এই পবিত্র রমজান মাসে এই ধরনের স্বপ্ন কেন দেখলাম-----
লিখেছেন লিখেছেন এবেলা ওবেলা ১৯ জুলাই, ২০১৪, ০২:১৩:৫৯ দুপুর
ছুটির দিন বলে কিছুক্ষণ আগে গুমিয়ে ছিলাম হঠাৎ স্বপ্নে দেখলাম আমি ছালার চট টানানো একটি ঝাপড়ার দোকানে সিংগারা খাইতাছি -- এই রমজান মাসে -- ভয়ে আরষ্ট হয়ে ঘুম ভেংগে গেল -- ভাবলাম এমন কেন হল -- তারাতারি এই নিয়ে জানার চেষ্টা করলাম -- যা খুঁজে পেলাম সটা হল -----
মানুষ কেন স্বপ্নও দেখে? স্বপ্নের রঙ ই বা কি? কি অর্থ এই স্বপ্নের? ফেলে আসা ধূসর অতীত নাকি অনাগত কোনো ভবিষ্যৎ এই স্বপ্ন?
স্বপ্নে মানুষ কি না পারে! পঙ্খীরাজের ঘোড়ায় চড়া থেকে শুরু করে আপাত অসম্ভব প্রতীয়মান সব কিছুই সম্ভব এই স্বপ্নে। তাহলে স্বপ্ন কি মানুষের প্রাত্যাহিক লৌকিকতার বাইরের অসাধারণ কিছু ক্ষমতা নাকি কয়েকটি নিউরণের শৃংখলিত কিছু অনুরণন মাত্র?
সেই আদিমকাল থেকেই মানুষের মনের অগোচরে লুকিয়ে ছিল এইসব প্রশ্ন। সভ্যতার গোড়ার দিকে মানুষের বিশ্বাস ছিল স্বপ্ন বুঝি লৌকিক পৃথিবী আর আধ্যাতিক ঐশ্বরিয় পৃথিবীর যোগাযোগের একটা মাধ্যম। এমনকি প্রাচীন রোমান আর গ্রীকরা স্বপ্নকে মনে করতো নবীদের নবুওয়্যাত লাভের একমাত্র মাধ্যম। মাত্র কিছুদিন আগে উনিশ শতকের শেষের দিকে সিগমাণ্ড ফ্রেড আর কার্ল জাং এর হাত ধরেই আমরা পাই স্বপ্নের প্রথম বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা। তাদের তত্ত্ব যে ধারনার উপর তা ছিল অনেকটা এরকম- মানুষের অবদমিত ইচ্ছাগুলোর পুনরায় সাজানো আর সমাধানের একটা অনিয়ন্ত্রিত ঘটনাই হল স্বপ্ন।
এরপর থেকে যতই উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি ততই আমাদের সামনে স্বপ্ন আরও পরিস্কার হতে শুরু করল। আসতে থাকলো কিছু নতুন তত্ব। এরকম একটি হল এক্টিভেশন সিন্থেসিস হাইপোথেসিস। এই হাইপোথেসিস অনুসারে স্বপ্ন বা এর অর্থ বলতে আসলে কিছুই নেই কারণ স্বপ্ন হল মস্তিষ্কের এলোমেলো কিছু তড়িৎ স্পন্দন যা কিনা আমাদের স্মৃতি থকে তুলে নিয়ে আসে এলোমেলো অসজ্জিত কিছু চিন্তা,অনুভুতি আর কল্পনা। একদিকে যেমন এরকম আরও অনেক তত্বের আবির্ভাব হতে লাগলো তেমনি অন্য দিকে প্রত্যেকটি মানুষের আলাদা আলাদাভাবে প্রাণান্ত চেষ্টা চলতে থাকলো ঘুম থেকে জাগার পর স্বপ্নকে মনে করে বাস্তবের সাথে তার মিল খুঁজে বের করায়। পরীক্ষা নিরিক্ষা করে এখন আমরা জানি কিছু কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণি যেমন বিড়ালরাও স্বপ্ন দেখে । আবার বিবর্তনবাদী মনস্তাত্ত্বিকদের মতে প্রত্যেকটি স্বপ্নেরই একটা তাৎপর্য থাকে। Threat Simulation Theory অনুসারে স্বপ্ন নাকি মানুষের বিপদ আপদের প্রতি আদিম জৈবিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটা কৌশল যা কিনা বারবার একই বিপদাপন্ন পরিবেশ আর পরিস্থিতি ভিন্ন ভিন্ন ভাবে স্বপ্নজগতে তুলে ধরে আর মানুষকে প্রদান করে বিবর্তনীয় কিছু সুযোগ সুবিধার এবং যা মানুষ পরবর্তীতে সেই সকল বিপদের মুখামুখী হয়ে কাজে লাগায় পূর্ব-স্বপ্নালব্ধ অভিজ্ঞতার।
