সেই কবুতরটি
লিখেছেন লিখেছেন কর্ণেল কুতাইবা ২৬ অক্টোবর, ২০১৪, ১০:৫৩:১৭ রাত
২০০৫ সনের ১জুলাই। দুপুর ১২টা। হঠাৎ একটা ধবধবে সাদা কবুতর আমাদের দোতলার বেলকনীতে এসে বসল। আমি চুপিচুপি কবুতরটির পাশে গিয়ে ওকে ধরে ফেললাম। মাত্র দু-একদিনেই কবুতরটা আমার পোষ মেনে গেল।
আমার সঙ্গে কবুতরটির গড়ে উঠল প্রচন্ড বন্ধুত্ব। সবসময় আমার কাছাকাছি থাকতো। পড়তে বা খেতে বসলেও আমার কোলে বসে পাখা নাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করতো। মাঠে খেলতে গেলেও সাথে নিতাম। আমি প্রতিদিন দু-চারবার ওর গায়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতাম। ও চুপ করে আমার আদর উপভোগ করতো। আমাকে ছাড়া ও একমুহূর্তও থাকতে পারতো না।
প্রথমে আমি মনে করেছিলাম কবুতরটি মনে হয় উড়তে জানেনা। পরে দেখলাম ও কিছুটা উড়তে পারে। তবে আশপাশ থেকে ঘুরে আবার চলে আসে।
অল্পদিনের মধ্যে ও আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে গেল। কবুতর যে মানুষের সঙ্গে এতো বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে তা কোনদিন শুনিনি।
একদিনের একটি ঘটনা বলছি,
আমি নানা বাড়ীতে গিয়ে পানি বসন্তে আক্রান্ত হই । কবুতরটিকেও আমার সঙ্গে নানা বাড়ী নিয়ে গিয়েছিলাম। যতদিন আমি অসুস্থ ছিলাম ,ততদিন ও প্রায় খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে আমার বিছানার পাশে বসে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। মনে হকো কবুতরটি এভাবে নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে।
ওকে হারানোর ভয়ে আমার ভাইয়ার সাথে ওকে বাসায় পাঠিয়ে দিলাম। দু-একদিন পর খবর এলো, কবুতরটি উড়ে চলে গেছে। আর ফিরে আসেনি। টেলিফোনে খবরটি পেয়ে সবারই মনে খারাপ হয়েছে কিন্তু আমি কান্না থামাতে পারলাম না।
ক্ষুদ্র একটি প্রাণী যে মানুষকে ভালোবাসতে শেখায় , গড়ে উঠে বন্ধুত্ব, তা আগে কখনো বুঝিনি। কয়েক বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আজো ওকে ভুলতে পারিনি। সময়ে অসময়ে ওর কথা মনে পড়লে দুই ফোঁটা অশ্রু আপনা আপনিই বেরিয়ে আসে। ও আমার হৃদয়ের মাঝে একটা স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। আমি হয়তো কোনদিনই ওকে ভুলতে পারবো না।
বিষয়: সাহিত্য
১৩৭৮ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ওদের ভালোবাসলে সে ভালোবাসার মূল্য ওরা দিতে জানে ।
আমি এটাই বুঝাইতে চেয়েছি কোন কিছু পাললে সেটার জন্য মায়াটা অনেক বেশী থাকে সেটা হারিয়ে গেলে বা মারা গেলে তখন কষ্ট অনেক বেশী হয় ।
আমাদের এখানে ডেনিসরা কুকুর পালে এদের কে দেখি কুকুর মারা গেলে পরিবারের সবাই মিলে এমন করে কান্না করে ঠিক পরিবারের একজন মানুষ মারা গেলে যেমন করে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন