এটি মানবাধিকারের লঙন।
বৃদ্ধবয়সে একাকী নিভৃতে কারাগারের
অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ হয়ে আছেন।
বাথরুমে পড়ে পায়ের
চামড়া উঠে যাওয়ার খবর
এবং প্রতিনিয়ত আপনার কষ্টের খবর
কাঁদায় দেশে বিদেশে অনেক ভক্ত ও
অনুরক্তকে। জাতি এই ভাষাসৈনিকের
মুক্তির অপেক্ষায়... হে জাতীয় বীর,
ভাষাসৈনিক আপনাকে বিন¤্র সালাম
ও অভিনন্দন। আমাদের ক্ষমা করবেন
প্লিজ।j
বিষয়: রাজনীতি
১৪৩৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন