বিদ্যুত সমস্যা নিয়ে একজন ভবিষ্যত খলীফাহর কথপোকথন
লিখেছেন লিখেছেন হামজা ২১ জুলাই, ২০১৪, ০১:৩২:২৯ দুপুর
[এক গুরুত্বপূর্ণ সফরে উলাইয়্যাহ বাংলাদেশ এ এসেছেন খলীফা। এবারের সফরে তিনি তার মুআইয়্যিন আত তানফীযদেরকে(Executive Assistance বা নির্বাহী সহকারী) সাথে করে নিয়ে এসেছেন। তাদেরকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প পরিদর্শনের নির্দেশ দিয়ে খলীফা বসেছেন মজলিস আল উম্মাহর সাথে আলাপচারিতায়। তাদের সাথে আলোচনা শেষে এবার বসেছেন ওয়ালীর (Governor) গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায়। আলোচনার এক পর্যায়ে]
খলীফা: ফিলিস্তিনে পাঠানো সেনাবাহিনীর ‘লিওয়া জানিসারি’ (Brigade of Martyrdom) এর মধ্যে উলাইয়াহ তুরস্ক, মিশর ও বাংলাদেশের বীরেরা তো ভাল পারফরমেন্স দেখাচ্ছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের বীর সৈনিকদের বীরত্ব তো চোখে পড়ার মত। যাইহোক তোমাদের এখানে বিদ্যুতের কি অবস্থা?
ওয়ালী: ফিলিস্তিনের মুসলিমদের সাহায্য করার জন্য বাংলাদেশের মুসলিমরা বরাবরই চেষ্টা করে আসছে, কিন্তু তেমন সুযোগ মেলেনি। আলহামদুলিল্লাহ! এখন তারা সুযোগ পেয়েছে। শুধু ফিলিস্তিনই নয় পৃথিবীর যেখানেই মানুষ ক্ষুধা-দারীদ্রে জর্জরীত অথবা নির্যাতিত অথবা অন্য যে কোন সমস্যায় নিপতিত, সেখানেই তাদের পাশে দাঁড়াতে চায় এই উলাইয়াহ এর মানুষ। আর মহান আল্লাহর শুকরিয়া এখানকার প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে গেছে। লোডশেডিং শূন্যের কোঠায়। শুধু উত্তরাঞ্চলে কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে শুনেছি। তবে ২-১ দিনের মধ্যে সমস্যা কেটে যাবে বলে আশা করছি।
(গাওয়াতে চুমুক দিতে দিতে...)
খলীফা: তোমরা এ ব্যাপারে বেশ ভাল অগ্রগতি দেখিয়েছ....তা বিল কেমন আসে?
ওয়ালী: ‘আমীরুল মু’মিনীন’, আপনি তো ভাল করেই জানেন, আমরা পুঁজিবাদী শাসকদের মত মাসে মাসে লাইন রেন্টও নেইনা, ভ্যাটও নেইনা, উপকরণের দামও রাখা হয়না। বিদ্যুতের জন্য কোন দাম নেয়া হয়না, শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণ আর সরবরাহের জন্য যেটুকু খরচ লাগে তাই নেয়া হয়। আগে যেখানে তারা বছরে ১ দিনার সমপরিমাণ অর্থ (প্রায়১২০০০ টাকা) ব্যয় করত, এখন সেখানে ১.৫ (প্রায় ১৫০০টাকা) দিরহামেই হয়ে যায়। অর্থাৎ আমরা প্রায় ৮ ভাগ কম খরচে সরবরাহ করতে পারছি। প্রথম প্রথম তো জনগণ বলাবলি শুরু করেছিল, ‘শায়েস্তা খাঁ’র আমল ফিরে এল নাকি?’
খলীফা: শায়েস্তা খাঁ??... মান হুওয়া?
ওয়ালী: বাংগালাদেশের জনগণের কাছে এ নামটি অর্থনৈতিক আগ্রগতির প্রতীক ছিল, কারণ তার শাসনামলে তখনকার তাদের মুদ্রায় ১ টাকায় ৮ মণ চাল পাওয়া যেত, আর আমরা যেই গাদ্দারদেরকে উৎখাত করেছি তখন ঐ একই পরিমাণ চাল পেতে জনগণকে প্রায় ১০,০০০ টাকা গুণতে হত.....ভাবুন একবার, কোথা হতে কোথায় গিয়ে ঠেকেছিল অর্থনীতি! আপনার নিশ্চয়ই সিরাজউদ্দৌলার কথা জানা আছে?
খলীফা: হ্যাঁ, হ্যাঁ...
ওয়ালী: তাঁর সময় বাংগালার শাসনকর্তা ছিল এই শায়েস্তা খাঁ। তবে উম্মাহর সেই সময় রাজনৈতিক চেতনার যে অধ:পতন ঘটেছিল, তার বৃত্ত হতে এরাও বের হতে পারেনি। কাফির বৃটিশদেরকে বাণিজ্য করার যে সুযোগ মুঘলরা করে দিয়ে গিয়েছিল, তারই সুযোগে তারা ১৭৫৭ তে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করে শাসনক্ষমতা আর অর্থনীতি উভয়ই করায়ত্ত করে ফেলে। তারা এমন সীমাহীন লুটপাট করে যে, মাত্র ১৩ বছরের মাথায় ‘ছিয়াত্তরের মন্বন্তর’ (১৭৭০ খ্রী. বাংলা ১১৭৬) নামে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হিসাবমতেই এ দুর্ভিক্ষে প্রায় ১ কোটি লোক মারা গিয়েছিল।
খলীফা: সেই হিন্দুস্তান, যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছিলেন, “আল হিন্দ হতে আমি মৃদু বাতাস পাচ্ছি”।
(সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল ওয়ালী)
ওয়ালী: এ কাফির বৃটিশ ঔপনিবেশিকরাই, অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডগুলো বিতাড়িত হওয়ার সময় যেমনটি করেছিল,এখানেও সেরকম, তাদের দালালদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে যায়। ঐক্যবদ্ধ মুসলিম উম্মাহ এক ভূখন্ড, এক পতাকা হারিয়ে ৫৮ টি ভিন্ন ভিন্ন ভূখন্ড আর হারাম জাতীয়তাবাদী পতাকা নিয়ে জাতীয়তাবাদের বিষবাষ্পে বিভক্ত হয়ে যায়।
খলীফা: ঐসব ইতিহাস আমি জানি.....তা এখানকার জ্বালানীর অবস্থা তো ধর্মনিরপেক্ষ শাসনামলে একদম ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে তোমরা বিদ্যুতের চাহিদা এত সহজে পূরণ করলে কিভাবে? আমাকে যদিও রিপোর্ট করা হয়েছে, কিন্তু আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই। শুনেছি পুরো পরিকল্পনাটা তোমার ছিল।
ওয়ালী: আসলে এখানকার কৃষির সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই আমি আমার পুরো পরিকল্পনা সাজিয়েছিলাম। ফলে এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য শিল্পও দাঁড়িয়ে গেল। আমি প্রথমেই জ্বালানীর দিকে নজর দিলাম। এখানকার জ্বালানী খাত আমিরিকা, রুশিয়া আর হিন্দুস্তানের দখলে ছিল। আমরা প্রথমেই সকল কোম্পানীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করলাম। ফলে প্রযুক্তি আর উপকরণের সমস্যা হলনা, অন্যদিকে জামিআ শাহজালাল (শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়) আর জামিআ খিলাফাহ (খিলাফাহবিশ্ববিদ্যালয়) হতে খনি প্রকৌশলীদের সহায়তায় পুরো ব্যাপারটাতে আমাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপিত হল, বিদেশ থেকে আর প্রকৌশলী ভাড়া করার প্রয়োজন পড়লনা। তারা এ খাতে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করল যা আমাদেরকে জ্বালানীর সঠিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব এনে দিয়েছে।
খলীফা: শুধু তেল, গ্যাস আর কয়লা দিয়েই সম্ভব করে ফেললে? পাকিস্তানের মওজুদ তোমাদের চেয়ে বেশি, চাহিদা আরও কম। কিন্তু ওখানকার ওয়ালীর কাছে শুনলাম, বিদ্যুৎ নিয়ে এখনও বেশ কিছু ঝামেলা রয়ে গেছে ওদের।
ওয়ালী: আসলে আমরা আরও কিছু কাজ করেছি, আমরা পরিবেশের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছি। ফলে Renewable Energyর ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে গিয়েছি। আমরা “আগামী দশকে খিলাফাহকে যেমন দেখতে চাই” এ নামে প্রতিযোগীতার আয়োজন করেছিলাম!
খলীফা: হ্যাঁ, শুনেছি সেটার কথা।
ওয়ালী: আশ্চর্যের বিষয়, শত শত ছেলে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এল। শ্যাওলা,কচুরিপানা, আবর্জনা এমনকি পাথরকুচি পাতা দিয়ে পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করল তারা। পঞ্চম শ্রেণীর এক ছেলে নিয়ে এল মাটি দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরির প্রকল্প। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই idea কোথায় পেয়েছ? সে বলল, ‘কবরে যে ফেরেস্তারা শাস্তি দিবে তারা নিশ্চয়ই শক দিবে, তাই তার মনে হয়েছে মাটির ভিতরেও বিদ্যুৎ থাকতে পারে’।
খলীফা: সুবহানাল্লাহ!
ওয়ালী: আরেকজন বলল, বৃষ্টির গতিকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরাতে....আরেকটা হিন্দু ছেলে মেঘকে নিয়ন্ত্রণ করে তার বিদ্যুৎ জমা করে রাখার প্রকল্প নিয়ে হাজির হল। আমরা তাদের পেছনে বিনিয়োগ করলাম। হিন্দুস্তানের যে প্ল্যান্টগুলো বছরের পর বছর ধরে এখানে বিনা শুল্কে ব্যবসা করছিল আর মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছিল আমরা সেগুলো দখল করলাম। চট্টগ্রামের অধিকাংশ অঞ্চলে এখন বায়ু বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। আর মধ্যাঞ্চলের বিশাল এলাকায় জৈব উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে। নদীগুলো নতুন করে নাব্যতা ফিরে পাওয়ার কারণে পানি বিদ্যুতের পথ প্রশস্ত হয়েছে, সেন্ট মার্টিনে আমরা সমুদ্রের ঢেউকে কাজে লাগাচ্ছি। এছাড়াও চীনা নকশার অনুকরণে শহরগুলোর প্রতিটি বিল্ডিংয়ে নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদনের ব্যবস্থা করে নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের বিমান বাহিনী সম্পূর্ণরূপে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করছে। অন্যান্য সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে মাটিতে অবস্থিত ব্যাকটেরিয়া আর ধূলাবালির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মত কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।
খলীফা: মাশাআল্লাহ! তোমরা বেশ ভাল কাজ দেখিয়েছ। তুমি এ ব্যাপারে উলাইয়াহ ইন্দোনেশিয়া, উলাইয়াহ পাকিস্তান ও উলাইয়াহ শামের (সিরিয়ার) ওয়ালীকে বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ দিয়ে সহায়তা করবে।
(কিছুক্ষণ নীরবতার পর)
আফসোস লাগে, কাফিরদের দেয়া গনতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থা আর তাদের দালালদের চক্রান্তে পড়ে এ উম্মাহকে কত দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। মজলিস আল উম্মাহর একজন বলল, এরকম এক দালাল নাকি তাদেরকে হুমকি দিয়ে বলেছিল, বেশি তেড়িবেড়ি করলে নাকি কয়েকদিন বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষা দিবে! নিজের জনগনের প্রতি এ কি ধরনের ভাষা! আবার তাদের এসব ভাষণ শুনতে নাকি লক্ষ লক্ষ লোক হাজিরও করত তারা। জনগণের ক্ষুধার সাথে তামাশা করে টাকা দিয়ে তারা লোক জমায়েত করত,আর তাদের কাফির প্রভুদেরকে তাদের জনসমর্থনের চিত্র তুলে ধরত। জনগণ যে কিভাবে তাদেরকে সহ্য করত!
ওয়ালী: এ দিনগুলো এখন অতীত! তারা অধিকার আর স্বাধীনতার নামে পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম করেছিল। হত্যা গুম গ্রেফতারে মানুষ চরম আতংকিত থাকত। এখন তো এমন অবস্থা যে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান নাগরিকরাও পর্যন্ত এই খিলাফত রাষ্ট্রকে ভালবাসে এবং তা রক্ষা করতে তারা রক্ত দিতেও প্রস্তুত।
খলীফা: আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন। (সরাসরি ওয়ালীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন) হিন্দুদের একজন প্রতিনিধি বলছিলেন, তুমি নাকি কোন কোন অঞ্চলে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের কাউকে কাউকে আখ চাষ করার নির্দেশ দিয়েছ?
(গলা শুকিয়ে গেল ওয়ালীর)
ওয়ালী: চিনি শিল্প দাঁড় করাতে এটা করেছিলাম, ওরা রাজি হচ্ছিলনা, ওদেরকে উপযুক্ত দাম দেয়া হয়েছে আর আখের ছোবড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে....
খলীফা: এত অজুহাত শুনতে চেয়েছে কে তোমার কাছে? তুমি কি চাও কিয়ামতের দিন আমি শিকল পরিহিত অবস্থায় উঠি আর আল্লাহর রাসূল এদের পক্ষ হয়ে আমার বিপক্ষে সাক্ষী দিবেন? মনে রাখবে, এটা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয় যে তুমি তার জমির উপর কর্তৃত্ব ফলাবে। আর তোমার এখানে কোন দুর্ভিক্ষও হচ্ছেনা যে তুমি শস্য ফলানোর ব্যাপারে নির্দেশ দিবে।
(মাথা নীচু করে রইল ওয়ালী)
তুমি অন্যায় করেছ, এই মুহূর্তে নির্দেশনা তুলে নাও এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দাও।
(আজকের গল্প এখানেই শেষ, গল্পটি কাল্পনিক তবে ইনশাআল্লাহ সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন এমনটাই বাস্তব হয়ে যাবে)
বিষয়: বিবিধ
৪১৭৮ বার পঠিত, ২০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটা অপ্রাসঙ্গিক জিনিস আপনার কাছে জানতে চাই –
একসাথে ৮ রাক’আত (যোহর+আসর) এবং ৭ রাক’আত (আসর+মাগরীব) এর নামায কিভাবে পড়বে? সাধারণতঃ আমরা ফরয ৪ রাক’আত এর ক্ষেত্রে প্রথম ২ রাক’আত-এ ফাতিহা এর পরে অন্য সূরা পড়ি এবং পরের ২ রাক’আন-এ শুধুই ফাতিহা পড়ি অন্য কোন সূরা পড়িনা। এরকম ৮ এবং ৭ রাক’আন এর ক্ষেত্রে কি আমরা প্রথম ২ রাক’আত এর পরে বাকী ৬ এবং ৫ রাক’আত-এ শুধুই ফাতিহা পড়বো? নাকি অন্য সূরাও পড়তে হবে?
ভাই
|| জবাব নেই ||
মন্তব্য করতে লগইন করুন