রোযা, ঈদ, লাইলাতুল কদর ও আরাফার দিন সহ চাঁদ নির্ভর প্রতিটি ইবাদাতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বারের বা দিনের ভিন্নতা কেন? কুরআন, সুন্নাহ্, ফিক্হ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান কী বলে? ৪র্থ অংশ
লিখেছেন লিখেছেন হামজা ০৮ জুলাই, ২০১৪, ০৫:২৫:৩৯ বিকাল
ফিকাহ এর সিদ্ধান্ত
হানাফী ফিকহের বক্তব্য:
(১) হানাফি ফিকহের বিশ্ব বিখ্যাত ও সর্বজন বিদিত ফিকহ্ গ্রন্থ “ফতহুল কাদির”-এ ফিকাহ শাস্ত্রের ইমাম ইবনে আল হুম্মাম আল হানাফী (রঃ) লিখেছেন-
"যখন কোন শহরে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে, তখন সকল মানুষের উপর রোযা রাখা ফরয হবে। ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মাযহাব অনুযায়ী পাশ্চাত্য বাসীর বা পশ্চিমের অধিবাসীদের চাঁদ দেখার দ্বারা প্রাচ্য বাসীর বা পূর্বের অধিবাসীদের জন্য রোযা রাখা ফরয হবে।" (ইমাম ইবনে আল হুম্মামের কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফতহুল কাদির, খন্ড-২, পৃঃ-৩১৮, ৩১৩) অথবা (ফতহুল কাদির, খন্ড-৪, পৃঃ-২১৬)]
(২) হানাফি ফিকহের প্রসিদ্ধ কিতাব ফাতওয়া-ই- আলমগিরীর সিদ্ধান্ত হলো:
"ফিকহের প্রতিষ্ঠিত বর্ণনানুযায়ী চাঁদ ঊদয়ের বিভিন্নতা গ্রহণীয় নয় । ফতুয়াই কাযী খানের ফাতওয়াও অনুরুপ। ফকীহ আবু লাইছও এমনটাই বলেছেন । শামছুল আইম্মা হালওয়ানী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, যদি পশ্চিমের অধিবাসীগন রমযানের চাঁদ দেখে তবে সে দেখার দ্বারা পূর্বের অধিবাসীদের জন্য রোযা ওয়াজিব হবে । এমনটাই আছে খোলাছা নামক কিতাবে-" (ফাতওয়া-ই- আলমগিরীর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতওয়া-ই-আলমগিরী, খন্ড-১, পৃঃ-১৯৮, ২১১,) অথবা (ফাতওয়া-ই-আলমগিরী, খন্ড-৫, পৃঃ-২১৬)]
(৩) হানাফি ফিকহের বিশ্ব বিখ্যাত ফিকহ গ্রন্থ ফাতওয়া-ই-শামী-এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-
“চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে কিনা? এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। এ ভাবে যে, প্রত্যেক দেশের মানুষ নিজ নিজ দেখার ভিত্তিতে আমল করবে? না কি উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য হবে না বরং সর্ব প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে সকলের জন্য আমল করা জরুরী হবে? এমনকি প্রাচ্যে যদি জুমার রাতে চাঁদ দেখা যায় আর পাশ্চাত্যে শনিবার রাতে চাঁদ দেখা যায় তবে পাশ্চাত্যের অধিবাসীদের উপর প্রাচ্যের দেখা অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব? এবিষয়ে কেউ কেউ প্রথম মতটি গ্রহণ করেছেন (অর্থাৎ এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশের মানুষের জন্য গ্রহনীয় নয়)। ইমাম যায়লায়ী ও ফয়েজ গ্রন্থের প্রণেতা এ মতটি গ্রহণ করেছেন। শাফেয়ী ফিকহের মতও এটা। তাদের যুক্তি হল চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশীয় লোক নামাযের ওয়াক্তের মতই নিজ এলাকা বিশেষে সম্বোধিত। যেমন যে অঞ্চলে এশা ও বিতরের ওয়াক্ত হয়না সেখানে এশা ও বিতর নামায আদায় করতে হয়না। আর সুপ্রতিষ্ঠিত মত হচ্ছে দ্বিতীয়টি অর্থাৎ চাঁদ দেখার ভিন্নতা গ্রহনীয় নয়। বরং প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সমগ্র পৃথিবীতে এক কেন্দ্রিক তারিখ গণনা করে, একই দিনে একই তারিখে আমল করতে হবে। এটাই আমাদের হানাফী ফিকহের সিদ্ধান্ত। মালেকী এবং হাম্বলী ফিকহের মতও এটা। তাদের দলীল হচ্ছে আয়াত ও হাদীসে চাঁদ দেখার সম্বোধন সকলের জন্য আম বা সার্বজনীন যা নামাজের ওয়াক্তের সম্বোধন থেকে আলাদা”। (ফাতওয়া-ই-শামীর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতওয়া-ই-শামী, খন্ড-২, পৃঃ-১০৫ অথবা ফাতওয়া-ই-শামী, খন্ড-২, পৃঃ-৪৩২)]
(৪) হানাফি ফিকহের বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ “বাহরুর রায়েক”-এর ভাষ্য হচ্ছে-
“চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অতএব যখন এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখবে, তখন অন্য দেশের মানুষের জন্য রোযা রাখা ফরয হবে, যদিও তারা চাঁদ দেখেনি। যদি তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছে যায়। অতএব পাশ্চাত্যবাসীর দেখার দ্বারা প্রাচ্যবাসীর জন্য রোযা রাখা অত্যাবশ্যক হবে। যদিও কেউ কেউ বলেন উদয় স্থলের বিভিন্নতা গ্রহণযোগ্য, একের দেখা অন্যের জন্য প্রযোজ্য নয়। তবে ফিকহের প্রতিষ্ঠিত সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রথমটি।এমনটাই লেখা হয়েছে ফতহুল কাদির গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে এটাই প্রকাশ্য মতামত এবং এর উপরই ফাতওয়া। খোলাছা নামক কিতাবের ভাষ্যও তাই”। (বাহরুর রায়েকের উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(বাহরুর রায়েক, খন্ড-২, পৃঃ-৪৭১)]
(৫) বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ “তাবয়ীনুল হাকায়েক”-এর ভাষ্য হচ্ছে-
“অত্র গ্রন্থের প্রণেতা (রঃ) বলছেন যে, চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। যদিও কেউ চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন।‘ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়’ এর অর্থ হচ্ছে যদি এক দেশের অধিবাসীরা নুতন চাঁদ দেখেন এবং অন্য দেশের অধিবাসীরা না দেখেন তবে প্রথম দেশবাসীর দেখা দ্বারাই অন্য দেশবাসীদের জন্য রোযা রাখা ফরয হবে। অধিকাংশ মাশাইখ-ই এমত পোষণ করেছেন। এমনকি এক দেশের মানুষ ৩০টি রোযা রাখল, অন্য দেশের মানুষ রোযা রাখল ২৯টি, তাহলে অন্যদেরকে একটি রোযা কাযা করতে হবে”। (তাবয়ীনুল হাকায়েকের উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(তাবয়ীনুল হাকায়েক, খন্ড-২, পৃঃ-১৬৪/১৬৫)]
(৬) “ফাতওয়া-ই-কাযীখান”-এর ভাষ্য হচ্ছে-
“ফিক্হের সুপ্রতিষ্ঠিত মতানুসারে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। শামসুল আইম্মা হালওয়ানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এমতই উল্লেখ করেছেন”। (ফাতওয়া-ই-কাযীখানের উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(কাযীখান, খন্ড-১, পৃঃ-৯৫)]
(৭) বিশ্ব বিখ্যাত গ্রন্থ “হাশিয়া-ই-তাহতাবী” শরীফের ভাষ্য হচ্ছে-
“ঈদুল আযহাসহ সকল মাসের চাঁদের হুকুম শাওয়ালের চাঁদের হুকুমের মতোই। কোন উদয় স্থলে চাঁদ দেখা গেলে দুনিয়ার সকল স্থানের মানুষের উপরই আমল জরুরী হবে। যদি চাঁদ উদয়ের সংবাদ পৌঁছে দুইজন সাক্ষীর সাক্ষ্যে, অথবা কাযীর ফয়সালার উপরে দুইজন সাক্ষ্য দেন, অথবা উদয়ের সংবাদটি ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করে”। (হাশিয়া-ই-তাহতাবীর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(হাশিয়া-ই-তাহতাবী শরীফ, পৃঃ-৩৫৯)]
(৮) “মায়ারিফুস্ সুনান”-এর ভাষ্য হচ্ছে-
“আমাদের ফিকহের কিতাব সমূহের উপর ভিত্তি করে আমরা লিখেছি যে, এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে গ্রহণীয় হবে। যদিও দেশ দুটির মধ্যে পশ্চিম ও পূর্বের দূরত্ব হয়। আর এ মাসয়ালা ফকীহ্গণের এ নীতিমালার উপর ভিত্তি করে যে চাঁদ উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে না। তবে ফকিহগণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, নামায ও ইফতারের ওয়াক্ত সমূহের ভিন্নতা গ্রহণীয় হবে এবং যার যার স্থানীয় সময় অনুযায়ী নামায পড়বে ও ইফতার করবে”। (মায়ারিফুস্ সুনানের উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মায়ারিফুস্ সুনান, খন্ড-৫, পৃঃ-৩৩৭)]
(৯) দারুল উলুম দেওবন্দ এর প্রখ্যাত হানাফী আলেম আল্লামা রশীদ আহমদ গোংগুহী (রহঃ)-এর ভাষ্য নিম্নরূপ-
“ফিকহের প্রতিষ্ঠিত মতানুসারে রোযা রাখা ও ঈদ করার ব্যাপারে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়”। (রশীদ আহমদ গোংগুহীর (রহঃ) কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতওয়া-ই-রশিদিয়া, পৃঃ-৪৩৭)]
আল্লামা রশীদ আহমদ গোংগুহী (রহঃ) আরও বলেন,
“যদি কোলকাতার মানুষ শুক্রবার চাঁদ দেখে, অথচ মক্কায় তা দেখা গিয়েছে বৃহস্পতিবার, কিন্তু কোলকাতার মানুষ তা জানতে পারেনি, তাহলে যখন তারা জানতে পারবে, তাদের জন্য মক্কার মানুষের সাথে ঈদ করা জরুরী হবে এবং প্রথম রোযা কাযা করতে হবে”। (রশীদ আহমদ গোংগুহীর (রহঃ) কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(শরহে তিরমিযি, কাউকাব উন দুররী, পৃষ্ঠা-৩৩৬ উর্দু সংস্করণ)]
(১০) উপমহাদেশের প্রখ্যাত হানাফী আলেম ও গবেষক আল্লামা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) বেহেশতী- জেওর এ লিখছেন,
"এক শহরের চাঁদ দেখা অন্য সকল শহর বাসীদের জন্য গ্রহণীয় হবে। ঐ শহরগুলোর সঙ্গে চাঁদ দেখা শহরের যত দুরত্বই হোকনা কেন। এমনকি সর্ব পশ্চিমের চাঁদ দেখার সংবাদ সর্ব পূর্বের মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে পৌছলে ঐ দিনই তাদের উপর রোযা রাখা ফরয হবে”। (আশরাফ আলী থানভীর (রহঃ) কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(বেহেশতী- জেওর, খন্ড-১১, পৃঃ-৫১০) অথবা (Behishti Zewar, Section 11, pg 104, part 4) {Referenced from ‘Behr Al Raqeeq, pg 270, vol.2; Fatwa Alamghiri pg 97, vol1}].
এছাড়াও আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) ইমদাদুল ফাতওয়ায় এক প্রশ্নোত্তরে লিখেছেন,
প্রশ্ন (#১৬৩): এক শহর থেকে অন্যশহরের দূরত্ব কতটুকু হলে চাঁদ দেখার সংবাদ (গ্রহনযোগ্য বলে) বিবেচিত হবে? এ ব্যাপারে ফিকাহবিদগনের মাঝে মতভেদ আছে কিনা? ইসলামী বিধানের হানাফি ফিকাহ মতে এ ব্যপারে ফাতওয়া কি?
উত্তর: দুর্রুল মুখতার এ লিখিত হয়েছে, ‘ইসলামী বিধানের এই (হানাফি) ফিকাহ এর অধিকতর শক্তিশালী মত হচ্ছে উদয়স্হলের ভিন্নতা বিবেচ্য নয়। ফাতওয়াও এই অনুযায়ী।খুলাছা থকে বাহরুর রায়েক এর উদ্ধৃতি দিয়ে “পূর্বের মানুষের জন্য বাধ্যতামূলক পশ্চিমের চাঁদ দেখাকে বিবেচনা করা যদি সেইসব মানুষের দেখা আইনানুসারে নির্ভযোগ্য পদ্ধতিতে প্রতিয়মান হয়”। কামাল ইবনে হুম্মাম বলেন, “অধিকতর শক্তিশালী মত কে গ্রহন করাই অধিক সতর্কতা”।(খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৫৪, ১৫৫)। এথেকে এটা সুস্পষ্ট যে, ফতোয়া মূলত এটার উপরেই যে উদয়স্হলের ভিন্নতা বিবেচ্য নয়। ২৫ রমজান ১৩৩৩ হিজরী। (তাতিম্মাহ ছালিছাহ, পৃষ্ঠা ৮২ ) (আশরাফ আলী থানভীর (রহঃ) ফাতওয়ার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(হাকিমুল উম্মাত শাইখ আশরাফ আলী থানভী, ইমদাদুল ফাতাওয়া খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩৮)]
(১১) উপমহাদেশের অন্যতম ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র “দারুল উলুম দেওবন্দ”-এর গ্রান্ড মুফতি আযিযুর রহমান সাহেব ফতোয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ-এ লিখেছেন-
“হানাফী ফিকাহ মতে চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা গ্রহনীয় নয়। যদি কোন স্থানে শা’বান মাসের ২৯ তারিখে রমযানের চাঁদ দেখা যায় এবং শরয়ীভাবে তা প্রমাণিত হয় তখন ঐ হিসেবেই সকল স্থানে রোযা রাখা অপরিহার্য হয়ে যাবে। যে স্থানের লোকেরা সংবাদ পরে পাওয়ার কারণে শা’বান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে রোযা শুরু করেছে তারাও প্রথমদের সঙ্গে ঈদ করবে এবং প্রথমের একটি রোযা কাযা করবে”। (আযিযুর রহমান সাহেবের ফাতওয়ার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতওয়া-ই-দারুল উলুম দেওবন্দ, খন্ড-৬, পৃঃ-৩৯৮)]
ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দে আরও লিখিত রয়েছে,
“যেখানেই চাঁদ দেখা প্রমানিত হয়, সেখান থেকে যত দূরত্বই হোক, এমনকি যদি হাজার মাইল দূরত্বও হয় সেখানকার জনগনকে তা মেনে নিতে হবে”। (দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ, খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-৩৮০, উর্দু সংস্করণ)]
(১২) একই কথা লিখেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ও মুফতি আব্দুল কাবী মুলতানী (রহঃ) তার রচিত ছিহাহ ছিত্তা এর ব্যাখ্যা গ্রন্থ “মিফতাহুন্ নাজ্জাহ্” কিতাবে। যার ভাষ্য নিম্নরূপ-
“(ফিকাহ শাস্ত্রের ইমাম) ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইমাম লাইছ ইবনু সা’দ আল মিশরী, অধিকাংশ ফকিহগণ এবং ইমাম শাফেয়ী রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার এক মতে রমযানের রোযার ক্ষেত্রে এই রায় দিয়েছেন যে, যখন কোন এক জনপদে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে তখন দুনিয়ার অন্য সকল জনপদে ঐ দেখা গ্রহণীয় হবে। এমনকি পাশ্চাত্য অধিবাসীগণ চাঁদ দেখলে প্রাচ্যের অধিবাসীদের জন্যে ঐ দেখা দলীল হবে। এ সকল মহামান্য ইমামগণের নিকট রমযানের রোযার ক্ষেত্রে চাঁদ উদয় স্থলের ভিন্নতা মোটেই গ্রহণীয় নয়। বরং সমস্ত পৃথিবী এবং সকল উদয় স্থল এক উদয় স্থল হিসেবে গণ্য হবে। এবং সমগ্র পৃথিবী একটি দেশের মতই গন্য হবে। যেখানেই প্রথম চাঁদ দেখা যাবে উক্ত দেখা শরয়ী পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌঁছলে তার ভিত্তিতে সকলের জন্য আমল করা জরুরী হবে। উক্ত দুই দেশের মধ্যে যতই দূরত্ব হোকনা কেন। এমন কি যদি অষ্ট্রেলিয়া বা আমেরিকার অধিবাসীগণ চাঁদ দেখেন তাহলে ঐ দেখার দ্বারা পাকিস্তান এবং দূর প্রাচ্যবাসীর উপর রোযা রাখা জরুরী হবে”। (আব্দুল কাবী মুলতানীর (রহঃ) কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(মিফতাহুন্ নাজ্জাহ, খন্ড-১, পৃঃ-৪৩২)]
(১৩) একই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রাচীন ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাট হাজারী মাদরাসার শাইখুল হাদীস আল্লামা হাফেজ আবুল হাসান সাহেব তার রচিত মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘তানযীমুল আশ্তাত’ এ, যার ভাষ্য নিম্নে উদৃত হল-
“চাঁদের উদয় স্থলের ভিন্নতা (ফিকাহ শাস্ত্রের ইমাম) ইমাম আবু হানিফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর নিকট গ্রহণীয় নয়। শামী কিতাবে এমনটাই রয়েছে। এটাই আমাদের (হানাফীদের) রায়। মালেকী ও হাম্বলী ফিকহের মতও এটা। অতএব, কোন স্থানে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সর্বত্রই আমল অত্যাবশ্যকীয় হবে”। (আবুল হাসান সাহেবের কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(তানযীমুল আশ্তাত, খন্ড-১, পৃঃ-৪১)]
(১৪) (ফিকাহ শাস্ত্রের ইমাম) ইমাম হাছকাফী, ইমাম নাসাফী এবং ইমাম নুজাইম আল মাসরী এর বর্ণনা দিয়ে লিখিত হয়েছে,
“চাঁদের উদয় স্হলের ভিন্নতা বিবেচ্য নয়। সুতরাং যদি এক শহরের মানুষ চাঁদ দেখে, যখন অন্য শহরের মানুষ চাঁদ দেখেনি, এমতাবস্হায় চাঁদ দেখার সংবাদটি সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে যারা চাঁদ দেখেছে তাদের কারনে অন্যদের রোযা রাখা জরুরী হবে । সুতরাং পশ্চিমের অধিবাসীদের চাঁদ দেখা পূর্বের অধিবাসীদের জন্যও প্রযোজ্য হবে”। (উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(রদ্দুল মুহতার, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ৩৬৩, ৩৬৪) (দুর্রুল মুখতার, পৃষ্ঠা ১৪৩-১৪৫)]
(১৫) “শামসুল আইম্মা ইমাম আল হালওয়ানী (রঃ) এর মতে চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা বিবেচ্য নয়” (উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(শরহে তুহফাত আল মুলুক লি মুহাম্মদ বিন আব্দুল লতিফ আল মারুফ বি ইবনে আল মালাক, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১২৬৪)]
(১৬) জামে তিরমিজি শরীফের মুকাদ্দামায় লেখা হয়েছে-
“প্রত্যেক দেশের মানুষ নিজ নিজ দেশের চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আমল করবে কিনা? এ প্রসংগে ইমাম আবু হানিফা (রঃ) থেকে তিনটি মত বর্নিত হয়েছে। ১) এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে গ্রহনীয় হবেনা। ২) এক দেশের চাঁদ দেখা অন্য দেশে গ্রহনীয় হবে। ৩) বিশেষ সতর্কতা, যেমন- রোযা রেখে ইবাদতে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে গ্রহনীয় হবে, অন্যথায় গ্রহনীয় হবেনা। কিন্তু এ তিনটি মতের মধ্যে প্রসিদ্ধমত হলো ২য়টি এবং এমতের উপর-ই হানাফী ফিকাহ প্রতিষ্ঠিত”। (তিরমিজি শরীফের মুকাদ্দামার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(তিরমিজি শরীফ মুকাদ্দামা-২২পৃষ্ঠা)]
(১৭) বর্তমান বিশ্বের বিশ্ব বরেণ্য আলেম মুফতি তাক্বি উসমানী সাহেব (দাঃবাঃ) লিখেছেন,
“(ফিকাহ শাস্ত্রের ইমাম) ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর মতে চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা বিবেচ্য নয়। এর অর্থ হচ্ছে যদি এক এলাকায় চাঁদ দেখা সঠিকভাবে প্রমানিত হয় তবে তা অন্য এলাকার জন্য গ্রহনীয় হবে। এই কারনেই হানাফি ফিকাহবিদগন বলে থাকেন যদি পশ্চিমের অধিবাসীগন নতুন চাঁদ দেখে তবে সেটা পূর্বের অধিবাসীদের জন্যও (চাঁদ দেখার) প্রমান।
হানাফি ফিকাহবিদগনের ‘প্রধানত শক্তিশালী মতামত’ (জাহির রিওয়ায়াত predominantly stronger opinion) একেবারে পরিষ্কার।যদি বিশ্বের যে কোন স্হানে চাঁদ দেখা যায় এবং অন্য যে কোন এলাকায় তা শরীয়তসম্মতভাবে বিশ্বাসযোগ্য হয় তবে এই এলাকার জন্যও চাঁদ দেখা প্রতিষ্ঠিত হবে।”। (তাক্বি উসমানী (দাঃবাঃ) সাহেবের কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ইমামুল বারী শরহে সহীহ বুখারী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৮৯)]
মুফতি তাক্বি উসমানী সাহেব আরও লিখেছেন,
“মানুষ মনে করে থাকে দূরবর্তী স্হান হলেই চাঁদের উদয়স্হল(horizon) ভিন্ন হয় আর নিকটবর্তী স্হান হলে উদয়স্হল(horizon) একই হয়। কিন্তু এটা সত্য নয়। বাস্তবতা হচ্ছে যারা চাঁদ দেখতে পায় তারা এটা আলোকরশ্মি হিসেবে দেখতে পায়, যারা এই আলোকরশ্মির আওতায় থাকে তারাই এটাকে দেখতে পায়, যারা এই আলোকরশ্মির আওতার বাহিরে থাকে তারা এটাকে দেখতে পায় না। উদাহরন স্বরূপ ধরে নেই চাঁদ উদিত হল এবং একটি টেবিলের উপরিভাগ হচ্ছে এর আলোকরশ্মির সীমা, এই পরিসীমার মধ্যে চাঁদ দেখা যাবে।যদি একজন ব্যক্তি টেবিলের একপ্রান্তে থাকে এবং অপরজন টেবিলের অপর প্রান্তে থাকে তবে তাদের মাঝে হাজার মাইল দূরত্ব হলেও তাদের জন্য উদয়স্হল (horijon) একই। কারন তারা দুইজনই আলোকরশ্মির আওতার মধ্যে এবং উভয়েই চাঁদ দেখতে পাচ্ছে। পক্ষান্তরে আরেকজন ব্যক্তি যদি আলোকরশ্মির আওতার মধ্যে না থাকে তবে সে আলোকরশ্মির আওতার মধ্যে থাকা ব্যক্তির খুব কাছে থাকলেও তার উদয়স্হল (horijon) ভিন্ন। আসুন একটি দৃশ্যমান উদাহরন নেই এটাকে বুঝার জন্য। মনে করুন দারুল ঊলুমের (মাদ্রাসার) বাহিরে একটি উচুঁ পানির ট্যাংকি আছে। যদি আপনি এর চার দিক দিয়ে ঘুরতে থাকেন আর এটাকে দেখতে থাকেন এটা আপনি অনেক দূর থেকে দেখতে পাবেন। (বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর) একটা পর্যায়ে এটা আর দেখা যাবেনা। (যে কোন দিকে যেখানে এটা সর্বশেষ দেখা যায় সেই শেষ প্রান্ত থেকে) বিপরীত দিকে (শেষ প্রান্তে) সেখানেও এই ট্যাংকিটি দেখা যাবে। এই দুই স্হানের দূরত্ব চার বা পাঁচ মাইল হলেও তাদের উদয়স্হল একই। পক্ষান্তরে একটি শেষ প্রান্ত থেকে খুব কাছের কোনো একটি জায়গা যেখান থেকে এটা দেখা যায়না সেই জায়গা( ঐ শেষ প্রান্তের খুব কাছে হওয়া স্বত্তেও) এর উদয়স্হল (horijon) ভিন্ন। সুতরাং উদয় স্হলের ভিন্নতা বা একতা নির্ভর করে দূরত্বের ঊপর নয় বরং দেখা যাওয়ার ঊপর।
যদি চাঁদের আলোকরশ্মির সীমা প্রতিবার চাঁদ উদয়ের সময় একই থাকত তাহলে এর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীকে দুই ভাগে ভাগ করা সম্ভব হত (এভাবে যে) চাঁদ পৃথিবীর এই অংশে দেখা গেছে এবং এই অংশে দেখা যায়নি। তখন পুরো ব্যাপরটি সহজ হতো এটা গবেষণা করে যে এই এলাকাগুলি আলোকরশ্মির সীমার মধ্যে এবং ওই এলাকাগুলি আলোকরশ্মির সীমার মধ্যে নয়। আর তখন আলোকরশ্মির সীমার সকল এলাকাগুলিকে একটি উদয়স্হল (horijon) এবং বাকি অংশকে আলাদা উদয়স্হল (horijon) গণ্য করা হতো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যা ঘটে তা হচ্ছে প্রতিবার চাঁদ উদয়ের সময় এটা পৃথিবীতে নতুন আলোকরশ্মির সীমা তৈরী করে।অর্থাৎ আগের মাসে যে সমস্ত এলাকা আলোকরশ্মির সীমার অন্তর্ভূক্ত ছিল পরবর্তী মাসে তার সবটুকু অন্তর্ভূক্ত থাকেনা নতুন কিছু এলাকা আলোকরশ্মির সীমার অন্তর্ভূক্ত হয়। সুতরাং প্রত্যেক মাসেই আলোকরশ্মির সীমা পরিবর্তিত হয়। সুতরাং এমন কোন সূত্র নেই যা প্রতিষ্ঠিত করবে যে করাচী এবং হায়দারাবাদের উদয়স্হল একই অথবা করাচী ও লাহোরের উদয়স্হল আলাদা। প্রতি মাসেই এটা একটা নতুন অবস্হা। এখন যদি আমরা চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা চিন্তা করি তবে এর খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে, চাঁদ কোরাঙ্গি (একটি জায়গার নাম কোরাঙ্গি ) তে দেখা যেতে পারে এবং সদর (কোরাঙ্গি থেকে খুব কাছেই আর একটি জায়গার নাম সদর) এ দেখা নাও যেতে পারে। তখন কোরাঙ্গি ও সদর এর উদয়স্হল ভিন্ন হয়ে যাবে। এই কারনে (এলাকা ভিত্তিক চাঁদ দেখে আলাদা দিনে রোজা শুরু ও আলাদা দিনে ঈদ করার নীতি গ্রহন করলে ) ‘কোরাঙ্গি’ এর চাঁদ দেখা ‘সদর’ এর জন্য গ্রহনযোগ্য হয় না বা বিপরীতভাবে (সদর এর চাঁদ দেখা কোরাঙ্গি এর জন্য গ্রহনযোগ্য হয় না)। (সুতরাং) চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা (অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন দিনে আমল করার নীতি) কে গ্রহন করলে একই এলাকার সাক্ষ্য একে অপরের জন্য গ্রহনযোগ্য হয় না। এটা পরিষ্কারভাবে রাসূল (সঃ) এর আমল ও নির্দেশের বিপরীত।
আমরা দেখতে পাই আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত একটি হাদিসের ঘটনায়, রসূলুল্লাহ (সঃ) মদীনায় চাঁদ খোঁজ করেছিলেন কিন্তু তিনি এটা দেখতে না পাওয়ার ফলে ঘোষনা করেছিলেন আজ চাঁদ দেখা যায়নি। পরর দিন আছরের পরে একটি কাফেলা এসে পৌঁছাল এবং এই কাফেলার লোকেরা বলল আমরা গতকাল মাগরিবের সময় চাঁদ দেখেছি। তাহলে তারা প্রায় চব্বিশ ঘন্টা অর্থাৎ চাঁদ দেখার পর চব্বিশ ঘন্টা পথ অতিক্রম করেছিল। তাহলে এই ভ্রমন ছিল এক মারহালা এবং এক মারহালা হচ্ছে ষোল থেকে বিশ মাইল। রাসূল (সঃ) এই চাঁদ দেখাকে মদীনার জন্য প্রমান হিসেবে গ্রহন করেছেন। এ থেকে বুঝা যায় চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতা বিবেচ্য নয় বলে যে মত হানাফি ফিকাহবিদগন দিয়েছেন, তা যথার্থ এবং এটাই ‘প্রধানত শক্তিশালী মতামত’ (জাহির রিওয়ায়াত predominantly stronger opinion)।
নিকটবর্তী ও দূরবর্তী শহর বলে যে পার্থক্য পরবর্তী হানাফি উলামাগন করেছেন তা চাঁদের উদয়স্হলের ভিন্নতার বাস্তবতার বিরুদ্ধে যায় কারন (চাঁদ দেখার ভিত্তিতে) নিকটবর্তী ও দূরবর্তী শহরের প্রকৃত (বা নির্ধারিত) কোন দূরত্ব নাই। সুতরাং হানাফি ফিকাহবিদগনের ‘প্রধানত শক্তিশালী মতামত’ (জাহির রিওয়ায়াত predominantly stronger opinion) হচ্ছে যদি বিশ্বের যে কোন স্হানে চাঁদ দেখা যায় তবে তা বাকি পৃথিবীর জন্যও প্রমান হিসেবে সাব্যস্ত হবে এই শর্তে যে সংবাদ শরীয়তসম্মতভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। আজ যদি সকল দেশ এই নীতির উপর ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে আর ২৮ ও ৩১ দিনের সুযোগ থাকবে না। এতে বিভিন্ন দেশে (চাঁদ দেখার) সংঘর্ষেরও অবসান হবে”। (তাক্বি উসমানী সাহেবের (দাঃবাঃ) কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ইমাম আল বারী শরহে সহীহ বুখারী, খন্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৮৯ )]
মালিকি ফিকহের বক্তব্য:
(১) মালিকি ফিকহের বিশ্ব বিখ্যাত ফিকহ্ গ্রন্থ “মুগনী”-এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-
“কোন এক দেশের মানুষ চাঁদ দেখলে সকল দেশের মানুষের জন্যে রোযা রাখা জরুরী হবে। চাই সে দেশ কাছে বা দূরে হোক, আর যে চাঁদ দেখেনি সে শরীয়তের দৃষ্টিতে তারই মত আমল করবে যে দেখেছে। চাঁদ উদয়ের স্থান ও কাল ভিন্ন হোক (তাতে পার্থক্য নেই)” । (মুগনী কিতাবের উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(আল-মুগনী, খন্ড-৪, পৃঃ-১২২) অথবা (আল-মুগনী, খন্ড-৩, পৃঃ-১০)]
(২) “যখন চাঁদ দেখা যায়, নিকটবর্তী হোক বা দূরবর্তী হোক রোযা রাখা সকলের জন্য প্রযোজ্য হবে। এক্ষেত্রে নামাজ সংখিপ্তকরন বা কছর হওয়ার দূরত্ব বিবেচ্য বিষয় নয়, উদয়স্হলের একতাও নয়, আবার এর অভাব (বা উদয়স্হলের ভিন্নতা) ও নয়, সুতরাং রোযা রাখা প্রত্যেকের জন্য বাধ্যতামূলক হবে”। (উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৬৫৮) (দারীর আল মালিকী এর শরহে কাবীর, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১০) (বিদায়াতুল মুজতাহিদ খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭৮)]
হাম্বলী ফিকহের বক্তব্য:
(১) (ফিকাহ শাস্ত্রের ইমাম) ইমাম বাহুতি আল হাম্বলী (রহঃ) এর “শরহে মুনতাহা আল ইরাদাত” কিতাবের ভাষ্য
“যখন একটি শহরে চাঁদ দেখা প্রমানিত হয়, সকল মুসলিমের উপর সিয়াম রাখা বাধ্যতামূলক এই হাদীস অনুসারে ‘তোমাদের সবাই রোযা রাখ যখন এটাকে দেখবে’ এটা সমগ্র উম্মাতের প্রতি নির্দেশ” (ইমাম বাহুতি আল হাম্বলী (রঃ) এর কথা এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(শরহে মুনতাহা আল ইরাদাত, খন্ড ৩, পৃ:৩০৭) {Mathabah, Shaykh Mufti Rafi Usmani}]
(২) “যখন চাঁদ দেখা কোন একটি স্হানে প্রমানিত হবে, নিকটবর্তী হোক বা দূরবর্তী হোক, রোযা রাখা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক হবে”। (উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(কাশাফুল কানা, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫৩) (আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৬৫৯)]
(৩) “কোন একটি ভূমিতে (চাঁদ) দেখার সাক্ষ্য পুরো উম্মাহর জন্য যথেষ্ট”। (উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(দলীল আত তালিব ওয়া নাইল আল মায়ারিব ওয়া হাশিয়াত আল লুবাদি, পৃষ্ঠা ২৬৯, আসকার সংস্করণ)]
(৪) ইমাম আহমদ রাহ. (২৪১ হি.)-এর ছাত্র ইমাম আবু দাউদ সিজিস্তানী (২৭৫ হি.) বলেন, “আমি আহমদ (রহঃ) কে বলতে শুনেছি, তাঁকে কেউ প্রশ্ন করলেন, আপনার মতামত কি কুরাইবের হাদীস অনুযায়ী? অর্থাৎ, ঐ হাদীস যাতে আছে যে, কুরাইব শাম থেকে মদীনায় এলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন (তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?), আহমদ (রহঃ) বললেন, না। অর্থাৎ আমার মতামত সে অনুযায়ী নয়। আহমদ (রহঃ) বললেন, যখন (এ এলাকার লোকদের) পরিষ্কার জানা হয়ে যাবে যে, (ঐ এলাকার লোকেরা) এক দিন আগে চাঁদ দেখেছে তখন এদেরকে সেদিনের রোযা কাযা করতে হবে।” (এরপর আবু দাউদ (রহঃ) এ হাদীসের পুরা মতন উল্লেখ করেন।) – [(মাসাইলু ইমাম আহমদ, আবু দাউদ সিজিস্তানী পৃষ্ঠা: ১২৮, বর্ণনা: ৬১৬)]
আরও কিছু ফিকহের কিতাবের বক্তব্য:
(১) চার ফিকহের সমন্বিত ফিকহ গ্রন্থ “আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া” নামক গ্রন্থের ভাষ্য হচ্ছে-
"পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে সকল স্থানেই উক্ত দেখার দ্বারা রোযা ফরয হবে । চাই চাঁদ নিকটবর্তী দেশে দেখা যাক বা দূরবর্তী দেশে দেখা যাক এতে কোন পার্থক্য নেই । তবে চাঁদ দেখার সংবাদ গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে অন্যদের নিকট পৌছতে হবে । (ফিকাহ শাস্ত্রের প্রধান চার ইমামের মধ্যে) তিন ইমাম তথা ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি- এর মতে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অর্থাৎ প্রথম দিনের দেখার দ্বারাই সর্বত্র আমল ফরয হয়ে যাবে" । (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়ার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৪৪৩) অথবা (আল ফিকহ আলা মাযাহিবিল আরবায়া, খন্ড-১, পৃঃ-৮৭১)]
(২) কুয়েতের “ফিকাহ এনসাইক্লোপেডিয়া” তে লিখিত রয়েছে
“হানাফি, মালিকি ও হাম্বলীদের মতে, এবং শাফেয়ীদেরও একমতে রমজান মাস প্রমানিত হওয়ার ক্ষেত্রে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। সুতরাং যদি একটি শহরে রমজানের চাঁদ দেখা প্রতিষ্ঠিত হয়, সকল এলাকার মুসলমানদের জন্য রোজা রাখা ফরজ হয়ে যাবে”। (ফিকাহ এনসাইক্লোপেডিয়ার উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(খন্ড ২৩, পৃষ্ঠা ১৪২)]
(৩) ‘দারুল ইফতা খতমে নবুয়্যত’ থেকে মুফতি মুনীর আহমদ আখুন লিখেছেন,
“(ফিকাহ শাস্ত্রের প্রধান চার ইমামের মধ্যে) ইমাম আবু হানীফা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিশ্বব্যপী চাঁদ ( বা বিশ্বের যে কোনস্হানে চাঁদ দেখা গেলে সারা বিশ্বে একই বারে রোযা শুরু ও একই দিনে ঈদ পালন) এর উপর সম্মতি দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী যদি বিশ্বের যে কোন স্হানে চাঁদ দেখা যায় এবং শরীয়াতের বিধান মতে নিশ্চিত হয় তবে পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সকলকেই একই দিনে রোযা এবং একই দিনে ঈদ পালন করত হবে। বিশেষ করে হানাফী ফিকাহ এই সুস্পষ্ট বিধানটিকে সমর্থন করেছে। এমনকি শাফেয়ীদের থেকে ইমাম সামিরী, কাজী আবু তায়্যীব, দারেমী এবং আরো কিছু শাফেয়ী ফিকাহবিদ এটাকে অধিকতর উত্তম মত হিসেবে অভিহিত করেছেন”। (মুফতি মুনীর আহমদ আখুন সাহেবের উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [{আল ফিকহ আল ইসলামী, খন্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৬৫৭} {রাদ আল মুখতার শামী, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ১৩১ (ফিকহে হানাফি)}, { শরাহ মাজহাব, খন্ড ৬, পৃষ্ঠা ২৭৩ (ফিকাহ শাফী)}, {শরাহ আল কাবীর, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৫১০, বিদায়াহ আল মুজতাহিদ, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ২৭৮ (ফিকাহ মালিকী)} {কাশফ আল কিনানা খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৫৩ (ফিকাহ হাম্বলী)}]
(৪) সৌদি আরবের বিখ্যাত মুহাদ্দীস মুহাম্মাদ ইবনে সালেহ আল উসাইমিন (র) তার ‘মাজালিসে শাহরি রামাজান’ গ্রন্থের তৃতীয় অধ্যায়ে বলেছেন: “আর যখন রামাজান মাসের আগমন শরয়ীভাবে সাব্যস্ত ও প্রমাণিত হল তখন সেক্ষেত্রে চাঁদ উদয়ের বিভিন্নতা বা চাঁদের বিভিন্ন স্হানের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেই। কারণ আল্লাহর নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিয়াম পালন করার হুকুম চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, চাঁদ উদয়ের বিভিন্ন মন্জিলের সাথে সম্পর্ক নয়।”
ঐ অধ্যায়ে তিনি আরও বলেছেন, “প্রত্যেক ব্যক্তির চাঁদ দেখা শর্ত নয়, বরং যখন এমন ব্যক্তি রমজান মাসের আগমনের সংবাদ দেয় যার কথা গ্রহণযোগ্য তখন সকলের উপর সিয়াম পালন করা আবশ্যক হয়ে যায়।”
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় চাঁদ উদিত হওয়ার কারণে তারিখের রদবদল হবেনা। বরং তা নতুন চাঁদের প্রথম তারিখ হিসাবে গণ্য হবে। তার আদর্শ সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। (ইরয়ায়ূল গালীল, ৯০২ পৃষ্ঠা)
দূরালাপনীর মাধ্যমে বর্তমানে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে চাঁদ উদয় হলে চাঁদ দেখার সংবাদ পাওয়া কিংবা জ্ঞানে আসা খুবই সহজ। চাঁদ দেখার জন্য দূরবীন ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়, তবে ব্যবহার আবশ্যকও নয়। কারণ হাদীসের বাহ্যিক বর্ণনা দ্বারা আমরা অবগত হই যে, স্বাভাবিক দৃষ্টির উপর ভরসা করাই যথেষ্ট। [(ইবনে উসাইমীন, মাজমুউ ফাতওয়া ১৯/৩৬-৩৭ )]
(৫) তামামুল মিন্নাহ গ্রন্থে আল্লামা আলবানী (রহঃ) ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর উদ্ধৃতি দিয়ে উল্লেখ করেছেন,
“নব চাঁদ উদিত হওয়ার সংবাদ যতটুকু পৌঁছবে ততটুকু তার আওতাভূক্ত হবে। তা কিছুতেই দূরত্বের কারণে কোন দেশ, মহাদেশ বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকবে না”। (ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) এর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(ফাতওয়ায়ে ইবনু তাইমিয়্যা, খন্ড-২৫, পৃঃ-১০৭) অথবা (তামামুল মিন্নাহ ১/৩৯৮)]
(৬) “যদি চাঁদ দেখার সংবাদ সঠিক পদ্ধতিতে প্রতীয়মান হয় তবে পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের চাঁদ দেখা (অনুযায়ী আমল করা) পূর্ব অঞ্চলের মানুষের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে প্রযোজ্য”। (উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(আত তাহতাবী আলা আদ্দূর, খন্ড ১, পৃষ্ঠা ৪৪৯)]
(৭) বিশ্ব মানের ফিকহ গ্রন্থ “আল ফিকহুস্ সুন্নাহ” এর সিদ্ধান্ত হচ্ছে-
“ জমহুর (অধিকাংশ) ফুকাহা (ফিকাহবিদ) গনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। অতএব যখনই কোন দেশে চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে তখনই অন্য সকল দেশে রোযা ফরয হয়ে যাবে। কেননা রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার প্রমাণ সাপেক্ষে তোমরা রোযা ছাড়, (ঈদ কর)’। এখানে ‘তোমরা’ বলে সম্বোধন দেশ মহাদেশ নির্বিশেষে সকল উম্মতের জন্য ব্যাপক অর্থবোধক। অতএব উম্মতের মধ্য থেকে যে কেউ যে কোন স্থান থেকে চাঁদ দেখুক উক্ত দেখাই সকল উম্মতের জন্য দলীল হবে।" (আল ফিকহুস্ সুন্নাহ এর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল) [(আল-ফিকহুস্ সুন্নাহ, খন্ড-১, পৃঃ-৩০৭) অথবা (আল-ফিকহুস্ সুন্নাহ, খন্ড-২, পৃঃ-৭)]
(৮) আধুনিক মুসলিম বিশ্বের প্রসিদ্ধ ইমাম সৌদি আরবের সাবূনী (রহঃ) তার রিসালাহ “আস সিয়াম” এ লিখেছেন,
“ এটা একটা অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা, চাঁদ বিভিন্ন সময় উদিত হওয়ার ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য কিনা? এই মাসআলাটি ইবাদতের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন রমাজান, হাজ্জ প্রভৃতি চাঁদের সাথে সম্পৃক্ত। এ সম্পর্কে অধিকাংশ ফকীহদের মত হলো চাঁদের বিভিন্ন সময় উদিত হওয়ার ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়। মালেকী, হাম্বলী ও হানাফীদের মত হলো, পৃথিবীর কোনো এলাকার নতুন চাঁদ দর্শন সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য। এর দলীল হল নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস “তোমরা যখন নতুন চাঁদ দেখবে তখন সিয়াম পালন আরম্ভ করবে, আবার যখন নতুন চাঁদ দেখবে তখন সিয়াম পালন করা থেকে বিরত থাকবে,” এই হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সমস্ত মুসলিমকে সম্বোধন করেছেন।এই সম্বোধন সিরিয়া, মদীনা বা মিসরবাসীর জন্য সুনির্দিষ্ট নয়। যেভাবে সমস্ত মুসলিমের আরাফা একটি দিনেই হয়, সেভাবে কুরবানীর ঈদও একই দিনেই হতে হবে।
নিকটবর্তী অতীতের তুর্কী খিলাফতের সময় সমগ্র মুসলিম বিশ্বের মুসলিম একই দিনে সিয়াম/রোযা শুরু করতেন এবং একই দিনে ঈদ করতেন। তারা আজকের মুসলিমদের থেকে তেজস্বী মুসলিম ছিলেন। যদি উসমানী খিলাফতের সময় এ ধরনের মুসলিম ঐক্যের নিদর্শন উপস্হাপিত হয়ে থাকে, তবে আজ কেন তা অনুপস্হিত?” (ইমাম সাবূনী (রহঃ) এর উদ্ধৃতি এপর্যন্তই এখানে দেয়া হল)
উপরে উল্লেখিত মতামত গুলোকে সন্দেহাতীত ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন কুরআনের এই বাণী-
-يسئلونك عن الاهلة قل هى مواقيت للناس والحج
