বিশ্বব্যাপী একই দিনে রোজা শুরু ও বিশ্বব্যাপী একই দিনে ঈদ বিষয়ে বর্তমান বিশ্বের বিশ্ব বরেণ্য মুফতি তাক্বি উসমানী সাহেব (দাঃবাঃ) এর মন্তব্য
লিখেছেন লিখেছেন হামজা ১৪ জুলাই, ২০১৫, ০১:১৩:৪৯ রাত
বর্তমান বিশ্বের বিশ্ব বরেণ্য আলেম মুফতি তাক্বি উসমানী সাহেব (দাঃবাঃ) লিখেছেন,
“(ফিকাহ শাস্ত্রের ইমাম) ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর মতে চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা বিবেচ্য নয়। এর অর্থ হচ্ছে যদি এক এলাকায় চাঁদ দেখা সঠিকভাবে প্রমানিত হয় তবে তা অন্য এলাকার জন্য গ্রহনীয় হবে। এই কারনেই হানাফি ফিকাহবিদগন বলে থাকেন যদি পশ্চিমের অধিবাসীগন নতুন চাঁদ দেখে তবে সেটা পূর্বের অধিবাসীদের জন্যও (চাঁদ দেখার) প্রমান।
হানাফি ফিকাহবিদগনের ‘প্রধানত শক্তিশালী মতামত’ (জাহির রিওয়ায়াত predominantly stronger opinion) একেবারে পরিষ্কার।যদি বিশ্বের যে কোন স্হানে চাঁদ দেখা যায় এবং অন্য যে কোন এলাকায় তা শরীয়তসম্মতভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয় তবে এই এলাকার জন্যও চাঁদ দেখা প্রতিষ্ঠিত হবে।”। (তাক্বি উসমানী (দাঃবাঃ) সাহেবের কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ইমামুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৮৯)]
মুফতি তাক্বি উসমানী সাহেব এই বিষয়টি সম্পর্কে প্রকৃত বাস্তবতার নিরীখে অত্যন্ত সহজভাবে বুঝিয়ে লিখেছেন,
“মানুষ মনে করে থাকে দূরবর্তী স্হান হলেই চাঁদের উদয়স্হল(horizon) ভিন্ন হয় আর নিকটবর্তী স্হান হলে উদয়স্হল (horizon) একই হয়। কিন্তু এটা সত্য নয়। বাস্তবতা হচ্ছে যারা চাঁদ দেখতে পায় তারা এটা আলোকরশ্মি হিসেবে দেখতে পায়, যারা এই আলোকরশ্মির আওতায় থাকে তারাই এটাকে দেখতে পায়, যারা এই আলোকরশ্মির আওতার বাহিরে থাকে তারা এটাকে দেখতে পায় না। উদাহরন স্বরূপ ধরে নেই চাঁদ উদিত হল এবং একটি টেবিলের উপরিভাগ হচ্ছে এর আলোকরশ্মির সীমা, এই পরিসীমার মধ্যে চাঁদ দেখা যাবে।যদি একজন ব্যক্তি টেবিলের একপ্রান্তে থাকে এবং অপরজন টেবিলের অপর প্রান্তে থাকে তবে তাদের মাঝে হাজার মাইল দূরত্ব হলেও তাদের জন্য উদয়স্হল (horijon) একই। কারন তারা দুইজনই আলোকরশ্মির আওতার মধ্যে এবং উভয়েই চাঁদ দেখতে পাচ্ছে। পক্ষান্তরে আরেকজন ব্যক্তি যদি আলোকরশ্মির আওতার মধ্যে না থাকে তবে সে আলোকরশ্মির আওতার মধ্যে থাকা ব্যক্তির খুব কাছে থাকলেও তার উদয়স্হল (horijon) ভিন্ন। আসুন একটি দৃশ্যমান উদাহরন নেই এটাকে বুঝার জন্য। মনে করুন দারুল ঊলুমের (মাদ্রাসার) বাহিরে একটি উচুঁ পানির ট্যাংকি আছে। যদি আপনি এর চার দিক দিয়ে ঘুরতে থাকেন আর এটাকে দেখতে থাকেন এটা আপনি অনেক দূর থেকে দেখতে পাবেন। (বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর) একটা পর্যায়ে এটা আর দেখা যাবেনা। (যে কোন দিকে যেখানে এটা সর্বশেষ দেখা যায় সেই শেষ প্রান্ত থেকে) বিপরীত দিকে (শেষ প্রান্তে) সেখানেও এই ট্যাংকিটি দেখা যাবে। এই দুই স্হানের দূরত্ব চার বা পাঁচ মাইল হলেও তাদের উদয়স্হল একই। পক্ষান্তরে একটি শেষ প্রান্ত থেকে খুব কাছের কোনো একটি জায়গা যেখান থেকে এটা দেখা যায়না সেই জায়গা( ঐ শেষ প্রান্তের খুব কাছে হওয়া স্বত্তেও) এর উদয়স্হল (horijon) ভিন্ন। সুতরাং উদয় স্হলের ভিন্নতা বা একতা নির্ভর করে দূরত্বের উপর নয় বরং দেখা যাওয়ার উপর।
যদি চাঁদের আলোকরশ্মির সীমা প্রতিবার চাঁদ উদয়ের সময় একই থাকত তাহলে এর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীকে দুই ভাগে ভাগ করা সম্ভব হত (এভাবে যে) চাঁদ পৃথিবীর এই অংশে দেখা গেছে এবং এই অংশে দেখা যায়নি। তখন পুরো ব্যাপারটি সহজ হতো এটা গবেষণা করে যে এই এলাকাগুলি আলোকরশ্মির সীমার মধ্যে এবং ওই এলাকাগুলি আলোকরশ্মির সীমার মধ্যে নয়। আর তখন আলোকরশ্মির সীমার সকল এলাকাগুলিকে একটি উদয়স্হল (horijon) এবং বাকি অংশকে আলাদা উদয়স্হল (horijon) গণ্য করা হতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যা ঘটে তা হচ্ছে প্রতিবার চাঁদ উদয়ের সময় এটা পৃথিবীতে নতুন আলোকরশ্মির সীমা তৈরী করে।অর্থাৎ আগের মাসে যে সমস্ত এলাকা আলোকরশ্মির সীমার অন্তর্ভূক্ত ছিল পরবর্তী মাসে তার সবটুকু অন্তর্ভূক্ত থাকেনা নতুন কিছু এলাকা আলোকরশ্মির সীমার অন্তর্ভূক্ত হয়। সুতরাং প্রত্যেক মাসেই আলোকরশ্মির সীমা পরিবর্তিত হয়। সুতরাং এমন কোন সূত্র নেই যা প্রতিষ্ঠিত করবে যে করাচী এবং হায়দারাবাদের উদয়স্হল একই অথবা করাচী ও লাহোরের উদয়স্হল আলাদা। প্রতি মাসেই এটা একটা নতুন অবস্হা। এখন যদি আমরা চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা চিন্তা করি তবে এর খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে, চাঁদ কোরাঙ্গি (একটি জায়গার নাম কোরাঙ্গি ) তে দেখা যেতে পারে এবং সদর (কোরাঙ্গি থেকে খুব কাছেই আর একটি জায়গার নাম সদর) এ দেখা নাও যেতে পারে। তখন কোরাঙ্গি ও সদর এর উদয়স্হল ভিন্ন হয়ে যাবে। এই কারনে (এলাকা ভিত্তিক চাঁদ দেখে আলাদা দিনে রোজা শুরু ও আলাদা দিনে ঈদ করার নীতি গ্রহন করলে ) ‘কোরাঙ্গি’ এর চাঁদ দেখা ‘সদর’ এর জন্য গ্রহনযোগ্য হয় না বা বিপরীতভাবে (সদর এর চাঁদ দেখা কোরাঙ্গি এর জন্য গ্রহনযোগ্য হয় না)। (সুতরাং) চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা (অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে আমল করার নীতি) কে গ্রহন করলে একই এলাকার সাক্ষ্য একে অপরের জন্য গ্রহনযোগ্য হয় না। এটা পরিষ্কারভাবে রাসূল (সঃ) এর আমল ও নির্দেশের বিপরীত।
আমরা দেখতে পাই আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত একটি হাদিসের ঘটনায়, রসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনায় চাঁদ খোঁজ করেছিলেন কিন্তু তিনি এটা দেখতে না পাওয়ার ফলে ঘোষনা করেছিলেন আজ চাঁদ দেখা যায়নি। পরের দিন আছরের পরে একটি কাফেলা এসে পৌঁছাল এবং এই কাফেলার লোকেরা বলল আমরা গতকাল মাগরিবের সময় চাঁদ দেখেছি। তাহলে তারা প্রায় চব্বিশ ঘন্টা অর্থাৎ চাঁদ দেখার পর চব্বিশ ঘন্টা পথ অতিক্রম করেছিল। তাহলে এই ভ্রমন ছিল এক মারহালা এবং এক মারহালা হচ্ছে ষোল থেকে বিশ মাইল। রাসূল (সঃ) এই চাঁদ দেখাকে মদীনার জন্য প্রমান হিসেবে গ্রহন করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা বিবেচ্য নয় বলে যে মত হানাফি ফিকাহবিদগন দিয়েছেন, তা যথার্থ এবং এটাই ‘প্রধানত শক্তিশালী মতামত’ (জাহির রিওয়ায়াত predominantly stronger opinion)।
নিকটবর্তী ও দূরবর্তী শহর বলে যে পার্থক্য পরবর্তী হানাফি উলামাগন করেছেন তা চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতার বাস্তবতার বিরুদ্ধে যায় কারন (চাঁদ দেখার ভিত্তিতে) নিকটবর্তী ও দূরবর্তী শহরের প্রকৃত (বা নির্ধারিত) কোন দূরত্ব নাই। সুতরাং হানাফি ফিকাহবিদগনের ‘প্রধানত শক্তিশালী মতামত’ (জাহির রিওয়ায়াত predominantly stronger opinion) হচ্ছে যদি বিশ্বের যে কোন স্হানে চাঁদ দেখা যায় তবে তা বাকি পৃথিবীর জন্যও প্রমান হিসেবে সাব্যস্ত হবে এই শর্তে যে সংবাদ শরীয়তসম্মতভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। আজ যদি সকল দেশ এই নীতির উপর ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে আর ২৮ ও ৩১ দিনের সুযোগ থাকবে না। এতে বিভিন্ন দেশে (চাঁদ দেখার) সংঘর্ষেরও অবসান হবে”। (তাক্বি উসমানী সাহেবের (দাঃবাঃ) কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ইমাম আল বারী শরহে সহীহ বুখারী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৮৯ )]
বিশ্বব্যাপী একই দিনে রোজা শুরু ও একই দিনে ঈদ পালনের ইজতিহাদ সম্পর্কে জানতে নিম্নোক্ত লিংকগুলি দেখুন
১ম অংশ: কিছু প্রশ্ন http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48800
২য় অংশ: পবিত্র কুরআনের বক্তব্য http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48868
৩য় অংশ: হাদীস শরীফের বক্তব্য http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48879
৪র্থ অংশ: ফিকাহ এর সিদ্ধান্ত http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48891
৫ম অংশ: ও, আই, সি (OIC) - এর সিদ্ধান্ত http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48895
৬ষ্ঠ অংশ: বৃটেন ও কানাডার সমস্যা এবং মুফতি বৃন্দের ফাতওয়া http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48901
৭ম অংশ: ভৌগোলিক জ্ঞান সংশ্লিষ্ট কিছু প্রশ্ন এবং তার জবাব http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48916
৮ম অংশ: সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজের ওয়াক্ত হয়না তাহলে একই দিনে রমজান মাস শুরু হবে কিভাবে? http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48934
৯ম অংশ: যারা নিজ নিজ দেশের চাঁদ অনুযায়ী রোজা ও ঈদ পালন করে থাকেন তাদের দলীল ও তাঁর জবাব http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/49494
১০মঅংশ: আহবান http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/49520
সম্পূর্ণ লেখা http://moonsighting.ucoz.com/Global_Moon_Sighting_by_Amir_Hamza_.pdf
বিষয়: বিবিধ
৪৩৭২ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখকের প্রতি অনুরোধ লিংক গুলো পরিবর্তন করে দিন।
ডমেইন পরিবর্তনের ফলে লিংক গুলো কাজ করছে নাহ্। ধন্যবাদ।
আলহামদুলিল্লাহ, এই অনুবাদটি আমি নিজেই করেছি, গত বছর ব্লগে লিখেছিলাম, এখন পুনরায় দিয়েছি।
আলহামদুলিল্লাহ,লিংক গুলো কাজ করছে।
এই যদির অবসান হবে বলে মনে হয়না, সুতরাং এখন যেভাবে চলছে সেভাবে কি বিশেষ অশুবিধা হবে?
আমার বিরোধ একটা জায়গায়, রাষ্ট্র যদি ঈদ পালন করে একই রাষ্ট্রে একটা ক্ষুদ্র অঞ্চল কি করে তার বিরোধীতা করে একদিন আগে পরে করে ফেলে? এটা করা কি উচিত? এটা কি গোলযোগ সৃষ্টি নয়?
বাস্তবতা হলো দেখা স্বাপেক্ষ। চাঁদ দেখা গেছে আমেরিকায়, আমি যদি মোবাইল মারফত খবরটা নিয়ে বাংলাদেশে মিলাতে চাই তাহলে অবশ্যই গোলযোগ বাঁধবে, বাংলাদেশেও যেহেতু দেখা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষাতো করতেই হবে, আমেরিকায় চাঁদ দেখা গেলেতো বাংলাদেশ চাঁদের আলোয় আলোকিত হবেনা, বাংলাদেশ তখন সূর্যের আলো ব্যাবস্থায় থাকবে। জোর করে সবাইকে একই দিন করতে গিয়ে গোলযোগই বাঁধবে। প্রশ্নতো এটাও আসতে পারে, দিন কেন? সময় ব্যাবস্থা নয় কেন? আমেরিকায় যদি ছাঁদ দেখা যায় তাহলেতো এটা সত্য যে চাঁদ দেখা গেছে তাহলে আমেরিকায় চাঁদ দেখার ১২ ঘন্টা পর ঈদ ধরে নিলে সেই ১২ঘন্টা হিসেবে বাংলাদেশের কি অবস্থান দাঁড়াবে?
পৃথিবীর যেখানেই চাঁদ দেখা যাক, খবজ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সারা বিশ্বেই তা প্রযোজ্য হবে- এটাই নির্দেশনা!!
বর্তমান বিশ্বে মুহূর্তেই সবখানে খবর পৌঁছে যায়!
সুতরাং .....
যদি সকল তর্ক-বিতর্ক বাদ দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নেওয়া হয় এবং রোযা, ঈদ, কুরবানীসহ চাঁদের তারিখ সংশ্লিষ্ট ইবাদাত সমূহ সমগ্র বিশ্বে একই দিনে অনুষ্ঠিত না হয় তাহলে এমন সব জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয় যার কোন সমাধান নেই। নিম্নে এরকম প্রধান প্রধান কিছু সমস্যা তুলে ধরা হল-
(১) বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের ( যেমন সৌদি আরব, ইয়েমেন, ওমান, ইরাক, কুয়েত, জর্দান ইত্যাদি দেশের ) একদিন পরে সিয়াম / রোজা শুরু করলে, বা বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে ঈদ করলে এই অবস্হা হয়: বাংলাদেশ থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সেখানে ঈদ করলে তার রোযা ২৮ বা ২৯ টি হয় অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে একটি কম হয়, আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন বাংলাদেশে এসে ঈদ করলে তার রোযা ৩০ বা ৩১ টি হয় অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে একটি বেশি হয়। অথচ ২৮ বা ৩১ রোজার বিধান ইসলামে নাই। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে আরবী মাস ২৯-এর কম হবেনা এবং ৩০-এর বেশী হবেনা। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে এই ২৮ বা ৩১ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
(২) ঠিক একই ভাবে আরও কিছু প্রশ্ন এসে যায়, যেমন মধ্যপ্রাচ্যে কেউ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে ঐদিন বাংলাদেশে এসে দেখল (স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে আমলের কারনে) বাংলাদেশের মানুষ রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? একইভাবে, আফগানিস্তানে কেউ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে ঐদিন (মানুষের তৈরী হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত পার হয়ে) একেবারে পাশের দেশ পাকিস্তানে এসে দেখল (স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে আমলের কারনে) মানুষ রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা?
আবার বাংলাদেশে কেউ স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে শাবানের হিসাব করে শাবানের শেষ দিন দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করে ঐদিন মধ্যপ্রাচ্যে যেয়ে দেখল মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ রমজানের রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? একইভাবে, পাকিস্তানে কেউ স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে শাবানের হিসাব করে শাবানের শেষ দিন দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করে ঐদিন (মানুষের তৈরী হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত পার হয়ে) একেবারে পাশের দেশ আফগানিস্তানে যেয়ে দেখল আফগানিস্তানের মানুষ রমজানের রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? এইসকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়না।
(৩) লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাত্রে যেমন ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এমন বিজোড় রাত্রে খোঁজ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করলে, মধ্যপ্রাচ্যে যেদিন বিজোড় রাত হয় বাংলাদেশে সেদিন জোড় রাত হয়, আবার বাংলাদেশে যেদিন বিজোড় রাত হয় মধ্যপ্রাচ্যে সেদিন জোড় রাত হয়। তাহলে শবে কদর কি মধ্যপ্রাচ্যের বিজোড় রাত অনুযায়ী হবে নাকি বাংলাদেশের বিজোড় রাত অনুযায়ী হবে নাকি দুই রাত্রেই হবে? যেমন উদাহরন স্বরূপ মধ্যপ্রাচ্যে যদি সোমবার দিনগত মঙ্গলবার রাতটি রমজানের শেষ দশদিনের একটি বিজোড় রাত ও কদরের রাত হয় তাহলে বাংলাদেশে (মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করার কারনে এলাকা ভিত্তিক হিসেবে) মঙ্গলবার দিনগত বুধবার রাতটি বিজোড় রাত ও কদরের রাত হবে। তাহলে উপরোক্ত উদাহরনে আসল কদরের রাত কি সোমবার দিনগত মঙ্গলবার রাত, নাকি মঙ্গলবার দিনগত বুধবার রাত, নাকি দুই রাতই? সূরা কদর অনুযায়ী কুরআন যে রাতে নাযিল হয়েছিল সেটাই কদরের রাত। কদরের রাতে সমগ্র কুরআন একত্রে লওহে মাহফুজ থেকে বায়তুল ইজ্জাহ বা প্রথম আসমানে নাযিল করা হয়েছে। উপরোল্লিখিত উদাহরন স্বরূপ যদি ধরে নেই, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য মঙ্গলবার রাত্রে ৩০ পারা কুরআন একত্রে নাযিল হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য ৩০ পারা কুরআন একত্রে কি বুধবার রাত্রে আরেকবার নাযিল হয়েছে??? মঙ্গলবার রাত আর বুধবার রাত কি কখনো একই রাত হতে পারে??? ৩০ পারা কুরআন একত্রে কয় রাতে নাযিল হয়েছে? কদরের রাত কি একটা নাকি দুইটা? একই বছর একই মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় লাইলাতুল কদর কেন ভিন্ন ভিন্ন বারে (যেমন মঙ্গল, বুধ, ইত্যাদি) হবে? ৩০ পারা কুরআন কি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক রাতে আর বাংলাদেশের জন্য তার পরের রাতে অর্থাৎ দুই রাতে নাযিল হয়েছে?
(৪) হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়” [(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪০-২৪১, হাদীস নং ১৭৭৭) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৮)]
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।” [(সহীহ বুখারী, খন্ড ৩, হাদীস নং ১২৩ অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় - সাওম, হাদীস নং ৯, অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় ৩১, হাদীস নং ১২৩) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৯) অথবা (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪১, হাদীস নং ১৭৭৮,)]
উদাহরন স্বরূপ ধরে নেই মধ্যপ্রাচ্যে যদি বুধবার দিনগত বৃহস্পতিবার রাত্রে রমযান মাস শুরু হয় তাহলে বাংলাদেশে এলাকা ভিত্তিক চাঁদের হিসেব করলে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করার কারনে বৃহস্পতিবার দিনগত শুক্রবার রাত্রে রমযান মাস শুরু হবে। জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এগুলি কি মধ্যপ্রাচ্যের রমজান শুরুর রাত্রে অর্থাৎ উপরোল্লিখিত উদাহরন অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত্রে নাকি পরদিন বাংলাদেশের রমজান শুরুর রাত্রে অর্থাৎ শুক্রবার রাত্রে হবে নাকি দুই রাত্রে দুই বার হবে? ইবলিস আযাযিল শয়তান তো একটাই। তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য শয়তান বৃহস্পতিবার বেঁধে বাংলাদেশের জন্য শুক্রবার কি আরেকটা শয়তানকে বাঁধা হবে??? জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এগুলি দুই দিনে দুই বার নয় বরং এক দিনে এক বারই হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে এগুলি একাধিক বার হয় বলে মেনে নিতে হয় যা বিবেকগ্রাহ্য নয়।
(৫) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, “আরাফার দিনে রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি, তা পূর্ববর্তী বছর এবং পরবর্তী বছরের গুনাহ্ মুছে দিবে (বা ঐ দিনের রোযার বিনিময়ে আল্লাহ পাক রোযাদারের পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন)”। [(মুসলিম শরীফ, অধ্যায় সাওম, হাদীস নং ২৬০২ ও ২৬০৩, অথবা অধ্যায় ৬, হাদীস নং ২৬০২ ও ২৬০৩) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১ - ১১২, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৬১২ ও ২৬১৩)]
আরাফার দিন হচ্ছে সেটাই যেদিন হাজীগন আরাফার মাঠে থাকেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে আরাফার দিন দুটি হয়ে যায় অথচ আরাফার দিন একটাই।
(৬) চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী নিশ্চিতভাবে সঠিক স্হায়ী সীমানা নির্ধারন করা যায়না। কারন উদয় স্থল সর্বদা একই রকম থাকেনা। যে কোন বছরে যে কোন মাসের চাঁদ পৃথিবীতে প্রথম উদিত হলে যে এলাকাসমূহ তার আওতাভূক্ত থাকে তার সীমানা প্রতিমাসে একরকম থাকেনা, প্রতি বছরেও একরকম হয়না। তারপরেও যদি চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতার ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার সীমানা নির্ধারন করে একই দিনে সেই সীমানার এক পাশে রোযা অন্য পাশে ঈদ হয়, তবে সেই সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ কি রোযা করবে নাকি ঈদ করবে এর কোন সমাধান পাওয়া যায়না।
(৭) চাঁদ দেখার সংবাদ যদি নিকটবর্তি এলাকায় গ্রহণ করা হয় আর দূরবর্তি এলাকায় গ্রহণ না করা হয় তাহলে যে এলাকাকে সর্বশেষ নিকটবর্তি এলাকা মনে করে সংবাদ গ্রহণ করা হচ্ছে আর তার একেবারে পাশের এলাকাকেও দূরবর্তি মনে করে সংবাদ গ্রহন করা হচ্ছে না, এই দুই এলাকার সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ সংবাদ গ্রহণ করবে কিনা এর কোন সমাধান পাওয়া যায়না।
(৮) “চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ সর্বোচ্চ কতদূরত্বের মধ্য থেকে আসলে তা গ্রহনযোগ্য হবে” অথবা “সর্বনিম্ন কতটুকু দূরত্বের বাইরের চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ গ্রহনযোগ্য হবে না” তার নির্ধারিত কোন পরিমান কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীসে পাওয়া যায় কি??? (এই দূরত্বের সঠিক পরিমানের কথা উল্লেখ আছে এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অধম লেখকের ক্ষুদ্রতম জ্ঞানে জানা নাই। সম্মানিত পাঠক, এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস পেলে, অধম লেখককে জানানোর বিনীত অনুরোধ রইল।)
(৯) হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা শুরু বা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ মুসলিমরা কেন করবে? দেশে দেশে এই সীমান্ত তো মানুষের তৈরী, আল্লাহর দেয়া নয়, তাহলে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার অনুযায়ী কেন মুসলিমরা ভিন্ন ভিন্ন বারেরোযা শুরু করবে, আর কেনইবা ভিন্ন ভিন্ন বারে ঈদ করবে?? আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একেবারে পাশাপাশি এবং একটাই মুসলিম ভূমি। অথচ আফগানিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী যেদিন ঈদুল ফিতর হয়, সাধারনত পাকিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী তার পরদিন ঈদুল ফিতর হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একটাই মুসলিম ভূমি হওয়া স্বত্তেও হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখার কারনে সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী আফগানিস্তানে যেদিন ঈদুল ফিতর হচ্ছে পাকিস্তানে সেদিন রোজা হচ্ছে। অথচ ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম কি আশ্চর্য্য! একই ভূমিতে একই মুসলিম জাতি একই দিনে সরকারী ঘোষনা মানতে গিয়ে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার বা সীমান্ত অনুযায়ী সীমান্তের এক পাশে ঈদ আর অন্য পাশে রোজা করতে বাধ্য হচ্ছে!! হায়রে মুসলিমদের অবস্হা!! পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম একই জাতি হওয়াস্বত্তেও ব্রিটিশের ভাগ করা সীমান্ত, আলাদা আলাদা হারাম জাতিয়তাবাদী পতাকা, হারাম জাতিয়তাবাদী দালাল সরকার এইসবের কারনে ৫৭ টুকরায় বিভক্ত হয়ে আছে, এমনকি রোযা ঈদ পর্যন্তও এগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে!! বৃটিশরা দাগ টেনেছে মাটিতে, আর কিছু মুসলিম সেই দাগ আকাশেও টেনে বলছে, আমার দাগের ভিতরে চাঁদ আসলে এটা আমার চাঁদ, তোমার দাগের ভিতরে আসলে তোমার চাঁদ! কি ভয়ংকর জাতিয়তাবাদ!!
রাসূল (সঃ) বলেন, “সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে জাতিয়তাবাদের দিকে আহবান করে, জাতিয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে বা জাতিয়তাবাদের জন্য মারা যায়” [(আবু দাউদ)]
রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “যে আসাবিয়্যার (অর্থাৎ জাতীয়তাবাদের) জাহেলী আহবানের দিকে মানুষকে ডাকে সে যেন তার পিতার লজ্জাস্হান কামড়ে ধরে পড়ে আছে (তাকে ছাড়তে চাইছে না) । (এরপর রাসূল সাঃ বলেন) এবং একথাটি লুকিয়ে রেখোনা (অর্থাৎ বলার ক্ষেত্রে কোনো লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করোনা)”। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১২৩৩]
সুতরাং কোনো জাতি রাষ্ট্রের সীমানা অনুযায়ী মুসলিম উম্মত বিভক্ত হওয়া হারাম। শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই এবং তাদের ভূমিগুলো একই ভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়।
ভাই, মানব রচিত কুফর সংবিধানে পরিচালিত রাষ্ট্রে কাকে অনুসরণ করব??? রা্ষ্ট্রকে নাকি কুরআন হাদীসকে???
জবাব: এই প্রশ্নের জবাবটি পুরোপুরি ভৌগলিক জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এ প্রশ্নের জবাব জানার পূর্বে ভৌগলিক কিছু ধারণা অর্জন একান্তই দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা প্রয়োজন, প্রতি চান্দ্র মাসের নতুন চাঁদ সকল সময় পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে দৃষ্টি গোচর হবে? না কি বিভিন্ন মাসের চাঁদ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেখো যাবে?
নুতন চাঁদ পৃথিবীর কোন অঞ্চলে সর্বপ্রথম দেখা যাবে আমাদেরকে সর্বাগ্রে সে ব্যাপারে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ বিষয়ে ভৌগলিক গবেষণার ফলাফল হলো প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সব সময়ই সর্বপ্রথম মধ্য প্রাচ্যের কোন না কোন দেশে দৃষ্টিগোচর হবে। কারণ চান্দ্র মাসের প্রথম দিনে চাঁদ এবং সূর্য প্রায় একই সময়ে পূর্ব দিগন্তে (জাপানে) উদিত হয়। এবং উদয় স্থলের পূর্ণ বিপরীত মেরুতে (দক্ষিণ-পশ্চিম আটলান্টিকে) সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রায় ৪৯ মিনিট পরে চাঁদ অস্ত যায়। অর্থাৎ সর্ব পশ্চিম দিগন্তে প্রথম তারিখের চাঁদ সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও প্রায় ৪৯ মিনিট আকাশে থাকে। এ সময় সূর্যাস্তের পর দিগন্তে চাঁদের যে কিঞ্চিত অংশটুকু সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয় তাকেই আমরা নুতন চাঁদ হিসেবে দেখি। প্রথম দিনের চাঁদ সূর্যের ৪৯ মিনিট পরে অস্ত যায় বলেই ২য় দিনের চাঁদ সূর্য উদয়ের ৪৯ মিনিট বিলম্বে পূর্বাকাশে উদিত হয়। কারণ আকাশের যে দিগন্ত রেখা আটলান্টিকের জন্য অস্তস্থল, আবার সে দিগন্ত রেখাই জাপানের জন্য উদয়স্থল। এভাবে প্রতি দিনই উদয়ের বিলম্বতায় ৪৯ মিনিট করে যুক্ত হতে থাকে। একারণেই ২৯ দিনে চাঁদকে ২৯টি স্থানে উদয় হতে দেখা যায়। আবার সাড়ে ২৯ দিন পরে চাঁদ ২৪ ঘন্টা ঘুরে এসে পরবর্তী চন্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার নুতন করে সূর্যের সঙ্গে প্রায় একই সময় উদিত হয়। গবেষণালব্ধ আলোচিত তথ্যগুলোকে সঠিক প্রমাণিত করছে এ হিসেবটি।
প্রতি দিনের চাঁদ উদয়ে বিলম্ব ঘটে ৪৯ মিনিট। প্রতি চান্দ্র মাসের পরিধি হচ্ছে সাড়ে ২৯ দিন ৬০ মিনিট = ১ ঘন্টা। সুতরাং (৪৯ X ২৯১/২ দিন / ৬০ মিনিট) = ২৪ ঘন্টা। এভাবেই প্রতি সাড়ে ২৯ দিনে চাঁদ ২৪ ঘন্টা সময় অতিক্রম করে পরবর্তী চান্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার পূর্বের স্থানে সূর্য উদয়ের সমান সময়ে উদিত হয়।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, জাপান ও আটলান্টিকের মধ্যকার ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সূর্য ও চাঁদ অস্ত যাওয়ার মধ্যে ব্যবধান হয় ৪৯ মিনিট।
ভৌগলিক ভাবে প্রমাণিত যে, গ্রীনিচমান সময়ের (GMT) দিক থেকে পৃথিবীর সর্ব প্রথম সূর্য উদয়ের দেশ জাপান। যার ভৌগলিক অবস্থান ১৪২ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ৩৭.৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ। এ উদয় স্থল হিসেবে পূর্ণ বিপরীত মেরুর অস্তস্থল হল দক্ষিণ পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর। যার ভৌগলিক অবস্থান ৩৮ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ এবং ৩৭.৫ দক্ষিণ অক্ষাংশ। এ উদয় ও অস্ত স্থলের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১২ ঘন্টা এবং অবস্থানগত দূরত্ব ১৮০ ডিগ্রী। কারণ প্রতি ১ ডিগ্রীতে সময়ের ব্যবধান ৪ মিনিট।
চান্দ্র মাসের ১ তারিখে চাঁদ ও সূর্য প্রায় একই সময়ে জাপানে উদিত হয়ে ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করে সন্ধ্যায় সূর্য যখন আটলান্টিকে অস্ত যায়, চাঁদ তার পরেও আটলান্টিকের আকাশে থাকে প্রায় ৪৯ মিনিট। ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে যদি সূর্য ও চাঁদের অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয় ৪৯ মিনিট তাহলে এর অর্ধেক পথ অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সূর্য ও চাঁদের অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হবে সাড়ে ২৪ মিনিট। মধ্য প্রাচ্যের (ইয়েমেন, রিয়াদ ও বাগদাদ) অবস্থান ৪৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে হওয়ায় উদয় স্থল জাপান ও অস্ত স্থল আটলান্টিকের সঙ্গে মধ্য প্রাচ্যের ভৌগলিক অবস্থানের ব্যবধান ৯০ ডিগ্রী। যে কারণে মধ্য প্রাচ্যে যখন সূর্যাস্ত হয় তার পরেও চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ মধ্য প্রাচ্যের আকাশে থাকে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সকল সময়ে সর্বপ্রথম মধ্য প্রাচ্যেই দৃষ্টি গোচর হবে। এবং ক্রমান্বয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ সমূহে সূর্যাস্তের পরে চাঁদের স্থায়িত্ব আকাশে বেশি সময় থাকবে। যার ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখে ঐ সকল পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশে চাঁদ ক্রমান্বয়ে বেশী সময় ধরে দেখা যাবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহ ক্রমান্বয়ে উদয় স্থলের নিকটবর্তী হওয়ায় সূর্যাস্তের পরে এখানকার আকাশে ১ তারিখের চাঁদের স্থায়িত্ব কম সময় থাকে এবং চাঁদ দিগন্তে আকাশে কম উঁচুতে থাকে বলেই উদয়স্থলের নিকটবর্তী দেশ সমূহ পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, চীন বা জাপানে কখনই চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ দেখা যাবে না।
উল্লেখিত ভৌগলিক গবেষণার আলোচনায় প্রমাণিত যে, প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সব সময় সর্বপ্রথম মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে দেখা যাবে।
আর তারপরেও যদি অন্য কোথাও চাঁদ দেখা যায় অর্থাৎ বিশ্বের যেখানেই আগে চাঁদ দেখা যাক না কেন সেই অনুযায়ী সারা বিশ্ব বাসীকে একই বারে/দিনে আমল করতে হবে, যা আমরা আগে আলোচনা করেছি।
যেহেতু প্রমাণিত যে, নুতন চাঁদ সকল সময়ই মধ্য প্রাচ্যের যে কোন দেশে সর্ব প্রথম দৃষ্টি গোচর হবে। তাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী সময়ের দেশ জাপানবাসীর জন্য ১ম তারিখের রোযা রাখার সম্ভাব্যতা সর্বাধিক প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিন্তু গবেষণায় সুপ্রমাণিত যে, ঐ দিন জাপানবাসীর জন্যও রোযা রাখা সম্ভব। যেমন বছরের সবচেয়ে ছোট রাত জুলাই মাসকেও যদি আলোচনায় আনা হয় তবে দেখা যাবে, জুলাই মাসে সর্ব শেষ সূর্যাস্ত হয় ৬টা ৫৫ মিনিটে। তাহলে মধ্য প্রাচ্যে সূর্যাস্তের পর পর সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখা গেল। ঐ সময় পৃথিবীর সর্বপূর্ব স্থান জাপানে রাত ১টা ২৮ মিনিট। কারণ মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানের মধ্যে অবস্থানগত দূরত্ব ৯৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। ফলে স্থানীয় সময় মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের চেয়ে ৬ঘন্টা ২৮মিনিট অগ্রগামী। তাহলে ফলাফল দাড়াল মধ্য প্রাচ্যে সন্ধ্যা ৭টায় চাঁদ দেখা গেলে জাপানে সে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছতেছে রাত ১টা ২৮ মিনিটে। অথচ জুলাই মাসে সাহরী খাওয়ার সর্বনিম্ন সময় হলো ৩টা ৪৩ মিনিট। তাহলে জাপানবাসী চাঁদ উদয়ে সংবাদ পাওয়ার পরেও রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্য সময় পাচ্ছেন প্রায় ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট। যা সাহরীর জন্য কোন বিবেচনায়-ই অপ্রতুল নয়। উপরন্ত ঐ সময়ের মধ্যে তারাবীর নামায আদায় করাও সম্ভব। আর পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের জন্য আমল করা কোন ভাবেই কষ্টকর নয়। কারণ যত পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের দিকে আসা হবে তারা চাঁদ উদয়ের সংবাদের পরে সাহরী খাওয়ার জন্য ততবেশী সময় পাবে।
(২) যদি প্রশ্ন করা হয়, আমরা বাংলাদেশে যখন ইফতার করি তখন আমেরিকায় ভোর, আবার আমরা যখন সাহরী খাই তখন আমেরিকায় বিকাল, তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে একই দিনে আমল করা কি করে সম্ভব?
জবাব: অত্র পশ্নের উত্তর বুঝার জন্য দু’টি মৌলিক বিষয় গভীর ভাবে স্মরণ রাখতে হবে। এক: চাঁদের তারিখ সংশ্লিষ্ট আমলগুলো সমগ্র পৃথিবীতে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবেনা। বরং একই দিনে (অর্থাৎ শুক্র, শনি, রবি----------বুধ বা বৃহস্পতিবারে) এবং একই তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। দুই: যেহেতু সব সময়েই মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখা যাবে তাই চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যে কোন দেশের সময়ের হিসেব মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের সময়ের সঙ্গে নয়।
তাহলে মনে করা যাক, বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র রমযানের চাঁদ দেখা গেল এবং প্রমাণিত হল শুক্রবার পহেলা রমযান। এখন সমগ্র বিশ্বে পহেলা রমযান হিসেবে শুক্রবারে প্রথম রোযা রাখা যায় কিনা এটাই মূল বিবেচনার বিষয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় যখন মধ্য প্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেল তখন ঐ চাঁদ দেখার সংবাদ ১৪২ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত সর্বপ্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে পৌঁছবে জাপানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২৮মিনিটে। অথচ সাহরীর সর্বশেষ সময় সীমা কখনই ৩টা ৪৩মিনিটের নিম্নে আসেনা। তাহলে জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে শুক্রবারে রোযা রাখার জন্য সাহরী খেতে সময় পাচ্ছেন (৩:৪৩মিঃ - ১:২৮মিঃ) ২ঘন্টা ১৫মিনিট। এমনিভাবে ১২০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমবা, ফ্লোরেস, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের শেংইয়াং, হাইলার, ইনহো, রাশিয়ার টালুমা, খরিনটস্কি, সুখানা এবং অলিনেক অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায়। ফলে বছরের সব চেয়ে ছোট রাতেও চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার পহেলা রমযানের রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্যে তারা সময় পাবে ৩ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। অতএব তাদের জন্যে শুক্রবার রোযা রাখা সম্ভব। এরপরে ১০৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ তেলাকবেটং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীনের ইপিং, চেংটু, মোঙ্গলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্য সাইবেরিয়ান অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৪ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। তারপরে ৯০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, চীনের লাসা, টুরপান, ফাইয়ুন, রাশিয়ার আবাজা অচিনিস্ক, নগিনস্কি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৫ ঘন্টা ৪৩ মিনিট এভাবে ৭৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ ভারতের দিল্লী, কাশ্মীর, কিরগিজিয়া, পূর্বপাকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐরাত ৯টায় এবং ৬০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ পাকিস্তানের করাচী, আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ওখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত পূর্ব গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম রোযা বা পহেলা রমযানের রোযা রাখা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ৪৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রমযানের চাঁদ দেখা গেল তখন ৩০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান, জিম্বাবুই, জাম্বিয়ার বেলা, তানজানিয়ার বরুনডি, সুদান, মিসর, তুরস্কের বুরসা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লেলিন গ্রাদ ইত্যাদি অঞ্চলে উক্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায়। ফলে চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ লা রমযানের প্রথম রোযা রাখতে তারা সময় পাবেন ৯ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। এমনি ভাবে ১৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। ০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ টগো, মালি, আলজেরিয়ার রেগান, ওরান, স্পেনের ভ্যালেনসিয়া, ফ্রান্সের বদৌস ও প্যারিস এবং লন্ডন অঞ্চল সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়। আরো পশ্চিমে ১৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সেনেগাল, মৌরতানিয়ার নৌয়াকচট, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব আইসল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায়। এমনি করে ৩০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ২টায়, ৪৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ১টায়, ৬০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে পূর্ব আর্জেটিনায়, প্যারাগুয়ে, মধ্য ব্রাজিলে, পূর্ব ভেনিজুয়েলায়, পূর্ব কানাডায় এবং পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়। এমনি করে ৭৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১১টায়। ৯০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১০টায়। ১০৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ সমূহ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের আলবুক্য়ার্ক, ডেনভার, সিয়েন, মাইলস্ সিটি এবং মধ্য কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে এসব অঞ্চলের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। এমনি ভাবে সর্বশেষ ১৮০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায়। এবং উল্লেখিত সকল দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ সমূহের অধিবাসীরা জানবে যে, মধ্য প্রাচ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখার কারণে পহেলা রমযান হচ্ছে শুক্রবার।
অতএব মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশগুলো যথাক্রমে বৃহস্পতিবার দিনের অংশ ও পূর্ণদিন অতিক্রমের পরে স্থানীয় ভাবে যে দেশে যখন শুক্রবার শুরু হবে সে দেশে তখন শুক্রবারে পহেলা রমজানের প্রথম রোযা পালন করবে। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পশ্চিম গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম রোযা বা পহেলা রমজানের রোযা করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
উল্লেখিত আলোচনার সারকথা হলো শুক্রবার দিবসটি জাপানে শুরু হবে মধ্যে প্রাচ্যের ৬ঘন্টা ২৮মিনিট পূর্বে এবং পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের ১৫ঘন্টা পরে। কিন্তু দিন একটিই তাহল শুক্রবার। তবে উভয় স্থানে দিন ও তারিখ হবে অভিন্ন। অতএব জাপানে শুক্রবারের রোযা শুরু হবে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ঘন্টা পূর্বে। আবার পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে রোযা শুরু হবে জাপানের স্থানীয় সময়ের ২৩ঘন্টা পরে। যেমন আমাদের বাংলাদেশে আমরা রোযা রাখলাম শুক্রবার। কিন্তু পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সাহরীর শেষ সময় যদি হয় ৪টা ৩০মিনিট, তবে রাজশাহীতে সাহরীর শেষ সময় হবে আরো ১৩ মিনিট পরে অর্থাৎ ৪টা ৫৩ মিনিট। তাহলে বাংলাদেশে শুক্রবারের রোযা পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হল ১৩ মিনিট পূর্বে এবং রাজশাহীতে শুরু হল ১৩ মিনিট পরে। ঠিক তেমনি সমগ্র পৃথিবীতে রোযা শুরু ও শেষ হওয়ার সময় স্থানীয় সময় অনুপাতে আগ-পিছ হলেও রমজান মাসের রোযা শুরুর দিনের বার ও তারিখ হবে সারা পৃথিবীতে অভিন্ন বা একই। অতএব সমগ্র পৃথিবীতে একই বার ও তারিখে রমজান মাসের প্রথম রোযা শুরু করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার আসুন ঈদুল ফিতরের হিসাব করি। ঠিক একই ভাবে, মনে করা যাক, বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র ঈদের চাঁদ দেখা গেল এবং প্রমাণিত হল শুক্রবার ঈদ। এখন সমগ্র বিশ্বে পহেলা শাওয়াল হিসেবে শুক্রবারে ঈদ করা যায় কিনা এটাই মূল বিবেচনার বিষয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় যখন মধ্য প্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেল তখন ঐ চাঁদ দেখার সংবাদ ১৪২ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত সর্বপ্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে পৌঁছবে জাপানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২৮মিনিটে। তাহলে জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে শুক্রবারে ঈদ করবে।
এমনিভাবে ১২০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমবা, ফ্লোরেস, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের শেংইয়াং, হাইলার, ইনহো, রাশিয়ার টালুমা, খরিনটস্কি, সুখানা এবং অলিনেক অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায়। ফলে বছরের সব চেয়ে ছোট রাতেও চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ঈদ করতে পারবে। অতএব তাদের জন্যে শুক্রবার ঈদ করা সম্ভব। এরপরে ১০৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ তেলাকবেটং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীনের ইপিং, চেংটু, মোঙ্গলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্য সাইবেরিয়ান অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টায়। তারপরে ৯০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, চীনের লাসা, টুরপান, ফাইয়ুন, রাশিয়ার আবাজা অচিনিস্ক, নগিনস্কি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টায়। এভাবে ৭৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ ভারতের দিল্লী, কাশ্মীর, কিরগিজিয়া, পূর্বপাকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐরাত ৯টায় এবং ৬০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ পাকিস্তানের করাচী, আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ওখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত পূর্ব গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার পহেলা শাওয়াল ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ৪৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঈদের চাঁদ দেখা গেল তখন ৩০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান, জিম্বাবুই, জাম্বিয়ার বেলা, তানজানিয়ার বরুনডি, সুদান, মিসর, তুরস্কের বুরসা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লেলিন গ্রাদ ইত্যাদি অঞ্চলে উক্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায়। ফলে চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ লা শাওয়াল ঈদ করবেন । এমনি ভাবে ১৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। ০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ টগো, মালি, আলজেরিয়ার রেগান, ওরান, স্পেনের ভ্যালেনসিয়া, ফ্রান্সের বদৌস ও প্যারিস এবং লন্ডন অঞ্চল সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়। আরো পশ্চিমে ১৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সেনেগাল, মৌরতানিয়ার নৌয়াকচট, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব আইসল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায়। এমনি করে ৩০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ২টায়, ৪৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ১টায়, ৬০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে পূর্ব আর্জেটিনায়, প্যারাগুয়ে, মধ্য ব্রাজিলে, পূর্ব ভেনিজুয়েলায়, পূর্ব কানাডায় এবং পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়। এমনি করে ৭৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১১টায়। ৯০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১০টায়। ১০৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ সমূহ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের আলবুক্য়ার্ক, ডেনভার, সিয়েন, মাইলস্ সিটি এবং মধ্য কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে এসব অঞ্চলের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। এমনি ভাবে সর্বশেষ ১৮০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায়। এবং উল্লেখিত সকল দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ সমূহের অধিবাসীরা জানবে যে, মধ্য প্রাচ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখার কারণে পহেলা শাওয়াল ঈদ হচ্ছে শুক্রবার।
অতএব মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশগুলো যথাক্রমে বৃহস্পতিবার দিনের অংশ ও পূর্ণদিন অতিক্রমের পরে স্থানীয় ভাবে যে দেশে যখন শুক্রবার শুরু হবে সে দেশে তখন শুক্রবারে পহেলা শাওয়াল ঈদ পালন করবে। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পশ্চিম গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার পহেলা শাওয়াল ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
উল্লেখিত আলোচনার সারকথা হলো শুক্রবার দিবসটি জাপানে শুরু হবে মধ্যে প্রাচ্যের ৬ঘন্টা ২৮মিনিট পূর্বে এবং পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের ১৫ঘন্টা পরে। কিন্তু দিন একটিই তাহল শুক্রবার। তবে উভয় স্থানে দিন ও তারিখ হবে অভিন্ন। অতএব জাপানে শুক্রবারের ঈদ শুরু হবে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ঘন্টা পূর্বে। আবার পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ শুরু হবে জাপানের স্থানীয় সময়ের ২৩ঘন্টা পরে। সমগ্র পৃথিবীতে ঈদ শুরু ও শেষ হওয়ার সময় স্থানীয় সময় অনুপাতে আগ-পিছ হলেও ঈদের দিনের বার ও তারিখ হবে সারা পৃথিবীতে একই। অতএব সমগ্র পৃথিবীতে একই বার ও তারিখে ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
কারন চাঁদ অনুযায়ী কখনোই সময়(ঘন্টা,মিনিট, সেকেন্ড)নির্ধারিত হয়না।
চাঁদ অনুযায়ী আরবী মাস শুরু হয়। চাঁদ অনুযায়ী শাবান মাস, রমজান মাস, শাওয়াল মাস এইসব মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারিত হয়। কিন্তু সাহরীর সময়, ইফতারির সময় চাঁদ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়না। আবার, সূর্য অনুযায়ী কখনোই আরবী মাস শুরু হয়না। রমজানের প্রথম তারিখ যেমন সূর্য অনুযায়ী হয়না, ঈদও সূর্য অনুযায়ী হয়না।
একটি প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে, "সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজের ওয়াক্ত হয়না তাহলে একই দিনে রমজান মাস শুরু হবে কিভাবে?"
এই প্রশ্নে দুটি দিক রয়েছে।
(১) “একই সময়ে” আর “একই দিনে” এর তুলনা করা হয়েছে।
(২) নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা করা হয়েছে
নিম্নে এ দুইটি বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
একই সময়ে আর একই দিনে কথাটির পার্থক্য
এখানে “একই সময়” আর “একই দিনে” কথাটির পার্থক্য বুঝতে হবে। “একই সময়” অর্থ একইসেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা । আর “একই দিনে” অর্থ “একই বারে” যেমন শনিবার, রবিবার, সোমবার। আমরা কখনোই বলিনি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই সময়ে” রাখতে হবে । আমরা বলেছি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে নামাজ যেমন “একই সময়ে” (সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা) পড়া যায়না, সারা পৃথিবীতে রোজাও তেমনি “একই সময়ে” রাখা যাবে না।
কিন্তু সারা পৃথিবীতে নামাজ “একই দিনে” পড়তে হয়। যেমন জুম্মার নামাজ সারা পৃথিবীতে একই দিনে (শুক্রবারে) পড়তে হয়। ঠিক তেমনিভাবে সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজ পড়া যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে রোজা রাখা যায়না বা সাহরী করা যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে ইফতার করা যায়না
কিন্তু
সারা পৃথিবীতে
একই দিনে নামাজ পড়তে হয় যেমন জুম্মার নামাজ শুক্রবারে পড়তে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে রোজা রাখতে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে ঈদ করতে হয়
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্ত যেমন একই সময়ে হয়না, সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তও একই সময়ে হয়না।
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্তের বা সময়ের পার্থক্য বজায় রেখেই জুম্মার নামাজ যেমন একই দিনে আদায় করতে হয় তেমনি সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তের পার্থক্য বজায় রেখেই ঈদের নামাজ ও একই দিনে বা বারে (যেমন শুক্র শনি রবি -----বৃহঃ) আদায় করতে হবে।
নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা সঠিক নয়
নামাজের ওয়াক্ত, সাহরী এবং ইফতার সূর্যের সাথে সম্পর্কিত, চাঁদের সাথে নয়। যেমন ইফতার করতে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। একইভাবে মাগরিব পড়তে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। জুম্মার ওয়াক্ত যেমন সূর্য অনুযায়ী হয় ঈদের নামাজের ওয়াক্তও তেমনি সূর্য অনুযায়ী হয়। সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত চাঁদ অনুযায়ী হয়না, চাঁদের সাথে এগুলির আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত হয় সূর্য অনুযায়ী।
কিন্তু প্রতি আরবী মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারিত হয় চাঁদ অনুযায়ী। রমজান মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারণ সূর্য উঠার দ্বারা হয় না বরং রমজানের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। তেমনি শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ বা ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ ও সূর্য উঠার দ্বারা হয়না বরং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। রমজান মাস কবে থেকে শুরু হবে তার সাথে সূর্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং রমজান মাস শুরু হওয়া চাঁদের সাথে সম্পর্কিত, ঈদ হওয়াটাও চাঁদের সাথে সম্পর্কিত ।
কাজেই সূর্যের সাথে সম্পর্কিত নামাজের ওয়াক্ত আর চাঁদের সাথে সম্পর্কিত রমজান মাস শুরু হওয়া এই দুইটির তুলনা যুক্তিযুক্ত নয়। সূর্য ও চাঁদের হিসাব আলাদা
২। লাইলাতুল কদর: মহিমান্বিত এ রাতে কুরআন নাজিল হয়। তাই লাইলাতুল কদর পেতে হলে কুরআন নাজিলের রাতকে খোঁজ করা দরকার। এর সাথে সম্পর্কিত রয়েছে নাজিলের স্থান। তাছাড়া সেই মহিমান্বিত রজনীতে জিব্রাইল (আঃ) অবতীর্ণ হয়ে রহমত মেলে ধরবেন বলে জানা যায়। জিব্রাইল (আঃ) তো অবতীর্ণ হবেন কেবল এক রাতে। সেই রাতটি সমগ্র দুনিয়ার জন্যই প্রযোজ্য। এক এক দেশের আলাদা আলাদা রাতে নয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, রমযানের শেষ দশ তারিখের বেজোড় রাতসমুহে লাইলাতুল কদরকে তালাশ কর [সূত্রঃ সহিহ আল বুখারী ২/২৮৪ হাদিস নং ১৮৭৪]। হাদিস মোতাবেক রমযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে সেই লাইলাতুল কদর তালাশ করতে কোন হিসেব গন্য হবে? কেননা রাষ্ট্রীয় সীমানায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে প্রায় বছরই যখন মক্কায় জোড় রাত তখন বাংলাদেশে বেজোড় রাত তালাশ করা হয়।
৩। ঈদ: ঈদের দিনে রোজা রাখা হারাম। হযরত আবু উবাইদা (রাঃ) বলেন, আমি হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে ঈদের নামাজ আদায় করেছি। তিনি বলছেন, এ দুই দিনের রোজা রাখা থেকে নবী (সাঃ) নিষেধ করেছেন। প্রথম দিন হলো, যখন তোমরা রোযা শেষ কর, আর দ্বিতীয় দিন হলো, যখন তোমরা কোরবানীর গোস্ত খাবে [সহিহ আল বুখারী ২/২৭২ হাদিস নং ১৮৫১]। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্নীত, রাসুল (সাঃ)রোজার ঈদের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন [সূত্র: সহীহ সহীহ বুখারী ৩য় খন্ড/১৮৬৭, ১৮৬৮ ও সহীহ মুসলিম ৩য় খন্ড/২৫৩৭-২৫৪২]। রাষ্ট্রীয় সীমানার বিবেচনায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে যখন মক্কায় ঈদ তখন বাংলাদেশে রোজা। শুধু পশ্চিমের মক্কায় কেন আমাদের পূর্ব দিকের দেশ জাপান, ইন্দোনেসিয়া ইত্যাদি দেশের মানুষ ঐদিন ঈদ পালন করছে। তখন আমরা রোজা রেখে হারাম কাজ করছি কিনা তা নিখুতভাবে নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহ রহমানুর রাহিম বিধায় আমাদেরকে মাফ করে দিতে পরেন। তারপরও ভয়তো ঠিকই থেকে যায়।
৪। হজ্ব: হিজরী ৯ই জিলহজ্ব সারা দুনিয়া থেকে মুসলমানরা এসে আরফাত ময়দানে হাজির হন। এদিনে রোজা রাখার গুরুত্ব ও সওয়াব অনেক। কিন্তু বাংলাদেশের ৯ই জিলহজ্ব আরফাত ময়দানে কেউ অবস্থান করে না। কেননা মক্কার হিসেবে সেদিন ১০ই জিলহজ্ব। ঐ তারিখে আমরা রোজা রেখে আসলে কাদের সাথে একাত্মতা করছি? তাছাড়া মীনার দিবস অর্থ্যাৎ ০৮ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত সমগ্র দুনিয়ার মুমিনগন তাকবীরে তাসরীক (আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু-আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ) পাঠ করে থাকেন। রাষ্ট্রীয় বিবেচনায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করার ফলে তা হতেও বঞ্চিত হন অনেক মুমিন।
৫। আশুরা: ঐতিহাসিকভাবে এ দিবসে আল্লাহর কুদরতের হাজার নিদর্শন রয়েছে। যেমন, মুসা (আঃ) লোহিত সাগর পাড় হন, নুহ (আঃ) এর নৌকা মহাপ্লাবন শেষে পাহাড়ে মাটির নাগাল পায়, ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে বের হন, ইউসুফ (আঃ) কুয়ার ভেতর থেকে উদ্ধার হন। হযরত আবু কাতাদাহ থেকে বর্নীত, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, আরাফার রোযা আগের পরের দু’বৎসরের গুনাহ মাফ করে দেয় এবং আশুরার রোযা বিগত এক বৎসরের গুনাহ সমুহ ক্ষমা করে দেয় [আহমাদ, আবুদাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, মুসলিম শরীফ]। সেজন্য আশুরার রোজা রাখার ব্যাপারে যথেষ্ট তগিদ রয়েছে। কিস্তু রাষ্ট্রীয় হিজরী ক্যালেন্ডারের কারনে তা হারিয়ে ফেলি। আশুরার রোজা রাখি ভিন্ন দিনে।
৬। কিয়ামতঃ হাদীস থেকে যতদুর জানা যায় কিয়ামত হতে পারে মহররম মাসের ১০ তারিখ। রাষ্ট্রীয় সীমানার হিজরী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ তারিখটিও বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে আসবে। তাহলে কী এক এক দেশে কিয়ামত এক এক দিন হবে?
এই প্রশ্নে দুটি দিক রয়েছে।
(১) “একই সময়ে” আর “একই দিনে” এর তুলনা করা হয়েছে।
(২) নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা করা হয়েছে
নিম্নে এ দুইটি বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
একই সময়ে আর একই দিনে কথাটির পার্থক্য
এখানে “একই সময়” আর “একই দিনে” কথাটির পার্থক্য বুঝতে হবে। “একই সময়” অর্থ একইসেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা । আর “একই দিনে” অর্থ “একই বারে” যেমন শনিবার, রবিবার, সোমবার। আমরা কখনোই বলিনি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই সময়ে” রাখতে হবে । আমরা বলেছি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে নামাজ যেমন “একই সময়ে” (সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা) পড়া যায়না, সারা পৃথিবীতে রোজাও তেমনি “একই সময়ে” রাখা যাবে না।
কিন্তু সারা পৃথিবীতে নামাজ “একই দিনে” পড়তে হয়। যেমন জুম্মার নামাজ সারা পৃথিবীতে একই দিনে (শুক্রবারে) পড়তে হয়। ঠিক তেমনিভাবে সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজ পড়া যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে রোজা রাখা যায়না বা সাহরী করা যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে ইফতার করা যায়না
কিন্তু
সারা পৃথিবীতে
একই দিনে নামাজ পড়তে হয় যেমন জুম্মার নামাজ শুক্রবারে পড়তে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে রোজা রাখতে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে ঈদ করতে হয়
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্ত যেমন একই সময়ে হয়না, সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তও একই সময়ে হয়না।
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্তের বা সময়ের পার্থক্য বজায় রেখেই জুম্মার নামাজ যেমন একই দিনে আদায় করতে হয় তেমনি সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তের পার্থক্য বজায় রেখেই ঈদের নামাজ ও একই দিনে বা বারে (যেমন শুক্র শনি রবি -----বৃহঃ) আদায় করতে হবে।
নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা সঠিক নয়
নামাজের ওয়াক্ত, সাহরী এবং ইফতার সূর্যের সাথে সম্পর্কিত, চাঁদের সাথে নয়। যেমন ইফতার করতে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। একইভাবে মাগরিব পড়তে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। জুম্মার ওয়াক্ত যেমন সূর্য অনুযায়ী হয় ঈদের নামাজের ওয়াক্তও তেমনি সূর্য অনুযায়ী হয়। সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত চাঁদ অনুযায়ী হয়না, চাঁদের সাথে এগুলির আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত হয় সূর্য অনুযায়ী।
কিন্তু প্রতি আরবী মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারিত হয় চাঁদ অনুযায়ী। রমজান মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারণ সূর্য উঠার দ্বারা হয় না বরং রমজানের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। তেমনি শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ বা ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ ও সূর্য উঠার দ্বারা হয়না বরং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। রমজান মাস কবে থেকে শুরু হবে তার সাথে সূর্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং রমজান মাস শুরু হওয়া চাঁদের সাথে সম্পর্কিত, ঈদ হওয়াটাও চাঁদের সাথে সম্পর্কিত ।
কাজেই সূর্যের সাথে সম্পর্কিত নামাজের ওয়াক্ত আর চাঁদের সাথে সম্পর্কিত রমজান মাস শুরু হওয়া এই দুইটির তুলনা যুক্তিযুক্ত নয়। সূর্য ও চাঁদের হিসাব আলাদা
এই প্রশ্নে দুটি দিক রয়েছে।
(১) “একই সময়ে” আর “একই দিনে” এর তুলনা করা হয়েছে।
(২) নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা করা হয়েছে
নিম্নে এ দুইটি বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
একই সময়ে আর একই দিনে কথাটির পার্থক্য
এখানে “একই সময়” আর “একই দিনে” কথাটির পার্থক্য বুঝতে হবে। “একই সময়” অর্থ একইসেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা । আর “একই দিনে” অর্থ “একই বারে” যেমন শনিবার, রবিবার, সোমবার। আমরা কখনোই বলিনি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই সময়ে” রাখতে হবে । আমরা বলেছি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে নামাজ যেমন “একই সময়ে” (সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা) পড়া যায়না, সারা পৃথিবীতে রোজাও তেমনি “একই সময়ে” রাখা যাবে না।
কিন্তু সারা পৃথিবীতে নামাজ “একই দিনে” পড়তে হয়। যেমন জুম্মার নামাজ সারা পৃথিবীতে একই দিনে (শুক্রবারে) পড়তে হয়। ঠিক তেমনিভাবে সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজ পড়া যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে রোজা রাখা যায়না বা সাহরী করা যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে ইফতার করা যায়না
কিন্তু
সারা পৃথিবীতে
একই দিনে নামাজ পড়তে হয় যেমন জুম্মার নামাজ শুক্রবারে পড়তে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে রোজা রাখতে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে ঈদ করতে হয়
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্ত যেমন একই সময়ে হয়না, সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তও একই সময়ে হয়না।
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্তের বা সময়ের পার্থক্য বজায় রেখেই জুম্মার নামাজ যেমন একই দিনে আদায় করতে হয় তেমনি সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তের পার্থক্য বজায় রেখেই ঈদের নামাজ ও একই দিনে বা বারে (যেমন শুক্র শনি রবি -----বৃহঃ) আদায় করতে হবে।
নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা সঠিক নয়
নামাজের ওয়াক্ত, সাহরী এবং ইফতার সূর্যের সাথে সম্পর্কিত, চাঁদের সাথে নয়। যেমন ইফতার করতে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। একইভাবে মাগরিব পড়তে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। জুম্মার ওয়াক্ত যেমন সূর্য অনুযায়ী হয় ঈদের নামাজের ওয়াক্তও তেমনি সূর্য অনুযায়ী হয়। সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত চাঁদ অনুযায়ী হয়না, চাঁদের সাথে এগুলির আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত হয় সূর্য অনুযায়ী।
কিন্তু প্রতি আরবী মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারিত হয় চাঁদ অনুযায়ী। রমজান মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারণ সূর্য উঠার দ্বারা হয় না বরং রমজানের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। তেমনি শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ বা ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ ও সূর্য উঠার দ্বারা হয়না বরং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। রমজান মাস কবে থেকে শুরু হবে তার সাথে সূর্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং রমজান মাস শুরু হওয়া চাঁদের সাথে সম্পর্কিত, ঈদ হওয়াটাও চাঁদের সাথে সম্পর্কিত ।
কাজেই সূর্যের সাথে সম্পর্কিত নামাজের ওয়াক্ত আর চাঁদের সাথে সম্পর্কিত রমজান মাস শুরু হওয়া এই দুইটির তুলনা যুক্তিযুক্ত নয়। সূর্য ও চাঁদের হিসাব আলাদা
পৃথিবী গোল হবার কারনে পৃথিবী সব দেশের সময় এক নয়, জাপানে যখন রাত হয় ঠিক তখন বাংলাদেশে দিন, দিন রাতের ব্যবধানটা মাথায় রাখা উচিত। যেমন নামাজের সময় আমরা যখন বাংলা দেশে ফজরের নামাজ পড়ি ঠিক তখন সৌদি আরবে রাত ২টা প্রায় ৩ঘন্টা সময়ের ব্যবধান!!
এতটুকু ব্যবধান নামাজের বেলায় মানা হলে রোজা এবং ঈদ নিয়ে বিতর্ক কেন?
মনে রাখতে হবে চাঁদের দিক নির্দেশনা হলো সময় নির্ধারন করা.... মাস-বছর গননার জন্য, সময় নির্ধারণের জন্য যেখানে চাঁদ সেখানে আপনি অন্য দেশের চাঁদ দেখার উপর ভর করে ঈদ করবেন কেন?
সূর্যও তেমনি সময়ও দিকনির্দেশনা দেয়। আমরা জানি সূর্য কখনো ডুবেনাহ্ পৃথিবী গুরার কারনে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আলো দেয়!
পৃথিবীর সব দেশের নামাজের সময় যেমন এক করা কখনোই সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি এক দেশে চাঁদ দেখে অন্য দেশে চাঁদের হিসেবে রোজা শুরু করা অথবা ঈদ করা মোটেও যুক্তিক নয়।
একটি দেশের ক্ষেত্রে হয়তো এই নিয়ম মানা যেতে পারে! যেমনঃ ঢাকায় চাঁদ দেখা গেল চট্টগ্রামে দেখা গেলো নাহ্! তখন হিসাব করা যেতে পারে রোজা শুরু করা ও ঈদ করা.... কারন ঢাকা চট্টগ্রাম সময়ের খুব বেশি ব্যবধান নয়।
সময়ের খুব বেশি ব্যবধান হলে আপন দেশের আকাশে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রোজা শুরু করা বা ঈদ করা যেতে পারে.....।
এই প্রশ্নে দুটি দিক রয়েছে।
(১) “একই সময়ে” আর “একই দিনে” এর তুলনা করা হয়েছে।
(২) নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা করা হয়েছে
নিম্নে এ দুইটি বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
একই সময়ে আর একই দিনে কথাটির পার্থক্য
এখানে “একই সময়” আর “একই দিনে” কথাটির পার্থক্য বুঝতে হবে। “একই সময়” অর্থ একইসেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা । আর “একই দিনে” অর্থ “একই বারে” যেমন শনিবার, রবিবার, সোমবার। আমরা কখনোই বলিনি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই সময়ে” রাখতে হবে । আমরা বলেছি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে নামাজ যেমন “একই সময়ে” (সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা) পড়া যায়না, সারা পৃথিবীতে রোজাও তেমনি “একই সময়ে” রাখা যাবে না।
কিন্তু সারা পৃথিবীতে নামাজ “একই দিনে” পড়তে হয়। যেমন জুম্মার নামাজ সারা পৃথিবীতে একই দিনে (শুক্রবারে) পড়তে হয়। ঠিক তেমনিভাবে সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজ পড়া যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে রোজা রাখা যায়না বা সাহরী করা যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে ইফতার করা যায়না
কিন্তু
সারা পৃথিবীতে
একই দিনে নামাজ পড়তে হয় যেমন জুম্মার নামাজ শুক্রবারে পড়তে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে রোজা রাখতে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে ঈদ করতে হয়
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্ত যেমন একই সময়ে হয়না, সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তও একই সময়ে হয়না।
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্তের বা সময়ের পার্থক্য বজায় রেখেই জুম্মার নামাজ যেমন একই দিনে আদায় করতে হয় তেমনি সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তের পার্থক্য বজায় রেখেই ঈদের নামাজ ও একই দিনে বা বারে (যেমন শুক্র শনি রবি -----বৃহঃ) আদায় করতে হবে।
নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা সঠিক নয়
নামাজের ওয়াক্ত, সাহরী এবং ইফতার সূর্যের সাথে সম্পর্কিত, চাঁদের সাথে নয়। যেমন ইফতার করতে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। একইভাবে মাগরিব পড়তে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। জুম্মার ওয়াক্ত যেমন সূর্য অনুযায়ী হয় ঈদের নামাজের ওয়াক্তও তেমনি সূর্য অনুযায়ী হয়। সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত চাঁদ অনুযায়ী হয়না, চাঁদের সাথে এগুলির আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত হয় সূর্য অনুযায়ী।
কিন্তু প্রতি আরবী মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারিত হয় চাঁদ অনুযায়ী। রমজান মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারণ সূর্য উঠার দ্বারা হয় না বরং রমজানের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। তেমনি শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ বা ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ ও সূর্য উঠার দ্বারা হয়না বরং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। রমজান মাস কবে থেকে শুরু হবে তার সাথে সূর্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং রমজান মাস শুরু হওয়া চাঁদের সাথে সম্পর্কিত, ঈদ হওয়াটাও চাঁদের সাথে সম্পর্কিত ।
কাজেই সূর্যের সাথে সম্পর্কিত নামাজের ওয়াক্ত আর চাঁদের সাথে সম্পর্কিত রমজান মাস শুরু হওয়া এই দুইটির তুলনা যুক্তিযুক্ত নয়। সূর্য ও চাঁদের হিসাব আলাদাএতটুকু ব্যবধান নামাজের বেলায় মানা হলে রোজা এবং ঈদ নিয়ে বিতর্ক কেন?#
একটি প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে, "সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজের ওয়াক্ত হয়না তাহলে একই দিনে রমজান মাস শুরু হবে কিভাবে?"
এই প্রশ্নে দুটি দিক রয়েছে।
(১) “একই সময়ে” আর “একই দিনে” এর তুলনা করা হয়েছে।
(২) নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা করা হয়েছে
নিম্নে এ দুইটি বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
একই সময়ে আর একই দিনে কথাটির পার্থক্য
এখানে “একই সময়” আর “একই দিনে” কথাটির পার্থক্য বুঝতে হবে। “একই সময়” অর্থ একইসেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা । আর “একই দিনে” অর্থ “একই বারে” যেমন শনিবার, রবিবার, সোমবার। আমরা কখনোই বলিনি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই সময়ে” রাখতে হবে । আমরা বলেছি সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে নামাজ যেমন “একই সময়ে” (সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা) পড়া যায়না, সারা পৃথিবীতে রোজাও তেমনি “একই সময়ে” রাখা যাবে না।
কিন্তু সারা পৃথিবীতে নামাজ “একই দিনে” পড়তে হয়। যেমন জুম্মার নামাজ সারা পৃথিবীতে একই দিনে (শুক্রবারে) পড়তে হয়। ঠিক তেমনিভাবে সারা পৃথিবীতে রোজা “একই দিনে” রাখতে হবে।
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজ পড়া যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে রোজা রাখা যায়না বা সাহরী করা যায়না
সারা পৃথিবীতে একই সময়ে ইফতার করা যায়না
কিন্তু
সারা পৃথিবীতে
একই দিনে নামাজ পড়তে হয় যেমন জুম্মার নামাজ শুক্রবারে পড়তে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে রোজা রাখতে হয়
সারা পৃথিবীতে একই দিনে ঈদ করতে হয়
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্ত যেমন একই সময়ে হয়না, সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তও একই সময়ে হয়না।
সারা পৃথিবীতে জুম্মার নামাজের ওয়াক্তের বা সময়ের পার্থক্য বজায় রেখেই জুম্মার নামাজ যেমন একই দিনে আদায় করতে হয় তেমনি সারা পৃথিবীতে ঈদের নামাজের ওয়াক্তের পার্থক্য বজায় রেখেই ঈদের নামাজ ও একই দিনে বা বারে (যেমন শুক্র শনি রবি -----বৃহঃ) আদায় করতে হবে।
নামাজের ওয়াক্তের সাথে রমজান মাস শুরুর তুলনা সঠিক নয়
নামাজের ওয়াক্ত, সাহরী এবং ইফতার সূর্যের সাথে সম্পর্কিত, চাঁদের সাথে নয়। যেমন ইফতার করতে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। একইভাবে মাগরিব পড়তে হয় সূর্য ডোবার পর, চাঁদ ডোবার পর নয়। জুম্মার ওয়াক্ত যেমন সূর্য অনুযায়ী হয় ঈদের নামাজের ওয়াক্তও তেমনি সূর্য অনুযায়ী হয়। সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত চাঁদ অনুযায়ী হয়না, চাঁদের সাথে এগুলির আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং সাহরী, ইফতার ও নামাজের ওয়াক্ত হয় সূর্য অনুযায়ী।
কিন্তু প্রতি আরবী মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারিত হয় চাঁদ অনুযায়ী। রমজান মাসের প্রথম তারিখ নির্ধারণ সূর্য উঠার দ্বারা হয় না বরং রমজানের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। তেমনি শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখ বা ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ ও সূর্য উঠার দ্বারা হয়না বরং ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখার দ্বারা হয়। রমজান মাস কবে থেকে শুরু হবে তার সাথে সূর্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সুতরাং রমজান মাস শুরু হওয়া চাঁদের সাথে সম্পর্কিত, ঈদ হওয়াটাও চাঁদের সাথে সম্পর্কিত ।
কাজেই সূর্যের সাথে সম্পর্কিত নামাজের ওয়াক্ত আর চাঁদের সাথে সম্পর্কিত রমজান মাস শুরু হওয়া এই দুইটির তুলনা যুক্তিযুক্ত নয়। সূর্য ও চাঁদের হিসাব আলাদা
আপনি দিন ও সময়ের পার্থক্য বুঝালেন তা আমিও বুঝি, যেখানে সময়ের হিসেবে ২৪ ঘন্টা ব্যবধান সেখানে আপনি ঈদের তারিখ কি ভাবে ঠিক রাখবেন? জুমার দিনের তুলনা দিলেন জুমার দিন প্রতি সাপ্তাহে আসে জুমার দিন চাঁদ দেখে নির্ধারন করতে হয়নাহ্।
একই দিনে ঈদ একই দিনে ঈদ করতে হলে আপনাকে আগে পৃথিবীকে বদলাতে হবে.... পৃথিবীটাকে চেপ্টা করতে হবে যেন সময়ের ব্যবধানটা না থাকে।
যেখানে পুরো একদিন বা ২৪ ঘন্টা সময়ের ব্যবধান সেখানে আপনি বার কিভাবে ঠিক রেখে ঈদ করবেন?
আপনাকে এখানে ঠিক রাখতে হবে তারিখ, আর তারিখ ঠিক রাখার জন্য স্বস্ব দেশে চাঁদ দেখার উপরই নির্ভর করা উচিত।
জবাব: এই প্রশ্নের জবাবটি পুরোপুরি ভৌগলিক জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এ প্রশ্নের জবাব জানার পূর্বে ভৌগলিক কিছু ধারণা অর্জন একান্তই দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা প্রয়োজন, প্রতি চান্দ্র মাসের নতুন চাঁদ সকল সময় পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে দৃষ্টি গোচর হবে? না কি বিভিন্ন মাসের চাঁদ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেখো যাবে?
নুতন চাঁদ পৃথিবীর কোন অঞ্চলে সর্বপ্রথম দেখা যাবে আমাদেরকে সর্বাগ্রে সে ব্যাপারে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ বিষয়ে ভৌগলিক গবেষণার ফলাফল হলো প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সব সময়ই সর্বপ্রথম মধ্য প্রাচ্যের কোন না কোন দেশে দৃষ্টিগোচর হবে। কারণ চান্দ্র মাসের প্রথম দিনে চাঁদ এবং সূর্য প্রায় একই সময়ে পূর্ব দিগন্তে (জাপানে) উদিত হয়। এবং উদয় স্থলের পূর্ণ বিপরীত মেরুতে (দক্ষিণ-পশ্চিম আটলান্টিকে) সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রায় ৪৯ মিনিট পরে চাঁদ অস্ত যায়। অর্থাৎ সর্ব পশ্চিম দিগন্তে প্রথম তারিখের চাঁদ সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও প্রায় ৪৯ মিনিট আকাশে থাকে। এ সময় সূর্যাস্তের পর দিগন্তে চাঁদের যে কিঞ্চিত অংশটুকু সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয় তাকেই আমরা নুতন চাঁদ হিসেবে দেখি। প্রথম দিনের চাঁদ সূর্যের ৪৯ মিনিট পরে অস্ত যায় বলেই ২য় দিনের চাঁদ সূর্য উদয়ের ৪৯ মিনিট বিলম্বে পূর্বাকাশে উদিত হয়। কারণ আকাশের যে দিগন্ত রেখা আটলান্টিকের জন্য অস্তস্থল, আবার সে দিগন্ত রেখাই জাপানের জন্য উদয়স্থল। এভাবে প্রতি দিনই উদয়ের বিলম্বতায় ৪৯ মিনিট করে যুক্ত হতে থাকে। একারণেই ২৯ দিনে চাঁদকে ২৯টি স্থানে উদয় হতে দেখা যায়। আবার সাড়ে ২৯ দিন পরে চাঁদ ২৪ ঘন্টা ঘুরে এসে পরবর্তী চন্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার নুতন করে সূর্যের সঙ্গে প্রায় একই সময় উদিত হয়। গবেষণালব্ধ আলোচিত তথ্যগুলোকে সঠিক প্রমাণিত করছে এ হিসেবটি।
প্রতি দিনের চাঁদ উদয়ে বিলম্ব ঘটে ৪৯ মিনিট। প্রতি চান্দ্র মাসের পরিধি হচ্ছে সাড়ে ২৯ দিন ৬০ মিনিট = ১ ঘন্টা। সুতরাং (৪৯ X ২৯১/২ দিন / ৬০ মিনিট) = ২৪ ঘন্টা। এভাবেই প্রতি সাড়ে ২৯ দিনে চাঁদ ২৪ ঘন্টা সময় অতিক্রম করে পরবর্তী চান্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার পূর্বের স্থানে সূর্য উদয়ের সমান সময়ে উদিত হয়।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, জাপান ও আটলান্টিকের মধ্যকার ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সূর্য ও চাঁদ অস্ত যাওয়ার মধ্যে ব্যবধান হয় ৪৯ মিনিট।
ভৌগলিক ভাবে প্রমাণিত যে, গ্রীনিচমান সময়ের (GMT) দিক থেকে পৃথিবীর সর্ব প্রথম সূর্য উদয়ের দেশ জাপান। যার ভৌগলিক অবস্থান ১৪২ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ৩৭.৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ। এ উদয় স্থল হিসেবে পূর্ণ বিপরীত মেরুর অস্তস্থল হল দক্ষিণ পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর। যার ভৌগলিক অবস্থান ৩৮ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ এবং ৩৭.৫ দক্ষিণ অক্ষাংশ। এ উদয় ও অস্ত স্থলের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১২ ঘন্টা এবং অবস্থানগত দূরত্ব ১৮০ ডিগ্রী। কারণ প্রতি ১ ডিগ্রীতে সময়ের ব্যবধান ৪ মিনিট।
চান্দ্র মাসের ১ তারিখে চাঁদ ও সূর্য প্রায় একই সময়ে জাপানে উদিত হয়ে ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করে সন্ধ্যায় সূর্য যখন আটলান্টিকে অস্ত যায়, চাঁদ তার পরেও আটলান্টিকের আকাশে থাকে প্রায় ৪৯ মিনিট। ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে যদি সূর্য ও চাঁদের অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয় ৪৯ মিনিট তাহলে এর অর্ধেক পথ অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সূর্য ও চাঁদের অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হবে সাড়ে ২৪ মিনিট। মধ্য প্রাচ্যের (ইয়েমেন, রিয়াদ ও বাগদাদ) অবস্থান ৪৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে হওয়ায় উদয় স্থল জাপান ও অস্ত স্থল আটলান্টিকের সঙ্গে মধ্য প্রাচ্যের ভৌগলিক অবস্থানের ব্যবধান ৯০ ডিগ্রী। যে কারণে মধ্য প্রাচ্যে যখন সূর্যাস্ত হয় তার পরেও চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ মধ্য প্রাচ্যের আকাশে থাকে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সকল সময়ে সর্বপ্রথম মধ্য প্রাচ্যেই দৃষ্টি গোচর হবে। এবং ক্রমান্বয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ সমূহে সূর্যাস্তের পরে চাঁদের স্থায়িত্ব আকাশে বেশি সময় থাকবে। যার ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখে ঐ সকল পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশে চাঁদ ক্রমান্বয়ে বেশী সময় ধরে দেখা যাবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহ ক্রমান্বয়ে উদয় স্থলের নিকটবর্তী হওয়ায় সূর্যাস্তের পরে এখানকার আকাশে ১ তারিখের চাঁদের স্থায়িত্ব কম সময় থাকে এবং চাঁদ দিগন্তে আকাশে কম উঁচুতে থাকে বলেই উদয়স্থলের নিকটবর্তী দেশ সমূহ পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, চীন বা জাপানে কখনই চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ দেখা যাবে না।
উল্লেখিত ভৌগলিক গবেষণার আলোচনায় প্রমাণিত যে, প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সব সময় সর্বপ্রথম মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে দেখা যাবে।
আর তারপরেও যদি অন্য কোথাও চাঁদ দেখা যায় অর্থাৎ বিশ্বের যেখানেই আগে চাঁদ দেখা যাক না কেন সেই অনুযায়ী সারা বিশ্ব বাসীকে একই বারে/দিনে আমল করতে হবে, যা আমরা আগে আলোচনা করেছি।
যেহেতু প্রমাণিত যে, নুতন চাঁদ সকল সময়ই মধ্য প্রাচ্যের যে কোন দেশে সর্ব প্রথম দৃষ্টি গোচর হবে। তাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী সময়ের দেশ জাপানবাসীর জন্য ১ম তারিখের রোযা রাখার সম্ভাব্যতা সর্বাধিক প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিন্তু গবেষণায় সুপ্রমাণিত যে, ঐ দিন জাপানবাসীর জন্যও রোযা রাখা সম্ভব। যেমন বছরের সবচেয়ে ছোট রাত জুলাই মাসকেও যদি আলোচনায় আনা হয় তবে দেখা যাবে, জুলাই মাসে সর্ব শেষ সূর্যাস্ত হয় ৬টা ৫৫ মিনিটে। তাহলে মধ্য প্রাচ্যে সূর্যাস্তের পর পর সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখা গেল। ঐ সময় পৃথিবীর সর্বপূর্ব স্থান জাপানে রাত ১টা ২৮ মিনিট। কারণ মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানের মধ্যে অবস্থানগত দূরত্ব ৯৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। ফলে স্থানীয় সময় মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের চেয়ে ৬ঘন্টা ২৮মিনিট অগ্রগামী। তাহলে ফলাফল দাড়াল মধ্য প্রাচ্যে সন্ধ্যা ৭টায় চাঁদ দেখা গেলে জাপানে সে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছতেছে রাত ১টা ২৮ মিনিটে। অথচ জুলাই মাসে সাহরী খাওয়ার সর্বনিম্ন সময় হলো ৩টা ৪৩ মিনিট। তাহলে জাপানবাসী চাঁদ উদয়ে সংবাদ পাওয়ার পরেও রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্য সময় পাচ্ছেন প্রায় ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট। যা সাহরীর জন্য কোন বিবেচনায়-ই অপ্রতুল নয়। উপরন্ত ঐ সময়ের মধ্যে তারাবীর নামায আদায় করাও সম্ভব। আর পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের জন্য আমল করা কোন ভাবেই কষ্টকর নয়। কারণ যত পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের দিকে আসা হবে তারা চাঁদ উদয়ের সংবাদের পরে সাহরী খাওয়ার জন্য ততবেশী সময় পাবে।
(২) যদি প্রশ্ন করা হয়, আমরা বাংলাদেশে যখন ইফতার করি তখন আমেরিকায় ভোর, আবার আমরা যখন সাহরী খাই তখন আমেরিকায় বিকাল, তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে একই দিনে আমল করা কি করে সম্ভব?
জবাব: অত্র পশ্নের উত্তর বুঝার জন্য দু’টি মৌলিক বিষয় গভীর ভাবে স্মরণ রাখতে হবে। এক: চাঁদের তারিখ সংশ্লিষ্ট আমলগুলো সমগ্র পৃথিবীতে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবেনা। বরং একই দিনে (অর্থাৎ শুক্র, শনি, রবি----------বুধ বা বৃহস্পতিবারে) এবং একই তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। দুই: যেহেতু সব সময়েই মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখা যাবে তাই চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যে কোন দেশের সময়ের হিসেব মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের সময়ের সঙ্গে নয়।
তাহলে মনে করা যাক, বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র রমযানের চাঁদ দেখা গেল এবং প্রমাণিত হল শুক্রবার পহেলা রমযান। এখন সমগ্র বিশ্বে পহেলা রমযান হিসেবে শুক্রবারে প্রথম রোযা রাখা যায় কিনা এটাই মূল বিবেচনার বিষয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় যখন মধ্য প্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেল তখন ঐ চাঁদ দেখার সংবাদ ১৪২ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত সর্বপ্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে পৌঁছবে জাপানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২৮মিনিটে। অথচ সাহরীর সর্বশেষ সময় সীমা কখনই ৩টা ৪৩মিনিটের নিম্নে আসেনা। তাহলে জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে শুক্রবারে রোযা রাখার জন্য সাহরী খেতে সময় পাচ্ছেন (৩:৪৩মিঃ - ১:২৮মিঃ) ২ঘন্টা ১৫মিনিট। এমনিভাবে ১২০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমবা, ফ্লোরেস, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের শেংইয়াং, হাইলার, ইনহো, রাশিয়ার টালুমা, খরিনটস্কি, সুখানা এবং অলিনেক অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায়। ফলে বছরের সব চেয়ে ছোট রাতেও চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার পহেলা রমযানের রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্যে তারা সময় পাবে ৩ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। অতএব তাদের জন্যে শুক্রবার রোযা রাখা সম্ভব। এরপরে ১০৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ তেলাকবেটং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীনের ইপিং, চেংটু, মোঙ্গলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্য সাইবেরিয়ান অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৪ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। তারপরে ৯০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, চীনের লাসা, টুরপান, ফাইয়ুন, রাশিয়ার আবাজা অচিনিস্ক, নগিনস্কি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৫ ঘন্টা ৪৩ মিনিট এভাবে ৭৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ ভারতের দিল্লী, কাশ্মীর, কিরগিজিয়া, পূর্বপাকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐরাত ৯টায় এবং ৬০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ পাকিস্তানের করাচী, আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ওখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত পূর্ব গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম রোযা বা পহেলা রমযানের রোযা রাখা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ৪৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রমযানের চাঁদ দেখা গেল তখন ৩০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান, জিম্বাবুই, জাম্বিয়ার বেলা, তানজানিয়ার বরুনডি, সুদান, মিসর, তুরস্কের বুরসা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লেলিন গ্রাদ ইত্যাদি অঞ্চলে উক্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায়। ফলে চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ লা রমযানের প্রথম রোযা রাখতে তারা সময় পাবেন ৯ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। এমনি ভাবে ১৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। ০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ টগো, মালি, আলজেরিয়ার রেগান, ওরান, স্পেনের ভ্যালেনসিয়া, ফ্রান্সের বদৌস ও প্যারিস এবং লন্ডন অঞ্চল সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়। আরো পশ্চিমে ১৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সেনেগাল, মৌরতানিয়ার নৌয়াকচট, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব আইসল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায়। এমনি করে ৩০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ২টায়, ৪৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ১টায়, ৬০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে পূর্ব আর্জেটিনায়, প্যারাগুয়ে, মধ্য ব্রাজিলে, পূর্ব ভেনিজুয়েলায়, পূর্ব কানাডায় এবং পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়। এমনি করে ৭৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১১টায়। ৯০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১০টায়। ১০৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ সমূহ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের আলবুক্য়ার্ক, ডেনভার, সিয়েন, মাইলস্ সিটি এবং মধ্য কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে এসব অঞ্চলের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। এমনি ভাবে সর্বশেষ ১৮০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায়। এবং উল্লেখিত সকল দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ সমূহের অধিবাসীরা জানবে যে, মধ্য প্রাচ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখার কারণে পহেলা রমযান হচ্ছে শুক্রবার।
অতএব মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশগুলো যথাক্রমে বৃহস্পতিবার দিনের অংশ ও পূর্ণদিন অতিক্রমের পরে স্থানীয় ভাবে যে দেশে যখন শুক্রবার শুরু হবে সে দেশে তখন শুক্রবারে পহেলা রমজানের প্রথম রোযা পালন করবে। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পশ্চিম গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম রোযা বা পহেলা রমজানের রোযা করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
উল্লেখিত আলোচনার সারকথা হলো শুক্রবার দিবসটি জাপানে শুরু হবে মধ্যে প্রাচ্যের ৬ঘন্টা ২৮মিনিট পূর্বে এবং পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের ১৫ঘন্টা পরে। কিন্তু দিন একটিই তাহল শুক্রবার। তবে উভয় স্থানে দিন ও তারিখ হবে অভিন্ন। অতএব জাপানে শুক্রবারের রোযা শুরু হবে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ঘন্টা পূর্বে। আবার পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে রোযা শুরু হবে জাপানের স্থানীয় সময়ের ২৩ঘন্টা পরে। যেমন আমাদের বাংলাদেশে আমরা রোযা রাখলাম শুক্রবার। কিন্তু পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সাহরীর শেষ সময় যদি হয় ৪টা ৩০মিনিট, তবে রাজশাহীতে সাহরীর শেষ সময় হবে আরো ১৩ মিনিট পরে অর্থাৎ ৪টা ৫৩ মিনিট। তাহলে বাংলাদেশে শুক্রবারের রোযা পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হল ১৩ মিনিট পূর্বে এবং রাজশাহীতে শুরু হল ১৩ মিনিট পরে। ঠিক তেমনি সমগ্র পৃথিবীতে রোযা শুরু ও শেষ হওয়ার সময় স্থানীয় সময় অনুপাতে আগ-পিছ হলেও রমজান মাসের রোযা শুরুর দিনের বার ও তারিখ হবে সারা পৃথিবীতে অভিন্ন বা একই। অতএব সমগ্র পৃথিবীতে একই বার ও তারিখে রমজান মাসের প্রথম রোযা শুরু করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার আসুন ঈদুল ফিতরের হিসাব করি। ঠিক একই ভাবে, মনে করা যাক, বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র ঈদের চাঁদ দেখা গেল এবং প্রমাণিত হল শুক্রবার ঈদ। এখন সমগ্র বিশ্বে পহেলা শাওয়াল হিসেবে শুক্রবারে ঈদ করা যায় কিনা এটাই মূল বিবেচনার বিষয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় যখন মধ্য প্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেল তখন ঐ চাঁদ দেখার সংবাদ ১৪২ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত সর্বপ্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে পৌঁছবে জাপানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২৮মিনিটে। তাহলে জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে শুক্রবারে ঈদ করবে।
এমনিভাবে ১২০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমবা, ফ্লোরেস, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের শেংইয়াং, হাইলার, ইনহো, রাশিয়ার টালুমা, খরিনটস্কি, সুখানা এবং অলিনেক অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায়। ফলে বছরের সব চেয়ে ছোট রাতেও চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ঈদ করতে পারবে। অতএব তাদের জন্যে শুক্রবার ঈদ করা সম্ভব। এরপরে ১০৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ তেলাকবেটং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীনের ইপিং, চেংটু, মোঙ্গলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্য সাইবেরিয়ান অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টায়। তারপরে ৯০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, চীনের লাসা, টুরপান, ফাইয়ুন, রাশিয়ার আবাজা অচিনিস্ক, নগিনস্কি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টায়। এভাবে ৭৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ ভারতের দিল্লী, কাশ্মীর, কিরগিজিয়া, পূর্বপাকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐরাত ৯টায় এবং ৬০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ পাকিস্তানের করাচী, আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ওখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত পূর্ব গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার পহেলা শাওয়াল ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ৪৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঈদের চাঁদ দেখা গেল তখন ৩০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান, জিম্বাবুই, জাম্বিয়ার বেলা, তানজানিয়ার বরুনডি, সুদান, মিসর, তুরস্কের বুরসা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লেলিন গ্রাদ ইত্যাদি অঞ্চলে উক্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায়। ফলে চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ লা শাওয়াল ঈদ করবেন । এমনি ভাবে ১৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। ০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ টগো, মালি, আলজেরিয়ার রেগান, ওরান, স্পেনের ভ্যালেনসিয়া, ফ্রান্সের বদৌস ও প্যারিস এবং লন্ডন অঞ্চল সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়। আরো পশ্চিমে ১৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সেনেগাল, মৌরতানিয়ার নৌয়াকচট, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব আইসল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায়। এমনি করে ৩০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ২টায়, ৪৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ১টায়, ৬০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে পূর্ব আর্জেটিনায়, প্যারাগুয়ে, মধ্য ব্রাজিলে, পূর্ব ভেনিজুয়েলায়, পূর্ব কানাডায় এবং পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়। এমনি করে ৭৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১১টায়। ৯০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১০টায়। ১০৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ সমূহ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের আলবুক্য়ার্ক, ডেনভার, সিয়েন, মাইলস্ সিটি এবং মধ্য কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে এসব অঞ্চলের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। এমনি ভাবে সর্বশেষ ১৮০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায়। এবং উল্লেখিত সকল দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ সমূহের অধিবাসীরা জানবে যে, মধ্য প্রাচ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখার কারণে পহেলা শাওয়াল ঈদ হচ্ছে শুক্রবার।
অতএব মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশগুলো যথাক্রমে বৃহস্পতিবার দিনের অংশ ও পূর্ণদিন অতিক্রমের পরে স্থানীয় ভাবে যে দেশে যখন শুক্রবার শুরু হবে সে দেশে তখন শুক্রবারে পহেলা শাওয়াল ঈদ পালন করবে। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পশ্চিম গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার পহেলা শাওয়াল ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
উল্লেখিত আলোচনার সারকথা হলো শুক্রবার দিবসটি জাপানে শুরু হবে মধ্যে প্রাচ্যের ৬ঘন্টা ২৮মিনিট পূর্বে এবং পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের ১৫ঘন্টা পরে। কিন্তু দিন একটিই তাহল শুক্রবার। তবে উভয় স্থানে দিন ও তারিখ হবে অভিন্ন। অতএব জাপানে শুক্রবারের ঈদ শুরু হবে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ঘন্টা পূর্বে। আবার পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ শুরু হবে জাপানের স্থানীয় সময়ের ২৩ঘন্টা পরে। সমগ্র পৃথিবীতে ঈদ শুরু ও শেষ হওয়ার সময় স্থানীয় সময় অনুপাতে আগ-পিছ হলেও ঈদের দিনের বার ও তারিখ হবে সারা পৃথিবীতে একই। অতএব সমগ্র পৃথিবীতে একই বার ও তারিখে ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
“চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা ছাড়, (ঈদ কর)” । [(সহীহ মুসলিম অধ্যায় ৬ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৪, ২৩৬৮, ২৩৬৯, ২৩৭৮, ২৩৭৯, ২৩৮০, ২৩৮১) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৭, ২৩৭১, ২৩৭২, ২৩৮২, ২৩৮৩, ২৩৮৪, ২৩৮৫) (সহীহ বুখারী, অধ্যায় ৩০- কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৯০৯)]
(২) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন-
“তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবেনা এবং চাঁদ না দেখে রোযা ছাড়বেনা (ঈদ করবেনা)” । [(সহীহ বুখারী অধ্যায় ৩১ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৩০) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮৫, হাদীস নং ১৯০৬) (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৪, হাদীস নং ১৭৮৫), (সহীহ মুসলিম অধ্যায় ৬ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৩, ২৩৬৭, ২৩৭০) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৬, ২৩৭০, ২৩৭৩)]
হাদীসটির ব্যাখ্যায় পবিত্র বোখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “ফাতহুল বারী”-তে আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন-
অর্থাৎ “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর বাণী “فلاتصوموا حتى تروه” এর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখতে হবে এমন উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা। বরং পবিত্র বাণীটির উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু ব্যক্তির চাঁদ দেখা। জমহুর ফকীহ গণের মতানুসারে রমযানের চাঁদ একজনের দেখাই যথেষ্ট হবে। যা হানাফী ফকীহগণের মত। আর অন্যদের মতে দু’জনের দেখা যথেষ্ট হবে। এ মতামত অপরিচ্ছন্ন আকাশের ক্ষেত্রে, কিন্তু আকাশ যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এমন সংখ্যক ব্যক্তির চাঁদ দেখতে হবে যাদের সংখ্যা দ্বারা চাঁদ দেখার সংবাদ প্রমাণিত হবে। যারা এক দেশের দেখা অন্য দেশের জন্য প্রযোজ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন এটা তাদের মত। আর যারা প্রত্যেক দেশের জন্য চাঁদ দেখার মত প্রকাশ করেছেন তারা বলেছেন, ‘যতক্ষণ না তাকে দেখবে’ এর মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চলের মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে, যা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের এ মত হাদীসের প্রকাশ্য বক্তব্যের পরিবর্তন। অতএব চাঁদ দেখাকে প্রত্যেক মানুষের সাথে এবং প্রত্যেক দেশের সাথে সীমিত করা যাবে না”। (ইবনু হাজার আসকালানীর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতহুল বারী ফি শরহে ছহীহীল বুখারী, খন্ড-৪, পৃঃ-১৫৪)]
হাদীস গুলির মধ্যে বিশ্বনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর “তোমরা” বলে সম্বোধন দেশ মহাদেশের সীমানা পেরিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে ব্যাপক অর্থবোধক সম্বোধন।
শুধু তাই নয়, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম নিজেও চাঁদ দেখার সংবাদ শুনে আমল করেছেন যা নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে ।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল:
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাঁর পবিত্র হায়াতে ২য় হিজরী থেকে ১০ম হিজরী পর্যন্ত সর্বমোট ৯ বার পবিত্র রমযান মাসের রোযা রেখে ছিলেন। তাই আমাদের গভীর দৃষ্টি দেয়া উচিৎ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর পবিত্র আমলের দিকে। রমযান মাসে রোযা রাখা এবং শাওয়াল মাসে ঈদ করার ক্ষেত্রে তিনি তাঁর পবিত্র আমলে, উক্ত হাদীস দু’টির প্রতিফলন কিভাবে করেছেন। উল্লেখিত হাদীস কারীমা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি নিজে চাঁদ দেখে রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? না কি অন্যের দেখার সংবাদের মাধ্যমেও রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? এ প্রসংগে পবিত্র হাদীস শরীফে যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “কিছু সংখ্যক মানুষ (রমযানের) নতুন চাঁদ দেখল। আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-কে সংবাদ দিলাম যে আমিও উক্ত চাঁদ দেখেছি। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রোযা রাখলেন এবং মানুষকেও রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন।" [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ২৩৪২, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ২৩৩৫) (তিরমিজি ৭৫৩, বায়হাকী ৮২৩৫, দারেমী) – (মিশকাত, পৃঃ-১৭৪)]
এমনি ভাবে হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একজন মরুচারী মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট আসলো এবং বললো, আমি প্রথম চাঁদ অর্থাৎ রমযানের চাঁদ দেখেছি। তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই একথা সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আল্লাহর রসূল তুমি কি একথা সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বললেন, হে বেলাল মানুষের কাছে ঘোষণা করে দাও তারা যেন আগামী দিন রোযা রাখে”। [(আবু দাউদ হাদীস নং ২৩৪০, ইংরেজি অনুবাদ ২৩৩৩), তিরমিযী ৬৯১, পৃঃ-১৪৮; নাসায়ী ২১১২, পৃঃ-২৩১; ইবনু মাজাহ পৃঃ-১১৯, বায়হাকি ৮২৩০, মিশকাত পৃঃ-১৭৪)]
হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
হযরত আবু উমাইর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট একদল আরোহী আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মানুষকে রোযা ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন প্রাতঃকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন”। [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ১১৫৭, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ১১৫৩, নাসায়ী, মিশকাত-১২৭)]
অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের উক্ত পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-
“তারা ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমাবেত হল। আল্লামা মাজহার বলেন যে ঐ বছর মদীনা শরীফে ২৯শে রমযান দিবাগত রাতে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মদীনা বাসী ৩০ রমযানের রোযা রেখে ছিলেন। এমতাবস্থায় ঐ দিন দ্বিপ্রহরে একদল ছাওয়ারী দূর থেকে আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, নিশ্চয়ই তারা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নুতন চাঁদ দেখেছে। অতপর, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদের এ সংবাদ গ্রহণ করে সকলকে রোযা ভঙ্গের নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন (২রা শাওয়াল) ঈদের নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন।“ (মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৫/১৫৩)]
অত্র হাদীস তিনটিতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল দ্বারা নিম্নোক্ত বিষয় গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়।
(১) মাস প্রমাণের জন্য সকলের চাঁদ দেখা জরুরী নয়, অন্যের দেখার গ্রহণযোগ্য সংবাদ শুনার মাধ্যমেও মাস প্রমাণিত হবে, ফলে রমজানে রোযা এবং শাওয়ালের চাঁদে ঈদ করতে হবে ।
(২) নিজ দেশের আকাশে নতুন চাঁদ দেখতে হবে এমন শর্ত করা যাবে না।
(৩) রমজানের চাঁদ না দেখতে পেলে এবং চাঁদ দেখার কোন সংবাদ না পেলে শাবান ৩০ পূর্ণ করার পর রোজা শুরু করতে হবে। আর ঈদুল ফিতরের চাঁদ না দেখতে পেলে এবং চাঁদ দেখার কোন সংবাদ না পেলে রমজান ৩০ পূর্ণ করে ঈদ করতে হবে। কিন্তু যে কোথাও চাঁদ দেখার গ্রহণযোগ্য সংবাদ পেলেই সেই সংবাদ দূর থেকে আসলেও সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে।
রমজান মাসের ফযিলাত বিশ্বব্যাপী একই দিনে শুরু:
পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য রমজান মাস যে একই দিনে শুরু হয় তার সুস্পষ্ট প্রমাণ এই হাদীস দুটি,
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়” [(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪০-২৪১, হাদীস নং ১৭৭৭) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৮)]
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।” [(সহীহ বুখারী, খন্ড ৩, হাদীস নং ১২৩ অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় - সাওম, হাদীস নং ৯, অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় ৩১, হাদীস নং ১২৩) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৯) অথবা (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪১, হাদীস নং ১৭৭৮,)]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্ট ৮টি জান্নাত ও ৭টি জাহান্নাম কোন অঞ্চল বিশেষের মানুষের জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। তাই এই হাদীসের বর্ণনা মতে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এবং জাবের রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীস মতে আল্লাহ তায়ালার রহমতের দৃষ্টি দান করা রমযানের নতুন চাঁদ উঠার সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একই দিনে সমভাবে শুরু হয়। বাংলাদেশের স্থানীয় আকাশে চাঁদ দেখা যেতে ১দিন বা ২দিন বিলম্ব হওয়ায় উল্লেখিত কার্যক্রম এদেশের জন্য এক বা দু’দিন পরে শুরু হওয়া অথবা পুনরায় হওয়া বিবেক গ্রাহ্য নয়। তাই এই হাদীসে প্রমাণিত হল যে পবিত্র রমযানের ফযিলতের কার্যকারিতা আল্লাহ তায়ালার দরবারেও বিশ্বময় একই দিনে শুরু হয়। অতএব দেশ মহাদেশের ভিন্নতায় রমযান ও অন্যান্য ইবাদাত কখনই ভিন্ন ভিন্ন দিনে মেনে নেওয়া যায় না।
ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহা সম্পর্কিত হাদীস:
একটি হাদীসে আয়েশাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত,
الْفِطْرُ يَوْمَ يُفْطِرُ النَّاسُ وَالأَضْحَى يَوْمَ يُضَحِّي النَّاسُ
রসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন, “ঈদুল ফিতর হলো ঐ দিন যেদিন মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ দিন যেদিন মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে।” [(তিরমিযী, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ২, কিতাবুস্ সওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৮, (ঈদুল) ফিতর এবং (ঈদুল) আযহা কখন হবে, হাদিস # ৮০২)]
এই হাদিসে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) “ইয়াওমা” শব্দ ব্যবহার করেছেন।“ইয়াওমা” শব্দটি একবচন, যার অর্থ “একদিন”। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বহুবচন শব্দ “আইয়্যামা” ব্যবহার করেননি। আর “আন্নাসু” শব্দটি “ইনসান” শব্দের বহুবচন হওয়ায় সকল মানুষ তথা সারা পৃথিবীর সকল মুসলিমদের বোঝানো হয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ্ বলেন,
“হে মানবজাতি তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর...-[(সূরা নিসা, ৪/১)]
এই আয়াতটিতে “আন্নাসু” শব্দটির দ্বারা সকল মানুষকে বুঝানো হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে হাদিসটিতেও “আন্নাসু” শব্দটি দ্বারা সকল মানুষকে অর্থাৎ সকল মুসলিমকে বলা হয়েছে। সুতরাং হাদীসটির ব্যাখ্যা দাঁড়ায় “ঈদুল ফিতর হলো ঐ একদিন যেদিন সারা পৃথিবীর সকল মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ একদিন যেদিন সারা পৃথিবীর সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে”।
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি ঈদুল ফিতর সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য একই দিন এবং ঈদুল আযহাও সকল মানুষের জন্য একই দিন।
হাদীসে আরো বর্নিত হয়েছে
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম
রাসূল (স) এর হাদীস
“তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবেনা এবং চাঁদ না দেখে রোযা ছাড়বেনা (ঈদ করবেনা)” । [(সহীহ বুখারী অধ্যায় ৩১ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৩০)
হাদিসটি কোন দেশের ভৌগলিক সীমারেখায় বদ্ধ করার সুযোগ নেই। তারপরও রাষ্ট্র কাঠামোতে একে আবদ্ধ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উল্লেক্ষ্য যে, একসময় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একই রাষ্ট্র ছিল। তখন ভারতের আকাশে চাঁদ দেখা গেলেই রোযা ও ঈদ পালন করা হতো । ৪৭ এর পর পাক-ভারত আলাদা হয়ে যায়। তখন থেকে দু’দেশের আকাশও আলাদা হয়ে গেল । ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তখন থেকে ‘বাংলাদেশের আকাশ’ নামে একটি আকাশেরও জন্ম হয়েছে। মহান আল্লাহ কি এভাবে পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের জন্য পৃথক আকাশ তৈরি করেছেন? পাকিস্তান আমলের কথা যাদের স্মরণে আছে তারা জানেন যে, পিন্ডি বা বেলুচে চাঁদ দেখে পূর্ব পাকিস্তানে রোজা রাখা হতো। অথচ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সময়ের ব্যবধান একঘন্টা। আবার একই জনপদ দুই রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে গেলে (যেমন, দিনাজপুর বাংলাদেশ ও ভারতে বিভক্ত হয়ে আছে) সময়ের ব্যবধান না থাকা সত্বেও আকাশকে দেশের সীমানায় ভাগ করা হচ্ছে। তাই দেশের সীমানার জন্য তারিখ ব্যবধান সঠিক কিনা নিজেই চিন্তা করুন। রাষ্ট্রীয় সীমানায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে কেবল ক্ষমতার কুক্ষিগত অবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে, সার্বজনীন ইসলাম কায়েম হওয়া সম্ভব নয়।
হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা শুরু বা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ মুসলিমরা কেন করবে? দেশে দেশে এই সীমান্ত তো মানুষের তৈরী, আল্লাহর দেয়া নয়, তাহলে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার অনুযায়ী কেন মুসলিমরা ভিন্ন ভিন্ন বারেরোযা শুরু করবে, আর কেনইবা ভিন্ন ভিন্ন বারে ঈদ করবে?? আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একেবারে পাশাপাশি এবং একটাই মুসলিম ভূমি। অথচ আফগানিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী যেদিন ঈদুল ফিতর হয়, সাধারনত পাকিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী তার পরদিন ঈদুল ফিতর হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একটাই মুসলিম ভূমি হওয়া স্বত্তেও হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখার কারনে সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী আফগানিস্তানে যেদিন ঈদুল ফিতর হচ্ছে পাকিস্তানে সেদিন রোজা হচ্ছে। অথচ ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম কি আশ্চর্য্য! একই ভূমিতে একই মুসলিম জাতি একই দিনে সরকারী ঘোষনা মানতে গিয়ে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার বা সীমান্ত অনুযায়ী সীমান্তের এক পাশে ঈদ আর অন্য পাশে রোজা করতে বাধ্য হচ্ছে!! হায়রে মুসলিমদের অবস্হা!! পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম একই জাতি হওয়াস্বত্তেও ব্রিটিশের ভাগ করা সীমান্ত, আলাদা আলাদা হারাম জাতিয়তাবাদী পতাকা, হারাম জাতিয়তাবাদী দালাল সরকার এইসবের কারনে ৫৭ টুকরায় বিভক্ত হয়ে আছে, এমনকি রোযা ঈদ পর্যন্তও এগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে!! বৃটিশরা দাগ টেনেছে মাটিতে, আর কিছু মুসলিম সেই দাগ আকাশেও টেনে বলছে, আমার দাগের ভিতরে চাঁদ আসলে এটা আমার চাঁদ, তোমার দাগের ভিতরে আসলে তোমার চাঁদ! কি ভয়ংকর জাতিয়তাবাদ!!
রাসূল (সঃ) বলেন, “সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে জাতিয়তাবাদের দিকে আহবান করে, জাতিয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে বা জাতিয়তাবাদের জন্য মারা যায়” [(আবু দাউদ)]
রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “যে আসাবিয়্যার (অর্থাৎ জাতীয়তাবাদের) জাহেলী আহবানের দিকে মানুষকে ডাকে সে যেন তার পিতার লজ্জাস্হান কামড়ে ধরে পড়ে আছে (তাকে ছাড়তে চাইছে না) । (এরপর রাসূল সাঃ বলেন) এবং একথাটি লুকিয়ে রেখোনা (অর্থাৎ বলার ক্ষেত্রে কোনো লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করোনা)”। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১২৩৩]
সুতরাং কোনো জাতি রাষ্ট্রের সীমানা অনুযায়ী মুসলিম উম্মত বিভক্ত হওয়া হারাম। শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই এবং তাদের ভূমিগুলো একই ভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়।
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।” [(সহীহ বুখারী, খন্ড ৩, হাদীস নং ১২৩)]
মূল শয়তান তো একটাই। আযাযিল ইবলিস শয়তান বা মূল শয়তান কি দুই অঞ্চলে পরপর দুইদিন দুইবার বাঁধা হয়???
দলিল সহ জানতে চাই।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম কি আশ্চর্য্য! একই ভূমিতে একই মুসলিম জাতি একই দিনে সরকারী ঘোষনা মানতে গিয়ে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার বা সীমান্ত অনুযায়ী সীমান্তের এক পাশে ঈদ আর অন্য পাশে রোজা করতে বাধ্য হচ্ছে!! হায়রে মুসলিমদের অবস্হা!! পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম একই জাতি হওয়াস্বত্তেও ব্রিটিশের ভাগ করা সীমান্ত, আলাদা আলাদা হারাম জাতিয়তাবাদী পতাকা, হারাম জাতিয়তাবাদী দালাল সরকার এইসবের কারনে ৫৭ টুকরায় বিভক্ত হয়ে আছে, এমনকি রোযা ঈদ পর্যন্তও এগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে!! বৃটিশরা দাগ টেনেছে মাটিতে, আর কিছু মুসলিম সেই দাগ আকাশেও টেনে বলছে, আমার দাগের ভিতরে চাঁদ আসলে এটা আমার চাঁদ, তোমার দাগের ভিতরে আসলে তোমার চাঁদ! কি ভয়ংকর জাতিয়তাবাদ!!
রাসূল (সঃ) বলেন, “সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে জাতিয়তাবাদের দিকে আহবান করে, জাতিয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে বা জাতিয়তাবাদের জন্য মারা যায়” [(আবু দাউদ)]
রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “যে আসাবিয়্যার (অর্থাৎ জাতীয়তাবাদের) জাহেলী আহবানের দিকে মানুষকে ডাকে সে যেন তার পিতার লজ্জাস্হান কামড়ে ধরে পড়ে আছে (তাকে ছাড়তে চাইছে না) । (এরপর রাসূল সাঃ বলেন) এবং একথাটি লুকিয়ে রেখোনা (অর্থাৎ বলার ক্ষেত্রে কোনো লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করোনা)”। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১২৩৩]
সুতরাং কোনো জাতি রাষ্ট্রের সীমানা অনুযায়ী মুসলিম উম্মত বিভক্ত হওয়া হারাম। শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই এবং তাদের ভূমিগুলো একই ভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়।
উদয়স্থল বলতে আমরা বুঝি নতুন মাসের চাঁদ প্রথম যে স্থানে দেখা যাবে সেটা। সেই উদয়স্থল প্রতি মাসে একই থাকে না, তাও ঠিক। আবার কাছে থেকেও না দেখা আর দূরে থেকেও দেখা সেটাও ঠিক আছে। তারপরেও যে বিষয়টা বলতে চাচ্ছি সেটা হল চাঁদ প্রথম যেখান থেকে দেখা গিয়েছে সেখান থেকে পশ্চিম দিকেই শুধু আজকের চাঁদটা দেখা যাবে। এর পুর্ব পার্শ্বে আজকের চাঁদ দেখা যাওয়ার সুযোগ নাই। পুর্ব পার্শ্বে চাঁদ অমাবশ্যার ভিতরে ছিল বলেই আজকে দেখা যায়নি। যেখান থেকে প্রথম দেখা গিয়েছে তার পশ্চিম পাশেই শুধু আজকের চাঁদ দেখা যাবে। তবে উত্তর দিক্ষিনের কিছু এলাকা সমান্তরালে থাকলেও একই দিনে হয়ত দেখা যায় না। সেটা এখন থাক। পুর্ব দিকে আগামী কাল যে চাঁদ দেখা যাবে সেটাই আজকের চাঁদ বা এক তারিখের চাঁদ। এতে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নাই।
এবার আসি আসল কথা। গত কাল যেখানে প্রথম চাঁদ দেখা গিয়েছিল তার পুর্ব দিকের দেশগুলোতে আপনি ঈদ হয়ত আজকে করবেন, অথবা আগামী কাল করবেন। আজকে বলতে এখানে আজ রাত থেকে আগামী কাল পুরোই বুঝানো হয়েছে। আজকে করলে চাঁদ দেখা যাওয়ার আগেই ঈদ করা হয়ে যাবে, অর্থাৎ রমজান মাসের চাঁদ যখন অমাবশ্যার ভিতরে ছিল, সেটাকে আগামী মাসের চাঁদ ধরে ঈদ করা হয়ে যাবে। আর যদি চাঁদ ঘুরে আসার জন্য পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, অবশ্য এক তারিখের চাঁদ পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে, এতে দ্বিমত করার উপায় নাই, তাহলে ঈদ হবে এক দিন পরে এবং চাঁদ হবে এক তারিখের।
তো এবার আপনিই বলুন, আমরা কী রমজানের শেষ দিনে ঈদ করব? নাকি শাওয়ালের প্রথম দিনে ঈদ করব?
কাজেই এই পোসটটির বক্তব্য হামজা এর নয়। এই মন্তব্য পুরোটাই মুফতি তাক্বি উসমানী সাহেব (দাঃবাঃ) এর মন্তব্য যা আমি অনুবাদ করেছি মাত্র।
(১) বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের ( যেমন সৌদি আরব, ইয়েমেন, ওমান, ইরাক, কুয়েত, জর্দান ইত্যাদি দেশের ) একদিন পরে সিয়াম / রোজা শুরু করলে, বা বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে ঈদ করলে এই অবস্হা হয়: বাংলাদেশ থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সেখানে ঈদ করলে তার রোযা ২৮ বা ২৯ টি হয় অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে একটি কম হয়, আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন বাংলাদেশে এসে ঈদ করলে তার রোযা ৩০ বা ৩১ টি হয় অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে একটি বেশি হয়। অথচ ২৮ বা ৩১ রোজার বিধান ইসলামে নাই। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে আরবী মাস ২৯-এর কম হবেনা এবং ৩০-এর বেশী হবেনা। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে এই ২৮ বা ৩১ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
(২) ঠিক একই ভাবে আরও কিছু প্রশ্ন এসে যায়, যেমন মধ্যপ্রাচ্যে কেউ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে ঐদিন বাংলাদেশে এসে দেখল (স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে আমলের কারনে) বাংলাদেশের মানুষ রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? একইভাবে, আফগানিস্তানে কেউ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে ঐদিন (মানুষের তৈরী হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত পার হয়ে) একেবারে পাশের দেশ পাকিস্তানে এসে দেখল (স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে আমলের কারনে) মানুষ রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা?
আবার বাংলাদেশে কেউ স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে শাবানের হিসাব করে শাবানের শেষ দিন দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করে ঐদিন মধ্যপ্রাচ্যে যেয়ে দেখল মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ রমজানের রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? একইভাবে, পাকিস্তানে কেউ স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে শাবানের হিসাব করে শাবানের শেষ দিন দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করে ঐদিন (মানুষের তৈরী হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত পার হয়ে) একেবারে পাশের দেশ আফগানিস্তানে যেয়ে দেখল আফগানিস্তানের মানুষ রমজানের রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? এইসকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়না।
(৩) লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাত্রে যেমন ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এমন বিজোড় রাত্রে খোঁজ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করলে, মধ্যপ্রাচ্যে যেদিন বিজোড় রাত হয় বাংলাদেশে সেদিন জোড় রাত হয়, আবার বাংলাদেশে যেদিন বিজোড় রাত হয় মধ্যপ্রাচ্যে সেদিন জোড় রাত হয়। তাহলে শবে কদর কি মধ্যপ্রাচ্যের বিজোড় রাত অনুযায়ী হবে নাকি বাংলাদেশের বিজোড় রাত অনুযায়ী হবে নাকি দুই রাত্রেই হবে? যেমন উদাহরন স্বরূপ মধ্যপ্রাচ্যে যদি সোমবার দিনগত মঙ্গলবার রাতটি রমজানের শেষ দশদিনের একটি বিজোড় রাত ও কদরের রাত হয় তাহলে বাংলাদেশে (মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করার কারনে এলাকা ভিত্তিক হিসেবে) মঙ্গলবার দিনগত বুধবার রাতটি বিজোড় রাত ও কদরের রাত হবে। তাহলে উপরোক্ত উদাহরনে আসল কদরের রাত কি সোমবার দিনগত মঙ্গলবার রাত, নাকি মঙ্গলবার দিনগত বুধবার রাত, নাকি দুই রাতই? সূরা কদর অনুযায়ী কুরআন যে রাতে নাযিল হয়েছিল সেটাই কদরের রাত। কদরের রাতে সমগ্র কুরআন একত্রে লওহে মাহফুজ থেকে বায়তুল ইজ্জাহ বা প্রথম আসমানে নাযিল করা হয়েছে। উপরোল্লিখিত উদাহরন স্বরূপ যদি ধরে নেই, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য মঙ্গলবার রাত্রে ৩০ পারা কুরআন একত্রে নাযিল হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য ৩০ পারা কুরআন একত্রে কি বুধবার রাত্রে আরেকবার নাযিল হয়েছে??? মঙ্গলবার রাত আর বুধবার রাত কি কখনো একই রাত হতে পারে??? ৩০ পারা কুরআন একত্রে কয় রাতে নাযিল হয়েছে? কদরের রাত কি একটা নাকি দুইটা? একই বছর একই মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় লাইলাতুল কদর কেন ভিন্ন ভিন্ন বারে (যেমন মঙ্গল, বুধ, ইত্যাদি) হবে? ৩০ পারা কুরআন কি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক রাতে আর বাংলাদেশের জন্য তার পরের রাতে অর্থাৎ দুই রাতে নাযিল হয়েছে?
(৪) হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়” [(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪০-২৪১, হাদীস নং ১৭৭৭) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৮)]
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।” [(সহীহ বুখারী, খন্ড ৩, হাদীস নং ১২৩ অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় - সাওম, হাদীস নং ৯, অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় ৩১, হাদীস নং ১২৩) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৯) অথবা (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪১, হাদীস নং ১৭৭৮,)]
উদাহরন স্বরূপ ধরে নেই মধ্যপ্রাচ্যে যদি বুধবার দিনগত বৃহস্পতিবার রাত্রে রমযান মাস শুরু হয় তাহলে বাংলাদেশে এলাকা ভিত্তিক চাঁদের হিসেব করলে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করার কারনে বৃহস্পতিবার দিনগত শুক্রবার রাত্রে রমযান মাস শুরু হবে। জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এগুলি কি মধ্যপ্রাচ্যের রমজান শুরুর রাত্রে অর্থাৎ উপরোল্লিখিত উদাহরন অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত্রে নাকি পরদিন বাংলাদেশের রমজান শুরুর রাত্রে অর্থাৎ শুক্রবার রাত্রে হবে নাকি দুই রাত্রে দুই বার হবে? ইবলিস আযাযিল শয়তান তো একটাই। তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য শয়তান বৃহস্পতিবার বেঁধে বাংলাদেশের জন্য শুক্রবার কি আরেকটা শয়তানকে বাঁধা হবে??? জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এগুলি দুই দিনে দুই বার নয় বরং এক দিনে এক বারই হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে এগুলি একাধিক বার হয় বলে মেনে নিতে হয় যা বিবেকগ্রাহ্য নয়।
(৫) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, “আরাফার দিনে রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি, তা পূর্ববর্তী বছর এবং পরবর্তী বছরের গুনাহ্ মুছে দিবে (বা ঐ দিনের রোযার বিনিময়ে আল্লাহ পাক রোযাদারের পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন)”। [(মুসলিম শরীফ, অধ্যায় সাওম, হাদীস নং ২৬০২ ও ২৬০৩, অথবা অধ্যায় ৬, হাদীস নং ২৬০২ ও ২৬০৩) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১ - ১১২, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৬১২ ও ২৬১৩)]
আরাফার দিন হচ্ছে সেটাই যেদিন হাজীগন আরাফার মাঠে থাকেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে আরাফার দিন দুটি হয়ে যায় অথচ আরাফার দিন একটাই।
(৬) চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী নিশ্চিতভাবে সঠিক স্হায়ী সীমানা নির্ধারন করা যায়না। কারন উদয় স্থল সর্বদা একই রকম থাকেনা। যে কোন বছরে যে কোন মাসের চাঁদ পৃথিবীতে প্রথম উদিত হলে যে এলাকাসমূহ তার আওতাভূক্ত থাকে তার সীমানা প্রতিমাসে একরকম থাকেনা, প্রতি বছরেও একরকম হয়না। তারপরেও যদি চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতার ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার সীমানা নির্ধারন করে একই দিনে সেই সীমানার এক পাশে রোযা অন্য পাশে ঈদ হয়, তবে সেই সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ কি রোযা করবে নাকি ঈদ করবে এর কোন সমাধান পাওয়া যায়না।
(৭) চাঁদ দেখার সংবাদ যদি নিকটবর্তি এলাকায় গ্রহণ করা হয় আর দূরবর্তি এলাকায় গ্রহণ না করা হয় তাহলে যে এলাকাকে সর্বশেষ নিকটবর্তি এলাকা মনে করে সংবাদ গ্রহণ করা হচ্ছে আর তার একেবারে পাশের এলাকাকেও দূরবর্তি মনে করে সংবাদ গ্রহন করা হচ্ছে না, এই দুই এলাকার সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ সংবাদ গ্রহণ করবে কিনা এর কোন সমাধান পাওয়া যায়না।
(৮) “চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ সর্বোচ্চ কতদূরত্বের মধ্য থেকে আসলে তা গ্রহনযোগ্য হবে” অথবা “সর্বনিম্ন কতটুকু দূরত্বের বাইরের চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ গ্রহনযোগ্য হবে না” তার নির্ধারিত কোন পরিমান কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীসে পাওয়া যায় কি??? (এই দূরত্বের সঠিক পরিমানের কথা উল্লেখ আছে এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অধম লেখকের ক্ষুদ্রতম জ্ঞানে জানা নাই। সম্মানিত পাঠক, এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস পেলে, অধম লেখককে জানানোর বিনীত অনুরোধ রইল।)
(৯) হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা শুরু বা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ মুসলিমরা কেন করবে? দেশে দেশে এই সীমান্ত তো মানুষের তৈরী, আল্লাহর দেয়া নয়, তাহলে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার অনুযায়ী কেন মুসলিমরা ভিন্ন ভিন্ন বারেরোযা শুরু করবে, আর কেনইবা ভিন্ন ভিন্ন বারে ঈদ করবে?? আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একেবারে পাশাপাশি এবং একটাই মুসলিম ভূমি। অথচ আফগানিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী যেদিন ঈদুল ফিতর হয়, সাধারনত পাকিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী তার পরদিন ঈদুল ফিতর হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একটাই মুসলিম ভূমি হওয়া স্বত্তেও হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখার কারনে সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী আফগানিস্তানে যেদিন ঈদুল ফিতর হচ্ছে পাকিস্তানে সেদিন রোজা হচ্ছে। অথচ ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম কি আশ্চর্য্য! একই ভূমিতে একই মুসলিম জাতি একই দিনে সরকারী ঘোষনা মানতে গিয়ে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার বা সীমান্ত অনুযায়ী সীমান্তের এক পাশে ঈদ আর অন্য পাশে রোজা করতে বাধ্য হচ্ছে!! হায়রে মুসলিমদের অবস্হা!! পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম একই জাতি হওয়াস্বত্তেও ব্রিটিশের ভাগ করা সীমান্ত, আলাদা আলাদা হারাম জাতিয়তাবাদী পতাকা, হারাম জাতিয়তাবাদী দালাল সরকার এইসবের কারনে ৫৭ টুকরায় বিভক্ত হয়ে আছে, এমনকি রোযা ঈদ পর্যন্তও এগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে!! বৃটিশরা দাগ টেনেছে মাটিতে, আর কিছু মুসলিম সেই দাগ আকাশেও টেনে বলছে, আমার দাগের ভিতরে চাঁদ আসলে এটা আমার চাঁদ, তোমার দাগের ভিতরে আসলে তোমার চাঁদ! কি ভয়ংকর জাতিয়তাবাদ!!
রাসূল (সঃ) বলেন, “সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে জাতিয়তাবাদের দিকে আহবান করে, জাতিয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে বা জাতিয়তাবাদের জন্য মারা যায়” [(আবু দাউদ)]
রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “যে আসাবিয়্যার (অর্থাৎ জাতীয়তাবাদের) জাহেলী আহবানের দিকে মানুষকে ডাকে সে যেন তার পিতার লজ্জাস্হান কামড়ে ধরে পড়ে আছে (তাকে ছাড়তে চাইছে না) । (এরপর রাসূল সাঃ বলেন) এবং একথাটি লুকিয়ে রেখোনা (অর্থাৎ বলার ক্ষেত্রে কোনো লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করোনা)”। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১২৩৩]
সুতরাং কোনো জাতি রাষ্ট্রের সীমানা অনুযায়ী মুসলিম উম্মত বিভক্ত হওয়া হারাম। শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই এবং তাদের ভূমিগুলো একই ভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়।
(১) বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের ( যেমন সৌদি আরব, ইয়েমেন, ওমান, ইরাক, কুয়েত, জর্দান ইত্যাদি দেশের ) একদিন পরে সিয়াম / রোজা শুরু করলে, বা বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে ঈদ করলে এই অবস্হা হয়: বাংলাদেশ থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সেখানে ঈদ করলে তার রোযা ২৮ বা ২৯ টি হয় অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে একটি কম হয়, আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন বাংলাদেশে এসে ঈদ করলে তার রোযা ৩০ বা ৩১ টি হয় অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে একটি বেশি হয়। অথচ ২৮ বা ৩১ রোজার বিধান ইসলামে নাই। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে আরবী মাস ২৯-এর কম হবেনা এবং ৩০-এর বেশী হবেনা। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে এই ২৮ বা ৩১ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
(২) ঠিক একই ভাবে আরও কিছু প্রশ্ন এসে যায়, যেমন মধ্যপ্রাচ্যে কেউ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে ঐদিন বাংলাদেশে এসে দেখল (স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে আমলের কারনে) বাংলাদেশের মানুষ রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? একইভাবে, আফগানিস্তানে কেউ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে ঐদিন (মানুষের তৈরী হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত পার হয়ে) একেবারে পাশের দেশ পাকিস্তানে এসে দেখল (স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে আমলের কারনে) মানুষ রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা?
আবার বাংলাদেশে কেউ স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে শাবানের হিসাব করে শাবানের শেষ দিন দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করে ঐদিন মধ্যপ্রাচ্যে যেয়ে দেখল মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ রমজানের রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? একইভাবে, পাকিস্তানে কেউ স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে শাবানের হিসাব করে শাবানের শেষ দিন দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করে ঐদিন (মানুষের তৈরী হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত পার হয়ে) একেবারে পাশের দেশ আফগানিস্তানে যেয়ে দেখল আফগানিস্তানের মানুষ রমজানের রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? এইসকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়না।
(৩) লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাত্রে যেমন ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এমন বিজোড় রাত্রে খোঁজ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করলে, মধ্যপ্রাচ্যে যেদিন বিজোড় রাত হয় বাংলাদেশে সেদিন জোড় রাত হয়, আবার বাংলাদেশে যেদিন বিজোড় রাত হয় মধ্যপ্রাচ্যে সেদিন জোড় রাত হয়। তাহলে শবে কদর কি মধ্যপ্রাচ্যের বিজোড় রাত অনুযায়ী হবে নাকি বাংলাদেশের বিজোড় রাত অনুযায়ী হবে নাকি দুই রাত্রেই হবে? যেমন উদাহরন স্বরূপ মধ্যপ্রাচ্যে যদি সোমবার দিনগত মঙ্গলবার রাতটি রমজানের শেষ দশদিনের একটি বিজোড় রাত ও কদরের রাত হয় তাহলে বাংলাদেশে (মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করার কারনে এলাকা ভিত্তিক হিসেবে) মঙ্গলবার দিনগত বুধবার রাতটি বিজোড় রাত ও কদরের রাত হবে। তাহলে উপরোক্ত উদাহরনে আসল কদরের রাত কি সোমবার দিনগত মঙ্গলবার রাত, নাকি মঙ্গলবার দিনগত বুধবার রাত, নাকি দুই রাতই? সূরা কদর অনুযায়ী কুরআন যে রাতে নাযিল হয়েছিল সেটাই কদরের রাত। কদরের রাতে সমগ্র কুরআন একত্রে লওহে মাহফুজ থেকে বায়তুল ইজ্জাহ বা প্রথম আসমানে নাযিল করা হয়েছে। উপরোল্লিখিত উদাহরন স্বরূপ যদি ধরে নেই, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য মঙ্গলবার রাত্রে ৩০ পারা কুরআন একত্রে নাযিল হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য ৩০ পারা কুরআন একত্রে কি বুধবার রাত্রে আরেকবার নাযিল হয়েছে??? মঙ্গলবার রাত আর বুধবার রাত কি কখনো একই রাত হতে পারে??? ৩০ পারা কুরআন একত্রে কয় রাতে নাযিল হয়েছে? কদরের রাত কি একটা নাকি দুইটা? একই বছর একই মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় লাইলাতুল কদর কেন ভিন্ন ভিন্ন বারে (যেমন মঙ্গল, বুধ, ইত্যাদি) হবে? ৩০ পারা কুরআন কি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক রাতে আর বাংলাদেশের জন্য তার পরের রাতে অর্থাৎ দুই রাতে নাযিল হয়েছে?
(৪) হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়” [(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪০-২৪১, হাদীস নং ১৭৭৭) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৮)]
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।” [(সহীহ বুখারী, খন্ড ৩, হাদীস নং ১২৩ অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় - সাওম, হাদীস নং ৯, অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় ৩১, হাদীস নং ১২৩) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৯) অথবা (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪১, হাদীস নং ১৭৭৮,)]
উদাহরন স্বরূপ ধরে নেই মধ্যপ্রাচ্যে যদি বুধবার দিনগত বৃহস্পতিবার রাত্রে রমযান মাস শুরু হয় তাহলে বাংলাদেশে এলাকা ভিত্তিক চাঁদের হিসেব করলে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করার কারনে বৃহস্পতিবার দিনগত শুক্রবার রাত্রে রমযান মাস শুরু হবে। জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এগুলি কি মধ্যপ্রাচ্যের রমজান শুরুর রাত্রে অর্থাৎ উপরোল্লিখিত উদাহরন অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত্রে নাকি পরদিন বাংলাদেশের রমজান শুরুর রাত্রে অর্থাৎ শুক্রবার রাত্রে হবে নাকি দুই রাত্রে দুই বার হবে? ইবলিস আযাযিল শয়তান তো একটাই। তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য শয়তান বৃহস্পতিবার বেঁধে বাংলাদেশের জন্য শুক্রবার কি আরেকটা শয়তানকে বাঁধা হবে??? জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এগুলি দুই দিনে দুই বার নয় বরং এক দিনে এক বারই হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে এগুলি একাধিক বার হয় বলে মেনে নিতে হয় যা বিবেকগ্রাহ্য নয়।
(৫) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, “আরাফার দিনে রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি, তা পূর্ববর্তী বছর এবং পরবর্তী বছরের গুনাহ্ মুছে দিবে (বা ঐ দিনের রোযার বিনিময়ে আল্লাহ পাক রোযাদারের পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন)”। [(মুসলিম শরীফ, অধ্যায় সাওম, হাদীস নং ২৬০২ ও ২৬০৩, অথবা অধ্যায় ৬, হাদীস নং ২৬০২ ও ২৬০৩) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১ - ১১২, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৬১২ ও ২৬১৩)]
আরাফার দিন হচ্ছে সেটাই যেদিন হাজীগন আরাফার মাঠে থাকেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে আরাফার দিন দুটি হয়ে যায় অথচ আরাফার দিন একটাই।
(৬) চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী নিশ্চিতভাবে সঠিক স্হায়ী সীমানা নির্ধারন করা যায়না। কারন উদয় স্থল সর্বদা একই রকম থাকেনা। যে কোন বছরে যে কোন মাসের চাঁদ পৃথিবীতে প্রথম উদিত হলে যে এলাকাসমূহ তার আওতাভূক্ত থাকে তার সীমানা প্রতিমাসে একরকম থাকেনা, প্রতি বছরেও একরকম হয়না। তারপরেও যদি চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতার ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার সীমানা নির্ধারন করে একই দিনে সেই সীমানার এক পাশে রোযা অন্য পাশে ঈদ হয়, তবে সেই সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ কি রোযা করবে নাকি ঈদ করবে এর কোন সমাধান পাওয়া যায়না।
(৭) চাঁদ দেখার সংবাদ যদি নিকটবর্তি এলাকায় গ্রহণ করা হয় আর দূরবর্তি এলাকায় গ্রহণ না করা হয় তাহলে যে এলাকাকে সর্বশেষ নিকটবর্তি এলাকা মনে করে সংবাদ গ্রহণ করা হচ্ছে আর তার একেবারে পাশের এলাকাকেও দূরবর্তি মনে করে সংবাদ গ্রহন করা হচ্ছে না, এই দুই এলাকার সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ সংবাদ গ্রহণ করবে কিনা এর কোন সমাধান পাওয়া যায়না।
(৮) “চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ সর্বোচ্চ কতদূরত্বের মধ্য থেকে আসলে তা গ্রহনযোগ্য হবে” অথবা “সর্বনিম্ন কতটুকু দূরত্বের বাইরের চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ গ্রহনযোগ্য হবে না” তার নির্ধারিত কোন পরিমান কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীসে পাওয়া যায় কি??? (এই দূরত্বের সঠিক পরিমানের কথা উল্লেখ আছে এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অধম লেখকের ক্ষুদ্রতম জ্ঞানে জানা নাই। সম্মানিত পাঠক, এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস পেলে, অধম লেখককে জানানোর বিনীত অনুরোধ রইল।)
(৯) হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা শুরু বা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ মুসলিমরা কেন করবে? দেশে দেশে এই সীমান্ত তো মানুষের তৈরী, আল্লাহর দেয়া নয়, তাহলে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার অনুযায়ী কেন মুসলিমরা ভিন্ন ভিন্ন বারেরোযা শুরু করবে, আর কেনইবা ভিন্ন ভিন্ন বারে ঈদ করবে?? আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একেবারে পাশাপাশি এবং একটাই মুসলিম ভূমি। অথচ আফগানিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী যেদিন ঈদুল ফিতর হয়, সাধারনত পাকিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী তার পরদিন ঈদুল ফিতর হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একটাই মুসলিম ভূমি হওয়া স্বত্তেও হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখার কারনে সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী আফগানিস্তানে যেদিন ঈদুল ফিতর হচ্ছে পাকিস্তানে সেদিন রোজা হচ্ছে। অথচ ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম কি আশ্চর্য্য! একই ভূমিতে একই মুসলিম জাতি একই দিনে সরকারী ঘোষনা মানতে গিয়ে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার বা সীমান্ত অনুযায়ী সীমান্তের এক পাশে ঈদ আর অন্য পাশে রোজা করতে বাধ্য হচ্ছে!! হায়রে মুসলিমদের অবস্হা!! পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম একই জাতি হওয়াস্বত্তেও ব্রিটিশের ভাগ করা সীমান্ত, আলাদা আলাদা হারাম জাতিয়তাবাদী পতাকা, হারাম জাতিয়তাবাদী দালাল সরকার এইসবের কারনে ৫৭ টুকরায় বিভক্ত হয়ে আছে, এমনকি রোযা ঈদ পর্যন্তও এগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে!! বৃটিশরা দাগ টেনেছে মাটিতে, আর কিছু মুসলিম সেই দাগ আকাশেও টেনে বলছে, আমার দাগের ভিতরে চাঁদ আসলে এটা আমার চাঁদ, তোমার দাগের ভিতরে আসলে তোমার চাঁদ! কি ভয়ংকর জাতিয়তাবাদ!!
রাসূল (সঃ) বলেন, “সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে জাতিয়তাবাদের দিকে আহবান করে, জাতিয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে বা জাতিয়তাবাদের জন্য মারা যায়” [(আবু দাউদ)]
রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “যে আসাবিয়্যার (অর্থাৎ জাতীয়তাবাদের) জাহেলী আহবানের দিকে মানুষকে ডাকে সে যেন তার পিতার লজ্জাস্হান কামড়ে ধরে পড়ে আছে (তাকে ছাড়তে চাইছে না) । (এরপর রাসূল সাঃ বলেন) এবং একথাটি লুকিয়ে রেখোনা (অর্থাৎ বলার ক্ষেত্রে কোনো লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করোনা)”। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১২৩৩]
সুতরাং কোনো জাতি রাষ্ট্রের সীমানা অনুযায়ী মুসলিম উম্মত বিভক্ত হওয়া হারাম। শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই এবং তাদের ভূমিগুলো একই ভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়।
এবং রোজা রাখতে চায়। তাই না। আমি
যে খানে থাকি। বাংলাদেশের সাথে ব্যবধান ১২
ঘন্টা। পাগলের প্রলাপ মাএ।
জবাব: এই প্রশ্নের জবাবটি পুরোপুরি ভৌগলিক জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এ প্রশ্নের জবাব জানার পূর্বে ভৌগলিক কিছু ধারণা অর্জন একান্তই দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা প্রয়োজন, প্রতি চান্দ্র মাসের নতুন চাঁদ সকল সময় পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে দৃষ্টি গোচর হবে? না কি বিভিন্ন মাসের চাঁদ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেখো যাবে?
