শিক্ষনীয় গল্প-৯
লিখেছেন লিখেছেন ইঞ্জিনিয়ার মুবিন ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৬:৪৮:১০ সন্ধ্যা
একটা বিখ্যাত গল্প আছে, কেউ কেউ হয়ত
শুনে থাকবেন ৷
গল্পটা চারটি গরুকে নিয়ে ৷
তিনটি কালো, একটি সাদা ৷
তারা একটা শ্বাপদসংকুল এলাকায় বাস
করতো ৷ এজন্য নিরাপত্তার
খাতিরে তারা একসাথে থাকত
এবং একে অপরের প্রতি সতর্ক
দৃষ্টি রাখতো ৷ যার
ফলে তারা টিকে ছিল ৷ একদিন
কালো তিনজন একত্র হল এবং বলল ‘এই
সাদা গরুটার জন্য আমরা ধরা পড়ে যাব ৷
আমরা কালো বলে রাতের বেলা শত্রু
আমাদের দেখতে পায়না, কিন্তু
তাকে দেখতে পায় ৷ চল ঐ
গরুটাকে আমরা পরিত্যাগ করি ৷ তারপর
আমরা তিনজন একসাথে থাকবো ৷’ যেমন
কথা তেমন কাজ ৷ সেদিন থেকেই
কালো গরুগুলো সাদাটাকে বয়কট করল,
তিনজন একপাশে থাকত আর
বেচারা সাদা গরু আরেক পাশে ৷
সেখানকার নেকড়ে, এই গরুদের
মধ্যে অনৈক্য
বুঝে ফেললো এবং সে সাদা গরুটার উপর
ঝাঁপিয়ে পড়লো ৷ যখন
নেকড়ে সাদা গরুটার গোশত
খুলে খুলে খাচ্ছিল, তখন
কালো গরুগুলো কোন বাধা দিলনা ৷
তারা তাকিয়ে তাকিয়ে তাদের
ভাইকে টুকরো টুকরো হতে দেখছিল ৷
পরের রাতে নেকড়ে কালো গরুগুলো উপর
আক্রমণ করলো, কারণ তাদের
শক্তি কমে গেছে ৷ এজন্য
নেকড়ে একটা কালো গরুকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম
হলো ৷
পরের রাতে নেকড়ের জন্য
কাজটা আরো সহজ হয়ে গেল, কারণ গরু
আছেই মাত্র দু'টো ৷ নেকড়ে খুব
সহজে আরেকটা গরু খেয়ে নিল ৷
শেষ রাতে গরু বাকি রইল মাত্র একটা ৷
গরুটা ভয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করলো,
কিন্তু তার কোন সাহায্যকারী নেই ৷
নেকড়ে বুঝল
গরুটা দৌড়াদৌড়ি করে হাঁপিয়ে একসময়
পড়ে যাবে, তাই সে মনের
আনন্দে পায়চারি করতে লাগলো ৷ সময়
সুযোগমত সে গরুটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো ৷
জীবনের শেষ
মুহূর্তে এসে গরুটা একটা কথা বলেছিল, খুবই
শিক্ষণীয় কথা ৷ সে বলেছিল,
‘আমিতো সেদিনই খাদ্য হয়েছি, যেদিন
সাদা গরুটাকে খাওয়া হয়েছে ৷’ অর্থাৎ
গরুটা বুঝতে পেরেছিল, যেদিন
সে সাদা গরুটাকে সাহায্য করেনি,
সেদিনই সে নিজের মৃত্যুর
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ৷
...
আশা করি কাহিনীটি থেকে আপনারা মূল্যবান
শিক্ষা পেয়ে গেছেন ৷ প্রথমত, এই গল্পের
সাথে বর্তমান উম্মাহর অনেক মিল
পাওয়া যাবে ৷
আমরা দেখতে পাচ্ছি একের পর এক মুসলিম
জাতির/দেশের পতন ঘটছে ৷
আমরা কি করছি? আমরা শুধু
চেয়ে চেয়ে দেখি ৷ যখন
ফিলিস্তিনকে কেড়ে নেয়া হল,
আমরা কিছুই করিনি ৷ এরপর একের পর এক
জাতি বিপদের মুখে পড়তে লাগল -
কাশ্মীর, চেচনিয়া, ফিলিপাইনের
মুসলিম এবং সর্বশেষ ইরাক ৷ ইরাকে যখন
হত্যাযজ্ঞ চলছে, তখন আমরা কিছুই করিনি ৷
এখানেই শেষ নয়,
পরবর্তীতে আরো জাতিকে ধরা হবে,
কাকে ধরা হবে তা আল্লাহ্ই ভাল
জানেন ৷ গল্পটা থেকে বুঝা যায়,
যে মুসলিম জাতিগুলো এখনও
টিকে আছে সেগুলো প্রথম জাতিটার
পতনের সাথে সাথেই পরাস্ত হয়েছে ৷
দ্বিতীয়ত, এ গল্প থেকে অনৈক্যের
ফলাফল বুঝা যায় ৷ গরুগুলো যতদিন
একসাথে ছিল, ততদিন শত্রু কিছু
করতে পারেনি। কিন্তু যেই
তারা একজনকে ছেড়ে দিল, তখন কি হল?
তারা সকলেই হেরে গেল৷
রসূলুলৱাহ্ (সা.) বলেছেন, ‘এই উম্মত হল
একটি দেহের মত ৷ যদি দেহের কোথাও
ব্যথা লাগে, তাহলে গোটা দেহ
জ্বরাক্রান্ত হয় ও
ঘুমাতে পারেনা ৷' (বুখারী)৷ অর্থাৎ কারও
হাত বা পায়ে আঘাত লাগলে, সে ব্যথার
কারণে ঘুমাতে পারেনা, এবং তার দেহ
ব্যথা সারাতে গিয়ে জ্বরগ্রস্থ
হয়ে পড়ে ৷ পূর্ব, পশ্চিম বা উত্তর, দক্ষিণের
মুসলিম জাতি ব্যথা পেলে, আপনারও এমন
ব্যথা লাগা উচিত যেন আপনার নিজ
পরিবার আহত হয়েছে ৷ আপনি যদি শুধু
নিজের এবং আপনজনদের
নিরাপত্তা নিয়েই চিন্তিত হন -
তবে একটা সমস্যা আছে, তখন আপনাকে আর
দেহের (উম্মাহ) অংশ বলা যায় না ৷
মুসলিমরা রাষ্ট্র, মাযহাব,
দলাদলি নিয়ে বিভক্ত হতে পারে, কিন্তু
তাদের বড় পরিচয় তারা মুসলিম
(যদি না তারা পথভ্রষ্টদের মধ্যে কেউ হয়) ৷
অনেকে দাবী করেন ‘আমি ও আমার দল
মুসলিম’, অন্যরা যেহেতু তাদের দলের
অনুসরণ করেন না তাই অন্যরা মুসলিম না ৷
আপনি যতক্ষণ না কোন
ভাইকে বা বোনকে কাফের প্রমাণ
করতে পারবেন, ততক্ষণ সে মুসলিম [একজন
মানুষের অন্তরে ঈমান আছে কি নেই
তা দেখার ক্ষমতাও আমাদের নেই
বা তা দেখার নির্দেশও আমাদের
দেয়া হয়নি ৷ রসূল (সা) আমাদের বাহ্যিক
আমল দেখে মুসলিম সনাক্ত করতে বলেছেন
৷ যেমন: নামায, যাকাত, হজ্জ ইত্যাদি]৷
আমরা মুসলিমদের মধ্যে ঐক্য চাই ৷ ঐক্য
বলতে বলছিনা দল, মাযহাব সব বাদ
দিয়ে সবাইকে একটা জামাতের অনুসরণ
করতে হবে ৷ সেটা হয়তো এই মুহূর্তেই সম্ভব
নয় ৷ ঐক্য বলতে আমরা বলছি,
আপনি যে মুসলিম গোষ্ঠীর (বা group-এরই)
হননা কেন, যে মাযহাবের হননা কেন -
আপনি বিপদে আপনার ভাইয়ের
পাশে এসে দাড়াঁবেন ৷ এটাই ঐক্য!
মুসলিমদের মধ্যে একেকটা দল একেক রকম
কাজ করছে - এই বিভিন্নতার দরকার আছে ৷
মুসলিমদের আজ সব ক্ষেত্রে কাজ
করতে হবে ৷ কেউ হয়তো দাওয়াহর কাজ
করছে, কেউ ইল্ম অর্জন করছে, কেউ
এবাদতে মশগুল আছে ৷ মানুষ বিভিন্ন
রকমের, তাই কাজও বিভিন্ন রকম হবে ৷
মানুষের দক্ষতাও একেক রকম, কেউ ভাল
আলেম, কেউ ভাল ইমাম আর কেউ বা ভাল
শিক্ষক ৷ কেউ কেউ আছেন যারা কথা কম
বলেন, কাজ বেশি করেন ৷ সব ধরনের
লোকেরই দরকার আছে ৷
তাই অন্য মুসলিম ভাইদের সাথে আপনার
চিন্তাধারার মিল নাও থাকতে পারে,
কিন্তু তাদের বিপদে আপনি সাহায্য
করবেন - একেই বলে একতা ৷
আমাদের তাই রসূল (সা) হাদীসটির
কথা স্মরণ রেখে ও সারা পৃথিবীর
মুসলিমদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে কষ্ট
লাগা উচিত ৷ ফিলিস্তিন, ইরাক
বা কাশ্মীরে কি হচেছ
সে ব্যাপারে আপনাকে সচেতন
হতে হবে, যদিও তা আপনার দেশ নয় ৷ এসব
মুসলিম দেশের কয়েকটির মধ্যে বিরোধ
থাকতে পারে, যুদ্ধ বা রাজনৈতিক
সমস্যাও থাকতে পারে ৷ কিন্তু তাই
বলে আপনার মনোভাব একই থাকবে,
যা সমস্যা তা সরকারের মধ্যে,
সে দেশের মুসলিমরাতো আপনার ভাই ৷
গল্পটা থেকে তৃতীয়ত
আমরা বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম
জানতে পারি, জানতে পারি একজন
মুসলিমকে পরিত্যাগ করার কুফল ৷ রসূল (সা)
বলেছেন, 'যে তার মুসলিম
ভাইকে অত্যাচার করেনা,
বিশ্বাসঘাতকতা করেনা এবং পরিত্যাগ
করেনা সেই (প্রকৃত) মুসলিম ৷' (বুখারী ও
মুসলিম) ৷
(সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)
...
{গল্পটি ভাল লাগলে কমেন্ট ক রবেন
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৮ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 9368
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
মন্তব্য করতে লগইন করুন