হ্যাঁ! আমি রোহিঙ্গা... (প্রথম পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন দিশারি ১৬ অক্টোবর, ২০১৪, ০৪:৫৫:০৯ বিকাল
গভীর রাত। আরাকানের নিভৃত একটি গ্রাম। ১২ বছরের বালক মনসুর ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ কারো চিৎকার তার কানে ভেসে এলো। চিৎকারটি খুব পরিচিত মনে হল তার। মনসুর আর শুয়ে থাকতে পারলো না। উঠে ছুটলো সেই শব্দ লক্ষ্যে...
না! পাশের রুমে কেউ নেই, কক্ষটি সম্পূর্ণই খালি। তার ছোট্ট বুকটা ধক করে উঠলো। তার কাঁপতে থাকা ঠোঁট থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো - আমার বোন, আমার মা...
মনসুর আর চিন্তা করতে পারলো না। খোলা দরজা দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। দেখলো তার বড় বোনটিকে কারা যেন টেনে হিঁচড়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আর পাশেই তার মায়ের নিথর দেহটি পড়ে আছে...
দৌড়ে সে তার মায়ের কাছে গেল। দেখলো তার মায়ের বুকের বাম পাশটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মনসুর আর সহ্য করতে পারলো না। সে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো...
পরক্ষনেই তার বোনের কথা মনে পড়লো। উঠে দৌড়াতে লাগলো ঐ লোকগুলোর পেছনে, যারা তার বোনকে নিয়ে যাচ্ছে টেনে হিঁচড়ে। মনসুর গিয়ে একজনের পা জড়িয়ে ধরলো। বলল, আমার বোনকে ছেড়ে দিন... আমার বোনকে ছেড়ে দিন...।।
সঙ্গে সঙ্গেই একটা উড়ন্ত লাথি এসে পড়লো তার কপালটায়। মনসুর ছিটকে পড়লো কয়েক হাত দূরে।
সেই সাথে তার মাথাটাও ঘুরে গেল, তৎক্ষণাৎ সে উঠতে পারলো না। একটু সময় নিয়ে সে উঠে দাঁড়ালো।
দেখলো তাদের ঘরটা দাউ দাউ করে জ্বলছে। কি করবে সে ভেবে পাচ্ছিলো না। ঠিক এ সময়ই গাড়ি ছাড়ার শব্দ তার কানে ভেসে এলো। মনসুরের চিন্তা আর এগুতে পারলো না। ছুটলো সে গাড়িটার পেছন পেছন...
মনসুরদের বাড়ীটা ছিল গ্রামের একেবারে শেষের দিকে।
সে যখন গাড়িটার পেছনে দৌড়াচ্ছিলো, দেখলো রাস্তার দ'ধারে কেবল আগুন আর আগুন। ঘরবাড়ীগুলো জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখায়। মনসুরের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে, তার পরিবারের আজ যে পরিণতি হয়েছে; এই গ্রামের সকল মুসলিম পরিবারের ভাগ্যেও তাই জুটেছে...
বেশীক্ষণ দৌড়াতে পারলো না সে, তার সীমিত শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেলো। পড়ে গেলো সে। আর তাকিয়ে থাকলো সেই গাড়িটার দিকে অশ্রুভেজা চোখে। তার মুখ ফুঁড়ে বেরিয়ে এলো... আল্লাহ্, তুমি আমার বোনকে বাঁচাও আল্লাহ্।।
ভোর হয়ে এলো। মনসুর জেগে উঠে চারিদিকে একবার তাকালো। দেখলো সে পথের ওপর পড়ে আছে। তার মনে পড়ে, সে গাড়ির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতেই এইখানে এসে পড়ে যায়, তারপর কাঁদতে কাঁদতে রাস্তার উপরই ঘুমিয়ে যায়। উঠে বসলো সে, তারপর ভাবলো তার ফজরের নামায পড়া হয়নি। তার মায়ের উপদেশ ছিল... কখনো নামায ছাড়া যাবে না। হঠাৎ মায়ের মুখটি ভেসে উঠলো তার স্মৃতিপটে। মনে পড়লো রক্তে ভেজা মায়ের নিথর দেহটির কথা। হু হু করে কেঁদে উঠলো তার ছোট্ট হৃদয়টা...
(চলবে...)
বিষয়: বিবিধ
১৪৮৯ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থির মুখে এর চেয়েও ভয়ংকর সত্যি কথা শুনেছি। অথচ আমাদের দালাল মিডিয়া তাদের কে সন্ত্রাসি হিসেবে চিত্রিত করে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন