"শি'আদের আরো কতিপয় খুঁটিনাটি বিশ্বাস"
লিখেছেন লিখেছেন শিআনে আলী আলাইহিস সালাম ২২ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:০৪:৫০ রাত
শি'আদের আরো কিছু টুকিটাকি আকিদা-
১) আমরা মোতা বিবাহে বিশ্বাসী।সুন্নিদের বিশ্বাস মোতা হালাল ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে হারাম হয়ে গেছে।আর শি'আদের বিশ্বাস মোতা জায়েজ ছিলো এবং এখনো জায়েজ আছে।মোতা হচ্ছে স্থায়ী বিবাহের অনুরূপপ একটি বৈবাহিক বন্ধন।এর শুদ্বতা ইজাব ও কবুরের উপর নির্ভর করে। মোতা বিবাহে মোহর ও সময়কাল নির্ধারন করতে হয়।আর বাকী সব ক্ষেত্রে স্থায়ী বিবাহের সব শর্ত প্রযোজ্য।
মোতা হালাল হওয়ার আয়াত-সূরা নিসা,২৪।
সুন্নিদের বিশ্বাস মোতা রাসূলের হাদীস দ্বারা নিষিদ্ব।কিন্তু শি'আদের বিশ্বাস কোরআনের আয়াত হাদীস রহিত হয় না।
২) শিয়াদের বিশ্বাস হলো সেজদার জন্য মাটি হলো সর্বোত্তম।যে সমস্ত জিনিসের উপর সেজদা করা বৈধ সেগুলোর মধ্যে মাটি হচ্ছে সর্বোত্তম।সেজদা কেবল মাটি বা মাটি হতে উৎপন্ন এমন জিনিসের উপর বৈধ,যেটা খাবার বা পরিধান যোগ্য নয়।আমরা মাটিতে মাথা রেখে আল্লাহকে সিজদা করি,মাটিকে নয়।
৩)শি'আরা যোহর ও আসর এবং মাগরিব ও এশা একত্রে আদায় করে থাকে।
এ ব্যাপারে হাদীস- বোখারী,১ম খন্ড,৫২৯ (আধুনিক প্রকাশনী)
শি'আদের পবিত্র ইমামদের নামসমূহ:
১)আলী ইবনে আবু তালিব ((আঃ)
২)হাসান ইবনে আলী আল মুরতাজা (আঃ)
৩)হোসাইন ইবনে আলী (আঃ)
৪)আলী ইবনে হোসাইন (আঃ)
৫)মুহাম্মদ বাকের ইবনে আলী (আঃ)
৬)জাফর সাদিক ইবনে মুহাম্মদ (আঃ)
৭)মুসা কাযিম ইবনে জাফর (আঃ)
৮)আলী ইবনে মুসা(আঃ)
৯)মুহাম্মদ ইবনে আলী (আঃ)
১০)আলী ইবনে মুহাম্মদ (আঃ)
১১)হাসান আসকারী ইবনে আলী (আঃ)
১২)মুহাম্মদ ইবনে হাসান আল মাহদী আল মান্তাযার আল হুজ্জাত (আঃ)
বিষয়: বিবিধ
১৭৮৬ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ হেফাযত করুক।
আমি একজন শিআ ভাইকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, "আপনারা তো বলেন আলী (রাযি.)-ই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পর খিলাফতের যোগ্য ও একমাত্র হকদার ছিলেন। এমনকি স্বয়ং আল্লাহ এবং তার রাসূল (সাঃ) এই বিষয়টি নির্ধারণ করেছিলেন। সুতরাং তাকে বঞ্চিত করে আবু বকর (রাযি.), উমর (রাযি.) ও উসমান (রাযি.) খিলাফতে অধিষ্ঠিত হওয়া মূলত আলী (রাযি.)-এর উপর অত্যাচার, রাসূল (সাঃ)-এর আদেশ অবমাননা ও কুরআনের অবাধ্যতা। ঠিক কি না?"
তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- "অবশ্যই ঠিক।"
আমি প্রশ্ন করলাম- "তাহলে আলী (রাযি.)-কেন তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন না? কেন তিনি সরাসরি তাদের খিলাফতকে অবৈধ ঘোষণা করে জীহাদ করলেন না? কেন তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর নিরবতা পালন করলেন? এমনকি পূববর্তী ৩ খলিফাকে যাবতীয় সহযোগীতা করলেন?"
তিনি উত্তর দিলেন- "আসলে তিনি (আলী (রাযি.) জানতেন তখন অবস্থা খুব নাজুক, এমতাবস্থায় তিনি খিলাফতের দাবিতে সংগ্রাম করলে ইসলাম অঙ্কুরেই বিনস্ট হওয়ার সম্ভবনা ছিলো প্রবল। তথাপি তিনি এও জানতেন এই মুহুর্তে তিনি খিলাফত দাবী করলে বেশিরভাগ লোকই তাকে সমর্থন বা তার সহযোগীতা করবে না কারণ তারা উক্ত তিনজনের মোহে আবিস্ট ছিলো। তাই আমিরুল মু'মিনিন (আলী (রাযি.) তখন তাকিয়্যা অবলম্বন করেন। তিনি যুদ্ধের চেয়ে শান্তিকেই বেছে নেন।"
আমি বললাম- "এটা কি আশ্চর্যের নয়! আসাদুল্লাহ, আসাদে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)আননাকিলুল জুলফিকার আলী বিন আবি তালিব (রাযি.), যিনি সারা জীবন ইসলামের স্বার্থে বাতিলের উপর সিংহ বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, যিনি কখনো বাতিলের ছায়াটুকুও সহ্য করতে পারেন নি, তিনি বাতিলের সাথে সমঝোতা করলেন! তাহলে তিনি আমীর মুআবিয়া (রাযি.)-এর সাথে যুদ্ধ করলেন কেন? তখনও তিনি শান্তির কারণে যুদ্ধ পরিহার করলেন না কেন?"
তিনি উত্তরে বললেন- "তিনি মুআবিয়ার উপর হামলা করেন নি, মুআবিয়া হামলা করেছিলো, তিনি সেটা প্রতিহতই করেছিলেন। তাও যুদ্ধক্ষেত্রে ও এর আগে তিনি যুদ্ধ বাতিলের অনেক চেষ্ঠাই করেছেন।"
আমি বললাম- "ঠিক আছে। তাহলে সাইয়্যেদুশ শুহাদা হযরত হুসাইন বিন আলী (রাযি.) কেন ইয়াজিদের সাথে যুদ্ধ করতে গেলেন? তিনিও তো জানতেন তাকে সমর্থন করা হবে না, তিনি সহযোগীতা পাবেন না। আর আপনাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ইমামরা গায়েবী ইলমের মাধ্যমে অনেক কিছু আগেই জানতে পারে, তাহলে তো তিনিও আসহাবে কুফার বিশ্বাসঘাতকতার কথা জানতে পেরেিছিলেন। তাও তিনি পিতার মতো তাকিয়্যা না করে কেন লড়াই করে জীবন দিতে গেলেন?"
তিনি উত্তরে বললেন- "সংক্ষেপে শুধু এতটুকু বলা যায়, এটা রাসূলুল্লাহর (সাঃ) ভবিষ্যৎবাণীর মর্যাদার্থেই সংঘটিত হয়েছিলো।"
আমি বললাম- "খুবই অদ্ভুত যুক্তি। তাও যদি ধরে নেই, আপনাদের মতেই পরবর্তী সকল ইমাম, ইমাম মাহদী ব্যতিত, সারাজীবন অনেক জুলুম, অত্যাচার সহ্য করেছেন। তাদের সামনে অযোগ্য ব্যক্তি হুকুমতের তখতে বসে শরীআর বিধানকে পদদলিত করেছে। এমনি ইমাম যাইনুল আবেদিনের (রহ.) সময় তো তার পিতার হত্যাকারী ইয়াযিদই ক্ষমতায় ছিলো। তো তারা কেউ একজনও ন্যায়ের পক্ষে, শরীআর প্রতিষ্ঠায় কেন সংগ্রামে উপনিত হলেন না? তাকিয়্যার কথা যদি বলেন, তাহলে তো আরো বড়ো গোলমাল সৃষ্টি হয়, এগার ইমামরে মধ্যে ১ জন তাকিয়্যা না করে যুদ্ধ করলেন আর ১০ জন তাকিয়্যা অবলম্বনে নীরব থাকলেন, উভয় তো আর ঠিক হতে পারে না, তাহলে ভূল কে ছিলেন?"
উনি উত্তরটি আমাকে পরে জানাবেন বলেছিলেন। কিন্তু অদ্যাবধি জানাননি।
শেষোক্ত প্রশ্নটি আপনার বরাবর ও রইলো। আশা করি উত্তর দিবেন।
খুতবা শিকশিকিয়্যা পড়লে আপনি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন। সেখানে ইমাম আলি আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন এই বিষয়ে।
আর ইমাম আলী কখনোই বাকীদের খেলাফত মেনে নেননি।
নীরবতা অবলম্বনের অর্থ হচ্ছে বিদ্রোহ ও অ¯ত্রধারণ করা থেকে বিরত থাকা। আর তা না হলে পূর্বেও যেমন আমরা আলোচনা করেছি তদানুযায়ী যথাযথ সুযোগ আসলেই হযরত আলী (আঃ) খিলাফত সংক্রান্ত তাঁর নায্য দাবী উত্থাপণ করতেন এবং তাঁর প্রতি যে অন্যায় অবিচার করা হয়েছে সে ব্যাপারেও অভিযোগ করা থেকে বিরত থাকেননি।
হযরত আলী (আঃ) এই নীরবতাকে তিক্ত ও প্রাণান্তকর বলে অভিহিত করে বলেছেন:
وَأغْضَيْتُ عَلَى القَذَى وَشَرِبْتُ عَلى الشَّجى وصَبَرْتُ على أمَرَّ مِن طَعْمِ العَلْقَمِ
চোখ কাঁটাবিদ্ধ ছিল আর ঐ অবস্থায় আমাকে চোখ বন্ধ করতে হয়েছে। গলায় হাঁড় আটকে গিয়েছিল আর ঐ অবস্থায়ও আমাকে পান করতে হয়েছে। আমাকে ক্রোধ সম্বরণ করতে হয়েছে এবং মাকাল ফলের চাইতেও অধিক কটু ও বিস্বাদ ফলও আমার মুখ পুরে দেয়া হয়েছিল যা আমি সহ্য করেছি। ( দ্র. নাহজুল বালাগা খুতবা. ২৬)
হযরত আলী (আঃ)-এর নীরবতা আসলে বেশ হিসাব-নিকাশকৃত ও যৌক্তিক ছিল। আর তা স্রেফ অসহায়ত্ব ও নাজুক পরিস্থিতি উদ্ভূত ছিল। অর্থাৎ তিনি (আঃ) দু’টো বিষয়ের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর কল্যণের স্বার্থে যে কোন একটি নির্বাচন করেছিলেন যা ছিল অধিক কঠিন ও প্রাণান্তকর। সশস্ত্র বিপ্লব ও বিদ্রোহ করাই ছিল তাঁর (আঃ) জন্য অধিকতর সহজ পন্থা যার পরিণতি হত এই যে, (পর্র্যাপ্ত সংখক) সংগী-সাথী ও সাহায্যকারী না থাকার দরূন তিনি (আঃ) নিজে এবং তার সন্তান-সন্ততি শাহাদত বরণ করতেন। শাহাদত হযরত আলী (আঃ) এর সর্বোচ্চ লক্ষ্য ও চুড়ান্ত আশাআকাঙ্খা ছিল এবং একদা তিনি (আঃ) আবু সুফিয়ানের সাথে এতদসংক্রান্ত কথোপোকথন কালে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন যেগুলোর মধ্যে নিম্নোক্ত এ প্রসিদ্ধ বাণিটিও বিদ্যমান:
واللهِ لابْنُ أبي طالِبٍ آنَسُ بِالمَوْتِ مِنَ الطِّفْلِ بِثَدْيِ أُمِّهِ
“মহান আল্লাহ্র শপথ, মাতৃস্তনের প্রতি শিশুর মনপ্রাণ যতটা একনিষ্ঠ ও নিবদ্ধ এবং তা সে যতটা পছন্দ করে আবুতালিব তনয় আলী মৃত্যুকে তার চেয়েও বেশী ভালোবাসে ও পছন্দ করে”। (দ্র. নাহজুল বালাগা খুতবা ৫)
হযরত আলী (আঃ) তার এ বক্তব্যের মাধ্যমে আবু সুফিয়ান এবং অন্যান্য লোককে বোঝাতে চেয়েছেন যে, “মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে আমি এ নীরবতা অবলম্বণ করিনি। বরং আমার নীরব থাকার কারণ হচ্ছে এই যে, এমতবস্থায় বিদ্রোহ ও বিপ্লব, এবং শাহাদাতবরণ ইসলামের সমুহ ক্ষতিসাধন করবে এবং তা ইসলামের স্বার্থানুকুলে নয়”। স্বয়ং আলী (আঃ) নিজেই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন: আমার নীরবতা ছিল হিসাব নিকাশ করা। আমি দু’টো পথের মধ্যে থেকে ঐ পথটা বেছে নিয়েছিলাম যা ইসলামের বৃহত্তর কল্যাণ ও স্বার্থের নিকটর্বতী ছিল।
وَطَفِقْتُ أرْتَإي بَيْنَ أن أصُولَ بيدٍ جَذّاءَ أو أصْبِرَ على طَخْيَةٍ عَمْياءَ يَهْرُمُ بها الكبيرُ و يَشيبُ فيها الصَّغيرُ ويكرحُ فيها مؤمَنٌ حتَّى يَلْقَى رَبَّه، فَرَأيْتُ أنَّ الصَّبْرَ على هاتا أحجَى فَصَبَرْتُ وَفي العَيْنِ قَذىً وفي الحلقِ شَجَىً.
আমি গভীর চিন্তামগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম এ কারণে যে, দু’টো পথের মধ্য থেকে কোন পথটা আমি বেছে নেব? আমি কি রিক্ত হস্তে বিদ্রোহ করব অথবা নিকষ কালো আধারে ধৈর্য্যধারণ করব (এবং সশস্ত্র বিপ্লব করা থেকে বিরত থাকব)? এটা ছিল ঐ আঁধার যাতে বয়স্করাই অতি বৃদ্ধ হয়ে যায়। অল্প বয়স্করা বৃদ্ধে পরিণত হয়; স্বীয় প্রভুর সাথে মিলিত হওয়া (অর্থাৎ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ কর্)া পর্যন্ত মুমিন কঠোর পরিশ্রম ও চেষ্টা করতে থাকে। তাই (প্রাণান্তকর) এ অবস্থায় ধৈর্য্যধারণ করাই হচ্ছে অধিক বিজ্ঞতাপুর্ণ। তাই আমি ধৈর্য্যধারণ করলাম এমতবস্থায় যখন আমার চোখ কাঁটা বিদ্ধ ছিল এবং গলায় হাড্ডি আটকে গিয়েছিল। (দ্র. নাহজুল বালাগা খুতবা-৩)।
ইসলামী ঐক্য (الوَحدة الإسلامية)
স্বভাবতঃ সবাই জানতে চাইবে যে, আলী (আঃ) যে ব্যাপারে ভাবতেন, আলী চাইতেন না যে জিনিসটা ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এবং যে জিনিস আলীর কাছে অপরিসীম গুরুত্বের অধিকারী ছিল যে, তার জন্য তিনি প্রাণান্তকর কষ্ট ও যাতনাও সহ্য করেছিলেন আসলে তা কি ছিল? আনুমানিকভাবে অবশ্যই বলতে হয় যে, ঐ জিনিসটা ছিল মুসলমানদের ঐক্য এবং তাদের মাঝে অনৈক্য ও বিভক্তির সুযোগ না দেয়া। তখন মুসলমানরা বিশ্ববাসীকে তাদের সদ্য অর্জিত শক্তি ও ক্ষমতা প্রদর্শণ করে দেখাতে যাচ্ছিল যা ছিল তাদের ঐক্য ও সংহতি হতে উদ্ভুত। এখানে উল্লেখ্য যে, পরর্বতী বছরগুলোয় মুসলমানরা যেসব বিষ্ময়কর বিজয় ও সাফল্য অর্জন করেছিলো আসলে সেগুলো সবই এই ঐক্য ও সংহতির আশীর্বাদেই তারা অর্জন করেছিল। তাই নিয়মানুযায়ী আলী (আঃ) এই বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থেই (ন্যায্য অধিকার প্রসঙ্গে) নীরবতা অবলম্বণ ও আপোষ করেছিলেন।
এটা কিভাবে বিশ্বাস করা সম্ভব যে, ৩৩ বছর বয়স্ক একজন যুবক এতটা দূরদর্শী ও নিষ্ঠা (মুখলিস), এতটা আত্মনিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাসম্পন্ন, এবং ইসলামের প্রতি এতটা নিবেদিত, বিশ্বস্ত, ও আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত যে, কেবল ইসলামের খাতিরেই তিনি এমন এক পথ বেছে নেবেন; বঞ্চনা ও নিজ অস্তিত্ব চুর্ণবিচুর্ণ হওয়াই হচ্ছে যার চুড়ান্ত পরিণতি?
হ্যাঁ, আসলেই তা বিশ্বাস্য। এ ধরনের অবস্থার মধ্য দিয়েই হযরত আলী (আঃ)-এর অসাধারণ ব্যক্তিত্ব স্পষ্ট প্রভাবিত হয়ে থাকে আর এটা নিছক অনুমান ও কল্পণাময় নয়। আলী (আঃ) নিজেই এ ব্যাপারে খোলামেলা বক্তব্য রেখেছেন এবং সম্পুর্ণ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর কারণও বর্ণনা করেছেন। যা ছিল মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি না করার সংক্রান্ত তার আগ্রহ বিশেষ করে তাঁর খিলাফতকালে যখন তালহা ও যুবাইয়ের বাইয়াত ভঙ্গ করে মুসলিম উম্মাহ্র মাঝে ফিতনার অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করে। তখন হযরত আলী (আঃ) মহানবী (সঃ)-এর পরে তাঁর অবস্থা বারবার তালহা ও যুবাইয়ের-এর সাথে তুলনা করে বলেছিলেন: মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য ও বিভেদ পরিহার করার লক্ষ্যেই আমি আমার বৈধ নিশ্চিত অধিকার (حقّ مسلم) পর্যন্ত উপেক্ষা করেছিলাম। আর এরা (তালহা ও যুবাইর) স্বেচ্ছায় বাইয়াত করেও তা ভঙ্গ করেছে। অথচ মুসলমানদের মাঝে বিভক্তি ও অনৈক্য সৃষ্টির ব্যাপারে তারা মোটেও পরোয়া করেনি।
ইবনে আবীল হাদীদ ১১৯ নং খুতবার ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ্ ইবনে জুনাদাহ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন: হযরত আলী (আঃ)-এর খিলাফতের প্রথম দিনগুলোয় আমি হিজাযে ছিলাম এবং ইরাকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। তাই আমি পবিত্র মক্কায় উমরা পালন করে মদীনায় আসি এবং সরাসরি মসজিদ নববীতে প্রবেশ করি। সেখানে লোকজন নামাজ আদায় করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। হযরত আলী (আঃ) স্বীয় তরবারী বহন করা অবস্থায় ঘর থেকে বের হয়ে এসে বক্তৃতা প্রদাণ করলেন। ঐ ভাষনে তিনি (আঃ) মহান আল্লাহ্র প্রশংসা ও গুণকীর্তন (হামদ ও সানা পাঠ) এবং মহানবী (সঃ) এর ওপর দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার পর বললেন: মহানবী (সঃ)-এর ওফাতের পরে আমরা মহানবীর আহলুল বাইত ভাবিওনি যে আমাদের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে উম্মত লোভ করবে। কিন্তু যা অনাকাঙ্খিত ছিল ঠিক সেটাই ঘটল। আমাদের বৈধ ন্যায্য অধিকার হরণ করা হল এবং আমাদেরকে (আহলুল বাইত) হাট বাজারের সাধারণ জনতার কাতারে স্থান দেয়া হল। আমাদের নয়ন অশ্রুসিক্ত হল এবং বেশ অনেক অসন্তুষ্টিও উদ্ভব হল। খোদার শপথ যদি মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট কুফরীর পুণঃপ্রত্যাবর্তন ্এবং দ্বীন ধ্বংস হবার
وأيْمَ اللهِ لَوْلا مَخَافَةُ الفُرْقَةِ بَيْنَ المُسْلِمِينَ وأنْ يَعُودَ الكُفْرُ ويَبُورُ الدِّينُ لَكُنَّ على غَيْرَ ما كُنَّا لهم عليه
আশংকা না থাকত তাহলে তাদের (যারা আহলুল বাইতের ন্যায্য অধিকার হরণকারী) সাথে আমাদের আচরন ভিন্ন ধরনের হত।
এরপর তিনি (আঃ) তালহা ও যুবাইয়ের-এর ব্যাপারে আরো বললেন: এ দু’ব্যক্তি আমার হাতে বাইয়াত করেছিলেন তবে পরবর্তীতে তারাই তাদের বাইয়াত ভঙ্গ করেছে। তোমাদের অর্থাৎ মুসলমানদের জামাতকে দ্বিধাবিভক্ত ও ছত্রভঙ্গ করার জন্য তারা (তালহা ও যুবাইর) হযরত আয়েশাকে সাথে নিয়ে বসরা গমন করেছে।
ইবনে আবীল হাদীদ কাবলী থেকেও উদ্ধৃতি করে বলেছেন: বসরায় যাওয়ার প্রাক্কালে হযরত আলী (আঃ) এক খুতবায় বলেন: মহানবী (সঃ)-এর পর কুরাইশ আমাদের থেকে আমাদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিয়ে তা নিজেদের কুক্ষিগত করেছে। তাই আমি দেখতে পেলাম যে, এ ব্যাপারে ধৈর্য্যধারণ করা মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট ও তাদের
فَرَأيْتُ أنَّ الصَّبْرَ على ذلك أفْضَلُ من تَفرِيقِ كَلِمَةِ المُسْلِمِينَ و سَفْكِ دَمائِهم والنَّاسُ حديثو عهدٍ بالإسلامِ والدِّينُ يُمخَضُ مَخْضَ الوَطْبِ يُفْسِدُهُ أدْنى وَهْنٍ وَيَعْكِسُهُ أقَلُّ خَلْقٍ.
রক্তপাত করার চেয়ে শ্রেয় আর ঐ সময় জনগণ সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং তখন দ্বীন ছিল ঐ মশকতুল্য যা একটু ঝাকান হলেই এবং সামান্য অবহেলা প্রদর্শণ করলেই ধ্বংস হয়ে যাবে এবং যে কোন ক্ষুদ্রকায় ব্যক্তিও যা উল্টে ফেলে দিতে সক্ষম। এরপর তিনি (আঃ) বললেন: তালহা ও যুবাইয়ের-এর হবে কী? ভালো হত যদি তারা এক বছর অথবা অন্তত পক্ষে কয়েক মাস ধৈর্য্যধারণ করত এবং আমার প্রসাশনিক কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করত। কিন্তু তাদের তা সইল না এবং তারা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল। আর যে ব্যাপারে মহান আল্লাহ্ তাদের কোন অধিকারই দেননি সে ব্যাপারে তারা আমার সাথে দ্বন্দে লিপ্ত হল। ইবনে আবীল হাদীদ শিক্শিকিয়াহ্র খুতবার ব্যাখ্যায় বলেন:
যেহেতু শুরার ঘটনায় আব্বাস জানতেন যে, এর ফলাফল ও পরিণতি কি হবে; সেহেতু তিনি আলী (আঃ)-কে শুরার অধিবেশন ও সভায় যোগদান না করার অনুরোধ করলেন। কিন্তু শুরার অধিবেশনের ফলাফল সংক্রান্ত আব্বাসের দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করেও আলী (আঃ) আব্বাসের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন না এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর (আঃ) শুরার অধিবেশনে যোগদান করার কারণ উল্লেখ করে বললেন إنَّي أكرَهُ الخِلافة ‘আমি মুসলমানদের মধ্যকার অনৈক্য ও বিভেদ পছন্দ করি না।’ আব্বাস তখন বললেন: তাহলে যা তুমি অপছন্দ কর ঠিক সেটাই তুমি প্রত্যক্ষ করবে এবং তার মুখোমুখী হবে।
দ্বিতীয় খন্ডে ৬৫ নং খুতবার শেষে ইবনে আবীল হাদীদ বর্ণনা করেন: আবু লাহাবের এক পুত্র হযরত আলী (আঃ)-এর ফযিলত ও খিলাফতের অধিকার যে একমাত্র তাঁরই (আঃ) এতদসংক্রান্ত এবং আলীর বিরোধীদের নিন্দা করে কিছু কাব্য আবৃত্তি করলে আলী (আঃ) তাকে এ ধরনের কাব্য আবৃত্তি করতে নিষেধ করলেন। কারণ এ ধরনের কাব্য ও কবিতায় এক ধরনের উষ্কানিমুলক শ্লোগানও বিদ্যমান ছিল। তাই আলী (আঃ) তাকে বলেছিলেন:
سلامةُ الّذِينَ أحَبُّ إلينا مِنْ غَيْرِهِ
“আমাদের কাছে অন্য সকল কিছুর চেয়ে ইসলামের নিরাপত্তা ও কল্যাণই হচ্ছে অধিক পছন্দীয় ও গুরুত্ববহ।”
নাহজুল বালাগায় অত্যন্ত স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এতদসংক্রান্ত আলীর বক্তব্যসমুহ বিদ্যমান।
১। আবু সুফিয়ানের কথার জবাবে আলী (আঃ)-কে সহায়তা দানের নামে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে আবু সুফিয়ান এসে খিলাফত হস্তগত করার জন্য আলী (আঃ)-কে সাহায্য করার প্রস্তাব দিলে আলী (আঃ) তখন বলেছিলেন:
شُقُّوا أمواجَ الفِتَنِ بِسُفُنِ النَّجَاةِ وَعَرَّجوا عَنْ طَرِيْقِ المُنافَرَةِ وَضَعُوا تيجانَ المُفاخَرَةِ.
নাজাতের তরীসমুহের মাধ্যমে (ফিতনার) সমুদ্রের তরঙ্গমালার বুক চিরে তোমরা এগিয়ে যাও। মতপার্থক্য ও দ্বিধা-বিভক্তির পথ পরিহার করে চলো এবং পরস্পর গর্ব ও অহংকারের প্রতীক নির্দশনসমুহ মাটিতে নামিয়ে রাখো (অর্থাৎ সেগুলো বর্জন কর) (দ্র. নাহজুল বালাগা খুতবা-৫)
২। ৬ সদস্য বিশিষ্ট শুরা বা পরামর্শ সভায় আব্দুর রহমান ইবনে আওফ কর্তৃক হযরত উসমান খলীফা নির্বাচিত হবার পর আলী (আঃ) বলেন:
لَقَدْ عَلِمْتُمْ أنِّي أحَقُّ النّاسِ بِها مِنْ غَيْرِيْ وَ وَاللهِ لَأُسلِّمَنَّ ما سَلِمَتْ أُمُوْرُ المُسْلِمِينَ وَلَمْ يَكُنْ فِيْها جُورٌ إلَّا عَلَيَّ خَاصَّةٍ،
অন্য সকলের চেয়ে খিলাফতের ব্যাপারে আমি যে সবচেয়ে অধিক অধিকার সম্পন্ন (হকদার) তা তোমরা সবাই অবশ্যই জানো। তবে মুসলমানদের সমুদয় বিষয় ও স্বার্থ যে পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে ও সুষ্ঠভাবে সংরক্ষিত হবে (তবে আপামর জনসাধারণের ওপর অন্যায়-অত্যাচার ও উৎপিড়ন চালানো না হবে) সে পর্যন্ত আমার ওপর অন্যায়-অবিচার করা হলেও খোদার শপথ, আমি অবশ্যই (খলিফার) বিরোধিতা করব না। (দ্র. নাহজুল বালাগা খুতবা নং ৭৩)
৩। যখন মালেক আশতার হযরত আলী (আঃ) এর পক্ষ হতে মিসরের প্রাদেশিক সরকার প্রধান বা গভর্ণর নিযুক্ত হন তখন তিনি (আঃ) মিশরবাসীদের উদ্দেশ্যে একটি পত্র লিখেন (এ পত্রটা দীর্ঘ প্রসাশনিক কর্মসুচী ও দিক নির্দেশনাবলী সম্বলিত পত্র হতে ভিন্ন)। হযরত আলী (আঃ) এ চিঠিতে ইসলামের সূচনালগ্নে ও আবির্ভাবের পর থেকে মহানবী (সঃ) এর ওফাতোত্তর খিলাফত সংক্রন্ত ঘটনা প্রবাহ উল্লেখ করে বলেন:
فَأمْسَكْتُ يَدَيَّ حَتَّى رَأيْتُ رَاجِعَةَ النّاسِ قَدْ رَجَعَتْ عَنِ الإسلامِ يَدْعُونَ إلى مَحْقِ دِينِ محمد (ص) فَخَشِيتُ إنْ لم أنْصُرِ الإسلامَ وأهْلَهُ أنْ أرَى فِيهِ ثَلْماً أوْ هَدَماً تَكُونُ المُصِيبَةُ بِه عَلَيَّ أعْظَمَ مِنْ فَوْتِ وِلايَتِكُمْ الَّتِي إنَّها هِيَ مَتَاعُ أيَّامٍ قَلائِلَ،
আমি তখনই খিলাফত সংক্রান্ত দাবি থেকে হাত গুটিয়ে নেই, যখন আমি দেখতে পেলাম যে, একটি গোষ্ঠী ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে জনগণকে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দ্বীন নিশ্চিহ“ করে ফেলার দিকে আহ্বান জানাচ্ছে। আমি শংকিত হয়ে পড়লাম এ কারণে যে, আমি যদি অতিসংবেদনশীল মূহুর্তে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে সাহায্য না করি তাহলে ইসলামের এমন কোন ক্ষতি বা ফাটল প্রত্যক্ষ করব যার মুসিবত আমার কাছে কয়েকদিন কর্তৃত্ব হারানোর মুসিবতের চাইতেও অনেক বেশী কঠিন ও কষ্টদায়ক। ( দ্র. নাহজুল বালাগাহ্ ৬২ নং পত্র)
দু’টো শ্রেষ্ঠ পদক্ষেপ
হযরত আলী (আঃ) তাঁর বিভিন্ন বাণী ও বক্তব্যের মাধ্যমে দু’ক্ষেত্রে তাঁর গৃহীত গুরুত্বপুর্ণ দুই পদক্ষেপের দিকে ইঙ্গিত করে উক্ত পদক্ষেপদ্বয়কে শ্রেষ্ঠ, অসাধারণ, ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্ডিত বলে অবিহিত করেন। অর্থাৎ তিনি এ গুরুত্বপুর্ণ দুই পদক্ষেপের প্রতিটির ক্ষেত্রেই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা খুব কম লোকই এ বিশ্বে আছে যারা এ ধরনের পরিস্থিতিতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে সক্ষম। হযরত আলী (আঃ) অতিসংবেদনশীল এ দু’ক্ষেত্রের একটিতে নীরবতা অবলম্বন করেন এবং অপর ক্ষেত্রে তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নেন। তাঁর (আঃ) এ নীরবতা ছিল মর্যাদাপুর্ণ এবং তাঁর সংগ্রামও ছিল তাঁর নীরবতার চাইতেও অধিক মর্যাদাপুর্ণ। আমরা ইতোমধ্যে হযরত আলী (আঃ) এর নীরবতা সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়েছিলাম। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সশস্ত্র আন্দোলন ও বিপ্লবের জন্য যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তার চেয়েও নীরবতাবলম্বন ও আপোস করার জন্য প্রয়োজন হয় অনেক বেশি শক্তির। ঐ ব্যক্তির কথাই বিবেচনা করুন যিনি হচ্ছেন সাহস, শৈর্য্য-বীর্য, তীব্র আত্মসম্মানবোধ, ও ব্যক্তিত্ব চেতনার মূর্ত প্রতীক যিনি কখনই শত্র“কে পৃষ্ঠ প্রর্দশন করেননি এবং তাঁর ভয়ে বীরদেরও হৃদকম্পন শুরু হয়ে যায়। (মহানবীর ওফাতের পর) এমন অবস্থা ও পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিল যখন চতুর রাজনীতিবিদরা সংবেদনশীল অবস্থার সুযোগ নিতে আলীর (আঃ) উপর এতটা সংকীর্ণতারোপ করে যে, এমনকি যখন তার অতি প্রিয় স্ত্রী হযরত ফাতেমা (আঃ) অপমান ও অবমাননার শিকার হয়ে ক্রোধান্বিত হয়ে নিজ গৃহে ফিরে আসেন এবং এমন সব কথা বলে তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন স্বামীকে ভর্ৎসনা করেন যেগুলো পাহাড় পর্বতকে স্বীয় স্থান থেকে নড়িয়ে দিতে সক্ষম। হযরত ফাতিমা (আঃ) হযরত আলী (আঃ) কে লক্ষ্য করে ঐ অবস্থায় বললেন “হে আবু তালিব তনয়! কেন ঘরের কোণে চুপচাপ পড়ে আছ? তুমি কি সেই ব্যক্তি যার ভয়ে বীর পুরুষের ঘুম পর্যন্ত হারাম হয়ে যেত। অথচ তুমি কিনা এখনও (মহানবীর ওফাতের পর) কতিপয় দুর্বল চিত্তের লোকের সামনে দুর্বলতা প্রদর্শন করছ? হায় এর আগেই যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত! হায় এমন দিন আমাকে দেখতে না হত!”।
আলী যিনি এ ধরনের ঘটনার তীব্র অসন্তুষ্ট ও ক্ষুদ্ধ হয়েছিলেন তাঁর আপন সহধর্মিনী (অর্থাৎ হযরত ফাতিমা) যাকে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন এবং যিনি তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয়পাত্রী ছিলেন তাঁর দ্বারা তিনি (আলী) এভাবে এতটা উত্তেজিত ও আলোড়িত হয়েছিলেন। অথচ এটা ছিল কেমন শক্তি যা আলীকে তার জায়গা থেকে টলাতে পারেনি। হযরত যাহরার (আঃ) এ কথাগুলো শোনার পর আলী (আঃ) তাঁকে (ফাতিমা) শান্ত করার জন্য কোমল কন্ঠে বললেন “ না আমি পরিবর্তিত হইনি। আমি যা ছিলাম তাই আছি। কল্যাণ ও মঙ্গল আসলে অন্য কিছু। অতঃপর হযরত যাহরা (আঃ) প্রশান্ত (ও তুষ্ট) হলে আলী (আঃ) তাঁর (ফাতিমার ) কন্ঠে শুনতে পেলেন
حَسْبِيَ اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
ইবনে আবীল হাদীদ ২১৫ নং খুতবার পাদটীকা ও ব্যাখ্যায় এ প্রসিদ্ধ ঘটনাটি বর্ণনা করে লিখেছেন:
একদিন [মহানবীর (সাঃ) এর ওফাতের পর] হযরত ফাতিমা (আঃ) হযরত আলী (আঃ) কে তার হৃত বৈধ অধিকার পুনরুদ্ধার করার জন্য সংগ্রাম ও আন্দোলন করার আহ্বান জানান। ঠিক তখন মুয়াজ্জিনের কন্ঠে উচ্চঃস্বরে ধ্বনিত হল أشْهَدُ أنَّ محمّداً رسولُ اللهِআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মহান আল্লাহ্র প্রেরিত পুরুষ অর্থাৎ রাসূল। হযরত আলী (আঃ) তখন হযরত ফাতিমা (আঃ) কে বললেন তুমি কি চাও যে, এই আযান এই ধ্বনি স্তব্ধ ও বন্ধ হয়ে যাক। তখন হযরত ফাতিমা (আঃ) বললেন “না’” তখন আলী (আঃ) বললেন “আমিও এ ছাড়া আর কিছুই চাই না”।
কিন্তু হযরত আলী (আঃ) এর মর্যাদাবান ও অসাধারণ সংগ্রাম যার জন্য তিনি (আঃ) গৌরব অনুভব করতেন এবং বলেছেন যে, এ ধরনের কর্মসম্পাদন করার সাহস কারও ছিল না তা ছিল খারেজীদের বিরূদ্ধে তার সংগ্রাম ও যুদ্ধ। তিনি এতদপ্রসঙ্গে বলেছেন:
فَأنا فَقَأْتُ عَيْنَ الْفِتْنَةِ وَلَمْ يَكُنْ لِيَجْتَرِئَ عَلَيْنَا أَحَدٌ غَيْرِيْ بَعْدَ أنْ ماجَ غَيْهَبُها واشْتَدَّ كَلَبُها،
“কেবল আমিই এ ফিতনার (অর্থাৎ খারেজীদের সৃষ্ট গোলযোগ ও ফিতনা) চক্ষু উপড়ে ফেলেছি। আমি ব্যতীত এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার সাহস আর কারো ছিল না। আমি ঐ সময় এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করি যখন ফিতনা ও আঁধার কালো উত্তাল তরঙ্গমালা ফুলে ফেঁপে উঠেছিল এবং এর অনিষ্ঠ সাধন করার ক্ষমতা তীব্রতর হয়ে গিয়েছিল”।
খারেজীদের বাহ্যিক তাকওয়া-পরহেযগারী এমনই ছিল যে, তা পূর্ণ ঈমানদার ব্যক্তিকে ও দ্বিধা-সংশয়ের মধ্যে ফেলে দিত। এর ফলে অন্ধকারাচ্ছন্ন ও অনিশ্চিত অস্পষ্ট পরিস্থিতি এবং সন্দেহ-সংশয়ের প্রহেলিকা ও ধুম্রজালের আবির্ভাব হয়েছিল। খারেজীরা সংখ্যায় ছিল ১২০০০। অধিক অধিক সিজদা করার জন্য যাদের ললাটদেশ ও হাটুতে কালোদাগ ও শক্ত আবরণ পড়ে গিয়েছিল। তারা কৃচ্ছতাসাধনকারী সাধক পুরুষের মত খুব সামান্য আহার করত, মোটা জামা পরিধান করত এবং সরল জীবনযাপন করত। তাদের মুখে ছিল সবসময় আল্লাহ পাকের যিকির। কিন্তু তারা ইসলামের মূল র্নিযাস ও সারবত্তার সাথেই অপরিচিত ছিল এবং তাদের কোন ইসলামী সংস্কৃতিই ছিল না। তাদের সমুদয় দুর্বলতা, ঘাটতি, ও অযোগ্যতাকে তারা বেশি বেশি রুকু সিজদা (অর্থাৎ নামাজ আদায় ) করার মাধ্যমে স্মরণ করার চেষ্টা করত। তারা ছিল সংকীর্ণমনা, অজ্ঞ-মুর্খ, ও কাঠ-খোট্টা প্রকৃতির। তারা কেবল শরিয়তের বাহ্যিক দিক ও হুকুম আহকাম নিয়েই মেতে থাকত। আর এ ভাবে তারা ইসলামের প্রগতি ও প্রসারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
হযরত আলী (আঃ) খারেজীদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা এক বিরাট গৌরবজ্জ্বল পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করে বলেছেন:
আমিই কেবল এ সব শুষ্ক কাঠ-খোট্টা সাধক অর্থাৎ খারেজীদের সৃষ্ট বিপদের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছিলাম। তাদের ললাটদেশের দাগ বেশী বেশী সিজদা করার কারণে। তাপস সাধকদের ন্যায় পোশাক পরিধান এবং মুখে তাদের সার্বক্ষনিক যিকির আমার অন্তরের দৃষ্টি শক্তিতে ছিনিয়ে নিতে পারেনি। আমিই জানতাম যে যদি এরা শক্ত হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয় তাহলে তারা ইসলামকে অবিচল ও স্থবির করবে। তারা এ ধর্মকে অগভীর বিষয় ও রীতিনীতির মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলবে। যার ফলে ইসলাম আর কোনদিনই দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না।
হ্যাঁ, গৌরব কেবল একা আলী ইবনে আবু তালিবেরই অর্জিত হয়েছিল। কোন ব্যক্তি সেই শক্তিশালি ও দৃঢ় আত্মার অধিকারী যে খারেজীদের মত এসব বাহ্য সত্যবাদীর মোকাবেলায় চুল পরিমাণও টলবে না? কোন সেই হস্ত যা খারেজীদের মত বাহ্যত দৃষ্ট সত্যাশ্রয়ীদের শিরোপরি উত্তোলিত হয়েও বিন্দুমাত্র প্রকম্পিত হবে না?
জনাব দয়া কইরে জানাবেন ইহা শিয়া বা সুন্নী কোন কিতাবে আছে?
আগে আপনি আপনার বিশ্বাসকে স্পষ্ট করুন, আমি শিআ মতাবলম্বী না আহলে সুন্নাহ, তারপর আমি উত্তর দিচ্ছি। অন্ধকারে ঢিল মারা যায় না।
ভাই, আপনি খুব ভালো ভাবেই জানেন যে আমি আহলে সুন্নাহ আক্বিদায় বিশ্বাসী এবং শিআদের সম্পর্কে আমার ধারণা কি।
আপনি যে নাহজুল বালাগার রেফারেন্স দিচ্ছেন, এটার তো বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আমাদের শুধু সন্দেহ নয়, বরং এটার অশুদ্ধতার ব্যাপারে আমাদের অনেক আকাবির নিশ্চিত। সুতরাং আমাকে যুক্তি দিতে হলে আপনাকে হয় আমার আক্বিদার কোন কিতাব থেকে বর্ণনা দিতে হবে, অথবা খোদ কুরআনে কারিম থেকে অথবা নিরপেক্ষ কোন তৃতীয় (শিআ বা আহলে সুন্নাহর বাহিরে) ঐতিহাসিকের বক্তব্য থেকে। আপনি যেমন আপনার বিশ্বাসের কিতাবাদি থেকে রেফারেন্স দিয়ে দিলেন, তার বিপক্ষে আমার বিশ্বাসের কিতাবাদি থেকে আমিও গাদা ভরে রেফারেন্স দিতে পারবো। কিন্তু তাতে কি আপনি মানবেন!!
