আলাদীনের পরপুরুষদের চেরাগ
লিখেছেন লিখেছেন গোনাহগার ০৫ এপ্রিল, ২০১৫, ০৯:৫৬:৪৩ রাত
অসহায় প্রবাসীদের নিয়ে একটা লেখা দিয়েছিলাম। তাদের দুঃখ-গাঁথা লেখার উদ্দেশ্য ছিলোঃ প্রবাসীদেরকে সবাই টাকার মেশিন মনে করে। লোকগুলো কষ্ট করতেছে সেটা বড় কথা না, তাদের রক্ত পানি করা টাকা যে অপচয় করা হয়, সেটাই বড় কষ্টের! তাদের ঘামের টাকার অপচয় যদি কোন এক সূত্রেও বন্ধ হয়, এই অধমের লেখা সার্থক মনে করবো।
অনেকে প্রশ্ন করেছিলোঃ তাহলে কেউ কেউ ১ বছরের মধ্যে গাড়ি-বাড়ী কিভাবে বানায়। ১০ লক্ষ টাকা দেনমোহর লিখিয়ে, ৫ ভরি স্বর্ণ দিয়ে, ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে বিয়ে ক্যামনে করে?
জ্বী ভাই, এটা অন্য আরেক জগৎ। এই লেখাটা সেইসব গুণধর লাখপতি বিদেশীদের নিয়ে। আপনাদের দেখাব কোন্ সে আলাদীনের চেরাগ, যা তারা পেয়েছে যে, ঘষা দিয়ে রাতারাতি লাখপতি বনে যায়!
*****************************************
একসময় আরবে বাঙালীদের খুবই কদর ছিল। আরবরা আমাদের কাজের খুব মূল্যায়ন করতো, প্রশংসা করতো, সেই কাজের বিনিময় দিতো ডাবল। আরবী ঘরে যারা কাজ করতো, বিশ্বস্ততার পরিচয় দিতে পারলে, তারা(আরবী চাকুরীদাতা) কলজে ছিড়ে খাওয়াত। কেউ কেউ ওদের বদান্যতায় দোকানের মালিক বনে যেতো। আরবী মহিলারা তাদের পরিবারের মেয়েদের জন্য, নিজেদের ব্যবহৃত স্বর্ণের অলঙ্কার উপহার হিসেবে দিয়ে দিতো। কারো বিয়েতে বা পরিবারে নতুন অতিথি এসেছে জানতে পারলে অবিশ্বাস্য মূল্যের উপঢৌকন পাঠাত। আর এভাবে আলাদীনের চেরাগে ঘষা দিয়ে নয়, বিশ্বস্ততা ও ইমানদারি দিয়ে আমাদের বাপ-দাদারা কেউ কেউ লাখপতি হয়েছিলেন। তখন প্রতিটি গ্রামে হাতে-গোণা কয়েকজন প্রবাসী ছিল। তারা বিদেশ যাবার সময় বড় গাড়ী ভাড়া করতেন, আমরা পাড়ার ছেলেরা দলবেঁধে এয়ারপোর্টে পিকনিক করতে যেতাম। ওনারা বিদেশ থেকে আসলে পাড়ার ছেলে-বুড়ো সবার জন্য কিছু না কিছু উপহার নিয়ে আসতেন।
তা দেখে দেশের যুবকরা বিদেশে যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে যেতো। এভাবে ভালো, খারাপ, মাস্তান, ফ্রড সবার ঠিকানা হতে থাকে সোনার হরিণ নামক বিদেশ।
এখন আর সেই দিন নেই। এখন যারা আরবে যায়, আখের ছোবড়া খেতে যায়, কারণ আমাদের বাপ-দাদারা রস খেয়ে ফেলেছে। কিংবা বলতে পারেন, আখের বাগানদাররা (আরবরা) এখন চালাক হয়ে গেছে। অনেকে হা-হুতাশ করে বলে আমরা বাঙালীরা তাদের চালাক করে ফেলেছি। কিভাবে চালাক বানিয়েছি, সেটা অন্য প্রসঙ্গ, একদম শেষে কিছু হিন্ট দেওয়া আছে।
আমরা ইসলামিস্টরা মিশরের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে যতোই সহানুভূতি প্রকাশ করি না কেন, আরবে কিন্তু মিশরীদেরকে বাইরের সবাই খারাপ চোখে দেখে। তাদেরকে সবাই হারামী বলে। হয়তো ভালোগুলো এখানে আসে না, খারাপগুলোকেই আমরা দেখি। কিন্তু এখন দিন পাল্টে গেছে, আমরা বাঙালীরা সে স্থান দখল করে ফেলেছি। এখন কী আরব বলুন কিংবা অনারব, সবাই আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি হারামী বলে, বাঙালী পরিচয় পেলে নাক সিঁটকায়। কেন? সাথে থাকুন, আস্তে আস্তে জানতে পারবেন।
সেই ভালো আরবগুলো যখন লোক লাগত, আমাদের ভালো বাপ-দাদাকে বলতোঃ ওহে অমুক, আমাকে তোমার দেশ থেকে সেইম তোমার মত একজন বিশ্বাসী লোক এনে দাও। শুনে আমাদের বাপ-দাদারা খুশী হতো। কারণ অনেক গরীব-বেকার ভাই-ব্রাদার-আত্মীয় যে ধর্ণা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু সেইম লোক তো আল্লাহ আর বানাইনি, তাই এভাবে কম ভালো, কম বিশ্বাসী লোকগুলো ঢুকতে লাগলো। তখন এসব ভিসা ছিল ফ্রি, এমনকি আরবরা বিমান টিকেটের পয়সাসহ দিয়ে দিত।
এখন একটা বিভাজন সৃষ্টি হল যে, যাদের কেউ প্রবাসে আছে তারাই কিংবা তাদের আত্মীয় স্বজনরাই সিরিয়াল বিদেশে যাচ্ছে, যাদের কেউ নেই তারা যেতে পারছে না। এই না পারার দলের কেউ কেউ কৌশল আরম্ভ করলো। অনাত্মীয় প্রবাসীকে লোভ দেখানো শুরু করলোঃ ‘আমাকে যদি বিদেশ নিয়ে যাও, তোমাকে এতো টাকা দেবো।’ যতই সৎ মানুষ হোক, অন্য কিছুর লোভ সামলাতে পারলেও টাকা আর নারীর লোভ অধিকাংশই সামলাতে পারে না। তাই কমজোর ঈমানওয়ালা ভাইগণ সেই লোভে ধরা পড়লো। এভাবে শুরু হয়েছিল ভিসা ব্যবসা। বিদেশে যারা এই ব্যবসায় জড়িত তাদেরকে ‘কিডনী ব্যাপারী’ ডাকা হয়। মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রীকারীকে যেমন ঘৃণা করা হয়, তাদেরকেও তেমনি ঘৃণার চোখে দেখা হয়।
আমরা এমন অলস জাতি যে, পরিশ্রম করতে ভয় পাই। সে তারাই যখন উত্তপ্ত মরুভূমির দেশে কাজ করতে যায়, প্রথম প্রথম কিছুতেই এডজাস্ট করতে পারে না। আলসেমী করে, কাজে ফাঁকি দেয় আর আপনজন হলে ঠেক ধরে যেঃ ‘আমাকে আবার দেশে পাঠিয়ে দাও।’ এতে যিনি ভিসা দেন, তার অবস্থা কাহিল হয়ে পড়ে। বিপদে পড়ে যায়। আরব চাকুরীদাতার কাছেও নিজের অবস্থান হালকা হয়ে যায়। এটা অন্যরকম এক পেরেশানি। তাই প্রবাসীরা আস্তে আস্তে আপনজন আনা বন্ধ করা শুরু করলো, ভিসা পেলে বাইরে বিক্রি করা শুরু করলো। এভাবেও ভিসা ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠল। আরবরা যখন এই খবর জানতে পারে, তখন তারাও সরকারী ফিগুলো ভিসার বিনিময়ে নেওয়া শুরু করলো, শুধু বাঙালীদের কাছ থেকে। শুধু বাঙালী মানে, একই কোম্পানীতে একই ভিসায় কোন ইন্ডিয়ান কিংবা পাকিস্তানী কিংবা মিশরী আসে ফ্রি আর বাঙালীকে আসতে হয় টাকা দিয়ে। যে পথটা আমরাই দেখিয়েছি ওদের। এই বাঙালীকে হারামী বলবে না তো, কাকে বলবে? এখন অবস্থা এমন যে, শুধু এক হাত নয়, একই ভিসা চার-পাঁচবারও হাত বদল হয়। যে ভিসা আগে ফ্রি পাওয়া যেতো তা এখন টাকা দিয়ে কিনতে হয়। ধরুন একটা ভিসা কিনতে বাংলায় এক লাখ লাগে, ১ম পক্ষ সেটা দেড় লাখে বিক্রি করে, ২য় পক্ষ নেয় দুই লক্ষ আর ৩য় পক্ষ ... বুঝতেই পারছেন। এভাবে চক্রবৃদ্ধি সুদের হারের ন্যায় ভিসার মুল্য বাড়তে থাকে। সেজন্যেই আমাদের দেশে বিদেশে যেতে এতো খরচ হয়। আর এই ভিসা ব্যবসার সুযোগ যারা পেয়েছে এবং যারা নিয়েছে, আপনারাই বলুন এরা কি এক বছরে গাড়ি-বাড়ি করবে না! [/b
মুসলিম কান্ট্রি হলেও, [b]পৃথিবীর পাঁচটি নষ্ট শহরের মধ্যে একটি হল এই 'দুবাই'। ট্রানজিট এবং পর্যটন শিল্পের কারণে কি হয় না এখানে! মদ-গাঁজা সব ফ্রি। সাথে নারী ব্যবসা। বিভিন্ন দেশ থেকে হাউস্কিপার, হাউসমেইড, সেলসম্যান ইত্যাদি চাকুরীর নামে যেসব নারীদের এখানে আনা হয়, তাদের ৯০%-ই চলে যায়, এই যৌন ব্যবসায়। বলা যায়, যেতে বাধ্য করা হয়। এয়ারপোর্ট থেকেই অনেকেই গুম হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত আপোষে না আসে, মরুভুমির অজানা অঞ্চলে বন্দী জীবন-যাপন করে এবং ধর্ষিত হতে থাকে। বেশির ভাগ আরবই নারী লোভী। অনেক আরব আছে, এ কাজে শেল্টার দেয়, ব্যবসার ভাগীদার হয়। তারা সরাসরি জড়িত হয় না। বাইরের লোকদেরকে পার্টনার করে, তাদের দিয়ে কাজ করায়। তো অন্যান্য দেশের নষ্টদের সাথে আমাদের নষ্ট বাঙালীরাও এই সহজ ইনকামের সুযোগ লুপে নেয়।
এভাবে পরের নারীগুলো মরুভুমির বালিতে নাক গুঁজে গুমরে গুমরে কাঁদে আর তথাকথিত লাখপতিরা নারী মাংস বিক্রি করে নিজেদের নারীদের জন্যে স্বপ্নের প্রাসাদ বানায়
যারা বিভিন্ন পণ্যের দোকানদারি করে, তারা অতিরিক্ত মুনাফা করে। কথার ফুলঝুড়িতে সত্য-মিথ্যা বলে বিক্রি করে। অনেকে ইলেকট্রনিক্সের দোকান করে। সাথে রিপেয়ারিংও করে। আগে আরবরা তাদের যন্ত্রপাতিতে সামান্য সমস্যা পেলে, ডাস্টবিনে ফেলে দিত। বাঙালীরাই তাদের শিখিয়েছে কিভাবে রিপেয়ার করতে হয়। আসুন উদাহরণ দিয়ে বুঝাইঃ
মোবাইল দোকানে কোন আরব সামান্য ত্রুটিযুক্ত মোবাইল নিয়ে আসতো, অসাধু বাঙালীরা সাতপাঁচ বলে সেই ত্রুটি অনেক বড় করে দেখাত, বলতোঃ 'এটা ঠিক করতে যা লাগবে আর সামান্য দিলে নতুন একটা পাবেন।' কিংবা 'পুরনোটা আমাদের দিয়ে দেন, এটা আর কতদিন ব্যবহার করবেন, এই দেখেন নতুন মডেলের একটা চমৎকার সেট এসেছে।'
এভাবে ছলে-বলে-কৌশলে নতুন একটা সেট গছিয়ে দেয় সাথে পুরনো সেট কম দামে নিয়ে নেয়, আর পরে অন্য কাস্টমারের কাছে সেকেন্ডহ্যান্ড হিসেবে বিক্রি করে। আর রিপেয়ারিং যদি করতেই হয় তখন নতুন পার্টস লাগানোর নামে, আসল জিনিস খুলে নিয়ে চায়না পার্টস লাগিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটা তো এদেশের সবাই জানে।
সবচেয়ে বেশি জোচ্চুরি করে যাদের জেনারেটর, মোটর, এসি কিংবা গাড়ীর গ্যারেজ আছে, তারা। যারা এসি চিনেন, তারা জানেন এসি'র মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান এবং প্রয়োজনীয় পার্টস হলো 'কম্প্রেশার'। এটা নতুন পাওয়া যায় বাংলাদেশি টাকায় ৩৫-৪৫ হাজারের মধ্যে। আর ইউজড পাওয়া যায় ৭-১০ হাজারের মধ্যে। এখন ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে না কিংবা ঘর ঠান্ডা হচ্ছে না, সেই কারণে কোন আরব যখন মেকানিক ডাকে, তখন দেখে যে উইন্ডোতে ময়লা জমেছে, প্রেসারের মাধ্যমে হাওয়া এবং পানি মেরে ওয়াশ করে দিলে ঠিক হয়ে যাবে, সেখানে বলে যে, কম্প্রেশার খারাপ হয়ে গেছে, বদলাতে হবে। খুলে দোকানে নিয়ে আসে।
এভাবে ওই কাস্টমারের নিজ কম্প্রেশারটাকেই স্প্রে পেইন্ট মেরে নতুন বলে চালিয়ে দেয়, আর ১-২ হাজার টাকা খরচ করে, ৭-৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। কম্প্রেশার সত্যিই খারাপ হলে সেকেন্ড হ্যান্ড একটা লাগিয়ে দিয়ে, নতুন কম্প্রেশারের মূল্যটা পুরো হজম করে।
এভাবে মোটর রিউইন্ডিং এবং গাড়ীর গ্যারেজেও আলাদিনের আধুনিক চেরাগে ঘষা দিয়ে টাকার পাহাড় বানানো হয়।
আর দোকান থেকে কমিশন খাওয়া, একটা কমন ব্যাপার যেন। একটা কোম্পানীর ওয়ার্কার থেকে শুরু করে সব লেবেলের অফিসারকে আমি কমিশন খেতে দেখেছি। একটা ৫ দেরহামের(বাংলায় ২০০ টাকা) পার্টস ক্রয় করে অনেককে দেখেছি ৫০ দেরহামের(বাংলায় ১০০০ টাকা) রিসিপ্ট বানাতে। কি বাঙ্গালী, কি পাকিস্তানি, কি ইন্ডিয়ান, কি সুরিয়ান, কি সুদানী, এমন অনেক এডুকেটেড এবং অনারেবল পার্সনকে এমন উচ্চদরে কমিশন খেতে দেখেছি যে, আমি তাজ্জব বনে গেছি। হয়তো এদের বাপ-মা-ই দেশে “আমার ছেলে বিদেশে এত্তো বড় কোম্পানীতে অনেক ভালো বেতনে চাকুরী করে” বলে আত্মীয় স্বজনদের নিকট গর্ব করে।
