আমাদের ভাবা উচিত, আমরা কি নাসিহা [সদুপদেশ] দিচ্ছি নাকি তিরষ্কার করছি?
লিখেছেন লিখেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক সঞ্চারণ ০৫ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৩:১৮:১২ দুপুর
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
নাসিহা আর তিরস্কারের মধ্যে পার্থক্য হল, নাসিহা হল সে উপদেশ; এই উপদেশ যাকে দেয়া হচ্ছে তার প্রতি থাকে মঙ্গলকামিতা, থাকে রাহমা আর সহমর্মিতা আর সেই উপদেশদাতা কামনা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন আর তার সৃষ্টির কল্যাণ। তাই সে তাকে চরম বিনয়ী আর এমনকি নিজেকে প্রস্তুত করে সমুহ ক্ষতি কিংবা অপবাদের গ্লানির জন্য ও। অপর দিকে যে তিরস্কার করে সে সন্মুখ সমরেই সবকিছু বলে আর অপদস্থ করে। সে যাকে তিরস্কার করছে সে ব্যক্তিকে খাট করতে চায় এবং উপদেশের নামে অভিশাপ দেয়।
আবু রুকাইয়াহ তামিম ইবনু আওস আদ-দারী [রাযীঃ] হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ দ্বীন হচ্ছে উপদেশ। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বলেনঃ আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলিমদের নেতা [ইমাম] এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য। [মুসলিমঃ হাঃ ৫৫]
আমাদের এই হাদিসটি অত্যন্ত গভীরভাবে উপলব্ধি করা দরকার কেননা ইসলামে নাসিহার গুরুত্ব অপরিসীম; এমনকি মুহাম্মাদ বিন আসলাম এই হাদিসকে বলেছেন দ্বীনের এক-চতুর্থাংশ।
আপনি কাউকে সংশোধন দিচ্ছেন? নাকি তিরস্কার দিচ্ছেন?
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ তুমি যদি কাউকে প্রকাশ্যে সংশোধন করো তবে তাকে আরো অপদস্থ করলে, আর গোপনে নাসিহা দিলে তার কল্যাণ করলে।
এর উদাহরণ দেওয়া যায় - যেমন কেউ খারাপ কাজ করেছে, তাকে কি সবার সামনে উপদেশ দিবেন যে সে যেন এই কাজটি না করে? নাহ। কারণ তাহলে ত সবাই জেনেই গেল যে সে খারাপ করেছে!! হিতে বিপরীত হলো না?
আপনি নাসিহা নামেই হোক বা উপদেশ নামেই হোক, দলীয় বিদ্বেষ বা বিশ্বাস থেকে যদি অন্যের প্রতি ঘৃণা থেকে পরামর্শ দিতে যান, সেটা কখনই দ্বীন নয়, নাসিহাও নয়। কারণ নাসিহার সাথে থাকে দ্বীনের কল্যাণ, থাকে ভুলকারীর প্রতি ভালোবাসা। আর আরা ঘৃণা পোষণ করেন তাদের ভাষায় থাকে ঘৃণ্য শব্দের ব্যবহার, তাদের লেখায় আখলাক বলতে কিছু থাকে না। যা থাকে সবটুকুই দলীয় বিশ্বাসের বিপরীত ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ, অহংকার ও ঘৃণা।
কাউকে তিরস্কার করে নাসিহা হয় না। কারণ নাসিহা হলো কল্যাণ কামনা। কারো সাথে চ্যালেঞ্জ করেও সংশোধন করা যায় না। কারণ নাসিহা কোনো ডিবেট নয়। আর ডিবেটের সাইকোলজি হলো কেউ পরাজিত হলেও আপনার কথা মানতে নারাজ হবে।
নাসিহা দেওয়া ব্যক্তিদের মনে রাখা উচিত রাসূলের সেই হাদীসটি-
"নিশ্চয় আমি প্রেরিত হয়েছি মানব সকল প্রকার উত্তম চরিত্রে পূর্ণতার জন্য"
এবার আপনার স্ট্যাটাস বা কমেন্ট আবার পড়ে দেখুন - সেখানে উত্তম চারিত্রিক ছাপ আছে তো? - না থাকলে সেটা তো ইসলাম-ই হলো না, নাসিহা আবার কীভাবে হয়?
কেউ নাসিহা দিলে সে অহংকার বশত চ্যালেঞ্জ করবে না, কেউ নাসিহা দিলে ঘৃণ্য শব্দও প্রয়োগ করবে না।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথ দান করুন, সেটা খোজার তাওফিক দিন।
বিষয়: বিবিধ
১৫২৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন