আমার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আজন্ম ইচ্ছা ও আল্লামা সাঈদীর সাথে কারাগারে কিছুদিন

লিখেছেন লিখেছেন একান্ত একাকীত্বে ১৪ জুলাই, ২০১৪, ০৩:২৩:৪৭ দুপুর

আল্লামা সাঈদী, কবি মতিউর রহমান মল্লিক,আর বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক গোলাম আজম স্যারের সাথে দেখা করা ছিল আমার কৈশোর জীবনের অন্যতম প্রধান চাওয়া। আমি যখন ভি, জে গভঃ হাই স্কুলের ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ঠিক তখনই ইসলামী আন্দোলনের দাওয়াত পাই । এরপর ২০০৮ সালে যখন ৮ম শ্রেণীর ছাত্র তখন কর্মি এবং ৮ই ডিসেম্বর সাথী শপথ নিই বৃত্তি পরীক্ষার আগে পরে। আলহামদুলিল্লাহ , ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম । এরপর চলতে থাকে। একপর্যায়ে গোল্ডেন এ+ নিয়ে দেশসেরা কলেজে ভর্তি হই। ২০১২, ২৬শে নভেম্বর টেস্ট পরীক্ষার মাঝে সর্বোচ্চ শপথ নিই । এভাবেই চলছিল।

এরপর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফেলি ।রেজাল্ট বের হয়। কেন জানি প্রত্যাশীত ফলফল পাইনি । কষ্ট লেগেছিল কিন্তু মেনে নিতে হবে। ইউএসএ যাওয়ার জন্য স্যাট, টোফেল এর কোচিং করি। ইংরেজি ভার্শনে পড়ার কারণে ভাল করার সম্ভাবন ও প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি।

৩রা নভেম্বর, ২০১৩ চিটাগাং থেকে স্যাট -১ পরীক্ষা দিয়ে বেলা বারটায় ঢাকায় পৌছাই বাবার সাথে। কোনমতে দিনটা পার করলাম।রাতে স্যাট-২ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলাম ম্যাথ করার মাধ্যমে। ম্যাথ করতে করতে ঘুমিয়ে গেছি । রাত একটার দিকে হঠাত এক দায়িত্বশীল ভাই''

ওমর ভাই, ওমর ভাই, পুলিশ

-কি হয়েছে ভাই,

-পুলিশ

-কি বলেন?

-তাড়াতাড়ি করেন, কাগজপত্র সব সরান।

জানালা দিয়ে কিছু রশিদ বই, লেজার খাতা আর কিছু ইসলামী বই যেগুলো নৈতিক চরিত্র উন্নয়ন, নামাজ রোজাসহ অন্যান্য মৌলিক ইবাদতের উপর লেখা - ফেলে দিলাম । আস্তে আস্তে আমাদের উপর তলায় ফুলিশ বাহিনী (আই মিন ইট ) চলে আসলো। নিচতলায় নিয়ে কিছু জেরা করে দেখলো হবে না.। সবাইকে (১৭জন) নিয়ে থানায় গেল । কয়েকজন ভাইকে অকথ্য অত্যাচার আর গালিগালাজ করলো।

যথারীতি আইঞ্জীবির মাধ্যমে জামিন আবেদন করা হলো । জামিন নামঞ্জুর ও তিনদিন রিমান্ড । থানায় কয়েকজন ভাইকে মারাত্বক যখম করলো। এরপর সেন্ট্রাল কারাগারে ১২ দিন পশুর মত থাকা.।.।.।।। ভাইরা আমাদের কাশেমপুর পাঠিয়ে দিল।

এখানেই বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম সিপাহসালার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, বিশ্ববিখ্যাত আলেমে দ্বীন, মুফাসসিরে কুরান , আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর সাথে সাক্ষাত আমার মত অধমের । প্রিয়জনকে দেখার আকুলতা আর প্রাপ্তির আনন্দ সবমিলিয়ে এক জান্নাতি আবেশে ভরে ওঠে মন।

আমরা ছিলাম কিশোর ওয়ার্ডে আর আল্লামা সাঈদী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী পাশাপাশি ফাসির সেলে। বিকালবেলা সাঈদী সাহেব হাটতে বের হতেন আর আমরাও তাঁর পিছুপিছু হাটতাম আর গান গেয়ে শুনাতাম(আমাদের সাথে কিছু শিল্পী ভাই ছিলেন) । সকালে আমরা হুজুরকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতাম আর উনি উত্তর দিতেন সাবলীলভাবে।

আলাপচারিতায় যখন উনাকে জানালাম, আমি হুজুরের কোন মাহফিলে উপস্থিত ছিলাম না, উনাকে দেখার আমার বহু দিনের ইচ্ছা । উনি অবাক হলেন আর বললেন, আমার কোন সিডিও দেখো নি?

- দেখেছি কিন্তু সরাসরি কোন মাহফিলে উপস্থিত ছিলাম না।

এবার আমায় বুকে জড়িয়ে নিলেন। কপালে চুমা দিলেন আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। গর্বে বুকটা ফুলে উঠলো। বিশ্ববিখ্যাত আলেমে দ্বীন আমার সাথে এমন সদয় আচরন করলেন । কত আপন যেন এমন পরম মমতায় বুকে জড়িয়ে নিলেন! আমার যেন স্বর্গ পাওয়ার মত অবস্থা ।

যাইহোক এভাবে কিছুদিন গেলো। একদিন আমি আল্লামাকে জিজ্ঞাসা করলাম,''হুজুর , কারো যদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা থাকে আর সে যদি ইসলামী আন্দোলনও করে এক্ষেত্রে কি গুনাহ হবে? ''

- প্রধা্নমন্ত্রী হচ্ছে অনেক বড় দায়িত্ব। এসব আকাংক্ষা থাকা ঠিক নয়। তবে তুমি যোগ্যতা অর্জন করো। আল্লাহ কাকে কোথায় নেবেন উনিই ভাল জানেন । তাই এইসব ইচ্ছা ত্যাগ করে আন্দোলন করতে থাকো আর যোগ্যতা অর্জন করো ।আল্লাহই ঠিক করে দেবেন তুমি কোথায় যাবে।

-না, হুজুর , যদি সে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে কাজ করার জন্যই এই ইচ্ছা করে?

- আচ্ছা, আগে যা করছো সেটা করো। পরে দেখা যাবে।

উনি কয়েকটা কথা আমাকে বললেন না যা আমি এখন বুঝেছি কেন বলেন নি। কিছু মানুষের রাজনীতির প্রতি ঝোক দেখে আর আন্দোলনকে ব্যক্তিগত সম্পদ মনে করার প্রবণতা উপলব্ধি করে। রাজনীতি করার কারণে সংগঠন বিতর্কিত হয়।তাই রাজনীতি থেকে মনকে কলুষমুক্ত করাই ছিল আল্লামার অভিপ্রায়।

উনার কাছে শুনলাম উনি কেমন আছেন। বই লিখছেন আর ইবাদত বন্দেগী করছেন। দেখলাম সালাহুদ্দিন কাদের চৌধুরী উনার সাথে একসাথে নামাজ পড়েন। জানলাম বি এনপি নেতা নাকি নিয়মিত তাহাজ্জুতও পড়েন।

এভাবে কিছুদিন হুজুরকে গান শোনানো আর প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে হুজুরের সাহচর্যে আমরা উজ্জিবীত হই । প্রথমবারের মত মা-বাবা, পরিবার-পরিজন ছাড়া একাকী কিছুদিন কাটাই পরম সুহৃদ আল্লামা সাঈদীর সাথে । একদিন বিদায় নেওয়ার পালা ।আল্লামার কাছে বিদায় নিতে গেলাম । মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। কপালে চুমা দিয়ে বললেন, সবাইকে আমার সালাম দেবে আর দোয়া করতে বলবে। ইনশা আল্লাহ বিজয় আমাদেরই হবে।

অনেকদিন হয়ে গেছে আল্লামা সাঈদীর সাহচর্য ত্যাগ করে বেরিয়ে এসেছি । মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আর কোরআন এর পাখী আল্লামা অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি । নিজেকে অপরাধী মনে হয় যখন তোমার দেওয়া উপদেশ ভুলে যাই আর আল্লাহর পথে চলতে আলস্য আসে। চিরতরে ত্যাগ করেছি নেতা হওয়ার আকাংক্ষা। খুব মিস করছি তোমায়, হে আল্লামা সাঈদী।

বিষয়: বিবিধ

১৯৯৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File