অর্থাৎ “(হে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম,) মানুষ আপনাকে নুতন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন তা সমগ্র মানবমন্ডলীর জন্য সময় (তারিখ) নির্ধারক এবং হজ্জের (সময় অর্থাৎ তারিখ নির্ধারণকারী)”। [(সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৯)]
আয়াতে উল্লেখিত للناس শব্দটি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আরবী ব্যাকরণে পারদর্শী সকল ব্যক্তি একথা ভালভাবে জানেন যে, للناس শব্দের মধ্যকার ال টি ইস্তিগরাকী। যা ناس (মানুষ) নামের সকলকেই সন্নিবেশিত করে। তাহলে আয়াতের অর্থ হবে নুতন চাঁদ সকল মানুষের জন্য তারিখ নির্ধারক। পৃথিবীর কোথায়ও যখন নুতন চাঁদ উঠে তখন কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী ঐ নুতন চাঁদ উপমহাদেশের অধিবাসীদের জন্যেও তারিখ নির্ধারক। কারণ বিশ্বে নুতন চাঁদ উদয়ের দিনে বাংলাদেশের অধিবাসীগণ অন্য গ্রহের অচেনা প্রাণীতে পরিণত হয়না বরং মানুষই থাকেন। তাহলে পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষদেরকেও ঐ চাঁদের তারিখ অনুযায়ী আমল করতে হবে।
বইয়ের কলেবর বৃদ্ধি এবং পাঠকগণের ধৈর্যচ্যুতির আশংকায় উদ্ধৃতি উল্লেখ সংক্ষেপ করে শুধু প্রধান প্রধান কিতাবগুলোর বর্ননাসূত্র নিম্নে উল্লেখ করা হল-
ইলমুল ফিকাহ খন্ড-৩, পৃ: ১৭, ১৮
কিতাবুল মাবছুত, আল্লামা ছারাখছী, খন্ড-৩, পৃঃ-১৩৯
তাহতাবী, পৃঃ-৫৪০
নাহরুল ফায়েক মজমুআয়ে ফতোয়া, খন্ড-১, পৃঃ-৩৬৯
জামেউর রমুয, পৃঃ-১৫৬
জরুরী মাসায়েল, মাওলানা রুহুল আমীন বর্ধমানী, খন্ড-১, পৃঃ-১৪
মজমুআ ফতোয়া, ইমাম উল হিন্দ আবদুল হাই লখ্নৌভী, খন্ড-১, পৃঃ-৩৮১ বা ৩৫৮
আল-ফাতওয়া আল-ওয়াহেদা, শহীদ সদর, খন্ড-১, পৃঃ-৬২০
মুলাযুল আখবার, আল্লামা মাজলেসী, খন্ড-৬, পৃঃ-৪৪৯
শাইখ তুসী তাহযীব, খন্ড-৪, পৃঃ-১৫৫
বজলুল মাযহুদ ফি হল্লি আবি দাউদ, খন্ড-১১, পৃঃ-১০৭
আল-কাফী, খন্ড-১, পৃঃ-৪৬৮
নুরুল ইযাহ, পৃঃ-১২৭
তাতারখানিয়া, খন্ড-১, পৃঃ-৩৬৯
বাজ্জাজিয়া, খন্ড-৪, পৃঃ-৯৫
মারাকীহুল ফালাহ, পৃঃ-২০৭
তাফসীরে মাজেদী, পৃঃ-১০৭
ফতোয়া-ই-আযীযিয়া, খন্ড-৩, পৃঃ-৪৯ (দারল উলুম দেওবন্দ)
আয়াতুল্লাহ খুয়ী মুসতানাদুল উরওয়া, খন্ড-২, পৃঃ-১২২
আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আব্দুল আ’লা সাবযাওয়ারী মুসতানাদ, খন্ড-২, পৃঃ-১৩৩
আনওয়ারুল মাহমুদ, খন্ড-২, পৃঃ-৭১
ফতহুল মুলহেম, খন্ড-৩, পৃঃ-১১৩
ইমদাদুল মুফতি, পৃঃ-৫৫
ছালছাবিল, খন্ড-১, পৃঃ-২০২
তাহযীবুল আহকাম, ফয়েজ কাশানী, খন্ড-৪, পৃঃ-১৫৭
http://moonsighting.ucoz.com/blog/2014-07-06-47
১ম অংশ: কিছু প্রশ্ন http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48800
২য় অংশ: পবিত্র কুরআনের বক্তব্য http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48868
৩য় অংশ: হাদীস শরীফের বক্তব্য http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48879
৪র্থ অংশ: ফিকাহ এর সিদ্ধান্ত http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48891
৫ম অংশ: ও, আই, সি (OIC) - এর সিদ্ধান্ত http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48895
৬ষ্ঠ অংশ: বৃটেন ও কানাডার সমস্যা এবং মুফতি বৃন্দের ফাতওয়া http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48901
৭ম অংশ: ভৌগোলিক জ্ঞান সংশ্লিষ্ট কিছু প্রশ্ন এবং তার জবাব http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48916
৮ম অংশ: সারা পৃথিবীতে একই সময়ে নামাজের ওয়াক্ত হয়না তাহলে একই দিনে রমজান মাস শুরু হবে কিভাবে? http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/48934
৯ম অংশ: যারা নিজ নিজ দেশের চাঁদ অনুযায়ী রোজা ও ঈদ পালন করে থাকেন তাদের দলীল ও তাঁর জবাব http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/49494
১০মঅংশ: আহবান http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/9430/Hamza/49520
সম্পূর্ণ লেখা http://moonsighting.ucoz.com/Global_Moon_Sighting_by_Amir_Hamza_.pdf
বিষয়: বিবিধ
১৭৪৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একটা বিষয় লক্ষ্য করছি যেটা, তা হলো – এ বিষয়ের বিপক্ষে আমাদের ব্লগার ভাই-বোনদের মধ্যে এখনও কেউ কিছু বলেনি।
@বুড়া মিয়া ভাইয়ের কমেন্টের সুত্র ধরে বলি, বিরোধীতারতো কিছু নাই। তবে বাস্তবায়ন ও উদয় স্থল থেকে ১২ ঘণ্টার দূরের দেশগুলিতে কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে সবারই?
এ ব্যাপারেও হামজা ভাইয়ের একটা পোষ্টে পড়েছি, উনি সেখানে জাপান দিয়ে উদাহরন দিছেন। আমি ঐ পোষ্ট-টা আগে পড়েছিলাম কিনা মনে নেই। তবে হামজা ভাই এর যে প্রশ্ন আমার কাছে সবচাইতে যৌক্তিক মনে হয়েছে –
• ঈদের দিন রোজা হারাম হলে, অর্ধেক পৃথিবীর মানুষতো হারাম দিনে রোজা রাখছে।
• আর লাইলাতুল ক্বদর তো একটা নির্দিষ্ট রাতের-ই অন্ধকার হয়ার কথা যেটা পুরো পৃথিবীকে একটা নির্দিষ্ট রাতেই অতিক্রম করবে।
আর ইবনে আব্বাস(রাঃ) এর হাদীস এর ব্যাখ্যা অন্যান্য হাদীস দিয়ে যে খন্ডোন করেছেন, সেটা কি যৌক্তিক?
মন্তব্য করতে লগইন করুন