পুলাটার সব বাল্লাগে, ওর মা-বাপ ছাড়া। পুলাতো কলাগাছ ফেটে বড় হইছে ওর মা-বাপের সেবা লাগবো কেন একই আমার স্বামীর বাড়িতে?
লিখেছেন লিখেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক সঞ্চারণ ২৩ জানুয়ারি, ২০১৬, ১০:২৭:১৫ রাত
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ইদানিং ফেইচবুকে একটা বিষয় নিয়ে খুব তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে। যেমন, ‘শশুর শাশুড়ির প্রতি দায়িত্ব পালনের কথা ইসলাম বলে নাই,’ ‘স্বামীর ছোট ভাই এর ভাত রান্নার দায়িত্ব স্ত্রীর না’, ‘দাসীর মত কেন ঘরের বউ কাজ করবে’ ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি জানিনা যারা এসব লেখেন বা বলেন তাদের উদ্দেশ্য কি? আমি যেটা বুঝি তা হল ভিন্ন দুইটা পরিবারের দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একটি নতুন পরিবার গঠন করে। সেই পরিবারের কর্তা হয় স্বামী আর কর্ত্রী হয় স্ত্রি। আর ইসলাম স্বামীকে দায়িত্ব দিয়েছে বাহিরের দিক সামলানোর আর স্ত্রিকে ঘরের ভিতরটা সামলানো (এই ঘর সামলানো মানে কেন যে আমাদের সমাজের মানুষ শুধু রান্না করাকেই বুঝে তাই বুঝিনা) । এখন কথা হচ্ছে আমি যদি হই পরিবারের কর্ত্রী আর আমার পরিবারে যদি শশুর শাশুড়ি থাকে তাদের ভাল মন্দ দেখার দায়িত্ত কি আমার উপর পড়েনা? আমি সকালে উঠে চারটা রুটি বানিয়ে আমি আর আমার জামাই মিলে খাব, আর পাশের রুমে তার বৃদ্ধ মা বাবা আর ছোট ভাইটা না খেয়ে থাকবে? আমার কি সত্যিই কোন দায়িত্ত নেই তাদের প্রতি?
যেখানে রাসুল (স) বলেছেন, “যে ব্যক্তি পেট ভরে খেল অথচ তার প্রতিবেশী অভুক্ত থাকল সে আমার দলভুক্ত নয়”।
“আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবেনা”
আর শশুর শাশুড়ি, ননদ দেবর তো আমার সবচেয়ে বড় আত্মীয়! আমার ঘরের লোক। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত করা উচিত। আমি প্রবাসে থাকি। গত ঈদে গেলাম দেশে শশুর বাড়িতে। আমি সব কাজ করলাম। কই আমার তো মনে হলনা যে আমি দাসীর মত কাজ করছি!! আমার তো মনে হল শাশুড়ির বয়স হয়েছে কাজগুলো আমার করা উচিত। শাশুড়ির জ্বর হলে তার মাথায় পানি ঢালা পা টিপে দেয়া –আমিই করেছি।
আমি যদি মনে করি সংসারটা কেবলই আমার স্বামীর, তাহলে সেই সংসারের কাজ করতে আমার আন্তরিকতা জিরো % ই থাকবে। আর আমি যদি মনে করি সংসারটা আমার, আমাদের –তাহলে সে সংসারের প্রতিটি কাজ আমার কাছে হবে দায়িত্ত। সংসারের সুখ শান্তি শুধু বাচ্চা উৎপাদন আর বাচ্চা বড় করার মধ্যেই থাকেনা। বরং প্রত্যেকটা মানুষের সাথে একটা রিলেশনের নেট থাকতে হয়। আর সেই রেলেশনের নেটটা বুনতে হয় ভালবাসা, মায়া, মমতা, ত্যাগ আর শ্রদ্ধদবোধ দিয়ে। সংসারের মানুষগুলোর সাথে কম্পিটিশন দিয়ে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়না। শান্তির জন্য চাই সেক্রিফাইজ।
প্রতিবেশি এক ভাবীকে দেখলাম নিজেরা ছোট একটা রুমে ফ্লরিং করে থাকেন আর শশুর শাশুড়িকে দিয়েছেন মাস্টার রুম যেহেতু তাদের বয়স হয়েছে বার বার বাথ্রুমে যেতে মাস্টার রুম হলে সুবিধা হয়। আমি অবশ্যই এই ভাবিকেই ফলো করব। আমি কক্ষনোই সেই প্রতিবেশি ভাবিকে ফলো করবনা যে স্বামীর মাথা ঝালাপালা করে তোলে এই বলে যে “এই সংসারে আমি থাকব নইলে তোমার মা থাকবে”। সারা জীবন কষ্ট করে আসা দুটি মানুষ জীবন সায়াহ্নে এসে কেন অনুভব করবে তারা এই পরিবারের বোঝা!!
পরিবারের ছোট ছোট অনুভূতির মধ্যেও রয়েছে অনেক শান্তি। আমার শশুর যখন বাজার থেকে আসার সময় এক ফালি আখ কিনে এনে আমার হাতে দিয়ে বলেন “মা এই নাও আখ খাও, আমার দাত নাই, যখন দাঁত ছিল তখন খেয়েছি, এখন তোমাদের খাওয়ার সময়”। তখন আমার মনে হয় এই মানুষটার জন্য সত্যিই আমার ও কিছু করার আছে। আমার ও উচিত মাংসটা একটু বেশি নরম করে রান্না করা যাতে দাঁত না থাকা এই মানুষটা ভালভাবে খেতে পারে।
আমার জীবনে নতুন পরিবার গঠন অথবা নতুন পরিবারের সাথে এ্টাস্ট হওয়ার বয়স আজ সাত বছর পূর্ণ হল। আলহামদুলিল্লাহ।
From Sister Farhana Laila
বি দ্রঃ শিরোনাম আমার দেওয়া, ঐ বোনের নয়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অসম্ভব সুন্দর এবং সত্য কথা। এই অনুভুতি বিরাজ করুক আমাদের নারীদের ভেতর,আর পুরুষরা যেন সেটার সঠিক মূল্যায়ন করে। তাহলে সংসার জান্নাতি সুখে ভরে উঠবে ইনশাআল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন