খিলাফত রাষ্ট্র (দারুল ইসলাম) কাকে বলে

লিখেছেন লিখেছেন হামজা ২৪ জুলাই, ২০১৪, ০৮:১৯:৫৮ রাত



“দারুল ইসলাম” হল হুকুম শারি’আর এমন একটি আবশ্যিক শর্ত যেটাকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে কখনই মস্তিষ্ক প্রসূত চিন্তা অথবা আবেগ প্রাধান্য পেতে পারে না। এই খিলাফাহ রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে থাকে উম্মাহর সাথে রাষ্ট্রের প্রধানের (খলিফার) “চুক্তির” ওপর ভিত্তি করে এই শর্তে যে খলিফা হুকুম শরি’আকে ১০০ ভাগ বাস্তবায়ন করবে। ইসলামী আইনের ইতিহাসে এই “দারুল ইসলাম” কে ফুকাহারা (ফিকাহ শাস্ত্রের আলেম) খিলাফাহ বা ইমামাহ বা সুলতানিয়্যাহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং কুরআন ও সুন্নাহর নুসুস (দলীল) থেকে এই রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন। শাখা প্রশাখা নিয়ে কিছু ইখতিলাফ থাকলেও রাষ্ট্রের মুল সংজ্ঞা এবং শর্ত নিয়ে তেমন মতবিরোধ কখনই ছিল না।

আরবি ভাষায় “দার” এর বেশ কিছু শাব্দিক অর্থ আছে যেমন “বিরাম স্থান” (মাহাল্লু), “ভুমি” (বালাদ), আবাস ইত্যাদি। কিন্তু শরীয়তের পরিভাষায় ইসলামী দার (রাষ্ট্র) হল সেই ভুমি যেখানে হুকুম শরিয়াহ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত আছে এবং মুসলমানদের হাতেই আছে আভ্যন্তরীণ বিষয়ে এবং বহিঃশত্রুর আক্রমন থেকে “আমান” (নিরাপত্তা) এর নিশ্চয়তা। সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় (# ৪২৯৪) সুলাইমান বিন বুরাইদা থকে একটি বর্ণনা আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা) যখনি জিহাদের জন্য কোন দল প্রেরণ করতেন, তখন উনি সেটির আমিরকে বলতেন যারাই ইসলাম গ্রহন করবে তাদেরকে “দারুল হিজরাহ” তথা ইসলামী রাষ্ট্রে দেশান্তর হওয়ার জন্য আহ্বান করতে এবং তখনি তারা সব রকমের নাগরিক সুবিধা পাবে।

হানাফি মাযহাবের প্রখ্যাত ফকিহ ইমাম আল কাসানি (র) লিখেছিলেনঃ “আমাদের ইমাম (আবু হানিফা) বলেছেন যে ৩টি ক্ষেত্রে দারুল ইসলাম দারুল কুফরে পরিণত হয় – ইসলামের পরিবর্তে কুফরি আইন যখন প্রভাবশালী হয় অথবা কাফের রাষ্ট্রের সাথে চুক্তি ছাড়াই যখন দারুল ইসলামের সীমানা থাকে অথবা মুসলিম এবং যিন্মিদের কোন নিরাপত্তা মুসলিমদের হাতে থাকে না” [বাদা’উস সানা’ই, খণ্ড ৭]

রাসুলের সীরাহ ভালমতো পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই আল-‘আকাবার ঘটনায় এই দুটি শর্তের – আমান (নিরাপত্তা) এবং শরিয়াহ বাস্তবায়নে আনুগত্য – ওপর আনসারদের কাছ থেকে রাসুলুল্লাহ বা’য়াহ (শপথ) নিয়েছিলেন যা উবাদা ইবন সামিত (রা) থেকে বায়হাকির বর্ণনায় এসেছে। এই দুটি বিষয় বর্তমান বাস্তবতায় খুবই গুরুত্ব বহন করে। কারন বর্তমানে যদি কোন দল দারুল ইসলাম তথা খিলাফাহ ঘোষণা দিতে চায় তাহলে আমান এবং শরিয়াহর পূর্ণ বাস্তবায়নের আলোকেই তা করতে হবে।

শরিয়তের দৃষ্টিতে এ দুটি বিষয়ের দ্বারাই কোন ভুমিতে “তামকিন” (কর্তৃত্ব) কায়েম হয়েছে বলতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা) যখন আরবের বিভিন্ন গোত্র থেকে দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য “নুসরাহ” (সাহায্য) তালাশ করছিলেন, তখন ওনার কথোপকথন এবং অনড় অবস্থান থেকেই বুঝা যাচ্ছিল উনি যেনতেন ভাবেই একটি ভূমি দখলের পথকে বেছে নেননি। আমরা দেখেছি রাসুলুল্লাহ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য “তামনা’উনি” (تمنعوني) শব্দ ব্যবহার করেছিলেন যার অর্থ শক্তিমত্তার সাথে কোন কিছুকে রক্ষা করা। এবং এই রক্ষা (منع) করার বিষয়টি এমন ছিল না যে কোন শক্তিশালী গোত্র ওনাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামরিক সহায়তা দিতে চেয়েছিল আর উনিও রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। বরং রাসুলের শর্ত ছিল যে দারুল ইসলাম তৈরি হবে তা চারিদিক থেকে হবে সুরক্ষিত; যেটাকে রাসুলের ভাষায় আমরা বলতে পারি “হাতাহু” (حاطَهُ)। আলি (রা) হতে বায়হাকির একটি হাসান বর্ণনায় এসেছে রাসুলুল্লাহ যখন বানু শায়বান গোত্রের কাছে নুসরাহ চাইলেন এবং ওই গোত্র শর্ত দিল তারা শুধু কুরাইশদের কাছ থেকে ইসলামী রাষ্ট্রকে প্রতিরক্ষা করতে পারবে কিন্তু রোমান এবং পারস্যদের কাছ থেকে পারবে না, তখন রাসুলুল্লাহ তাদের ওই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বললেনঃ “...এই দ্বীনকে আল্লাহ তখনি বিজয় দিবেন যখন চারিদিক থেকে (‘হাতাহু) তা সুরক্ষিত হবে”

(ما أسأتم الرد إذ أفصحتم بالصدق إنه لا يقوم بدين الله إلا من حاطه من جميع جوانبه)।

তাই খিলাফাহ রাষ্ট্রের শার’ঈ ব্যাখ্যা হল – এই রাষ্ট্র মুসলিমদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবে এবং হুকুম শরিয়াহ সামগ্রিকভাবে কায়েম করবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যদি চিন্তা করি তাহলে যুদ্ধ চলারত অবস্থায় কিছু ভূমি দখলের মাধ্যমেই খিলাফতের ঘোষণাকে আমরা কখনই “তামকিন” বলতে পারি না, এবং এমন হলেও চলবে না যে আংশিকভাবে কিছু শরিয়াহ বাস্তবায়ন এবং হুদুদ কায়েমের মাধ্যমে কোন ভূমি খিলাফতের দাবীদার হতে পারে। এই দারুল ইসলামকে হতে হবে স্বয়ংভর (self sufficient) একটি রাষ্ট্র যা নিজেই নিজের খাদ্য নিরাপত্তা থকে শুরু করে সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সামর্থ্য রাখে । তাই কোন ভঙ্গুর দ্বীপ রাষ্ট্র যেমন খিলাফাহ হতে পারে না, তেমনি যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় কিছু অঞ্চল দখল করে রাষ্ট্রের শার’ঈ শর্ত পূরণ না করে খিলাফাহ রাষ্ট্রের ঘোষণাও দেয়া যেতে পারে না। অতএব, এই “দারুল ইসলাম” (খিলাফাহ) অবশ্যই ইসলামকে ১০০% বাস্তবায়ন করবে; এই রাষ্ট্রের সংবিধান, কাঠামো এবং প্রতিষ্ঠানসমূহ, অর্থনীতি, মুদ্রানীতি, বিচারব্যবস্থা, বৈদেশিক নীতি ইত্যাদি সব কিছুর ভিত্তি হবে কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে নিঃসৃত দলীল। এটি কোন জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র হবেনা। এই রাষ্ট্র হবে ঠিক রাসুলুল্লাহ (সা) এর মদিনার ইসলামী রাষ্ট্র এবং ওনার খুলাফায়ে রাশেদীন তথা আবু বকর, উমার, উথমান এবং আলি (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) দ্বারা চালিত রাষ্ট্রের মডেল অনুসারে।

বিষয়: বিবিধ

২৩০৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

247891
২৪ জুলাই ২০১৪ রাত ০৯:১১
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : কিছু মনে করবেন না । আপনি কি আপনার মা-বোন-স্ত্রী বা অধিনস্হ মেয়েদের সাথে নিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়েন ?

যদি এই প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা হয়, তাহলে আপনার এই পোস্ট লেখা সার্থক হবে । নচেৎ এই লেখা বৃথা হয়ে যাবে - এই লেখা দুনিয়া ও আখিরাতে কোনই কাজে আসবে না :

১. http://muhajjabah-bangladesh.blogspot.com/2013/07/blog-post.html
২.https://www.facebook.com/WrapOrnaInProperWay







আপনি কি আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেয়েদের ইসলামের নীতিমালা অনুযায়ী পোষাক পড়া ও নামাজ পড়ার ব্যাপারে উপদেশ দেন কি ?

https://www.facebook.com/WrapSareeInProperWay
https://www.facebook.com/WrapOrnaInProperWay

যদি না করে থাকেন, তাহলে আপনি ইসলামের দাওয়াত সঠিকভাবে দিচ্ছেন না ।

আপনাকে অভিনন্দন । আপনার স্বর্গ রাজ্য প্রতিষ্ঠা হোক - সেই কামনাই করছি ।
২৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:১০
192607
হতভাগা লিখেছেন : পায়জামার কাপড় যাতে টাখনুর নিচে না যায় সেটা খেয়াল রাখার কথা বলা হয় । এটা কি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য ?
২৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৩১
192608
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : হতভাগা : শেষের ছবিটা ইন্দোনেশিয়ার । সেখানে শাফেয়ী মাযহাব প্রচলিত । ওখানে পায়জামা বা প্যান্টের কাপড় টাখনুর নিচে ছেলেরা পড়তে পারবেনা - এনিয়ে আলোচনা হয় না । তবে সেখানে নারীদের নামাজের সময় পা ঢাকার কথা বলা হয় ।

পায়ের পাতা মেয়েরা নামাজের সময় না ঢাকলেও নামাজ হয়ে যাবে । আর ছেলেদের টাকনুর উপর কাপড় পড়তে হবে । কারণ টাকনুর নিচে কাপড় পড়া বা কাপড় মাটিতে গড়িয়ে চলাফেরা করা অস্বাস্হ্যকর ও অপরিচ্ছন্নতা বিস্তারের সহায়ক । উপরন্তু হাদিসে টাকনুর নিচে কাপড় পড়ার উপর সতর্কবানী রয়েছে ।
247938
২৪ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:৩০
মোতাহারুল ইসলাম লিখেছেন : ধন্যবাদ। খুব ভালো লাগলো।
২৫ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:১৩
192509
হামজা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর..
247939
২৪ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:৩৬
নূর আল আমিন লিখেছেন : ||
ভাল্লাক্সে চালিয়ে যা

২৫ জুলাই ২০১৪ রাত ১২:১৩
192510
হামজা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর..
247954
২৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:১৬
দিশারি লিখেছেন : ভালো লাগলো
২৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৫
192610
হামজা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর..
247960
২৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০২:৩৫
বুড়া মিয়া লিখেছেন : হুম, বেশ ভালো লাগলো। বিষয়গুলো আমার কাছে নতুন।
আপনার লেখা পড়ে বুঝা যাচ্ছে যে সিরিয়া-ইরাকে যে খেলাফত দাবী করেছে – সেটা খেলাফত হয় নি।
২৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৬
192611
হামজা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর..
247966
২৫ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৪৭
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : মডেল অনুসারে আপনি ব্যাখ্যা করুন। অন্যের দিকে
আঙ্গুল ফিরানো দরকার কি? একদম মোহাম্মদ ফখরুল মিয়ার মত চিন্তা।
২৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৬
192613
হামজা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর..
247974
২৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৫:১০
শেখের পোলা লিখেছেন : সঠিক বিশ্লেষণ৷ ধন্যবাদ৷
২৫ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৫:১৬
192532
স্বপন২ লিখেছেন : আপনার চেয়ে বিজ্ঞ লোক ওখানে রয়েছে।
এ ব্যাপারে না লিখে আল্লাহের উপর ছেড়ে দেন।
২৫ জুলাই ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৬
192612
হামজা লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খাইর..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File