সওয়াবের আশায় নবসৃষ্ট সকল কাজই বিদআ'ত
লিখেছেন লিখেছেন গোনাহগার ০৭ জুলাই, ২০১৪, ০৩:২১:১৭ দুপুর
আমাদের দেশের মিঠা সুন্নী আলেম, মাজার-পুজারী, পীর-পুজারী মোল্লারা যুক্তি দিয়ে থাকেন যে, "শরীয়তে স্বাভাবিকভাবে সবকিছু জায়েয হওয়াই মূলনীতি। যদি না নাজায়েয হওয়ার পক্ষে কোন দলীল থাকে। এক্ষেত্রে মোনাজাত করা, ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা, শবে বরাত পালন করা, মাজারে যেয়ে সিজদা করা-চুমু খাওয়া, মৃত মানুষের উসিলায় চার দিন- চল্লিশা উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়া করা ইত্যাদি, যেহেতু ভাল ইবাদত তাই নাজায়েয হইয়ার প্রশ্ন আসেনা।"
আরও বলেন, "নব আবিস্কৃত সব জিনিষই বিদআ'ত নয়। এভাবে ঢালাওভাবে সবকিছুকে বিদআ'ত বলা যাবে না। তাহলে গাড়ীতে চড়া, বাতি জ্বালানো, ফ্যান চালানো ইত্যাদি সবকিছু বিদ'আত হবে, কেননা কাজগুলো রাসূল(সাঃ) করেননি।"
আরে গর্দভ, এসব কাজকে আপনারা বিদআ'ত ভাবেন কেমন করে। রাসূল(সাঃ) মনে হয় আপনাদের থেকে কম বুঝেছিলেন (নাউজুবিল্লাহ), বিদ'আতের মধ্যে আবার ভালো-খারাপ কি! যেসব নতুন কাজ ইবাদত হিসাবে চালিয়ে দেওয়া হয়, সওয়াবের আশায় করা হয়, তার সব গুলিই বিদ'আত। একটা কথা মনে রাখা উচিত, ইসলামের মধ্যে যাকিছু অতীব প্রয়োজনীয়, ফরয-ওয়াজিব যা না করলে পরকালে কঠোর শাস্তি পেতে হবে, হারাম-হালাল যাকিছু আছে, সবই তিনি স্পষ্ট ভাষায় আমাদের জানিয়ে দিয়ে গেছেন।
আল্লাহ্পাক সূরা মায়েদা ৩ নং আয়াতে কি বলেছেন, বলেছেন,
"আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।
রাসূল(সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে কি বলেছেন, দেখি...
"হে লোক সকল! আমার পর আর কোনো নবী নেই, আর তোমাদের পর কোনো উম্মতও নেই।
আমি তোমাদের কাছে দু’টো জিনিস রেখে যাচ্ছি। যত দিন তোমরা এ দু'টোকে আঁকড়ে থাকবে, ততদিন তোমরা গুমরাহ হবে না। সে দু’টো হলো আল্লাহ'র কিতাব ও আমার সুন্নাত।
তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকবে। কেননা তোমাদের পূর্ববর্তীরা দ্বীনের ব্যাপারে এই বাড়াবাড়ির দরুন ধ্বংস হয়েছে।"
তিনি আরও বলেছেন,
"তোমরা (দ্বীনের) নব প্রচলিত বিষয়সমূহ থেকে সতর্ক থাক। কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ’ত এবং প্রত্যেক বিদআ'ত ভ্রষ্টতা”। (সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৯৯১ ও সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৭৬ তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।)
“নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআ'ত এবং প্রত্যেক বিদআ'ত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৩৫ ও সুনান আন-নাসায়ী, হাদীস নং ১৫৬০, হাদীসের শব্দ চয়ন নাসায়ী থেকে)।
একটা কথা মনে রাখা উচিত, রাসূল(সাঃ) এবং তাঁর সাহাবীগণ যা করেননি, ইবাদতের নামে তা চালিয়ে দেওয়াই হল বিদ'আত।
আমার নীতি হল, যে কাজ কোন আলেম মুস্তাহাব বলেছেন আবার কোন আলেম বিদ'আত বা করলে গুনাহ হবে বলেছেন, সেটা না করাই ভালো। কারণ না করলে আমার কোন গুনাহ হচ্ছে না বাট করলে গুনাহ হবার সম্ভাবনা আছে। তাই অতিরিক্ত সওয়াব কামাতে গিয়ে গোনাহ কামানো কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে! আমাদের উচিত ফরয-ওয়াজিব গুলো যথাযথ আমল করা, যা পরিপূর্ণ আদায় না করলে শাস্তি পেতে হবে। বর্তমান ফেতনার যুগে এই হাদিসটা বেশি বেশি আমল করা উচিতঃ
"ইসমা’ঈল(রহঃ), তালহা ইবনু উবায়দুল্লাহ্(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নজ্দবাসী এক ব্যাক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলো। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। আমরা তার কথার মৃদু আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু সে কি বলছিল, আমরা তা বুঝতে পারছিলাম না। এভাবে সে কাছে এসে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে লাগল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘দিন-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত।’ সে বলল, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো সালাত আছে কি?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার। ’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘আর রমযানের সিয়াম। ’ সে বলল, ‘আমার উপর এ ছাড়া আরো সাওম আছে কি?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল আদায় করতে পার।’ বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, ‘আমার ওপর এ ছাড়া আরো দেয় আছে কি?’ তিনি বললেনঃ ‘না, তবে নফল হিসেবে দিতে পার।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘সে ব্যাক্তি এই বলে চলে গেলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি এর চেয়ে বেশিও করব না এবং কমও করব না।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘সে সফলকাম হবে যদি সত্য বলে থাকে।’' [সহীহ বুখারি (ইফা), অধ্যায়ঃ (ঈমান), হাদিস নাম্বারঃ ৪৪]
মুহাম্মদ ইবনু ‘আবদুর রাহীম(রহঃ), আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এও আছে যে, "রাসূল (সাঃ) ওই ব্যক্তি চলে গেলে বলেন '... ... কেউ যদি জান্নাতী লোক দেখতে আগ্রহী হয় সে যেন এই লোকটার দিকে তাকিয়ে দেখে।" [সহীহ বুখারি(ইফা), অধ্যায়ঃ ২১(যাকাত), হাদিস নাম্বারঃ ১৩১৫]
সবাইকে আলাহ পাক সত্য জ্ঞান দান করুন এবং সঠিক আমল করার তওফিক দান করুন,
আমীন।
ওয়া আখিরু দা' ওয়া না আ'নিল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ'লামীন।
বিষয়: বিবিধ
১১৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন