ওয়েব হোস্টিং কি, কেন এবং কিভাবে
লিখেছেন লিখেছেন skyweblink ১০ আগস্ট, ২০১৪, ১২:১৪:৫৭ রাত
ওয়েব হোস্টিং কি জিনিস সেটি জানতে গেলে প্রথমে জানতে হবে ইন্টারনেট কি। সবাই ইন্টারনেট ব্যাবহার করেই আমার এই লেখাটি পড়ছেন। কাজেই সবাই জানেন ইন্টারনেট কি। তার পরেও, একটু গভীরভাবে দেখতে গেলে, বেশীরভাগ লোক ইন্টারনেট কি কাজে ব্যাবহার হয় সেটা জানেন। ইন্টারনেট কি সেটা অনেকেই জানে না। ইন্টারনেটে ইমেইল করা যায়, বিভিন্ন ওয়েবসাইট দেখা যায়, পত্রিকা পড়া যায়, ফেসবুক ব্যাবহার করা যায়, ব্লগ লেখা যায় ইত্যাদি। কিন্তু ইন্টারনেট কাকে বলে সেটা অনেকেই বলতে পারবে না।
ইন্টারনেট হল, সারা বিশ্বের কম্পিউটার এর একটি নেটওয়ার্ক। এই আরেক সমস্যা শুরু হল। নেটওয়ার্ক জিনিসটা কি? উদাহরন দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে। মনে করি, একটি স্কুলের প্রত্যেকটি ক্লাশের জন্য অন্তত একটি করে কম্পিউটার আছে। এছাড়া শিক্ষক, অফিস, হেডমাস্টার এদেরও কম্পিউটার আছে। ওই ২০-২৫ ট কম্পিউটার এর একটি থেকে অন্যটিতে কোন ফাইল ট্রান্সফার করতে গেলে পেন ড্রাইভ বা সিডি ইত্যাদি লাগবে। ৮ম শ্রেনীর একজন ছাত্র কোন রেফারেন্স এর জন্য হয়ত ১০ম শ্রেনীর কম্পিউটার এর একটি ফাইল চাচ্ছে। ইতিহাসের শিক্ষিক হয়ত কোন প্রয়োজনে ভুগোল শিক্ষকের কম্পিউটার এর একটি ফাইল খুজছে। হেড মাস্টার কোন এক শিক্ষকের লেখা পড়ার অগ্রগতি দেখার জন্য তার কম্পিউটার এর ফাইল চাচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন বার বার, যে কোন প্রয়োজনেই এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটার এ ফাইল কপি করার প্রয়োজন হবে। মানুষের সারা দিন চলে যাবে ওই পেন ড্রাইভ, সিডি ইত্যাদি আনা নেওয়া করতে করতে। এর সহজ সমাধান হল আছে। স্কুলে কোন এক স্থানে একটি বড় কম্পিউটার (সার্ভার) রাখা হল। প্রত্যাকটি কম্পিউটারকে সেই সার্ভার এর সাথে সংযোগ করা হল। এবার যে কেউ, যে কোন কম্পিউটার ব্যাবহার করে কোন ফাইল সেভ করলে সেটা জমা হবে ওই সার্ভারে। তাই যে কোন কম্পিউটার ব্যাবহার করে সেই ফাইল পাওয়া যাবে। একটি সার্ভার এর সাথে সংযোগ দিয়ে স্কুলের সব কম্পিউটারকে কার্জত সংযুক্ত করা গেল। এটাকেই নেটওয়ার্ক বলে।
এখন মনে করি, ঢাকা শহরের প্রত্যেক স্কুলেই এই ব্যাবস্থা রয়েছে। এখন এক স্কুলের সাথে অন্য স্কুলের একই ধরনের সংযোগের ব্যাবস্থা কি? ব্যাবস্থাটা একই রকম। ঢাকা শহরের জন্য একটা আরো বড় সার্ভার লাগবে যেটার সাথে ঢাকার সব স্কুলের সার্ভারগুলির সংযোগ থাকবে ওই ঢাকা সার্ভারে। এই নেটওয়ার্ক সারা দেশের জন্য করতে গেলে, প্রত্যেকটি জেলার সার্ভারের সংযোগ থাকতে হবে আরো বড় বাংলাদেশ সার্ভারের সাথে।
ঠিক এমনি করে, সারা বিশ্বের অসংখ্য সার্ভার যুক্ত করে বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্কের নাম - ইন্টারনেট।
ওয়েব হোস্টিং কি
ইন্টারনেটে থাকে ওয়েব সাইট। যা মুলত লেখা,ছবির ও সফটওয়ার এর সমাহার। এখন ধরুন, আপনি একটি ওয়েব সাইট বানালেন। সেই ওয়েব সাইট আপনার কম্পিউটার এ রেখে দিলে তো আর বিশ্বের মানুষ তা দেখতে পাবে না। বিশ্বকে দেখাতে হলে অবশ্যই আপনার ওয়েব সাইটটিকে, ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত, কেণ এক সার্ভারে রাখতে হবে। এর পরে যে কেউ আপনার ওয়েব সাইট দেখতে পারবে। এই সার্ভার ব্যায়বহুল। , দেখাশুনা করা ঝামেলা। বিভিন্ন কোম্পানী আছে যারা এই সার্ভার বছর চুক্তিতে ভাড়া দেয়। এটাকেই ওয়েব হোস্টিং বলে। হোস্টিং হল কোন এক সার্ভার বা তার অংশবিশেষ বছর চুক্তিতে ভাড়া দেওয়া। এই ভাড়া দেওয়াটা সাধারনত অনেক হাত ঘুরে ক্রেতার কাছে আসে।
হোস্টিং এর প্রকারভেদ
হোস্টিং বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। ক্রেতারা তাদের সাধ্যমতন হোস্টিং নেন। ক্রেতা খুব বড় কোম্পানী হলে পুরো সার্ভারটাই (Dedicated Server) ভাড়া করে। আরেকটু ছোট কোম্পানী হলে (Virtual Server) সার্ভারের একটা অংশ ভাড়া করে। ব্যায়বহুল হওয়ার কারনে, এই ধরনের ক্রেতার সংখা কম। সবচেয়ে বহুল প্রচলিত হল Shared hosting যেটা সাধারন মানুষের সাধ্যের ভেতরে । হোস্টিং এর ব্যাপারে সাধারনত যত কথা বার্তা শোনা যায় তা সবই এই Shared hosting। নামে এর মধ্যেই জিনিসটির পরিচয় রয়েছে। শেয়ার করা বা ভাগ করা হোস্টিং। এতে খরচ কমে।
হোস্টিং নিলে কি পাওয়া যায়
আপনার প্রয়োজন মেটাতে Shared hosting ই যথেস্টর চেয়ে বেশী। মুলত আপনি পাবেন সার্ভারে একটা নির্দিস্ট পরিমান যায়গা। যেমন আপনি হয়ত পেলেন 500 MB যায়গা। আপনার মতন আরো হাজারো ক্রেতা একই সার্ভারে এমন যায়গা পাবে। তবে কেউ কারো যায়গাতে ঢুকতে পারবে না। সেই যায়গা ব্যাবহার করার জন্য আছে Control Panel। আপনি যেভাবে আপনার কম্পিউটার এর যে কোন ফোল্ডারে ঢুকতে পারেন ঠিক সেভাবেই আপনার ওই Hosting space এ ঢুকতে পারবেন। এখানে আপনার ওয়েব সাইট রাখতে পারবেন। আপনি যদি ওয়েব সাইট বানাতে না জানেন তবুও অসুবিধা নেই। Control Panel এ রয়েছে Website Builder যা দিয়ে আপনি সহজেই ছোট খাটো ওয়েব সাইট বানাতে পারবেন। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন অপশন যা আপনার ওয়েব সাইট বানাতে কাজে লাগবে।
হোস্টিং দেখতে কেমন হয়
যারা ওয়েব ডিজাইন করেন না তাদের কাছে এটা একটা নতুন ভুবন। এটা কিছুটা স্টেজের পেছনের জগতের মতন। স্টেজে আমরা সুন্দর নাচ গান বা নাটক ইত্যাদি দেখি। কিন্তু এর পেছনের জগত, যেখান থেকে এসব নিয়োন্ত্রন করা হয় সেটা অনেকেই দেখেন না। আজকে চেস্টা করব ওয়েব সাইটের পেছনের জগত দেখানোর।
Web site : demo.skyweblink.com
এই ওয়েব সাইটের পেছনের জগত (Control Panel) এ কিভাবে ঢুকবেন
১। ওপেন করুন - www.skyweblink.com
২। ওই ওয়েব সাইটের একেবারে নীচে বামপাশে “cPanel Login ” নামক বাটনে ক্লিক করুন।
৩। নতুন একটি ওইন্ডো ওপেন হবে। এবার সেখানে নীচে দেওয়া ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে Login করুন
Email :
Password: skyweblink
ব্যস, আপনি demo.skyweblink.com এই ওয়েব সাইটের Control Panel এ ঢুকে গেলেন। এটা 2GB হোস্টিং এর একটা ডেমো (উদাহরন) একাউন্ট। ক্রেতারা যাতে কেনার আগে নাড়াচাড়া করে দেখতে পারে এজন্য এই ব্যাবস্থা। এখান থেকে এই ওয়েব সাইটের সব রকমের পরিবর্তন করতে পারবেন। ওয়েব সাইটটি মুছে দিয়ে নতুন কোন ওয়েব সাইট বসিয়ে দিতে পারবেন। Control Panel এ অনেকগুলি Option রয়েছে। আমি মাত্র দুটির সঙ্গে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিব। File manager এবং Zyro Builder (নীচে ছবি দেখুন)
File manager জিনিস্টাকে আপনার কম্পিউটার এর Windows Explorer এর সাথে তুলনা করা যায়। আপনার কম্পিউটার এ কোথায় কোন ফাইল আছে সেটা দেখায় এই Windows Explorer। তাছাড়া ফাইল copy, paste, delete ইত্যাদি করা যায়। ওয়েব সাইটের File manager ঠিক এমন। ওই ওয়েব সাইটের কথায় কোন ফাইল আছে সেটা দেখা যায় আর copy, paste, delete, upload, download ইত্যাদি করা যায়।
Zyro Builder হল একটি ওয়েব সাইট বিল্ডার। আপনি যদি ওয়েব সাইট বানানোর কারিগরি বিষয়গুলি না জানেন তবুও আপনি এটি ব্যাবহার করে সহজে ওয়েব সাইট বানাতে পারবেন। যে পদ্ধতিতে এটা কাজ করে তা হল – আগে থেকেই ১০০ টি ওয়েব সাইট বানানো আছে। এগুলির মধ্যে যে কোন একটা বেছে নিন। এর পরে সহজেই সেই ওয়েব সাইটের লেখা ও ছবিগুলি পালটে দিন। ব্যাস, সেটা হয়ে গেল আপনার বানানো ওয়েব সাইট। এটা খুব সহজ। চেস্টা করে দেখতে পারেন। মনে রাখবেন, আপনি এই ওয়েব সাইটটি বানাচ্ছেন - demo.skyweblink.com । অর্থাৎ, Zyro Builder ব্যাবহার করে ওই ওয়েব সাইট বানাতে/পরিবর্তন করতে পারবেন।
ওয়েব হোস্টিং কারা করে (বিক্রেতা কারা)
ওয়েব হোস্টিং এর বিক্রেতা মুলত সার্ভারের মালিক কোন প্রতিস্টান। কিন্তু সেই কোম্পানী আবার অন্য ছোট কোম্পানীকে একটা অংশ বিশেষ বিক্রি করতে দেয়। বিষয়টা কিছুটা বিক্রয় এজেন্ট বা ডিলারের মতন। সেই কোম্পানী আবার আর ছোট কোম্পানীকে দেয়। এভাবে কয়েক স্তর পার হয়ে খুচরা বিক্রেতার কাছে আসে। আপনি সাধারনত এমন খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে কিনতে পারেন। এদেরকে Reseller বলা হয়। এই ব্যাবসার বড় বিক্রেতা বা ডিলারের কাছ থেকে আপনি খুচরা হোস্টিং নিতে পারবেন না। তারা ডিলার খোজে। খুচ্রা ক্রেতা নয়। আর বারবার বিক্রয় কথাটা বললেও এখানে আসলে বিক্রয় বলে কিছু নেই – সবই হল ভাড়া।
ওয়েব হোস্টিং এর খরচ কেমন?
এই খরচ নির্ভর করে আপনার বিক্রেতা এই প্যাকেজটা কিভাবে সাজায়। কোন প্যাকেজ বেশী যায়গা দেয় কিন্তু কম ইমেইল দেয়। কোন প্যাকেজ কম যায়গা দেয় কিন্তু বেশী ইমেইল দেয়। কোন প্যাকেজ সবই বেশী দেয়। আপনি যে কোম্পানীর কাছ থেকেই হোস্টিং নেন না কেন বেশির ভাগই আমেরিকান সার্ভার। কারন বিশ্বের সবচেয়ে কম মুল্যে সার্ভার স্পেস পাওয়া যায় আমেরিকাতে। তাছাড়া আন্তঃজাতিক বাজারে চালানোর জন্য এর মুল্যটাও ডলারে বা ডলারের সমপরিমান অন্য মুদ্রাতে ধরা হয়। ওয়েব হোস্টিং এর খরচের একটা ধারনা পেতে পারেন – এখানে দেখুন
বিনামুল্যে হোস্টিং আছে কি ?
হ্যা, তাও আছে। তবে সেগুলো নিজেই করে নিতে হবে (self service). এজন্য এ বিষয়ে কম বেশি জ্ঞান থাকাটা জরুরী। তাছাড়া এমন ফ্রী সার্ভিসে Support পাওয়া যায় না। কাজেই কোন সমস্যা হলে সেটা নিজেকেই সমাধান করতে হবে। পেইড হোস্টিং তো চালু হতে দু এক দিন সময় লাগে। কিন্তু ফ্রী হোস্টিং সাথে সাথে চালু হয়। শুধু একটা ফ্রী আকাউন্ট খুলুন – আপনার ওয়েব সাইট সাথে সাথে চালু। এমন এক ফ্রী হোস্টিং সার্ভিস এখানে পাবেন।
আশা করি সবাই ছোট খাটো ওয়েব সাইট নিজেই বানাতে পারবেন। তাছড়া অন্য কাউকে দিয়ে বানাতে গেলেও এমন কিছু তথ্য আগে থেকেই জেনে নিবেন যাতে ঠকতে না হয়।
ওয়েব বিষয়ক, নিয়মিত তথ্য পেতে ও যে কোন পরামর্শে পেতে, এই পেজে Like দিন - www.facebook.com/skyweblink
বিষয়: বিবিধ
২৯২০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন