রক্তে ভেজা ১৮৫৭

লিখেছেন লিখেছেন কর্ণেল কুতাইবা ০৯ নভেম্বর, ২০১৪, ০৯:১৮:২৪ রাত



১৮৫৭ সনের সিপাহী বিপ্লব ছিল এ উপমহাদেশের এমন এক গণবিস্ফোরণ, যার নজীর খুব বিরল। ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের দীর্ঘ ১০০ বছরের শাষণ-শোষণ এবং ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনাচারের বিরদ্ধে এ দেশের সর্ব শ্রেণীর শান্তি প্রিয় মানুষ একসাথে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিলেন। অপরদিকে জনমানুষের এই বিপ্লব ব্যর্থ করার লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদীরা যে নির্মমতা ও শঠতার অাশ্রয় নিয়েছিল, তা ছিল নজির বিহীন।

বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পর রাজধানী দিল্লীর চারপাশের অন্যূন ১০০ মাইলের মধ্যে অসংখ্য জনপদ ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে দেয়া হয়েছিল। স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার নামক একজন ইংরেজ ইতিহাসবিদের বর্ণনা অনুযায়ী, কলিকাতা থেকে পেশাওয়ার পর্যন্ত প্রলম্বিত শেরশাহী সড়কের দু`পাশে অবস্থিত এমন কোন বড় গাছ অবশিষ্ট ছিলনা, যার ডালে ডালে বিপ্লবীদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়নি। অার এসব হতভাগ্যের লাশ-কঙ্কাল মাসের পর মাস গাছের ডালে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কের (সাবেক ভিক্ঠোরিয়া পার্ক) বড় বড় বাদাম গাছের ডালে অন্যূন ষাটজন বিপ্লবীর লাশ ছয় মাসাধিক কাল ঝুলিয়ে রেখে অাতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল।

নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের এক বর্ণনায় দেখা যায় যে, অনেক বিশিষ্ট ব্যাক্তিকে গরুর কাঁচা চামড়ায় মুড়ে সেলাই করে জ্বলন্ত অাগুনে নিক্ষেপ করে ইংরেজ পিশাচদের উল্লাস করতেও দেখা গেছে।

অন্যূন ১১হাজার বিশিষ্ট অালেম ও সম্ভ্রান্ত লোককে বঙ্গোপসাগরের প্রায় নিঝুম ধ্বীপ অান্দামানে নির্বাসিত করা হয়েছিল। সেই ভয়ঙ্কর নির্বাসিত জীবনের লোমহর্ষক কাহিনী যুগশ্রেষ্ট দু`জন অালেম মাওলানা ফযলে হক খায়রাবাদী এবং অাল্লামা জাফর থানেশ্বরীর অাত্মজীবনীতে বিবৃত হয়েছে।

ঢাকার সর্বাত্মক বিদ্রোহ হয়েছিল ২১ নভেম্বর। এই দিনে লালবাগ কেল্লায় অবস্থানরত ইংরেজদেরকে বিদ্রোহ সৈন্যরা বের করে দিয়ে স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করেছিলেন।

একটা বিষয় বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরা এ উপমহাদেশ বিজিত স্পেনের অবস্থায় নিয়ে যাবার লক্ষ্যে ব্যাপক ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিল।

সিপাহী বিপ্লব ব্যর্থ হবার পর অালেমগণের উপর অমানবিক নির্যাতন, গণহত্যা এবং নানা পন্থায় তাদেরকে সমাজে অপাঙক্তেয় ও গুরুত্বহীন করে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এহেন অপচেষ্টা নেই যা তারা করেনি। কিন্তু বালাকোটের শহীদদের প্রেরণা বুকে ধারণ করে তারা যেভাবে ১৮৫৭ সালের মহাবিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ঠিক একই প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মাথা উঁচু করে সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতিটি ষড়যন্ত্রেরই মোকাবিলা করেছেন। চিরদিন তা ইতিহাসের পাতাগুলীকে অলংকৃত করে রাখবে।





সিপাহী বিদ্রোহের পর লখ্‌নৌ এর সেকুন্দ্রা বাগ,১৮৫৮ সালে ফেলিস বিয়াতো নামক ইতালীয়র তোলা ছবি

বিষয়: বিবিধ

১৩২৪ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

282691
০৯ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগল প্রয়োজনিয় পোষ্টটি।
১৮৫৭ সাল কে এখন যেন আমরা ভুলে যেতে চাচ্ছি।
১০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০০
226203
কর্ণেল কুতাইবা লিখেছেন : সিপাহী বিপ্লব অামাদের প্রেরণা, ভুললে হবেেনা। ধন্যবাদ Good Luck Good Luck Good Luck
282694
০৯ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৫৭
লজিকাল ভাইছা লিখেছেন : অনেক অনেক ভালো লাগলো লেখাটি। আপনাকে ধন্যবাদ।
১০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০১
226204
কর্ণেল কুতাইবা লিখেছেন : অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck Good Luck Good Luck
282718
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ১২:২৬
চিরবিদ্রোহী লিখেছেন : সিপাহী বিপ্লবের মূল প্রেরণা ও চালিকা শক্তি ছিলো মুসলমানরা। আজ তাদেরই সেই ইতিহাস থেকে বিদায় করার চক্রান্ত চলছে। আফসোস!!!!
১০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০২
226206
কর্ণেল কুতাইবা লিখেছেন : সহমত.... ধন্যবাদ Good Luck Good Luck
282760
১০ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৪০
আফরা লিখেছেন : অনেক অজানা ইতিহাস জানলাম আপনাকে ধন্যবাদ ভাইয়া ।
১০ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ১১:০৩
226207
কর্ণেল কুতাইবা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকেও বোন Good Luck Good Luck Good Luck
284563
১৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৩২
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : বিপ্লব ব্যর্থ হওয়ার পর রাজধানী দিল্লীর চারপাশের অন্যূন ১০০ মাইলের মধ্যে অসংখ্য জনপদ ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে দেয়া হয়েছিল। স্যার উইলিয়াম উইলসন হান্টার নামক একজন ইংরেজ ইতিহাসবিদের বর্ণনা অনুযায়ী, কলিকাতা থেকে পেশাওয়ার পর্যন্ত প্রলম্বিত শেরশাহী সড়কের দু`পাশে অবস্থিত এমন কোন বড় গাছ অবশিষ্ট ছিলনা, যার ডালে ডালে বিপ্লবীদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়নি। অার এসব হতভাগ্যের লাশ-কঙ্কাল মাসের পর মাস গাছের ডালে ঝুলে থাকতে দেখা যায়। ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্কের (সাবেক ভিক্ঠোরিয়া পার্ক) বড় বড় বাদাম গাছের ডালে অন্যূন ষাটজন বিপ্লবীর লাশ ছয় মাসাধিক কাল ঝুলিয়ে রেখে অাতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল।

দুর্ভাগ্য হল, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্তার কারণে এ জাতি বার বার কুলাংগার গাদ্দার আর বেইমান নেতা জম্ম দিয়েছে। তাদের প্রসব করা কর্মীগুলো যেন এক একটা আবু জেহেলের নাতি পুতি। অন্যদিকে আমরা যারা ইসলাম নিয়ে মরিয়ে, নিজের ঘর অন্ধকারে রেখে বাতি নিয়ে রাস্তায় দোড়াই। সাবর্জনিন ইসলামকে বাদ দিয়ে নিজের মতপথকে প্রতিস্টিত করতে গিয়েই বড়ই বিভক্ত।

ধন্যবাদ আপনাকে। পোষ্ট সম্পকে কিছু বলার নেই। অনুভুতিতে প্রচন্ডভাবে আঘাত করার মত।
১৫ নভেম্বর ২০১৪ রাত ০৯:৪০
227760
কর্ণেল কুতাইবা লিখেছেন : সুন্দর মস্তব্যটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ Good Luck Good Luck
285395
১৮ নভেম্বর ২০১৪ সকাল ০৯:২৬
নাছির আলী লিখেছেন : বতর্মানে কিছু নামধারী মুসলমান ইংরেজ সান্রাজ্যবাদীদের ন্যয় বাংলাদেশে শাষণ-শোষণ চালাচ্ছে এবং ইসলামী মুল্যবুতকে গুম হত্যা ও ফাসিতে জুলাচ্ছে।আপনার পোষ্টা অসাধারন। অনেক ধন্যবা।যাযাকাল্লাহ
১৮ নভেম্বর ২০১৪ দুপুর ১২:১৫
228760
কর্ণেল কুতাইবা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File