যাই হোক, যুক্তি দিয়েই আপাতত আলোচনা করি। আমার ঐ বন্ধুও ও আপনার বক্তব্যের ভিন্নতা স্বত্ত্বেও মূল উপাত্ত একই, আলী (রাযি.)-এর নিরবতা ছিলো ইসলামের স্বার্থেই। তো এমতাবস্থায় আমীর মুআবিয়ার (রাযি.) সাথে সংঘাতের ফলেও তো অবস্থার অবনমন ঘটেছিলো। আমির মুআবিয়া (রাযি.) কি রাষ্ট্র ক্ষমতা চেয়েছিলিন? উনি শুধু উসমান (রাযি.)-এর হত্যাকারীদের বিচার চেয়েছিলেন। এই যুদ্ধের একটি বিলম্বিত পরিণাম যদি কারবালার ঘটনা বলা হয় তাহলে তা দিরুক্তী হবে না।
আপনার মতে আলী (রাযি.) মুসলমান, তাঁর ও তাঁর সন্তান-পরিবারের কথা চিন্তা করেই যুদ্ধ না করে নিরবতা পালন করলেন। খুবই আশ্চর্যের কথা! উনার মতো একজন মর্যাদাবান মুসলিম, পরবর্তী মুসলীমদের জন্যে আদর্শ, তিনি কিনা নিজের ও নিজের সন্তানদের চিন্তায় ইসলামের এত বড় ক্ষতি হওয়া শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন! মুসলমানরা কি বদরের সময় অপ্রস্তুত, অসহায়, অস্ত্রহীন ছিলো না? উহুদের সময় ছিলো না? খন্দকের সময় ছিলো না? তাহলে ঐ আজিমুশ্বান জীহাদগুলো তারা জয় করলো কিভাবে? "نَصْرٌ مِّن اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ" যখন আল্লাহর সাহায্য আসবে, জেনে রেখো বিজয় আবসম্ভাবীক। (সূরা সফ, আয়াত-১৩)। মুসলমানরা সেগুলো জয় করেছিলো শুধুমাত্র আল্লাহর প্রত্যক্ষ সাহায্যে ও ঈমানের শক্তিতে। তাহলে তিনি কি জানতেন না যে তিনি যদি হক্বের পথে সংগ্রাম করেন তাহলে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসবে? তিনি কি জানতেন না যে, "আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য। " (সূরা আত তাওবাহ, আয়াত-১১১)। ইসলামের শিকড় পুরুষদের একজন হয়ে তিনি চোখের সামনে দেখেছেন মানুষকে বিভ্রান্ত করতে, রাসূলের (সাঃ)-আদেশের অবমাননা করতে, অথচ তিনি চুপ করে ছিলেন- শান্তির জন্যে, ইসলামের প্রভূত ক্ষতির আশঙ্কায়, নিজের পরিবারের ক্ষতির আশঙ্কায়! রাসূল (সাঃ)-এর উপর মৃত্যুর আশঙ্কা আসেনি? তাকে কস্ট দিতে, ক্ষতি করতে এমনকি হত্যা করতে কাফিররা কি কোন চেষ্ঠা বাকী রেখেছিলো? তখন তো ইসলামের আরো নাজুক পরিস্থিতী, হাতে গোনা কয়েকজন মুসলমান, যাদের সিংহভাগই আবার দরিদ্র, দাস শ্রেণীর। চাইলেও যারা তেমন কিছুই করতে সক্ষম নন। তথাপি রাসূল (সাঃ) কি সত্য বলা ছেড়ে দিয়েছিলেন, বাতিলের সাথে আপোষ করেছিলেন, অথবা অন্তত চোখের সামনে বাতিল ঘটতে দেখে নিরব দর্শক হয়ে ছিলেন? রাসূল (সাঃ)-এর সাথে তার সাদৃশ্য কই? যিনি রাসূলের (সাঃ) হুকুম পালনার্থে অসুস্থ্য শরীরেও যুদ্ধে গিয়েছেন, কামূসের সদর ফটক তুলে এনেছেন এক হাতে, যাকে রাসূল (সাঃ) আসাদুল্লাহ উপাধি দিয়েছিলেন, এই কি সেই বীরত্ব ও উপাধির পরিণাম!
আর আমার প্রধান প্রশ্নের উত্তরই বাকী রয়ে গেছে, আলী (রাযি.) যখন নীরবতা অবলম্বন করেছিলেন, যে কারণেই হোক, হুসাইন (রাযি.)-এর সময় তো পরিস্থিতি আরো খারাপ বৈ ভালো ছিলো না। তিনি কেন নীরবতা পালন করলেন না?
একটা বই হয়ে থাকলে, এ বইয়ের ঘটনাগুলাও কি? গাদীরে খাম, তালহা(রাঃ)-যুবাইর(রাঃ)-আয়শা(রাঃ), মুয়াবিয়া(রাঃ) এর ঘটনার মতো সুন্নীরা স্বীকার করে অথবা সুন্নীদের লিখিত ইতিহাসে রয়েছে? থেকে থাকলে সেটা সুন্নীদের কোন ইতিহাসে রয়েছে?
যাকগা আমার জানা মতে যোহর আসর একসাথে এবং মাগরিব এশা একসাথে পড়া যায়,মুসলিম শরীফের হাদিস।এখন যদি কেউ যোহর আসর একদম শেষ সময়ে এবং মাগরিব এশা একদম শুরুর সময়ে পড়ে তাহলে কি আপনি বলবেন ৪ ওয়াক্ত নামাজ একসাথে পড়া যায়?
হজ্বের সময় আহলে সুন্নাহরাও দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করে। কিন্তু সেটা শুধু মাত্র হজ্ব কালে হাজ্বীদের জন্যই, আম ভাবে সকলের জন্য না।
হাদীসের আসল অর্থটা বুঝে তার পর বলেন।
কিংবা হুদাইবিয়ার সন্ধিতে রাসূল (সাঃ)যুদ্ব না করে যে সন্ধি করলেন তাতে কি উনার দুর্বলতা প্রমানিত হয়??
আবু-বকর,উমর আর উসমানের প্রেক্ষাপটের সাথে এজিদের প্রেক্ষাপট তুলনা করা বোকামী বৈ আর কিছু নয়!!
৩ খলীফা খেলাফতের অধিকার হরন করেছে কিন্তু ইসলামকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়নি,কিন্তু এজিদ ইসলামের উপর আঘাত হেনেছে।
কপি পেস্ট মারলাম।
@চিরবিদ্রোহী, বলে তো দিলেন মুসলিমের হাদীস, হাদীসটা কি আম না খাস, নাসিখ না মানসূখ না জারি এটা তো বললেন না। এমন ভাবে হাদীস বললে তো দাঁড়িয়ে প্রশাব করা, বাজি ধরা ও হালাল সাবেত করা যাবে।
হজ্বের সময় আহলে সুন্নাহরাও দুই ওয়াক্তের নামায একত্রে আদায় করে। কিন্তু সেটা শুধু মাত্র হজ্ব কালে হাজ্বীদের জন্যই, আম ভাবে সকলের জন্য না।
হাদীসের আসল অর্থটা বুঝে তার পর বলেন।
হাদীসটা কি আম না খাস, নাসিখ না মানসূখ না জারি এটা তো বললেন না।
আমার জানা নাই, তবে আপনি যদি কোন হাদিস বলতেন যে এটা রাসুলের জন্য খাস ছিল বা এটা মান্সুখ হয়ে গেছে তাহলে কিছু সওয়াব পাইতেন।
এমন ভাবে হাদীস বললে তো দাঁড়িয়ে প্রশাব করা, বাজি ধরা ও হালাল সাবেত করা যাবে।
আমার জানা মতে এগুলোর নিষিদ্ধের ব্যাপারে হাদিস আছে, যদিও আমার কাছে দলিল নাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন