ছোট গল্পঃ অতৃপ্ত হৃদয়

লিখেছেন লিখেছেন গোনাহগার ২১ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৫২:৪৯ বিকাল

(গল্পটা লিখেছিলাম কলেজ জীবনে, যখন মানুষের হাতে কোন মোবাইল ছিল না, ছেলেমানুষি গল্প। প্রকাশের জন্য কোথাও পাঠাইনি। ফেসবুকে দেখেছি অনেকে এই টপিকে লিখেছেন, তাই আমার লেখাটা নকল মনে হতে পারে। বিশ্বাস রাখুন পাঠক, এটা আমার মৌলিক লেখা।)

এক

- ইমন কলেজ থেকে কবে ফিরলি বাবা

- এই তো মা, কিছুক্ষণ

- কিছু খেয়েছিস

- হ্যাঁ, এইমাত্র নাস্তা খেলাম

- একটু এদিকে আয়

- কিছু বলবে মা

- তোর একটা ফোন এসেছিল।

- ফোন!

- হ্যাঁ, একটা মেয়ে। নাম বলল ময়ূরী

নামটা শুনেই ইমন চমকে ওঠল। যদিও মায়ের সেদিকে খেয়াল নেই, অবচেতন মনে সে উচ্চারণ করল,

- ময়ুরী!

- হ্যাঁ, নাম তো তাই বলল। কে রে মেয়েটি?

ইমন একটু বিব্রতবোধ করল। ইতস্তত করে বলল,

- মেয়েটি আমার ক্লাসমেট। কিছু বলেছিল?

- তোর খোঁজ করেছিল। তুই কলেজে বলাতে বলল, তুই এলে যেন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফোন করতে বলি।

- আর কিছু ...

- না, ফোন রেখে দিল। আমার সাথে মনে হয় সহজ হতে পারছিল না। ও হ্যাঁ, সে কি আজ কলেজে যায়নি!

- না মা। ওরা ঢাকা গিয়েছিল, ফিরেছে মনে হয়। ৬ টা বাজতেছে, দেখি একবার ফোন করে।

দুই

রিডিং রুমে ফিরে এসে ইমনের অপরাধবোধ হতে লাগলো। জ্ঞান হবার পর থেকে এই প্রথম মায়ের সাথে মিথ্যে বলল সে। ময়ূরীর সাথে এখনো দেখা হয়নি। দুই সপ্তাহ আগে এক বন্ধুর ডায়রীতে ফোন নাম্বারটা পেয়েছিল। কোন নাম ঠিকানা নেই, শুধু নাম্বারটা ছিল। কৌতূহলবশত নাম্বারটা ঠুকে নিয়েছিল। বাসায় এসে ঐ নাম্বারে ডায়াল করে ট্রাই করে দেখেছিল। ভাগ্য ভালো যে, ময়ূরীই ফোন উঠিয়েছিল।

সেই থেকে শুরু। প্রতিদিন কলেজ থেকে ফিরে ইমন ফোন করে, ময়ূরীও যেন তার অপেক্ষায় বসে থাকে। দীর্ঘসময় ওরা আলাপ করে যায়, যাকে বলা যায় ফোন মিতালী। মাকে সত্য কথাটা বললে কি আর মহাভারত অশুদ্ধ হতো! আজ এ পক্ষের সাড়া না পেয়ে, ময়ূরীই আগে ফোন করেছিল। এ মুহূর্তে ইমন চকিত লাফিয়ে উঠল। ফোনের পাশে গিয়ে ডায়াল করলো। ওদিকের সাড়া পেয়ে বলল,

- কে, ময়ূরী? কেমন আছেন?

- ভাল, কোথায় ডুব দিয়েছিলেন আজ।

- না না। সেই সৌভাগ্য আর কোথায়। কেমিস্ট্রির নোট আনতে এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম তো তাই। দেরীর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

- ক্ষমা করা যায় কিনা ভেবে দেখব। তা উনি কে হন আপনার?

- ‘উনি’ মানে!

- উনি মানে এক মহিলা। আপনার ঘরে ছিল। কেন কেউ কিছু বলেনি আপনাকে!

- হ্যাঁ বলেছে। উনি আমার আম্মা। কেমন লাগলো মহিলাকে?

- বাব্বা, যা ভয় পেয়েছিলাম! ভেবেছিলাম ক্রশ কানেকশান বুঝি।

- কেন, কখনো কি বলেছি যে আমি একা থাকি?

- না তা বলেননি। আবার কে কে আছে তাও বলেননি। আচ্ছা, খালাম্মা আপনাকে জেরা করেননি?

- করেছিল। বলেছি, মেয়েটি আমার ক্লাসমেট।

- মিথ্যে বললেন! সত্য বললে কি হত?

- মা ওসব বুঝতেন না। কেন খারাপ লাগছে? মাকে একদিন স্বচক্ষে দেখাব না হয়।

ওদিকে কাঁচের প্লেট ভেঙ্গে যাওয়ার মত মধুর কিন্তু কিনকিনে হাসির শব্দ পেল ইমন। সেও মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,

- বা রে, হাসছেন যে! এতো হাসির কি হল?

- হাসবো না! স্বচক্ষে এখনো তো আমাদেরই সাক্ষাৎ হয়নি, তা আবার মাকে ...

- ভালো কথা। এক কাজ করি চলুন। কাল শিশুপার্কে আসুন, সে কাজটা নাহয় সেরে ফেলি।

ওদিকে সাড়া না পেয়ে ইমন আবার বলল,

- কিছু বলছেন না যে, ভয় পাচ্ছেন বুঝি?

- না না। ভয় নয় লজ্জা করছে আমার, কিভাবে আপনার সম্মুখে যাব?

- লজ্জার কি হলো। তাহলে আসছেন! মনে রাখবেন বিকাল ৫টা।

- আচ্ছা, আপনাকে চিনবো কভাবে?

- তাইতো? ঠিক আছে আমি কালো প্যান্ট এবং সাদার ওপর নীল চেকের শার্ট পরা থাকব। মনে থাকবে তো! আর আপনি?

- হ্যাঁ মনে থাকবে। আমি লাল থ্রি-পিছ পরে আসবো।

- তাহলে আজ রাখি, খোদা হাফেজ।

- খোদা হাফেজ

তিন

মারাত্মক টেনশানে ভুগছে ইমন। পাক্কা তিন ঘন্টা ধরে সে শিশু পার্কে আছে সে। লাল থ্রি-পিছ দূরে থাক, লাল জামা পরা কোন মেয়েকেই দেখেনি সে। নিজেকে অনেক ছোটজাতের মানুষ মনে হল। অচেনা একটা মেয়ে তাকে এভাবে অপমান করবে সে ভাবতেই পারেনি। ছলনাময়ী, প্রতারক, ধোঁকাবাজ বলতে বলতে সে বাড়ী ফিরেছে। ময়ূরীদের বাসায় এই নিয়ে পাঁচবার ফোন করল সে। ওদিকে কোন সাড়া শব্দ নেই। সত্যিই কি ময়ূরী তার সাথে খেলল! জীবনের প্রথমেই একটা মেয়ের কাছ থেকে এভাবে ছ্যাকা খেলো সে! না, প্রকৃত ঘটনা তাকে জানতেই হবে। এরকম অপমান তার হজম হচ্ছে না। মেয়েটির মুখোমুখি তাকে হতেই হবে। আবারও ডায়াল করলো সে, ওদিকে রিসিভার তোলার শব্দ পেয়ে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল,

- কে ময়ূরী!

- না, ভাইজান। আমি এ বাড়ীর কাজের বুয়া, ময়ূরী আপা তো হাসপাতালে।

- হাসপাতালে! কেন, কি হয়েছে!

- আপু আজ সেজেগুজে বিকেলে বের হয়েছিলো। রিকশা করে যাবার সময় পিছন থেকে একটা ট্রাক ধাক্কা দেয়। তার অবস্থা খুব খারাপ, মনে হয় বাঁচবে না। তা আপনি কে?

আর শুনতে পারে না ইমন। তার মাথাটা গুলিয়ে উঠল। একটা মেয়ে তার কারণে আজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আর সে কিনা তার সম্বন্ধে আজেবাজে কত কিছুই না ভেবেছে, নীচ ধারণা পোষণ করেছে। ছিঃ এ লজ্জা সে রাখবে কোথায়! আর কিছু ভাবতে পারে না ইমন। বুয়ার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছল ইমন। লাল থ্রি-পিছ পরা একটা মেয়ে শুয়ে আছে বেডের ওপর। বিছানাও রক্তে লাল হয়ে আছে। তীব্র বেদনায় নীল হয়ে গেছে ফর্সা মুখটা। একটি উচ্ছল মেয়ে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে, যেন বৃন্ত থেকে নিষ্ঠুর হাতে টেনে ছিঁড়ে ফেলা একটি লাল গোলাপ। যেন একটি রক্তিম সূর্য তার লাল আভা হারিয়ে ডুবে যাচ্ছে অতল গহ্বরে। সহ্য করতে পারলো না ইমন। ময়ুরীর আত্মীয় স্বজনদের উপেক্ষা করে ছোটে গেল বেডের পাশে। অতি কষ্টে মুখে মিষ্টতা জমা করে ডাকলো, ‘ময়ূরী’।

এই ডাকটার অপেক্ষায় ছিল যেন জড় বস্তুটি। ধীরে ধীরে তাতে প্রাণসঞ্চার হল। ডাগর চোখ দুটি পাঁপড়ি মেলে তাকালো যেন জেগে উঠল কোন প্রাচীন মিশরীয় মমি। কয়েক সেকেন্ড, তারপর অতি তৃপ্তিতে চোখ দু’টো মুদে এলো। ঠোঁটে এক চিলতে হাসিও যেন দেখা গেল গোধুলির মত। এ হাসিতে ছিল না কাঁচ ভাঙ্গার কোন রিনিঝিনি শব্দ।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৮ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

246769
২১ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৪
হতভাগা লিখেছেন : তারপর ... তারপর কি হলো ?
২১ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৯
191594
গোনাহগার লিখেছেন : তারপর ... Crying
246774
২১ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : হতভাগা লিখেছেন : তারপর ... তারপর কি হলো ?
২১ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
191596
গোনাহগার লিখেছেন : তারপর ... Crying
246777
২১ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩২
দিশারি লিখেছেন : ভালো লাগলো
২১ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪০
191597
গোনাহগার লিখেছেন : ধন্যবাদ
246963
২২ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:৪৭
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : ভালো লাগলো Good Luck Rose
২৩ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:১১
192110
গোনাহগার লিখেছেন : ধন্যবাদ
247292
২২ জুলাই ২০১৪ রাত ০৮:১১
বাজলবী লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ।
২৩ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:১৬
192113
গোনাহগার লিখেছেন : আপনাকেও Happy

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File