পার্সেজিং অফিসাররা বড় দোকানের সাথে মাসিক ভিত্তিতে চুক্তি করে। ক্রয়মূল্যের উপর একটা নির্দিষ্ট হারে দালালি খায়। নিজের চুরিকে শেল্টার দেয়ার খাতিরে অধিনস্তদেরও ভাগ দেয়। দোকানের সেলসম্যানদেরও কিছু দিয়ে হাতে রাখে। এভাবেই অল্প সময়ে শুধু কমিশন খেয়ে খেয়েই একটা চক্র অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যায়।
দোকানে যারা সেলসম্যান কিংবা একাউন্টস মেইন্টেইন করে, তারা বিভিন্ন কোম্পানীর অসাধু পার্সেজিং অফিসার থেকে কিছু ভাগ তো পায়, তাছাড়া বিভিন্ন হোল সেলার থেকেও কমিশন খায়। আর একটা পথ হল চুরি। একটা খুচরা দোকান থেকে যদি ডেইলি ১০/২০ দেরহাম মেরে দেয়, কেউ টের পাবে না, অবশ্য আল্লাহ্পাককে যারা ভয় করে, তারা ছাড়া। এমনও প্রমাণ আছে, মালিক ক্রমাগত লোকসান দিতে দিতে দোকান সহ বেচে দিয়েছে, সেই দোকান ক্রয় করে নিয়েছে তারই অধিনস্ত কোন কর্মচারী, আর তারপর থেকেই সে ব্যবসা ফোলে-ফেঁপে উঠেছে।
এভাবে কমিশন আর চুরির টাকায় এক বছরে লাখপতি হওয়া, আলাদিনের চেরাগের আধুনিক ঘষা ছাড়া আর কি বলা যায়!
এবার আসি মূলধন ছাড়া ব্যবসায়ী অর্থাৎ ভিক্ষুকদের ব্যাপারে। এমন বাঙ্গালী আছে যারা দেশে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক। হয়তো লোক-দেখানো যাকাত-ফিতরা দেয় বাট সে তারাই বিদেশে নিজেদের মিসকিন সাজিয়ে যাকাত-ফিতরা খায়। কেউ কেউ দেশে যাকাতের হকদারদের বিলি করবে এই বাহানা দিয়ে আরবদের কাছ থেকে যাকাত আদায় করে আর কিছু অংশ নিজেরাই হজম করে, ক্ষেত্রবিশেষে সব টাকাই। অনেকে মসজিদ-মাদ্রাসার নাম করে, অনেকে গরীব আত্মীয়স্বজনদের নাম করে সাহায্য নেয়, আর নিজেরা হজম করে। অনেকে মসজিদে মসজিদে চাদর বিছিয়ে বসে থাকে, তবে আরব-আমিরাতে পুলিশের ট্যাঙ্গানিতে বেশি সুবিধা করতে পারে না। শুনেছিঃ এই ধরণের ব্যবসা নাকি সৌদিতে বেশি জমে। আমাদের এলাকার এক লোক নাকি এভাবেই লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছে।
এভাবে আমি অনেককেই চোখের সামনে বাড়ী-গাড়ির মালিক বনতে দেখেছি। এদেরকেই দেশে চালাক বলে সম্মান করা হয়। খাতির করা হয়। কাচা/কালো পয়সার বদৌলতে এরা আস্তে আস্তে সমাজের মাথা হয়ে যায়।
আর যারা সৎভাবে, পরিশ্রম করে আয় করে কোনমতে পরিবার চালায় কিংবা অতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে ডাস্টবিনের ময়লা থেকে জীবিকা অন্বেষণ করে তারাই সবচেয়ে বড় বোকা। অমুকের সন্তান বিদেশে গিয়েও কিছু করতে পারলো না বলে তাদেরকে উপহাস করা হয়। নিজের পরিবারের লোকদেরকেও আমি এমন কথা বলতে শুনেছি।
কথায় আছে, চোরের দশদিন গৃহস্থের একদিন। ওপরে বর্ণিত আধুনিক ঘষা মেরে অনেকে রাতারাতি বড়লোক হয় ঠিকই, অনেকে ধরা পড়ে। ফলে জেল-জরিমানার শিকার হয়। আর পরিশেষে লাইসেন্স-ভিসা হারিয়ে দেশে ফেরত যায়। আর আরবদের কাছে সমস্ত বাঙালী জাতিকে হারামী বলে চিহ্নিত করে যায়। এবার বলুনঃ
• বিনে পয়সার ভিসা কিংবা অল্প খরচের ভিসা আমরা যখন অধিক মূল্যে বিক্রি করি, তখন তারা বাঙালীদের হারামী বলবে না তো, কাদের বলবে?
• যখন লেবারের ভিসাকে অফিসারের ভিসা বলে অধিক টাকা নিয়ে কোন জাত ভাইকে বিদেশে এনে অমানিশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেই, তখন তারা বাঙালীদের হারামী বলবে না তো, কাদের বলবে?
• একই ভিসায় ইন্ডিয়ানরা আসে ফ্রিতে আর বাঙালীরা আসে টাকা দিয়ে, তখন তারা বাঙালীদের হারামী বলবে না তো, কাদের বলবে?
• নিজেদের মা-বোনদের যখন আমরা চাকুরী দেওয়ার নাম করে, নষ্ট পুরুষদের কাছে তুলে দেই, তখন ভালো আরবরা বাঙালীদের হারামী বলবে না তো, কাদের বলবে?
• যখন ভালো জিনিস দেবার নাম করে কোন নষ্ট জিনিস গচিয়ে দেই কিংবা জোচ্চুরি করে রিপেয়ারিং এর নাম করে টাকা খাই আর ওরা জানতে পারে, তখন তারা বাঙালীদের হারামী বলবে না তো, কাদের বলবে?
• যখন দোকানে চুরি/কমিশন খেতে গিয়ে ধরা খাই কিংবা পারসেজ করতে গিয়ে দালালী খাই, আর ওরা জানতে পারে, তখন তারা বাঙালীদের হারামী বলবে না তো, কাদের বলবে?
• যখন ভিক্ষুকের মত সারাক্ষণ হাত পেতে রাখি কিংবা সাহায্যের নামে নেওয়া টাকাগুলো হজম করে ফেলি, আর ওরা জানতে পারে, তখন তারা বাঙালীদের হারামী বলবে না তো, কাদের বলবে?
আমরা এভাবেই আমাদের ভাষায় তাদের চালাক বানিয়েছি। কিন্তু ওদের ভাষায়, আমরা ওদের সচেতন করে তুলেছি। দেশে দেশে আমাদের ভিসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরা বিরোধিতার দোহাই দিয়ে যতোই সরকারকে দোষারোপ করি না কেন, ওপরের কারণ গুলো কিন্তু তাতে ৫০% ভূমিকা রাখছেই। আমরা নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মারছি। একজনে মাস্তি করে দশজনের ক্ষতি করতেছি। ইহকাল তো ধ্বংস করছিই, সাথে পরকালটাও।
আরবদের আমরা সচেতন করে তুলেছি, নিজেরা কি কোনদিন সচেতন হব?
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১৩৭৩ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন