‍‍‍‍‍‍‌‌‌‌‌"‍ইমাম পরিচিতি - ১ম পর্ব"

লিখেছেন লিখেছেন শিআনে আলী আলাইহিস সালাম ২৪ আগস্ট, ২০১৪, ০১:২১:৩৯ দুপুর

ইমাম শব্দের অর্থ: ‘ইমাম’ বা নেতা তাকেই বলা হয়, যে একদল লোককে নির্দিষ্ট কোন সামাজিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক অথবা ধর্মীয় লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যে নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব গ্রহণ করে। অবশ্য নেতা তার নেতৃত্বের পরিধির বিস্তৃতি ও সংকীর্ণতার ক্ষেত্রে সময় ও পরিবেশগত পরিস্থিতির অনুসারী পবিত্র ইসলাম ধর্ম মানব জীবনের সকল দিক পর্যবেক্ষণপূর্বক তার জন্যে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।

ইসলাম মানুষের আধ্যাত্মিক জীবন বিশ্লেষণপূর্বক তার জন্যে প্রয়োজনীয় পথর্নিদেশ দান করেছে। পার্থিব জীবনের ক্ষেত্রে এবং মানুষের ব্যক্তিগত জীবন যাপন ও তার পরিচালনার ব্যাপারেও ইসলামের হস্তক্ষেপ রয়েছে। ঠিক একইভাবে মানুষের সামাজিক (পার্থিব) জীবন ও তার পরিচালনার (রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা) ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশ রয়েছে।

উপরে মানব জীবনের যেসব দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে ইসলামী নেতৃত্ব তিনটি দিকে গুরুত্বের অধিকারী। সেই দিক গুলো হচ্ছে:ইসলামী শাসন ব্যবস্থা, ইসলামী জ্ঞানমালা ও আইন কানুন বর্ণনা এবং আধ্যাত্মিক জীবনে নেতৃত্ব ও পথ নির্দেশনার দিক। শীয়াদের দৃষ্টিতে ইসলামী সমাজের জন্যে উক্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি দিকের নেতৃত্ব দানের জন্যে নেতার প্রয়োজন অপরিহার্য। যিনি ইসলামী সমাজের এ তিনটি দিকের উপযুক্ত নেতৃত্ব দেবেন অবশ্যই তাকে মহান আল্লাহ‌ ও তার রাসুল (সা.)-এর দ্বারা মনোনীত হতে হবে। অবশ্য মহান আল্লাহ্‌র নির্দেশে বিশ্বনবী (সা.) এই মনোনয়ন কার্য সম্পন্নও করে গেছেন।

ইমামত এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থা ও মহানবী (সা.)-এর উত্তরাধিকার

মানুষ তার আল্লাহ প্রদত্ত স্বভাব দিয়ে অতি সহজেই এ বিষয়টি উপলব্ধি করে যে, কোন দেশ, শহর গ্রাম বা গোত্র এবং এমনকি গুটি কয়েক লোক সম্বলিত কোন একটি সংসারও একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নেতৃত্ব ছাড়া চলতে পারে না। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নেতৃত্ব ছাড়া সমাজের চাকা সচল রাখা সম্ভব নয়। একজন নেতার ইচ্ছাই সমাজের অসংখ্য ব্যক্তির ইচ্ছার উপর প্রভুত্ব করে। এভাবে সে সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নেতৃত্ব ছাড়া সমাজের গতি অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না। তাই অতি অল্প সময়ের মধ্যেই নেতাহীন ঐ সমাজ ছত্রভঙ্গ হয়ে যেতে বাধ্য।

যার ফলে এক ব্যাপক অরাজকতা ঐ সমাজকে ছেয়ে ফেলবে। সুতরাং, উক্ত যুক্তির উপর ভিত্তি করে নিঃসন্দেহে এ কথা বলা যায় যে, সমাজ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত (সে সমাজ বৃহত্তরই হোক অথবা ক্ষুদ্রতরই হোক) নেতা, সমাজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে যার অবদান অনস্বীকার্য তিনি যদি কখনও অস্থায়ীভাবে অথবা স্থায়ীভাবে তার পদ থেকে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে অবশ্যই তার ঐ অনুপস্থিতকালীন সময়ের জন্যে অন্য কাউকে দায়িত্বশীল হিসেবে নিয়োজিত করে যাবেন। এধরণের দায়িত্বশীল কোন নেতা কোনক্রমেই এমন কাজ করতে প্রস্তুত হবেন না, যার ফলে নিজের দায়িত্বের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কারণে নেতার অভাবে ঐ সমাজের অস্তিত্ব ধ্বংসোন্মুখ হয়ে পড়বে। কোন পরিবারের কর্তাব্যক্তিও যদি কিছুদিনের জন্যে অথবা কয়েক মাসের জন্যে পরিবারের সদস্যদের ত্যাগ করে দূরে কোথাও ভ্রমনে যান। তখন অবশ্যই তিনি তার অনুপস্থিতকালীন সময়ে সংসার পরিচালনার জন্যে পরিবারের কাউকে (অথবা তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে) দায়িত্বশীল হিসাবে নিয়োগ করে যান। কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা স্কুলের প্রধানশিক্ষক অথবা দোকানের মালিক, যাদের অধীনে বেশ ক’জন কর্মচারী কর্মরত, তারা যদি অল্প ক’ঘন্টার জন্যেও কোন কারণে কর্মস্থল ত্যাগ করেন, তাহলে অধীনস্থ কাউকে তার অনুপস্থিতকালীন সময়ে তার দায়িত্ব পালনের জন্যে নিযুক্ত করে যান। আর অন্যদেরকে ঐ নবনিযুক্ত দায়িত্বশীলের আনুগত্য করার নির্দেশ দেন। ইসলাম এমন এক ধর্ম, যা আল্লাহ প্রদত্ত মানব প্রকৃতি অনুযায়ী পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্‌র ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম একটি সামাজিক আদর্শ যার প্রকৃতি এমন এক দৃষ্টান্তমূলক যে, পরিচিত ও অপরিচিত সবাই ঐ আদর্শের দর্পন থেকে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারে। মহান আল্লাহ‌ ও বিশ্বনবী (সা.) এই আদর্শের সামাজিকতার ক্ষেত্রে যে মহান অবদান রেখেছেন, তা সবার কাছেই অনস্বীকার্য। এই ঐশী আদর্শ পৃথিবীর অন্য কিছুর সাথেই তুলনাযোগ্য নয়। মহানবী (সা.)-ও ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন সামাজিক বিষয়ই পরিত্যাগ করতেন না। যখনই কোন শহর বা গ্রাম মুসলমানদের দ্বারা বিজিত হত, সম্ভাব্য সংক্ষিপ্ত সময়ে বিশ্বনবী (সা.) তার পক্ষ থেকে কাউকে ঐ অঞ্চলের শাসনকর্তা ও স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে পাঠাতেন। এমনকি জিহাদ পরিচালনার উদ্দেশ্যে প্রেরিত সেনাবাহিনীর জন্যে প্রয়োজন বোধে (অত্যাধিক গুরুত্বের কারণে) একাধিক সেনাপতিও তিনি নিযুক্ত করতেন। এমনকি ঐতিহাসিক ‘মুতার’ যুদ্ধে বিশ্বনবী (সা.) চারজন সেনাপতি নির্বাচন করেছিলেন। যাতে প্রথম সেনাপতি শাহাদত বরণ করলে দ্বিতীয় সেনাপতি দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। দ্বিতীয়জন শাহাদত বরণ করলে তৃতীয়জন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। আর এইভাবে এ ধারা বাস্তবায়িত হবে। রাসুল (সা.)-এর এসকল কার্যের মাধ্যমেই নেতা নিয়োগের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে যায়। একইভাবে বিশ্বনবী (সা.) তার স্বীয় উত্তরাধিকারের বিষয়েও সম্পূর্ণ সজাগ ছিলেন। তিনি স্বীয় উত্তরাধিকারী নির্ধারণের ব্যাপারে কখনোই পিছপা হননি। যখনই তিনি প্রয়োজন বোধে মদীনার বাইরে যেতেন, তখনই তিনি কাউকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যেতেন এমন কি যখন তিনি মদীনার উদ্দেশ্যে মক্কা নগরী ত্যাগ করে ছিলেন, যখন কেউই সে সংবাদ সম্পর্কে অবহিত ছিল না তখনও মাত্র অল্প ক’দিনের জন্য স্বীয় ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন ও জনগণের গচ্ছিত আমানত দ্রব্যাদি মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে মক্কায় হযরত ইমাম আলী (আ.)-কে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে যান। এভাবেই বিশ্বনবী (সা.) মৃত্যুর পূর্বে স্বীয় ঋণ পরিশোধ ও বিশ্বাসগত অসমাপ্ত কার্যাবলী সম্পাদনের জন্যে ইমাম আলী (আ.)-কে নিজের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। তাই শীয়ারা বলে: উপরোক্ত দলিলের ভিত্তিতে এটা আদৌও কল্পনাপ্রসূত নয় যে, বিশ্বনবী (সা.) মৃত্যুর পূর্বে কাউকে তাঁর উত্তরাধিকারী বা স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নির্বাচিত করে যাননি। মুসলমানদের প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা এবং ইসলামী সমাজের চালিকা শক্তি নিয়ন্ত্রণের জন্যে কাউকেই মহানবী (সা.) মনোনীত করে যাননি, এটা এক কল্পনাতীত ব্যাপার বটে। এক শ্রেণীর আইন্তকানুন ও কিছু সাধারণ আচার অনুষ্ঠান, যা সমাজের অধিকাংশ জনগণের দ্বারা বাস্তবে স্বীকৃত ও সমর্থিত, তার উপর ভিত্তি করেই একটি সমাজের সৃষ্টি হয়। আর ঐ সমাজের অস্তিত্ব টিকে থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ রূপে ন্যায়বিচার ভিত্তিক ও দায়িত্বশীল একটি প্রশসানের অস্তিত্বের উপরই নির্ভরশীল। এটা এমন কোন বিষয় নয় যে, মানব প্রকৃতি এর গুরুত্ব ও মূল্য সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে। কোন বিজ্ঞ ব্যক্তির কাছেও এটা কোন অজ্ঞাত বিষয় নয় এবং এটা ভোলার বিষয়ও নয়, কারণ, ইসলামী শরীয়তের (বিধান) সূক্ষ্মতিসূক্ষতা ও বিস্তৃতি একটি সন্দেহাতীত ব্যাপার। আর এ ব্যাপারটিও অনস্বীকার্য যে, বিশ্বনবী (সা.) এ ব্যাপারে অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করতেন এবং এপথে তিনি নিজের সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন। তাঁর ঐ আত্মত্যাগ, অসাধারণ চিন্তাশক্তি, প্রজ্ঞার শ্রেষ্ঠত্ব, সূক্ষ্ম ও সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী এবং সুক্ষ্ম বিশ্লেষণ ক্ষমতার (ওহী ও নবুয়তের সাক্ষ্য ছাড়াও) বিষয়টি নিঃসন্দেহে বির্তকের উর্ধ্বে। শীয়া ও সুন্নী উভয় দলেরই মত নির্বিশেষে বর্ণিত ‘মুতাওয়াতির’ (বিশ্বস্ত) হাদীস অনুযায়ী (‘ফিৎনা’ অধ্যায়ের হাদীস) বিশ্বনবী (সা.) তাঁর অন্তর্ধানের পর ইসলামী সমাজ যেসব র্দূনীতিমূলক সমস্যায় আক্রান্ত হবে, তার ভবিষ্যতবাণী করেছেন। ঐসব সমস্যার মধ্যে যেসব সমস্যাগুলো ইসলামকে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, উমাইয়া বংশ সহ আরও অন্যান্যদের খেলাফত লাভের বিষয়টি তার মধ্যে অন্যতম। কারণ: তারা ইসলামের পবিত্র আর্দশকে তাদের বিভিন্ন ধরণের অপবিত্রতা ও অরাজকতামূলক জঘণ্য কাজে ব্যবহার করেছে। এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.) তাঁর হাদীসে বিস্তারিতভাবে ভবিষ্যতবাণী করেছেন। বিশ্বনবী (সা.) তাঁর মৃত্যুর হাজার হাজার বছর পরের ইসলামী সমাজের খুঁটিনাটি বিষয়াদি ও সমস্যা সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত সচেতন এবং সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ভবিষ্যতবাণীও করে গেছেন। তাহলে এটা কি করে সম্ভব যে, যিনি তাঁর পরবর্তী সুদুর ভবিষ্যতের ব্যাপারে এত সচেতন, অথচ স্বীয় মৃত্যু পরবর্তী মূহুর্তগুলোতে সংঘটিত ঘটনাবলীর ব্যাপারে আদৌ সচেতন নন?! বিশ্ব নবী (সা.)-এর পরবর্তী উত্তরাধিকারের মত এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি তাহলে তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে অবহেলা করেছেন, অথবা এটাকে গুরুত্বহীন একটি বিষয় হিসেবে গণ্য করেছেন? এটা কেমন করে সম্ভব যে, খাওয়া পরা, ঘুমানো এবং যৌন বিষয়াদির মত মানব জীবনের শতশত খুঁটিনাটি বিষয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশ তিনি জারী করেছেন, অথচ ঐ ধরণের একটি অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তিনি সম্পূর্ণরূপে নীরবতা পালন করেছেন? নিজের উত্তরাধিকারীকে তিনি মনোনীত করে যাননি? ধরে নেয়া যাক (যদিও এটা অসম্ভব একটি ধারণা) যে, মহানবী (সা.) তাঁর স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের দায়িত্বভার মুসলমানদের উপরে ছেড়ে দিয়েছেন, তাহলে এ ব্যাপারে অবশ্যই বিশ্বনবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকার কথা। এ ব্যাপারে অবশ্যই জনগণের প্রতি তাঁর প্রয়োজনীয় নির্দেশনা থাকা উচিত। কারণঃ ইসলামী সমাজের অস্তিত্ব ও বিকাশ এবং ইসলামী নির্দশনাবলীর অস্তিত্ব এ বিষয়টির উপর সম্পূর্ণ রূপে নির্ভরশীল। তাই এ ব্যাপারে সমগ্র মুসলিম উম্মতকে সদা সচেতন থাকতে হবে। অথচ, এব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণঃ যদি এমন সুস্পষ্ট কোন নির্দেশনার অস্তিত্ব থাকত, তাহলে নিশ্চয়ই বিশ্ব নবী (সা.)-এর পরে তার স্থলাভিষিক্তের পদাধিকারী নির্ধারণের ব্যাপারে এত মতভেদের সৃষ্টি হত না। অথচ আমরা দেখতে পাই যে, প্রথম খলিফা ওসিয়তের (উইল) মাধ্যমে দ্বিতীয় খলিফার কাছে খেলাফত হস্তান্তর করেছিলেন।

বিষয়: বিবিধ

১১২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

257723
২৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৪৬
বুড়া মিয়া লিখেছেন : এই লেখাগুলো আগের পোষ্টে ছিলো না?

লেখাগুলো কি আপনার নিজের লিখিত না-কি সংগৃহীত?
২৪ আগস্ট ২০১৪ রাত ০৯:৫৯
201531
শিআনে আলী আলাইহিস সালাম লিখেছেন : এটা আমার ওস্তাদের লেখা।বিস্তারিত আলোচনা।
257725
২৪ আগস্ট ২০১৪ দুপুর ০১:৪৭
কাহাফ লিখেছেন : নতুন করে আবার বাংলাদেশে শীয়া ফেতনা জেগে উঠছে মনে হচ্ছে,.............

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File