গাজার এক বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রের লেখা যা সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করে

লিখেছেন লিখেছেন ইঞ্জিনিয়ার মুবিন ০৭ আগস্ট, ২০১৪, ০৮:১০:৫১ রাত



`এ কোশ্চেন ফ্রম গাজা: অ্যাম আই

নট হিউম্যান অ্যানাফ?' 'তোমার

আর আমার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে-

আমি আমার

হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারে সংগ্রাম

করে যাচ্ছি। আমার একমাত্র

অপরাধ- আমি আমার

হারানো ভূমি পেতে সংগ্রাম

করে যাচ্ছি এটাই আমার

পাপ। বিশ্ববাসী আমাকে একজন

সন্ত্রাসী বলে- কারণ

আমাকে পশুপাখির

মতো হত্যা করতে চায় ওরা, কিন্তু

আমি এরকম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ

করি। আসলে বনের প্রাণীটিও

নিজের জীবন বাঁচাতে চায়।'

মানুষ হিসেবে মনে করার

মতো বৈশিষ্ট্য কী আমার

মধ্যে নেই? আমি এতটুকু

বলতে পারি, আমিও একজন

স্বাভাবিক মানুষের মতোই

জীবনধারণ করছি। আমার

ভালো লাগা আছে, আছে ঘৃণা,

আমি কাঁদি-হাসি, আমার ভুল হয়,

আমি স্বপ্ন দেখি, আমি মনে আঘাত

পাই, আমি আঘাত দেই,

আমি পিজা খেতে ভালোবাসি,

টাইটানিক ছবিটি দেখেছি ৬

বার, হলিউড

অভিনেতা ব্র্যাডলি কুপারের

প্রতি আছে আমার ভক্তি, আমি অসুস্থ

হই, মাঝে-মধ্যে আমি কৌতুকও

করি; কৌতুক করে মজাও পাই।

এবং সর্বশেষ

আয়নায় যখন আমাকে দেখি, তখন

তো একজন মানুষের অবয়বেই

দেখলাম!

তবে, তোমাদের সঙ্গে আমাদের

পার্থক্য হচ্ছে- আমাদের

ভূমিতে উড়ে এসে জুরে বসেছে একটি জাতি।

তারা আমাদের ভূমিতে একচ্ছত্র

মালিকানা দাবি করছে।

যে ভূমিতে আমাদের

পূর্বপুরুষরা বাস করে আসছেন

সুপ্রাচীনকাল থেকে, সেখান

থেকে আমাদের

লোকজনকে জোর

করে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

আমি মার্কিন

যুক্তরাষ্ট্রকে মেনেই

নির্বাচনে (২০০৬ সালে,

যে নির্বাচনে হামাস জয়লাভ

করে) ভোট দিয়েছিলাম এমন এক

দলকে; যে দল আমার

চাওয়াগুলোকে পূরণ

করতে পারবে। কিন্তু গণতান্ত্রিক

নিয়ম মেনেই আমি আমার পছন্দের

দলকে ভোট দিই। কিন্তু আমার এই

ভোটের

কারণে আমাকে শাস্তি পেতে হচ্ছে।

আমার জানা ছিল না যে, আধুনিক

গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ

ভোটে নয়, বরং মার্কিন

যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিয়েই

একটি দলকে নির্বাচিত হতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের সংজ্ঞায়

সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারের কোন

মূল্য নেই, তার দেশের অনুমতিটাই

গুরুত্বপূর্ণ।

আমার এই ভোটদানের

অপরাধে আমাদেরকে কঠোরতম

অবরোধে আবদ্ধ করা হয়েছে, যার

ফলে ক্ষুধার জ্বালায়

ভুগতে হচ্ছে আমাদের। বছরের পর

বছর ধরে একটি সংকীর্ণ

জায়গায় (গাজা)

আমাদেরকে আটকে রাখা হয়েছে,

যার সাথে দুনিয়ার কোনও

সংযোগ নেই। অবরোধের এই

সময়েই আমি আমার

বিশ্ববিদ্যালয়ের

পড়াশোনা শেষ করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের

পড়াশোনা আমাকে করতে হয়েছে মোমবাতির

আলোতে। বিদ্যুতের

অভাবে আমার

গবেষণাপত্রটি কম্পিউটারে টাইপ

করতে না পেরে হাতে লিখতে হয়েছে।

স্কুল জীবনে আমাকে দীর্ঘসময়

স্কুলে কাটাতে হয়েছে না খেয়ে।

কারণ খাবার কেনার

মতো পর্যাপ্ত টাকা আমাদের

ছিল না; যদিও আমার বাবা একজন

প্রকৌশলী। কিন্তু গাজায়

নির্মাণকাজের মতো কোন

কর্মযজ্ঞ নেই প্রকৌশলীদের

হাতে।

কোন বিরতি ছাড়াই টানা চার

বছরে আমি আমার গ্র্যাজুয়েশন

করি। আমার স্বপ্নগুলো ছিল আমার

বাস্তবতার চেয়েও বড়। কিন্তু

আমার টিকে থাকার জন্য কোন

চাকরি নেই।

মানুষ হিসেবে আমার মৌলিক

অধিকারগুলো পেতে আমি প্রতিবাদ

জানাই, আমি সংগ্রামের পথ

বেছে নিই। কিন্তু পুরো বিশ্ব

আমার এই প্রতিবাদ-সংগ্রা

মকে সন্ত্রাসবাদ

বলছে কেন???

গত এক দশকেরও কম সময়ের

মধ্যে আমার ক্ষুধায় পীড়িত ও

বিচ্ছিন্ন গাজায় তিনবার

হামলা চালিয়েছে দখলদার

ইসরায়েল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের

ট্যাক্সদাতাদের টাকায়

বিশ্বের

সর্বাধুনিক সব মারণাস্ত্র

নিয়ে গাজার ওপর

হামলে পড়েছে এই জংলিরা।

কিন্তু যখন

আমরা অত্যাধুনিক এসব

মারণাস্ত্রের

বিরুদ্ধে হাতে নির্মিত অস্ত্র

নিয়ে স্ব-ইচ্ছায়,

হাসিমুখে প্রতিরোধ

গড়ে তুলি তখন

বিশ্ববাসী আমাদেরকে অভিযুক্ত

করে। প্রতিদিনই আমার

লোকজনকে হত্যা করা হচ্ছে-

এটা আমি জন্মের পর থেকেই

দেখে আসছি। দুর্বিষহ

যন্ত্রণা-কষ্ট নিয়ে আমাদের

লোকজন জীবন-যাপন করছেন। এরপরও

আমাদেরকে উগ্রবাদী,

সন্ত্রাসবাদী ও

জঙ্গিবাদী বলা হচ্ছে।

আমাকে সন্ত্রাসী ও

জঙ্গি বলা হচ্ছে, কারণ

আমি আমার মানবিক মৌলিক

অধিকারের জন্যলড়াই করি। এই

অধিকার এক ফোঁটা রক্ত

ঝরা ছাড়াই একজন মানুষের

পাওয়ার কথা।

আমার এই ছোট্ট জীবন

থেকে ২৭টি দিন (গাজায়

ইসরায়েলি আগ্রাসনের ২৭ দিনের

মাথায় লেখা)

কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই

২৭টি দিন হচ্ছে আমার জীবনের

'সবচেয়ে সুন্দর দিন'; কেননা এই

দিনগুলোতে আমার প্রিয়

মানুষগুলোকে হত্যা করতে দেখেছি।

তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে কারণ

তারা মানুষ হিসেবে উপযুক্ত নয়!

যুদ্ধ করেই যদি আমাদের

বেঁচে থাকতে না হতো,

তাহলে আমাদের

ঘরে একটি রকেটও পাওয়া যেত

না।

আমি যখন এই

লেখাটি লিখছি তখনআমার

মা আমার বাবাকে বলছেন,

রান্না করার মতো গ্যাস নেই;

নেই কোন পানি এবং বিদ্যুৎ।

আমি জানি না কী অপরাধ

করেছি আমি যে কারণে এসব

দুর্ভোগ আমাকে পোহাতে হবে?

আমি জানতে চাই মানুষদের

কাছে, তারা এ অবস্থায়

কী করবেন?'

মাইসাম আবুমুর,

ররিবার-03/08/2014;

গাজা,ফিলিস্তিন|

সূত্র: আল জাজিরা-

31 mins · Public

বিষয়: বিবিধ

১৭৮৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

252071
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:২৩
সবুজেরসিড়ি লিখেছেন : অপরাধ মুসলামান , মুসলমানরা মানুষ না মুসলমানদের জন্য মানবিকতা থাকতে নেই . . .
০৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৭:০৪
196290
ইঞ্জিনিয়ার মুবিন লিখেছেন : আমার ব্লগ পড়ার জন্য ধন্যবাদ। একমত আপ নার সাথে
252079
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৩৯
কাজি সাকিব লিখেছেন : ভালো লাগলো
252083
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:০১
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা লিখেছেন : ঝাপসা চোখে আমি কিছুই লিখতে পারছি না.......

আর আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা মীরজাফরের মতো বেচে আছি
252095
০৭ আগস্ট ২০১৪ রাত ১০:৪১
সন্ধাতারা লিখেছেন : Heart touching!!!
252129
০৮ আগস্ট ২০১৪ রাত ১২:২৭
সজল আহমেদ লিখেছেন : এ জন্যই বোধ হয় স্যার মাহমুদুর রহমান দুঃখ করে বলেছিলেন ,
মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই ।
252154
০৮ আগস্ট ২০১৪ সকাল ০৫:২৪
মোহাম্মদ নূর উদ্দীন লিখেছেন : মানবতাবাদিদের কর্নকুহরে এ আহজারি পৌছাবেনা !!
253610
১২ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৪:১৫
সায়িদ মাহমুদ লিখেছেন : মূল লেখকের নামটা জানাতে পারলে আরোবেশি ভাল লাগতো, সেই সাথে ‍অনুবাদকারির অনূবাদ শৈলীতেও ধারুণ লিখেয়ের পরিচয় দিয়েছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File