এরকম আরও হাজারো ধারণা আর তত্ত্বের দেখা পাওয়া যায় ইতিহাসে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় অধুনা একটি গবেষণায়। নিউরোসাইন্স জার্নালে প্রকাশিত ক্রিস্টিনা মারযানো আর তার সহযোগিদের একটি সফল গবেষণায় তারা প্রথমবারের মত বের করতে পারেন মানুষ কিভাবে স্বপ্ন দেখা ঘটনা পরে স্মরণ করতে পারে। ৬৫ জন স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র নিয়ে দুই রাতের গবেষনায় তারা মস্তিষ্কের কিছু সুনির্দিষ্ট তরঙ্গের সিগনেচার সজ্জা দেখে ভবিষ্যৎবাণী করতে পারেন কে কে স্বপ্নকে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে মনে রাখতে পারবে।
এই গবেষণায় ছাত্রদের প্রথম রাতে শব্দহীন তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক একটা কক্ষে ঘুমাতে দেওয়া হয় যাতে তারা এরকম পরিবেশের সাথে সহজে মানিয়ে নিতে পারে। এবং দ্বিতীয় রাতে গবেষকরা ঘুমন্ত ছাত্রদের মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রিক্যল তরঙ্গগুলো মাপা শুরু করেন। সাধারণত আমাদের মস্তিষ্ক মোটামুটি চার ধরনের তড়িৎ তরঙ্গের সম্মুখীন হয়। এরা যথাক্রমে আলফা,বিটা,ডেলটা আর থিটা। এদের প্রত্যেকেরই আছে ভিন্ন ভিন্ন তড়িৎ বিভিব সজ্জা আর একসাথে এরা সবাই মিলে তৈরি করে electroencephalography (EEG)। এই যন্ত্রের সাহায্যে তারা স্বপ্নের বিভিন্ন ধাপে এইসকল ইলেকট্রিক্যাল তরঙ্গের তারতম্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরিমাপ করেন। আর আমরাতো সবাই জাই আমাদের স্বপ্নের থাকে ৫টি ধাপ। এর মধ্যে REM নামক ধাপে আমরা সবচেয়ে গভীর এবং পরিস্কার স্বপ্ন দেখি। এবং এই গবেষনা থেকে আমরা এখন জানি এই REM ধাপের ঠিক পরপরই যদি কেউ জেগে উঠে তবে সে স্বপ্নের ঘটনা প্রায় হুবুহু মনে রাখতে পারে। শুধু তাই নয় এই গবেষনা থেকে এর কারনটাও উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল ছাত্রের সম্মুখ লোব থেকে বেশি পরিমাণ কম কম্পাংকের থিটা তরঙ্গ নিঃসৃত হয়েছে তারাই বেশি নির্ভুলভাবে স্বপ্ন মনে রাখতে সক্ষম হয়। মজার ব্যপার হল ঠিক মাথার এই অংশ থেকেই আমরা আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া অতীত স্মৃতিগুলো মাঝে মাঝে তুলে নিয়ে আসি। এর মানে হল যে উপায়ে আমরা স্মৃতিচারন করি ঠিক সেই উপায়েই দেখি স্বপ্ন।
আরেকটা গবেষনায় সম্প্রতি বের হয়েছে গভীর স্বপ্ন আর Amygdala এবং Hippocampus এর মধ্যে আছে একটা আন্তঃসম্পর্ক। যেখানে Amygdala-র কাজ হল মানুষের আবেগিক অনুভূতির সংরক্ষণ আর প্রক্রিয়াজাতকরণ সেখানে Hippocampus-র কাজ হল মানুষের তাতক্ষণিক স্মৃতি থেকে তার স্থায়ী স্মৃতিতে রূপান্তর।
ম্যাথিউ ওয়াকার আর তার সহযোগিরাও প্রায় একই মতামত প্রকাশ করেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া,বার্কলে-তে Neuroimaging ল্যাবে। তাদের মতে মানুষের সামাজিক কার্যাবিদির একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ হল এই স্বপ্ন দেখা যা মানুষকে তার ও আশপাশের জটিল মানবিক আবেগগুলোকে সহজে বুঝতে সাহায্য করে।
কিছুদিন আগে আরও একটি গবেষণায় দেখা যায় “Charcot-Wilbrand Syndrome” নামক এক প্রকার ক্লিনিক্যাল নিউরোলজিক্যাল উপসর্গ কমিয়ে দিতে পারে আমাদের স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা।
এভাবে আমরা বর্তমানে জানি স্বপ্ন তৈরি হয় মাথার একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে যার সাথে আরও জড়িত আছে দৃশ্যনীয় কার্যকলাপ,আবেগ আর সংরক্ষিত স্মৃতির। আসলে স্বপ্ন নিজে সত্যি না হলেও এর সাথে জড়িত প্রত্যেকটি আবেগ আর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্মৃতির ফালি অনেকাংশেই সত্যি। স্বপ্নের গল্পগুলো আমাদের প্রাত্যাহিক জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে বের করে নিয়ে আসে আবেগ আর নিজের জন্য তৈরি করে আলাদা এক ধরনের স্মৃতি যাও কিনা ক্ষুদ্রে লেভেলে বাস্তব হলেও ভিন্ন রকম কম্বিনেশনের জন্য বৃহৎ লেভেলে মোটেও এক মনে হয় না। এইভাবে আবেগগুলো নিজেরা সক্রিয় না হলেও সচেতন অবস্থার রুদ্ধ আবেগ স্বপ্নের মাধ্যমে পরিত্রাণের বা মুক্তির একটা পথ পায় যা কিনা মানুষকে মানসিক চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করে আমাদের অজান্তেই…
তথ্য সূত্র ইন্টারনেট--
বিষয়: বিবিধ
১৪৬৬ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমি হুজুরের কাছে শুনেছি মনের ভুলেও যদি কেউ পেট ভরে ভাত বা কোন কিছু খেয়ে ফেলে তবু রোজা ভাংবে না আর সেতু স্বপ্নে খেয়েছে তাহলে রোজা হালকা হবে কেন !তাসকিয়া@
আসলে এই স্বপ্ন গুলি মানুষ নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে -- ধরুন আমি বাজারে গিয়ে দোকানির বইয়মে উন্নত মানের কিছু লন্ঞ্জেস দেখলাম কিন্তু আজ আমার কিনে খাওয়ার ক্ষমতা নাই কিন্তু আমি যদি পরিক্লপনা করি এই লন্ঞ্জেস আমি কিনে খাব -- এর জন্য যদি পরিক্লপনা করে আমি আর্থিক কৃচতাসাধন করি কিছুদিন চলি পরে ঠিকেই আমি একদিন এই লন্ঞ্জেস কিনে খেতে পারব--
সংক্ষেপে তাই আমার যুক্তি এই কল্পনা বিলাসি স্বপ্ন গুলির জন্য ইচ্ছা শক্তিই যতেষ্ট--- ধন্যবাদ--
আমার স্বপ্ন মনে থাকেনা তাই বাকী বর্ণনায় আর গেলামনা। দেখি এর পর থেকে খাতা কলম সাথে নিয়ে ঘুমাতে হবে
মন্তব্য করতে লগইন করুন