ইবাদতের আন্তরিকতা ও সততা

লিখেছেন লিখেছেন বুদ্ধিবৃত্তিক সঞ্চারণ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১১:০৪:৩৬ রাত

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম

অন্তরের ইবাদতের একটা অংশ হল শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা। মহানবী (সাঃ) বলেন,

মহান আল্লাহ বলেন,

‘আমি সমস্ত অংশীদারদের অংশীদারি (শিরক)থেকে অধিক অমুখাপেক্ষী। কেউ যদি এমন কাজ করে, যাতে সে আমার সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার স্থাপন করে, তাহলে আমি তাকে তার অংশীদারী (শিরক) সহ বর্জন করি’(অর্থাৎ তার আমল্ল নষ্ট করে দেই)
[বুখারী ২৯৮৫]

আমরা যখন বলি ‘ইয়্যাকা না’বুদু’ বা আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, তখন আমরা আমাদের ‘ইখলাস’ বা ইবাদতের সততা ও আন্তরিকতার ঘোষণা দেই, এবং নিজেদেরও সেকথা স্মরণ করাই। কাজেই আমাদের নিজেদেরকে প্রশ্ন করা উচিৎ- আমরা যখন কোন ভাল কাজ করি, আমরা কি অন্যদের কাছ থেকে কোন রকম প্রশংসা বা বাহবা আশা করি? আমরা যদি তা না পাই, তাহলে কি মনে মনে কষ্ট পাই বা হতাশ হই? যদি হই তাহলে বুঝতে হবে, আমাদের সেই ‘ভাল কাজটি’ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ছিল না, পাশাপাশি অন্যের জন্যও ছিল। ইবনে কাইয়্যিম বলেছিলেন, এর প্রতিকার হল, এটা বোঝা ও আত্মস্থ করা যে- কারও প্রশংসা আমাদের কোনরকম উপকার করতে পারবে না, কারও নিন্দাও আমাদের কোনরকম ক্ষতি করতে পারবে না। যেমন, যদি সবাই ভাবে যে আমরা সত্যবাদী, কিন্তু আল্লাহর কাছে আমরা আসলে তার উল্টোটা, সেই ‘সবাই’ কি আমাদের কোন উপকারে আসবে? অথবা কোন ধনী লোকের ব্যপারে যদি সবাই বলে বেড়ায় যে ‘সে ঋণগ্রস্ত, সে আসলে ধনী নয়’, তাহলে কি এতে ঐ ধনী ব্যক্তির সম্পদের কোন ঘাটতি হয়ে যাবে?

উপরন্তু, আমাদের এটা মনে রাখা উচিৎ যে, অন্যরা যদি এটা বুঝতে পারে যে আমরা অন্যের প্রশংসা পাওয়ার জন্য কোন নেক কাজ করছি, তাহলে তারাও আমাদের ব্যপারে মন্দ ধারনাই পোষণ করবে। তাহলে আমরা কিভাবে আমাদের মনের এই অবস্থা গোপন করব, যখন আমরা অন্যেরা কি ভাববে এটা নিয়েই বেশী চিন্তিত থাকি; অথচ যিনি আমাদের অন্তরের সব খবর জানেন তার ব্যপারেই আমরা গাফেল থাকি? এই লোক দেখানো আমলই হল ‘রিয়া’।


সবচেয়ে জঘন্য রিয়া হল সেটা যেটাতে মিথ্যাও মিশ্রিত থাকে, যেমন এমন কোন লোক যে এমন আমলের জন্য মানুষের কাছে প্রশংসিত হতে চায় যা সে আসলে করেইনি। আল্লাহ বলেনঃ

لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَفْرَحُونَ بِمَا أَتَوا وَّيُحِبُّونَ أَن يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا فَلَا تَحْسَبَنَّهُم بِمَفَازَةٍ مِّنَ الْعَذَابِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

“যারা স্বীয় কৃতকর্মে কর্মে সন্তুষ্ট এবং যা করেনি তজ্জন্যে প্রশংসা প্রার্থী, এরূপ লোকদের সম্বন্ধে ধারনা করোনা যে, তারা শাস্তি হতে বিমুক্ত বরং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”(সুরা আল ইমরানঃ১৮৮)

রিয়ার প্রতিকার কি? সবসময়, বারবার নিজেদের নিয়তের ব্যপারে নিজেকে প্রশ্ন করা এবং নিজেকে সংশোধনের সঙ্কল্প করা। আমরা যদি অনেক আমল জনসম্মুখে করি, তাহলে তার সমান অথবা তার চেয়ে বেশী আমল গোপনে কাউকে না বলে করার চেষ্টা করতে হবে। এটা হল এই আয়াতের সারাংশ, এবং এইজন্য আমরা প্রতিদিন এটা পড়িঃ

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া ইয়্যাকা নাসতা’ঈন – আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

[b]


গোপন রিয়া


দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শৈশব থেকেই আমাদের ভেতর রিয়ার বীজ বপন করা হয়ে থাকে। কিভাবে? আমাদের বলা হয়, ‘এমন করো না, লোকে কি বলবে?’ অথবা বলা হয়, ‘অমন করো না, তুমি কি চাও লোকে তোমাকে বলুক তুমি আদব কায়দা জান না?’। অথচ বলা উচিৎ ছিল- এটা বা ওটা করোনা কারণ আল্লাহ দেখছেন। কাজেই আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল আমরা বেড়ে উঠেছি রিয়ার মধ্য দিয়েই। লোকজনের অনুপস্থিতিতে আমরা অনেক কিছুই করে ফেলতে পারি, কারণ কেউ তো দেখছে না! এভাবে আমরা আল্লাহর সামনে লজ্জা বোধ করার চেয়ে মানুষের সামনে বেশী লজ্জা বোধ করি।

এই গোপন রিয়া আমাদের অন্তরের গভীরে এত দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে যে, যখন আমরা নির্জনে ইবাদত করি বা নির্জনে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করি, তখনও অজান্তেই রিয়া করে ফেলি। কিভাবে? পরবর্তীতে নিজের এমন কাজের জন্য নিজেই সন্তুষ্ট হয়ে বা এমন আশা করে করে যে – কেউ যদি দেখত তাহলে আমাদের কেমন ভাবত! অথবা, আমরা যখন নিজেদের মহান মৃত্যুর কথা কল্পনা করি যেমন, সেজদারত অবস্থায় মৃত্যু, তখন আরও যদি ভাবি এমন ভাবে মৃত্যু হলে লোকে কি কি ভাল কথা বলাবলি করবে, এমনটি না ভেবে যে আল্লাহর সাথে এমন ভাবে সাক্ষাত হলে কেমন হবে।

আমাদের অন্তরের এমন অবস্থায় আমাদের উচিৎ এই আয়াতটি(আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। (সুরা ফাতিহাঃ৪)) বেশী বেশী পড়ে অন্তরকে পরিষ্কার করার চেষ্টা করা, আমাদের নিয়তের ব্যপারে সজাগ থাকা, এবং ইবাদতের সততার গুরুত্ব অনুধাবন করা।

----সোর্স - কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ১৯ - কোরআনের আলো

সুতরাং ফেইসবুকে ফ্রিন্ড করার আগে একটু ভেবে নিয়েন, প্রশংসা পাওয়ার জন্য বন্ধু বৃদ্ধি করছেন? , কোন ছেলে বা মেয়ের প্রশংসা পাওয়ার জন্য ইসলামী পোস্ট দিচ্ছেন? , কোন মেয়ে বা ছেলে ভালো লেখে - তার ওয়ালে কমেন্ট করে তার এটেনশন চাচ্ছেন? ---আরকেটিবার ভাবু্ন- শিরক, শিরক, পূর্ণ সওয়াব পূর্ণ পাপে রুপান্তরিত হচ্ছে।



---সম্ভব হলে সকল বিপরীত লিংগের লোকদের আনফ্রেন্ড করে দিন যদি কমেন্ট থেকে বিরত না থাকতেই পারেন - এটা অনেক ভালো মাত্রায় কাজ দেবে ইন শাআ আল্লাহ। ---আখিরাতের বিনিময়ে এই ছোট্ট ফেইসবুক কি অতি নগন্য নয়?

আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুক।

বিষয়: বিবিধ

১৫৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File