নুতন চাঁদ পৃথিবীর কোন অঞ্চলে সর্বপ্রথম দেখা যাবে আমাদেরকে সর্বাগ্রে সে ব্যাপারে যথাযথ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ বিষয়ে ভৌগলিক গবেষণার ফলাফল হলো প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সব সময়ই সর্বপ্রথম মধ্য প্রাচ্যের কোন না কোন দেশে দৃষ্টিগোচর হবে। কারণ চান্দ্র মাসের প্রথম দিনে চাঁদ এবং সূর্য প্রায় একই সময়ে পূর্ব দিগন্তে (জাপানে) উদিত হয়। এবং উদয় স্থলের পূর্ণ বিপরীত মেরুতে (দক্ষিণ-পশ্চিম আটলান্টিকে) সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রায় ৪৯ মিনিট পরে চাঁদ অস্ত যায়। অর্থাৎ সর্ব পশ্চিম দিগন্তে প্রথম তারিখের চাঁদ সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেও প্রায় ৪৯ মিনিট আকাশে থাকে। এ সময় সূর্যাস্তের পর দিগন্তে চাঁদের যে কিঞ্চিত অংশটুকু সূর্যের আলোয় প্রতিফলিত হয় তাকেই আমরা নুতন চাঁদ হিসেবে দেখি। প্রথম দিনের চাঁদ সূর্যের ৪৯ মিনিট পরে অস্ত যায় বলেই ২য় দিনের চাঁদ সূর্য উদয়ের ৪৯ মিনিট বিলম্বে পূর্বাকাশে উদিত হয়। কারণ আকাশের যে দিগন্ত রেখা আটলান্টিকের জন্য অস্তস্থল, আবার সে দিগন্ত রেখাই জাপানের জন্য উদয়স্থল। এভাবে প্রতি দিনই উদয়ের বিলম্বতায় ৪৯ মিনিট করে যুক্ত হতে থাকে। একারণেই ২৯ দিনে চাঁদকে ২৯টি স্থানে উদয় হতে দেখা যায়। আবার সাড়ে ২৯ দিন পরে চাঁদ ২৪ ঘন্টা ঘুরে এসে পরবর্তী চন্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার নুতন করে সূর্যের সঙ্গে প্রায় একই সময় উদিত হয়। গবেষণালব্ধ আলোচিত তথ্যগুলোকে সঠিক প্রমাণিত করছে এ হিসেবটি।
প্রতি দিনের চাঁদ উদয়ে বিলম্ব ঘটে ৪৯ মিনিট। প্রতি চান্দ্র মাসের পরিধি হচ্ছে সাড়ে ২৯ দিন ৬০ মিনিট = ১ ঘন্টা। সুতরাং (৪৯ X ২৯১/২ দিন / ৬০ মিনিট) = ২৪ ঘন্টা। এভাবেই প্রতি সাড়ে ২৯ দিনে চাঁদ ২৪ ঘন্টা সময় অতিক্রম করে পরবর্তী চান্দ্র মাসের ১ তারিখে আবার পূর্বের স্থানে সূর্য উদয়ের সমান সময়ে উদিত হয়।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, জাপান ও আটলান্টিকের মধ্যকার ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সূর্য ও চাঁদ অস্ত যাওয়ার মধ্যে ব্যবধান হয় ৪৯ মিনিট।
ভৌগলিক ভাবে প্রমাণিত যে, গ্রীনিচমান সময়ের (GMT) দিক থেকে পৃথিবীর সর্ব প্রথম সূর্য উদয়ের দেশ জাপান। যার ভৌগলিক অবস্থান ১৪২ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং ৩৭.৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ। এ উদয় স্থল হিসেবে পূর্ণ বিপরীত মেরুর অস্তস্থল হল দক্ষিণ পশ্চিম আটলান্টিক মহাসাগর। যার ভৌগলিক অবস্থান ৩৮ ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশ এবং ৩৭.৫ দক্ষিণ অক্ষাংশ। এ উদয় ও অস্ত স্থলের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ১২ ঘন্টা এবং অবস্থানগত দূরত্ব ১৮০ ডিগ্রী। কারণ প্রতি ১ ডিগ্রীতে সময়ের ব্যবধান ৪ মিনিট।
চান্দ্র মাসের ১ তারিখে চাঁদ ও সূর্য প্রায় একই সময়ে জাপানে উদিত হয়ে ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করে সন্ধ্যায় সূর্য যখন আটলান্টিকে অস্ত যায়, চাঁদ তার পরেও আটলান্টিকের আকাশে থাকে প্রায় ৪৯ মিনিট। ১৮০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে যদি সূর্য ও চাঁদের অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হয় ৪৯ মিনিট তাহলে এর অর্ধেক পথ অর্থাৎ ৯০ ডিগ্রী পথ অতিক্রম করতে সূর্য ও চাঁদের অস্ত যাওয়ার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হবে সাড়ে ২৪ মিনিট। মধ্য প্রাচ্যের (ইয়েমেন, রিয়াদ ও বাগদাদ) অবস্থান ৪৫ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে হওয়ায় উদয় স্থল জাপান ও অস্ত স্থল আটলান্টিকের সঙ্গে মধ্য প্রাচ্যের ভৌগলিক অবস্থানের ব্যবধান ৯০ ডিগ্রী। যে কারণে মধ্য প্রাচ্যে যখন সূর্যাস্ত হয় তার পরেও চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ মধ্য প্রাচ্যের আকাশে থাকে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সকল সময়ে সর্বপ্রথম মধ্য প্রাচ্যেই দৃষ্টি গোচর হবে। এবং ক্রমান্বয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ সমূহে সূর্যাস্তের পরে চাঁদের স্থায়িত্ব আকাশে বেশি সময় থাকবে। যার ফলে চান্দ্র মাসের ১ তারিখে ঐ সকল পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশে চাঁদ ক্রমান্বয়ে বেশী সময় ধরে দেখা যাবে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্বাঞ্চলীয় দেশসমূহ ক্রমান্বয়ে উদয় স্থলের নিকটবর্তী হওয়ায় সূর্যাস্তের পরে এখানকার আকাশে ১ তারিখের চাঁদের স্থায়িত্ব কম সময় থাকে এবং চাঁদ দিগন্তে আকাশে কম উঁচুতে থাকে বলেই উদয়স্থলের নিকটবর্তী দেশ সমূহ পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, চীন বা জাপানে কখনই চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ দেখা যাবে না।
উল্লেখিত ভৌগলিক গবেষণার আলোচনায় প্রমাণিত যে, প্রতি চান্দ্র মাসের ১ তারিখের চাঁদ সব সময় সর্বপ্রথম মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে দেখা যাবে।
আর তারপরেও যদি অন্য কোথাও চাঁদ দেখা যায় অর্থাৎ বিশ্বের যেখানেই আগে চাঁদ দেখা যাক না কেন সেই অনুযায়ী সারা বিশ্ব বাসীকে একই বারে/দিনে আমল করতে হবে, যা আমরা আগে আলোচনা করেছি।
যেহেতু প্রমাণিত যে, নুতন চাঁদ সকল সময়ই মধ্য প্রাচ্যের যে কোন দেশে সর্ব প্রথম দৃষ্টি গোচর হবে। তাই মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সবচেয়ে বেশী অগ্রগামী সময়ের দেশ জাপানবাসীর জন্য ১ম তারিখের রোযা রাখার সম্ভাব্যতা সর্বাধিক প্রশ্ন সাপেক্ষ। কিন্তু গবেষণায় সুপ্রমাণিত যে, ঐ দিন জাপানবাসীর জন্যও রোযা রাখা সম্ভব। যেমন বছরের সবচেয়ে ছোট রাত জুলাই মাসকেও যদি আলোচনায় আনা হয় তবে দেখা যাবে, জুলাই মাসে সর্ব শেষ সূর্যাস্ত হয় ৬টা ৫৫ মিনিটে। তাহলে মধ্য প্রাচ্যে সূর্যাস্তের পর পর সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখা গেল। ঐ সময় পৃথিবীর সর্বপূর্ব স্থান জাপানে রাত ১টা ২৮ মিনিট। কারণ মধ্যপ্রাচ্য ও জাপানের মধ্যে অবস্থানগত দূরত্ব ৯৭ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। ফলে স্থানীয় সময় মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের চেয়ে ৬ঘন্টা ২৮মিনিট অগ্রগামী। তাহলে ফলাফল দাড়াল মধ্য প্রাচ্যে সন্ধ্যা ৭টায় চাঁদ দেখা গেলে জাপানে সে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছতেছে রাত ১টা ২৮ মিনিটে। অথচ জুলাই মাসে সাহরী খাওয়ার সর্বনিম্ন সময় হলো ৩টা ৪৩ মিনিট। তাহলে জাপানবাসী চাঁদ উদয়ে সংবাদ পাওয়ার পরেও রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্য সময় পাচ্ছেন প্রায় ২ ঘন্টা ১৫ মিনিট। যা সাহরীর জন্য কোন বিবেচনায়-ই অপ্রতুল নয়। উপরন্ত ঐ সময়ের মধ্যে তারাবীর নামায আদায় করাও সম্ভব। আর পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের জন্য আমল করা কোন ভাবেই কষ্টকর নয়। কারণ যত পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশের দিকে আসা হবে তারা চাঁদ উদয়ের সংবাদের পরে সাহরী খাওয়ার জন্য ততবেশী সময় পাবে।
(২) যদি প্রশ্ন করা হয়, আমরা বাংলাদেশে যখন ইফতার করি তখন আমেরিকায় ভোর, আবার আমরা যখন সাহরী খাই তখন আমেরিকায় বিকাল, তাহলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে একই দিনে আমল করা কি করে সম্ভব?
জবাব: অত্র পশ্নের উত্তর বুঝার জন্য দু’টি মৌলিক বিষয় গভীর ভাবে স্মরণ রাখতে হবে। এক: চাঁদের তারিখ সংশ্লিষ্ট আমলগুলো সমগ্র পৃথিবীতে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবেনা। বরং একই দিনে (অর্থাৎ শুক্র, শনি, রবি----------বুধ বা বৃহস্পতিবারে) এবং একই তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। দুই: যেহেতু সব সময়েই মধ্যপ্রাচ্যের কোন না কোন দেশে সর্বপ্রথম নুতন চাঁদ দেখা যাবে তাই চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদাত পালনের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যে কোন দেশের সময়ের হিসেব মধ্যপ্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশ বা অন্য কোন দেশের সময়ের সঙ্গে নয়।
তাহলে মনে করা যাক, বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র রমযানের চাঁদ দেখা গেল এবং প্রমাণিত হল শুক্রবার পহেলা রমযান। এখন সমগ্র বিশ্বে পহেলা রমযান হিসেবে শুক্রবারে প্রথম রোযা রাখা যায় কিনা এটাই মূল বিবেচনার বিষয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় যখন মধ্য প্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেল তখন ঐ চাঁদ দেখার সংবাদ ১৪২ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত সর্বপ্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে পৌঁছবে জাপানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২৮মিনিটে। অথচ সাহরীর সর্বশেষ সময় সীমা কখনই ৩টা ৪৩মিনিটের নিম্নে আসেনা। তাহলে জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে শুক্রবারে রোযা রাখার জন্য সাহরী খেতে সময় পাচ্ছেন (৩:৪৩মিঃ - ১:২৮মিঃ) ২ঘন্টা ১৫মিনিট। এমনিভাবে ১২০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমবা, ফ্লোরেস, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের শেংইয়াং, হাইলার, ইনহো, রাশিয়ার টালুমা, খরিনটস্কি, সুখানা এবং অলিনেক অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায়। ফলে বছরের সব চেয়ে ছোট রাতেও চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার পহেলা রমযানের রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্যে তারা সময় পাবে ৩ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। অতএব তাদের জন্যে শুক্রবার রোযা রাখা সম্ভব। এরপরে ১০৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ তেলাকবেটং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীনের ইপিং, চেংটু, মোঙ্গলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্য সাইবেরিয়ান অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৪ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। তারপরে ৯০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, চীনের লাসা, টুরপান, ফাইয়ুন, রাশিয়ার আবাজা অচিনিস্ক, নগিনস্কি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টায়। ফলে তারাবীহ ও সাহরীর জন্যে তারা সময় পাবে ৫ ঘন্টা ৪৩ মিনিট এভাবে ৭৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ ভারতের দিল্লী, কাশ্মীর, কিরগিজিয়া, পূর্বপাকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐরাত ৯টায় এবং ৬০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ পাকিস্তানের করাচী, আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ওখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত পূর্ব গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম রোযা বা পহেলা রমযানের রোযা রাখা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ৪৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় রমযানের চাঁদ দেখা গেল তখন ৩০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান, জিম্বাবুই, জাম্বিয়ার বেলা, তানজানিয়ার বরুনডি, সুদান, মিসর, তুরস্কের বুরসা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লেলিন গ্রাদ ইত্যাদি অঞ্চলে উক্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায়। ফলে চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ লা রমযানের প্রথম রোযা রাখতে তারা সময় পাবেন ৯ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। এমনি ভাবে ১৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। ০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ টগো, মালি, আলজেরিয়ার রেগান, ওরান, স্পেনের ভ্যালেনসিয়া, ফ্রান্সের বদৌস ও প্যারিস এবং লন্ডন অঞ্চল সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়। আরো পশ্চিমে ১৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সেনেগাল, মৌরতানিয়ার নৌয়াকচট, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব আইসল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায়। এমনি করে ৩০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ২টায়, ৪৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ১টায়, ৬০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে পূর্ব আর্জেটিনায়, প্যারাগুয়ে, মধ্য ব্রাজিলে, পূর্ব ভেনিজুয়েলায়, পূর্ব কানাডায় এবং পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়। এমনি করে ৭৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১১টায়। ৯০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১০টায়। ১০৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ সমূহ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের আলবুক্য়ার্ক, ডেনভার, সিয়েন, মাইলস্ সিটি এবং মধ্য কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে এসব অঞ্চলের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। এমনি ভাবে সর্বশেষ ১৮০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায়। এবং উল্লেখিত সকল দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ সমূহের অধিবাসীরা জানবে যে, মধ্য প্রাচ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখার কারণে পহেলা রমযান হচ্ছে শুক্রবার।
অতএব মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশগুলো যথাক্রমে বৃহস্পতিবার দিনের অংশ ও পূর্ণদিন অতিক্রমের পরে স্থানীয় ভাবে যে দেশে যখন শুক্রবার শুরু হবে সে দেশে তখন শুক্রবারে পহেলা রমজানের প্রথম রোযা পালন করবে। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পশ্চিম গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার রমজান মাসের প্রথম রোযা বা পহেলা রমজানের রোযা করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
উল্লেখিত আলোচনার সারকথা হলো শুক্রবার দিবসটি জাপানে শুরু হবে মধ্যে প্রাচ্যের ৬ঘন্টা ২৮মিনিট পূর্বে এবং পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের ১৫ঘন্টা পরে। কিন্তু দিন একটিই তাহল শুক্রবার। তবে উভয় স্থানে দিন ও তারিখ হবে অভিন্ন। অতএব জাপানে শুক্রবারের রোযা শুরু হবে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ঘন্টা পূর্বে। আবার পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে রোযা শুরু হবে জাপানের স্থানীয় সময়ের ২৩ঘন্টা পরে। যেমন আমাদের বাংলাদেশে আমরা রোযা রাখলাম শুক্রবার। কিন্তু পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সাহরীর শেষ সময় যদি হয় ৪টা ৩০মিনিট, তবে রাজশাহীতে সাহরীর শেষ সময় হবে আরো ১৩ মিনিট পরে অর্থাৎ ৪টা ৫৩ মিনিট। তাহলে বাংলাদেশে শুক্রবারের রোযা পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হল ১৩ মিনিট পূর্বে এবং রাজশাহীতে শুরু হল ১৩ মিনিট পরে। ঠিক তেমনি সমগ্র পৃথিবীতে রোযা শুরু ও শেষ হওয়ার সময় স্থানীয় সময় অনুপাতে আগ-পিছ হলেও রমজান মাসের রোযা শুরুর দিনের বার ও তারিখ হবে সারা পৃথিবীতে অভিন্ন বা একই। অতএব সমগ্র পৃথিবীতে একই বার ও তারিখে রমজান মাসের প্রথম রোযা শুরু করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার আসুন ঈদুল ফিতরের হিসাব করি। ঠিক একই ভাবে, মনে করা যাক, বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় মধ্য প্রাচ্যে পবিত্র ঈদের চাঁদ দেখা গেল এবং প্রমাণিত হল শুক্রবার ঈদ। এখন সমগ্র বিশ্বে পহেলা শাওয়াল হিসেবে শুক্রবারে ঈদ করা যায় কিনা এটাই মূল বিবেচনার বিষয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় যখন মধ্য প্রাচ্যে চাঁদ দেখা গেল তখন ঐ চাঁদ দেখার সংবাদ ১৪২ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত সর্বপ্রথম সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে পৌঁছবে জাপানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২৮মিনিটে। তাহলে জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে শুক্রবারে ঈদ করবে।
এমনিভাবে ১২০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সুমবা, ফ্লোরেস, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের শেংইয়াং, হাইলার, ইনহো, রাশিয়ার টালুমা, খরিনটস্কি, সুখানা এবং অলিনেক অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টায়। ফলে বছরের সব চেয়ে ছোট রাতেও চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ঈদ করতে পারবে। অতএব তাদের জন্যে শুক্রবার ঈদ করা সম্ভব। এরপরে ১০৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ তেলাকবেটং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লাওস, চীনের ইপিং, চেংটু, মোঙ্গলিয়া এবং রাশিয়ার মধ্য সাইবেরিয়ান অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টায়। তারপরে ৯০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ বাংলাদেশ, ভুটান, চীনের লাসা, টুরপান, ফাইয়ুন, রাশিয়ার আবাজা অচিনিস্ক, নগিনস্কি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টায়। এভাবে ৭৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ ভারতের দিল্লী, কাশ্মীর, কিরগিজিয়া, পূর্বপাকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐরাত ৯টায় এবং ৬০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ পাকিস্তানের করাচী, আফগানিস্তান, পূর্ব ইরান, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তানে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ওখানকার স্থানীয় সময় রাত ৮টায়। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে জাপান পর্যন্ত পূর্ব গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার পহেলা শাওয়াল ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
এবার পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ নিয়ে আলোচনা করা যাক। ৪৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত মধ্যপ্রাচ্যে যখন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ঈদের চাঁদ দেখা গেল তখন ৩০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ দক্ষিন আফ্রিকার ডারবান, জিম্বাবুই, জাম্বিয়ার বেলা, তানজানিয়ার বরুনডি, সুদান, মিসর, তুরস্কের বুরসা, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার লেলিন গ্রাদ ইত্যাদি অঞ্চলে উক্ত চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে ঐ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায়। ফলে চাঁদ উদয়ের সংবাদ পাবার পরে শুক্রবার ১ লা শাওয়াল ঈদ করবেন । এমনি ভাবে ১৫ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায়। ০ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ টগো, মালি, আলজেরিয়ার রেগান, ওরান, স্পেনের ভ্যালেনসিয়া, ফ্রান্সের বদৌস ও প্যারিস এবং লন্ডন অঞ্চল সমূহে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায়। আরো পশ্চিমে ১৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত দেশ সেনেগাল, মৌরতানিয়ার নৌয়াকচট, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব আইসল্যান্ড ইত্যাদি অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায়। এমনি করে ৩০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ২টায়, ৪৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় দুপুর ১টায়, ৬০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমাংশে পূর্ব আর্জেটিনায়, প্যারাগুয়ে, মধ্য ব্রাজিলে, পূর্ব ভেনিজুয়েলায়, পূর্ব কানাডায় এবং পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায়। এমনি করে ৭৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১১টায়। ৯০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমায় সংবাদ পৌঁছবে বেলা ১০টায়। ১০৫ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ সমূহ মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের আলবুক্য়ার্ক, ডেনভার, সিয়েন, মাইলস্ সিটি এবং মধ্য কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে এসব অঞ্চলের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। এমনি ভাবে সর্বশেষ ১৮০ডিগ্রী পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, আলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায়। এবং উল্লেখিত সকল দ্রাঘিমায় অবস্থিত দেশ সমূহের অধিবাসীরা জানবে যে, মধ্য প্রাচ্যে বৃহস্পতিবার দিবাগত সন্ধ্যা ৭টায় নুতন চাঁদ দেখার কারণে পহেলা শাওয়াল ঈদ হচ্ছে শুক্রবার।
অতএব মধ্যপ্রাচ্য থেকে পশ্চিম দ্রাঘিমার দেশগুলো যথাক্রমে বৃহস্পতিবার দিনের অংশ ও পূর্ণদিন অতিক্রমের পরে স্থানীয় ভাবে যে দেশে যখন শুক্রবার শুরু হবে সে দেশে তখন শুক্রবারে পহেলা শাওয়াল ঈদ পালন করবে। তাহলে প্রমাণিত হল মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে পশ্চিম গোলার্ধের সকল দেশে শুক্রবার পহেলা শাওয়াল ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
উল্লেখিত আলোচনার সারকথা হলো শুক্রবার দিবসটি জাপানে শুরু হবে মধ্যে প্রাচ্যের ৬ঘন্টা ২৮মিনিট পূর্বে এবং পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হবে মধ্য প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের ১৫ঘন্টা পরে। কিন্তু দিন একটিই তাহল শুক্রবার। তবে উভয় স্থানে দিন ও তারিখ হবে অভিন্ন। অতএব জাপানে শুক্রবারের ঈদ শুরু হবে পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের ২৩ঘন্টা পূর্বে। আবার পশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রে ঈদ শুরু হবে জাপানের স্থানীয় সময়ের ২৩ঘন্টা পরে। সমগ্র পৃথিবীতে ঈদ শুরু ও শেষ হওয়ার সময় স্থানীয় সময় অনুপাতে আগ-পিছ হলেও ঈদের দিনের বার ও তারিখ হবে সারা পৃথিবীতে একই। অতএব সমগ্র পৃথিবীতে একই বার ও তারিখে ঈদ করা সম্পূর্ণ সম্ভব।
(১) বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সমূহের ( যেমন সৌদি আরব, ইয়েমেন, ওমান, ইরাক, কুয়েত, জর্দান ইত্যাদি দেশের ) একদিন পরে সিয়াম / রোজা শুরু করলে, বা বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে ঈদ করলে এই অবস্হা হয়: বাংলাদেশ থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সেখানে ঈদ করলে তার রোযা ২৮ বা ২৯ টি হয় অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে একটি কম হয়, আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে কেউ রোযা শুরু করে রমযান মাসের যে কোন দিন বাংলাদেশে এসে ঈদ করলে তার রোযা ৩০ বা ৩১ টি হয় অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে একটি বেশি হয়। অথচ ২৮ বা ৩১ রোজার বিধান ইসলামে নাই। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে আরবী মাস ২৯-এর কম হবেনা এবং ৩০-এর বেশী হবেনা। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে এই ২৮ বা ৩১ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
(২) ঠিক একই ভাবে আরও কিছু প্রশ্ন এসে যায়, যেমন মধ্যপ্রাচ্যে কেউ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে ঐদিন বাংলাদেশে এসে দেখল (স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে আমলের কারনে) বাংলাদেশের মানুষ রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? একইভাবে, আফগানিস্তানে কেউ ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায় করে ঐদিন (মানুষের তৈরী হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত পার হয়ে) একেবারে পাশের দেশ পাকিস্তানে এসে দেখল (স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে আমলের কারনে) মানুষ রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা?
আবার বাংলাদেশে কেউ স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে শাবানের হিসাব করে শাবানের শেষ দিন দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করে ঐদিন মধ্যপ্রাচ্যে যেয়ে দেখল মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ রমজানের রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? একইভাবে, পাকিস্তানে কেউ স্হানীয়ভাবে আলাদা চাঁদ দেখে শাবানের হিসাব করে শাবানের শেষ দিন দিনের বেলা খাওয়া-দাওয়া করে ঐদিন (মানুষের তৈরী হারাম জাতীয়তাবাদী সীমান্ত পার হয়ে) একেবারে পাশের দেশ আফগানিস্তানে যেয়ে দেখল আফগানিস্তানের মানুষ রমজানের রোজা করছে। তাহলে সে দিনের বাকী সময় পানাহার করতে পারবে কিনা? এইসকল সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়না।
(৩) লাইলাতুল কদর রমজানের শেষ দশদিনের বিজোড় রাত্রে যেমন ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এমন বিজোড় রাত্রে খোঁজ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করলে, মধ্যপ্রাচ্যে যেদিন বিজোড় রাত হয় বাংলাদেশে সেদিন জোড় রাত হয়, আবার বাংলাদেশে যেদিন বিজোড় রাত হয় মধ্যপ্রাচ্যে সেদিন জোড় রাত হয়। তাহলে শবে কদর কি মধ্যপ্রাচ্যের বিজোড় রাত অনুযায়ী হবে নাকি বাংলাদেশের বিজোড় রাত অনুযায়ী হবে নাকি দুই রাত্রেই হবে? যেমন উদাহরন স্বরূপ মধ্যপ্রাচ্যে যদি সোমবার দিনগত মঙ্গলবার রাতটি রমজানের শেষ দশদিনের একটি বিজোড় রাত ও কদরের রাত হয় তাহলে বাংলাদেশে (মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করার কারনে এলাকা ভিত্তিক হিসেবে) মঙ্গলবার দিনগত বুধবার রাতটি বিজোড় রাত ও কদরের রাত হবে। তাহলে উপরোক্ত উদাহরনে আসল কদরের রাত কি সোমবার দিনগত মঙ্গলবার রাত, নাকি মঙ্গলবার দিনগত বুধবার রাত, নাকি দুই রাতই? সূরা কদর অনুযায়ী কুরআন যে রাতে নাযিল হয়েছিল সেটাই কদরের রাত। কদরের রাতে সমগ্র কুরআন একত্রে লওহে মাহফুজ থেকে বায়তুল ইজ্জাহ বা প্রথম আসমানে নাযিল করা হয়েছে। উপরোল্লিখিত উদাহরন স্বরূপ যদি ধরে নেই, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য মঙ্গলবার রাত্রে ৩০ পারা কুরআন একত্রে নাযিল হয়েছে, তাহলে বাংলাদেশের জন্য ৩০ পারা কুরআন একত্রে কি বুধবার রাত্রে আরেকবার নাযিল হয়েছে??? মঙ্গলবার রাত আর বুধবার রাত কি কখনো একই রাত হতে পারে??? ৩০ পারা কুরআন একত্রে কয় রাতে নাযিল হয়েছে? কদরের রাত কি একটা নাকি দুইটা? একই বছর একই মাসে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় লাইলাতুল কদর কেন ভিন্ন ভিন্ন বারে (যেমন মঙ্গল, বুধ, ইত্যাদি) হবে? ৩০ পারা কুরআন কি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক রাতে আর বাংলাদেশের জন্য তার পরের রাতে অর্থাৎ দুই রাতে নাযিল হয়েছে?
(৪) হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়” [(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪০-২৪১, হাদীস নং ১৭৭৭) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৮)]
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।” [(সহীহ বুখারী, খন্ড ৩, হাদীস নং ১২৩ অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় - সাওম, হাদীস নং ৯, অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় ৩১, হাদীস নং ১২৩) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৯) অথবা (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪১, হাদীস নং ১৭৭৮,)]
উদাহরন স্বরূপ ধরে নেই মধ্যপ্রাচ্যে যদি বুধবার দিনগত বৃহস্পতিবার রাত্রে রমযান মাস শুরু হয় তাহলে বাংলাদেশে এলাকা ভিত্তিক চাঁদের হিসেব করলে মধ্যপ্রাচ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করার কারনে বৃহস্পতিবার দিনগত শুক্রবার রাত্রে রমযান মাস শুরু হবে। জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এগুলি কি মধ্যপ্রাচ্যের রমজান শুরুর রাত্রে অর্থাৎ উপরোল্লিখিত উদাহরন অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত্রে নাকি পরদিন বাংলাদেশের রমজান শুরুর রাত্রে অর্থাৎ শুক্রবার রাত্রে হবে নাকি দুই রাত্রে দুই বার হবে? ইবলিস আযাযিল শয়তান তো একটাই। তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য শয়তান বৃহস্পতিবার বেঁধে বাংলাদেশের জন্য শুক্রবার কি আরেকটা শয়তানকে বাঁধা হবে??? জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এগুলি দুই দিনে দুই বার নয় বরং এক দিনে এক বারই হয়ে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে এগুলি একাধিক বার হয় বলে মেনে নিতে হয় যা বিবেকগ্রাহ্য নয়।
(৫) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, “আরাফার দিনে রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি, তা পূর্ববর্তী বছর এবং পরবর্তী বছরের গুনাহ্ মুছে দিবে (বা ঐ দিনের রোযার বিনিময়ে আল্লাহ পাক রোযাদারের পূর্ববর্তী এক বছর এবং পরবর্তী এক বছরের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেন)”। [(মুসলিম শরীফ, অধ্যায় সাওম, হাদীস নং ২৬০২ ও ২৬০৩, অথবা অধ্যায় ৬, হাদীস নং ২৬০২ ও ২৬০৩) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ১১১ - ১১২, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৬১২ ও ২৬১৩)]
আরাফার দিন হচ্ছে সেটাই যেদিন হাজীগন আরাফার মাঠে থাকেন। ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা ও ঈদ মেনে নিলে আরাফার দিন দুটি হয়ে যায় অথচ আরাফার দিন একটাই।
(৬) চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী নিশ্চিতভাবে সঠিক স্হায়ী সীমানা নির্ধারন করা যায়না। কারন উদয় স্থল সর্বদা একই রকম থাকেনা। যে কোন বছরে যে কোন মাসের চাঁদ পৃথিবীতে প্রথম উদিত হলে যে এলাকাসমূহ তার আওতাভূক্ত থাকে তার সীমানা প্রতিমাসে একরকম থাকেনা, প্রতি বছরেও একরকম হয়না। তারপরেও যদি চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতার ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার সীমানা নির্ধারন করে একই দিনে সেই সীমানার এক পাশে রোযা অন্য পাশে ঈদ হয়, তবে সেই সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ কি রোযা করবে নাকি ঈদ করবে এর কোন সমাধান পাওয়া যায়না।
(৭) চাঁদ দেখার সংবাদ যদি নিকটবর্তি এলাকায় গ্রহণ করা হয় আর দূরবর্তি এলাকায় গ্রহণ না করা হয় তাহলে যে এলাকাকে সর্বশেষ নিকটবর্তি এলাকা মনে করে সংবাদ গ্রহণ করা হচ্ছে আর তার একেবারে পাশের এলাকাকেও দূরবর্তি মনে করে সংবাদ গ্রহন করা হচ্ছে না, এই দুই এলাকার সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ সংবাদ গ্রহণ করবে কিনা এর কোন সমাধান পাওয়া যায়না।
(৮) “চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ সর্বোচ্চ কতদূরত্বের মধ্য থেকে আসলে তা গ্রহনযোগ্য হবে” অথবা “সর্বনিম্ন কতটুকু দূরত্বের বাইরের চাঁদ দেখার নির্ভরযোগ্য সংবাদ গ্রহনযোগ্য হবে না” তার নির্ধারিত কোন পরিমান কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীসে পাওয়া যায় কি??? (এই দূরত্বের সঠিক পরিমানের কথা উল্লেখ আছে এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস অধম লেখকের ক্ষুদ্রতম জ্ঞানে জানা নাই। সম্মানিত পাঠক, এমন কোনো কুরআনের আয়াত বা রাসূল (সাঃ) এর হাদীস পেলে, অধম লেখককে জানানোর বিনীত অনুরোধ রইল।)
(৯) হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে রোযা শুরু বা ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ মুসলিমরা কেন করবে? দেশে দেশে এই সীমান্ত তো মানুষের তৈরী, আল্লাহর দেয়া নয়, তাহলে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার অনুযায়ী কেন মুসলিমরা ভিন্ন ভিন্ন বারেরোযা শুরু করবে, আর কেনইবা ভিন্ন ভিন্ন বারে ঈদ করবে?? আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একেবারে পাশাপাশি এবং একটাই মুসলিম ভূমি। অথচ আফগানিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী যেদিন ঈদুল ফিতর হয়, সাধারনত পাকিস্তানের সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী তার পরদিন ঈদুল ফিতর হয়। আফগানিস্তান ও পাকিস্তান একটাই মুসলিম ভূমি হওয়া স্বত্তেও হারাম জাতিয়তাবাদী বর্ডার বা দেশের সীমারেখার কারনে সরকারী ঘোষনা অনুযায়ী আফগানিস্তানে যেদিন ঈদুল ফিতর হচ্ছে পাকিস্তানে সেদিন রোজা হচ্ছে। অথচ ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম।
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম কি আশ্চর্য্য! একই ভূমিতে একই মুসলিম জাতি একই দিনে সরকারী ঘোষনা মানতে গিয়ে ব্রিটিশের দেয়া বর্ডার বা সীমান্ত অনুযায়ী সীমান্তের এক পাশে ঈদ আর অন্য পাশে রোজা করতে বাধ্য হচ্ছে!! হায়রে মুসলিমদের অবস্হা!! পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম একই জাতি হওয়াস্বত্তেও ব্রিটিশের ভাগ করা সীমান্ত, আলাদা আলাদা হারাম জাতিয়তাবাদী পতাকা, হারাম জাতিয়তাবাদী দালাল সরকার এইসবের কারনে ৫৭ টুকরায় বিভক্ত হয়ে আছে, এমনকি রোযা ঈদ পর্যন্তও এগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে!! বৃটিশরা দাগ টেনেছে মাটিতে, আর কিছু মুসলিম সেই দাগ আকাশেও টেনে বলছে, আমার দাগের ভিতরে চাঁদ আসলে এটা আমার চাঁদ, তোমার দাগের ভিতরে আসলে তোমার চাঁদ! কি ভয়ংকর জাতিয়তাবাদ!!
রাসূল (সঃ) বলেন, “সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয় যে জাতিয়তাবাদের দিকে আহবান করে, জাতিয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করে বা জাতিয়তাবাদের জন্য মারা যায়” [(আবু দাউদ)]
রাসূল (সঃ) আরও বলেন, “যে আসাবিয়্যার (অর্থাৎ জাতীয়তাবাদের) জাহেলী আহবানের দিকে মানুষকে ডাকে সে যেন তার পিতার লজ্জাস্হান কামড়ে ধরে পড়ে আছে (তাকে ছাড়তে চাইছে না) । (এরপর রাসূল সাঃ বলেন) এবং একথাটি লুকিয়ে রেখোনা (অর্থাৎ বলার ক্ষেত্রে কোনো লজ্জা বা অস্বস্তি বোধ করোনা)”। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২১২৩৩]
সুতরাং কোনো জাতি রাষ্ট্রের সীমানা অনুযায়ী মুসলিম উম্মত বিভক্ত হওয়া হারাম। শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই এবং তাদের ভূমিগুলো একই ভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়।
“চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা ছাড়, (ঈদ কর)” । [(সহীহ মুসলিম অধ্যায় ৬ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৪, ২৩৬৮, ২৩৬৯, ২৩৭৮, ২৩৭৯, ২৩৮০, ২৩৮১) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৭, ২৩৭১, ২৩৭২, ২৩৮২, ২৩৮৩, ২৩৮৪, ২৩৮৫) (সহীহ বুখারী, অধ্যায় ৩০- কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৯০৯)]
(২) রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ইরশাদ করেন-
“তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবেনা এবং চাঁদ না দেখে রোযা ছাড়বেনা (ঈদ করবেনা)” । [(সহীহ বুখারী অধ্যায় ৩১ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৩০) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮৫, হাদীস নং ১৯০৬) (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪৪, হাদীস নং ১৭৮৫), (সহীহ মুসলিম অধ্যায় ৬ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৩, ২৩৬৭, ২৩৭০) অথবা (মুসলিম শরীফ, অনুবাদ – আ.স.ম. নুরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, খন্ড ৪, অধ্যায় ১৪ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ২৩৬৬, ২৩৭০, ২৩৭৩)]
হাদীসটির ব্যাখ্যায় পবিত্র বোখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ বিশ্ব বিখ্যাত কিতাব “ফাতহুল বারী”-তে আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি লেখেন-
অর্থাৎ “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর বাণী “فلاتصوموا حتى تروه” এর মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে চাঁদ দেখতে হবে এমন উদ্দেশ্য নেয়া যাবেনা। বরং পবিত্র বাণীটির উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু ব্যক্তির চাঁদ দেখা। জমহুর ফকীহ গণের মতানুসারে রমযানের চাঁদ একজনের দেখাই যথেষ্ট হবে। যা হানাফী ফকীহগণের মত। আর অন্যদের মতে দু’জনের দেখা যথেষ্ট হবে। এ মতামত অপরিচ্ছন্ন আকাশের ক্ষেত্রে, কিন্তু আকাশ যদি পরিচ্ছন্ন থাকে তাহলে এমন সংখ্যক ব্যক্তির চাঁদ দেখতে হবে যাদের সংখ্যা দ্বারা চাঁদ দেখার সংবাদ প্রমাণিত হবে। যারা এক দেশের দেখা অন্য দেশের জন্য প্রযোজ্য বলে মত প্রকাশ করেছেন এটা তাদের মত। আর যারা প্রত্যেক দেশের জন্য চাঁদ দেখার মত প্রকাশ করেছেন তারা বলেছেন, ‘যতক্ষণ না তাকে দেখবে’ এর মাধ্যমে বিশেষ অঞ্চলের মানুষকে সম্বোধন করা হয়েছে, যা অন্য অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের এ মত হাদীসের প্রকাশ্য বক্তব্যের পরিবর্তন। অতএব চাঁদ দেখাকে প্রত্যেক মানুষের সাথে এবং প্রত্যেক দেশের সাথে সীমিত করা যাবে না”। (ইবনু হাজার আসকালানীর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতহুল বারী ফি শরহে ছহীহীল বুখারী, খন্ড-৪, পৃঃ-১৫৪)]
হাদীস গুলির মধ্যে বিশ্বনবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর “তোমরা” বলে সম্বোধন দেশ মহাদেশের সীমানা পেরিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে ব্যাপক অর্থবোধক সম্বোধন।
শুধু তাই নয়, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম নিজেও চাঁদ দেখার সংবাদ শুনে আমল করেছেন যা নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে ।
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল:
রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাঁর পবিত্র হায়াতে ২য় হিজরী থেকে ১০ম হিজরী পর্যন্ত সর্বমোট ৯ বার পবিত্র রমযান মাসের রোযা রেখে ছিলেন। তাই আমাদের গভীর দৃষ্টি দেয়া উচিৎ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর পবিত্র আমলের দিকে। রমযান মাসে রোযা রাখা এবং শাওয়াল মাসে ঈদ করার ক্ষেত্রে তিনি তাঁর পবিত্র আমলে, উক্ত হাদীস দু’টির প্রতিফলন কিভাবে করেছেন। উল্লেখিত হাদীস কারীমা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম কি নিজে চাঁদ দেখে রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? না কি অন্যের দেখার সংবাদের মাধ্যমেও রোযা রেখেছেন, ঈদ করেছেন? এ প্রসংগে পবিত্র হাদীস শরীফে যে প্রমাণ পাওয়া যায় তা হচ্ছে-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “কিছু সংখ্যক মানুষ (রমযানের) নতুন চাঁদ দেখল। আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-কে সংবাদ দিলাম যে আমিও উক্ত চাঁদ দেখেছি। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে রোযা রাখলেন এবং মানুষকেও রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন।" [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ২৩৪২, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ২৩৩৫) (তিরমিজি ৭৫৩, বায়হাকী ৮২৩৫, দারেমী) – (মিশকাত, পৃঃ-১৭৪)]
এমনি ভাবে হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “একজন মরুচারী মহানবী সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট আসলো এবং বললো, আমি প্রথম চাঁদ অর্থাৎ রমযানের চাঁদ দেখেছি। তখন রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই একথা সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম আল্লাহর রসূল তুমি কি একথা সাক্ষ্য দান কর? সে বলল হ্যাঁ, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বললেন, হে বেলাল মানুষের কাছে ঘোষণা করে দাও তারা যেন আগামী দিন রোযা রাখে”। [(আবু দাউদ হাদীস নং ২৩৪০, ইংরেজি অনুবাদ ২৩৩৩), তিরমিযী ৬৯১, পৃঃ-১৪৮; নাসায়ী ২১১২, পৃঃ-২৩১; ইবনু মাজাহ পৃঃ-১১৯, বায়হাকি ৮২৩০, মিশকাত পৃঃ-১৭৪)]
হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে-
হযরত আবু উমাইর ইবনু আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত “রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিকট একদল আরোহী আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে তারা গতকাল (শাওয়ালের) চাঁদ দেখেছে। ফলে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মানুষকে রোযা ছাড়ার আদেশ দিলেন। পরের দিন প্রাতঃকালে সকলেই ঈদগাহে সমবেত হলেন”। [(আবু দাউদ, সহীহ, হাদীস নং ১১৫৭, ইংরেজি অনুবাদ হাদীস নং ১১৫৩, নাসায়ী, মিশকাত-১২৭)]
অত্র হাদিসের ব্যাখ্যায় মিশকাত শরীফের উক্ত পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-
“তারা ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে সমাবেত হল। আল্লামা মাজহার বলেন যে ঐ বছর মদীনা শরীফে ২৯শে রমযান দিবাগত রাতে শাওয়ালের চাঁদ দেখা যায়নি। ফলে মদীনা বাসী ৩০ রমযানের রোযা রেখে ছিলেন। এমতাবস্থায় ঐ দিন দ্বিপ্রহরে একদল ছাওয়ারী দূর থেকে আসল এবং তারা সাক্ষ্য দিল যে, নিশ্চয়ই তারা ২৯ তারিখ দিবাগত রাতে নুতন চাঁদ দেখেছে। অতপর, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম তাদের এ সংবাদ গ্রহণ করে সকলকে রোযা ভঙ্গের নির্দেশ দিলেন এবং পরের দিন (২রা শাওয়াল) ঈদের নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন।“ (মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মিরকাতুল মাফাতিহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ ৫/১৫৩)]
অত্র হাদীস তিনটিতে রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম-এর নিজ আমল দ্বারা নিম্নোক্ত বিষয় গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়।
(১) মাস প্রমাণের জন্য সকলের চাঁদ দেখা জরুরী নয়, অন্যের দেখার গ্রহণযোগ্য সংবাদ শুনার মাধ্যমেও মাস প্রমাণিত হবে, ফলে রমজানে রোযা এবং শাওয়ালের চাঁদে ঈদ করতে হবে ।
(২) নিজ দেশের আকাশে নতুন চাঁদ দেখতে হবে এমন শর্ত করা যাবে না।
(৩) রমজানের চাঁদ না দেখতে পেলে এবং চাঁদ দেখার কোন সংবাদ না পেলে শাবান ৩০ পূর্ণ করার পর রোজা শুরু করতে হবে। আর ঈদুল ফিতরের চাঁদ না দেখতে পেলে এবং চাঁদ দেখার কোন সংবাদ না পেলে রমজান ৩০ পূর্ণ করে ঈদ করতে হবে। কিন্তু যে কোথাও চাঁদ দেখার গ্রহণযোগ্য সংবাদ পেলেই সেই সংবাদ দূর থেকে আসলেও সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে।
রমজান মাসের ফযিলাত বিশ্বব্যাপী একই দিনে শুরু:
পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য রমজান মাস যে একই দিনে শুরু হয় তার সুস্পষ্ট প্রমাণ এই হাদীস দুটি,
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়” [(সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪০-২৪১, হাদীস নং ১৭৭৭) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৮)]
হযরত আবু হুরাইয়রা রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যখন পবিত্র রমযান মাস এসে যায় তখন আসমানের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ করা হয়।” [(সহীহ বুখারী, খন্ড ৩, হাদীস নং ১২৩ অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় - সাওম, হাদীস নং ৯, অথবা খন্ড ৩, অধ্যায় ৩১, হাদীস নং ১২৩) অথবা (সহীহ বুখারী, ইংরেজী অনুবাদ - ড. মুহসীন খান, সৌদি আরব, খন্ড ৩, অধ্যায় ৩০, পৃষ্ঠা ৮২, হাদীস নং ১৮৯৯) অথবা (সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ২৪১, হাদীস নং ১৭৭৮,)]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্ট ৮টি জান্নাত ও ৭টি জাহান্নাম কোন অঞ্চল বিশেষের মানুষের জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য। তাই এই হাদীসের বর্ণনা মতে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা, মূল শয়তানকে বন্দি করা এবং জাবের রদিআল্লাহু তায়ালা আনহু-এর বর্ণিত হাদীস মতে আল্লাহ তায়ালার রহমতের দৃষ্টি দান করা রমযানের নতুন চাঁদ উঠার সঙ্গে সঙ্গেই সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য একই দিনে সমভাবে শুরু হয়। বাংলাদেশের স্থানীয় আকাশে চাঁদ দেখা যেতে ১দিন বা ২দিন বিলম্ব হওয়ায় উল্লেখিত কার্যক্রম এদেশের জন্য এক বা দু’দিন পরে শুরু হওয়া অথবা পুনরায় হওয়া বিবেক গ্রাহ্য নয়। তাই এই হাদীসে প্রমাণিত হল যে পবিত্র রমযানের ফযিলতের কার্যকারিতা আল্লাহ তায়ালার দরবারেও বিশ্বময় একই দিনে শুরু হয়। অতএব দেশ মহাদেশের ভিন্নতায় রমযান ও অন্যান্য ইবাদাত কখনই ভিন্ন ভিন্ন দিনে মেনে নেওয়া যায় না।
ঈদুল ফিতর ঈদুল আযহা সম্পর্কিত হাদীস:
একটি হাদীসে আয়েশাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত,
الْفِطْرُ يَوْمَ يُفْطِرُ النَّاسُ وَالأَضْحَى يَوْمَ يُضَحِّي النَّاسُ
রসূলুল্লাহ্ (দ.) বলেছেন, “ঈদুল ফিতর হলো ঐ দিন যেদিন মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ দিন যেদিন মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে।” [(তিরমিযী, সহীহ্, অধ্যায়ঃ ২, কিতাবুস্ সওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৮, (ঈদুল) ফিতর এবং (ঈদুল) আযহা কখন হবে, হাদিস # ৮০২)]
এই হাদিসে রসূলুল্লাহ্ (সঃ) “ইয়াওমা” শব্দ ব্যবহার করেছেন।“ইয়াওমা” শব্দটি একবচন, যার অর্থ “একদিন”। রসূলুল্লাহ্ (সঃ) বহুবচন শব্দ “আইয়্যামা” ব্যবহার করেননি। আর “আন্নাসু” শব্দটি “ইনসান” শব্দের বহুবচন হওয়ায় সকল মানুষ তথা সারা পৃথিবীর সকল মুসলিমদের বোঝানো হয়েছে। যেমন, মহান আল্লাহ্ বলেন,
“হে মানবজাতি তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর...-[(সূরা নিসা, ৪/১)]
এই আয়াতটিতে “আন্নাসু” শব্দটির দ্বারা সকল মানুষকে বুঝানো হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে হাদিসটিতেও “আন্নাসু” শব্দটি দ্বারা সকল মানুষকে অর্থাৎ সকল মুসলিমকে বলা হয়েছে। সুতরাং হাদীসটির ব্যাখ্যা দাঁড়ায় “ঈদুল ফিতর হলো ঐ একদিন যেদিন সারা পৃথিবীর সকল মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকে এবং ঈদুল আযহা হচ্ছে ঐ একদিন যেদিন সারা পৃথিবীর সকল মানুষ ঈদুল আযহা পালন করে থাকে”।
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি ঈদুল ফিতর সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য একই দিন এবং ঈদুল আযহাও সকল মানুষের জন্য একই দিন।
হাদীসে আরো বর্নিত হয়েছে
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, “রসূলুল্লাহ্ (দ.) ঈদুল ফিতরের দিন এবং কুরবানীর দিন সওম (রোজা) রাখতে নিষেধ করেছেন”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ ৩০, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৬৬, ঈদুল ফিতরের দিনে স্বওম রাখা, হাদিস # ১৯৯০, ১৯৯১, অনুচ্ছেদঃ ৬৭, কুরবানীর দিনে স্বওম, হাদিস # ১৯৯৩, ১৯৯৪, ১৯৯৫, অধ্যায়ঃ ৭৩, কুরবানী, অনুচ্ছেদঃ ১৬, কুরবানীর গোশত থেকে কতটুকু খাওয়া যাবে অথবা কতটুকু সঞ্চয় করে রাখা যাবে, হাদিস # ৫৫৭১, মুসলিম, অধ্যায়ঃ ১৩, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ২২, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে স্বওম পালন না করা, হাদিস # ১৩৮/১১৩৭, -১৩৯,১৪০,১৪১/১১৩৮, -১৪২/১১৩৯, -১৪৩/১১৪০, আবু দাউদ, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৮, কিতাবুস্ স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৪৮, দুই ঈদের দিন স্বওম পালন, হাদিস # ২৪১৬, ২৪১৭, ইবনু মাজাহ্, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৭, স্বিয়াম, অনুচ্ছেদঃ ৩৬, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭২১, ১৭২২, বায়হাক্বী (সুনানুল কুবরা), স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৭৫, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম না রাখা, হাদিস # ৮২৪৮, ৮২৪৯, ৮২৫০, দারিমী, স্বহীহ্, অধ্যায়ঃ ৪, কিতাবুস্ স্বওম, অনুচ্ছেদঃ ৪৩, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে স্বওম রাখা নিষেধ, হাদিস # ১৭৫৩ (হাদিসটি বুখারীর বর্ণনা)]
বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ করলে দেখা যাবে একটি অঞ্চলে যেদিন ঈদ, অন্য অঞ্চলে সেদিন রোজা অথচ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম
রাসূল (স) এর হাদীস
“তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবেনা এবং চাঁদ না দেখে রোযা ছাড়বেনা (ঈদ করবেনা)” । [(সহীহ বুখারী অধ্যায় ৩১ - কিতাবুস সাওম, হাদীস নং ১৩০)
হাদিসটি কোন দেশের ভৌগলিক সীমারেখায় বদ্ধ করার সুযোগ নেই। তারপরও রাষ্ট্র কাঠামোতে একে আবদ্ধ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উল্লেক্ষ্য যে, একসময় ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একই রাষ্ট্র ছিল। তখন ভারতের আকাশে চাঁদ দেখা গেলেই রোযা ও ঈদ পালন করা হতো । ৪৭ এর পর পাক-ভারত আলাদা হয়ে যায়। তখন থেকে দু’দেশের আকাশও আলাদা হয়ে গেল । ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়। তখন থেকে ‘বাংলাদেশের আকাশ’ নামে একটি আকাশেরও জন্ম হয়েছে। মহান আল্লাহ কি এভাবে পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের জন্য পৃথক আকাশ তৈরি করেছেন? পাকিস্তান আমলের কথা যাদের স্মরণে আছে তারা জানেন যে, পিন্ডি বা বেলুচে চাঁদ দেখে পূর্ব পাকিস্তানে রোজা রাখা হতো। অথচ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সময়ের ব্যবধান একঘন্টা। আবার একই জনপদ দুই রাষ্ট্রে ভাগ হয়ে গেলে (যেমন, দিনাজপুর বাংলাদেশ ও ভারতে বিভক্ত হয়ে আছে) সময়ের ব্যবধান না থাকা সত্বেও আকাশকে দেশের সীমানায় ভাগ করা হচ্ছে। তাই দেশের সীমানার জন্য তারিখ ব্যবধান সঠিক কিনা নিজেই চিন্তা করুন। রাষ্ট্রীয় সীমানায় হিজরী ক্যালেন্ডার তৈরী করে কেবল ক্ষমতার কুক্ষিগত অবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে, সার্বজনীন ইসলাম কায়েম হওয়া সম্ভব নয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন