শিক্ষিত শয়তান (এর চাইতে ভালো শিরোনাম খুঁজে পেলাম না )
লিখেছেন লিখেছেন সত্যকণ্ঠ ১৬ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:৩৯:০০ সকাল
প্রশাসনের সীমাহীন অবহেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলছে অবাধে মাদকদ্রব্য বিক্রি। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকাকে কেন্দ্র করে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে মাদক সরবরাহকারী একটি চক্র। রাজনৈতিক নেতাদের চাঁদা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি এ স্থানটিকে করে নিয়েছেন মাদক বিক্রির নিরাপদ জোন। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, প্যাথেডিনসহ রকমারি মাদকে ছেয়ে গেছে ক্যাম্পাসের অলিগলি। রিকশাচালক, ফেরিওয়ালা ও চা বিক্রেতা ছদ্মবেশে চালানো হচ্ছে এ কার্যক্রম। আর এসব মাদক দ্রব্যের বেশিরভাগ ক্রেতাই হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশ পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ভাসমান বিক্রেতাদের দফায় দফায় ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও অন্যান্য মাদকদ্রব্যসহ ধরা হলেও একটুও কমছে না মাদক বিক্রি। অভিযোগ রয়েছে, মাদক বিক্রির সঙ্গে সরকারদলীয় ছাত্র নেতাদের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কারণেই মাদক ব্যবসায়ী চক্রটি শক্ত করে এ এলাকায় খুঁটি গেড়ে বসেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের নির্লিপ্ত আচরণের কারণেও এর মূলোৎপাটন সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফলে, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এ প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে সামাজিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের পাশাপাশি নানা অপরাধ বেড়েই চলছে।
জানা জানায়, মাদক বিক্রি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিত্যকার ঘটনা হলেও প্রশাসনের উদাসীনতায় এ অপরাধ চাপা পড়ে যাচ্ছে। কদাচিৎ ঘটছে মাদক বিক্রেতাদের ধর পাকড়ের ঘটনা। এ বছর দুই দফায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের মাঠ থেকে ইয়াবাসহ ধরা হয় ভাসমান মাদক বিক্রেতাদের। প্রথমবার ১০০ টি ও দ্বিতীয়বার ২৫টি ইয়াবা উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। এছাড়া কিছুদিন আগে ফজলুল মুসলিম হলের পাশ থেকে ফেন্সিডিল ভর্তি একটি গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ। গত বছর সাভার থেকে মুহসীন হল ছাত্রলীগের গত কমিটির এক সহ-সম্পাদককে ইয়াবাসহ আটক করে পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা রুমে নিয়মিত মাদক সেবনের আসর বসান। তার বিরুদ্ধে এর আগে হলের রুমে মেয়ে এনে রাখার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া সবগুলো হলেই চলে কম বেশি মাদক সেবন। তবে ছাত্রনেতাদের নেতৃত্বে বহিরাগতদের সমন্বয়ে জগন্নাথ হলের ভবনগুলোতে হরহামেশাই মাদক সেবন। আর এসবের নেতৃত্বে থাকেন হলের ছাত্রনেতারা।
সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে টেনকনাফসহ অন্যান্য এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য আসে পুরান ঢাকার লালবাগ, চানখাঁরপুল এবং নীলক্ষেত এলাকায়। সেখান থেকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। অনুসন্ধানে জানা যায়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বকশীবাজার মোড়, মুহসীন হল মাঠ, পলাশী, আজিমপুর মেটার্নিটি হাসপাতাল, মল চত্বর, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ গেট, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং টিএসসিতে বিশেষ সংকেতের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে মাদক। রিকশাচালক, চা বিক্রেতা এবং বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে বিক্রি হচ্ছে এগুলো। রিকশার সিটের ভেতরে রেখে বিক্রি হয় গাঁজা। সহজেই পাওয়া যায় হেরোইনের পুরিয়া আর ইয়াবা ট্যাবলেট। বুয়েটের পেছনের গেট বলে পরিচিত কাবুল শাহ মাজার বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় অঘোষিত মাদক স্পট। এখানে সবসময় দাঁড়ানো থাকে ২০/২৫টি রিকশা। প্রত্যেকটি রিকশার সিটের নিচে থাকে মাদকদ্রব্য। এরা মূলত গাঁজার পুরিয়া ও ফেনসিডিল বিক্রি করে। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ ও ১০০ টাকার পোটলা পাওয়া যায় তাদের কাছে। তাদের বেশিরভাগ ক্রেতাই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মাদক বিক্রি ও সেবনের তীর্থস্থান বলে পরিচিত চারুকলার বিপরীত দিকের ছবির হাট। ছবির হাট থেকে শিখা চিরন্তন এলাকা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রকাশ্যেই মাদক সেবন ও বিক্রি হয়। চারুকলার কয়েকজন সরকারদলীয় ছাত্রনেতা এ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্কুল-কলেজের পোশাক পরা শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বৃদ্ধরা পর্যন্ত এখানে প্রকাশ্যই মাদক সেবন করেন। অথচ এর মাত্র কয়েকশ গজের মধ্যেই শাহবাগ থানা। অভিযোগ রয়েছে, থানা-পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলছে এ রমরমা মাদক ব্যবসা। উদ্যানের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন সময় সুমী নামের এক মহিলার কথা উঠে এলেও তাকে অদৃশ্য কারণে কখনও আটক করা হয়নি।
সোমবার রাত ১১টায় মাদকসেবী পরিচয়ে এক মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আগে কাওরানবাজার রেললাইনের পাশে ও যাত্রবাড়ির ধলপুরে মাদক ব্যবসার প্রধান কেন্দ্র থাকলেও সেখানে পুলিশি ঝামেলায় এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলে এসেছে। এখানে দৈনিক ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকার মাদক কেনাবেচা হয়। ক্যাম্পাসে মেয়ে মাদকসেবীদের মধ্যে বেশিরভাগ চারুকলার ছাত্রী। তারা প্রকাশ্যে চারুকলার সামনে মাদক সেবন করে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে মাদক সেবনের জন্য ক্যাম্পাসকে বেছে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলগুলো রাত সাড়ে ৯টায় বন্ধ হলেও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে গভীর রাত পর্যন্ত মেয়েদের মাদক সেবন করতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কখনও ব্যবস্থা নেয়নি। চারুকলার গেটের ভেতরে এবং বাইরে বসে সিগারেট, গাঁজা ও ফেনসিডিল সেবন করতে দেখা যায় অনেক মেয়েকে।
এছাড়া সন্ধ্যার পর নির্দিষ্ট আইডি কার্ডধারীরা চারুকলার ভেতরে প্রবেশ করে, মাদক সেবন ছাড়াও নিভৃতে চলে নানা অসামাজিক কার্যকলাপ। বিভিন্ন হলে ছাত্রীদের মাদক সেবন থেকে বিরত রাখতে হলের ছাদে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। টিএসসির বিভিন্ন রুম ও বাথরুমে ফেনসিডিলের বোতল এবং গাঁজার পোটলা পাওয়া যায় অহরহ। বিশ্ববিদ্যালয় ও পুরান ঢাকার একটি সিন্ডিকেট পার্শ্ববর্তী ইডেন মহিলা কলেজ, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ও বদরুন্নেছা কলেজে মাদকদ্রব্য বিক্রি করে। তাদের সহযোগিতা করে হলগুলোর একাধিক মহিলা কর্মচারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউমার্কেট এলাকার দুটি ছাত্রী হল কুয়েত-মৈত্রী ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে মাদকদ্রব্য বিক্রির সঙ্গে কুয়েত মৈত্রী হলের দুই কর্মচারী জড়িত বলে জানা গেছে। এছাড়া ছেলেদের হলে প্রকাশ্যই রাতে ছাদের ওপর বসে মাদক সেবনের আখড়া। অনেক উঠতি ছাত্রনেতা তাদের রুমে বসেই মাদক ব্যবসা ও সেবনের কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আমজাদ আলী বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক মাদকের উৎপাত খুব বেশি। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে বারবার এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। ক্যাম্পাসেও টহল বাড়ানো হয়েছে। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিতভাবে উদ্যানে অভিযান পরিচালনা করি। আজও একজনকে মাদকসহ আটক করা হয়েছে।
সূত্র- ইনকিলাব
বিষয়: বিবিধ
১৮১৭ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এসবের ব্যবসা রাজনীতিবিদদেরই, প্রচুর ইনকাম ইল্যিগাল থাকলে!
এই তথাকথিত স্মার্টদের হাত থেকে আল্লাহতায়লা আমাদের রক্ষা করুন।
তো বলুন দেশটা রসাতলে যাবে না তো কোথায় যাবে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন