আমার প্রথম কারাজীবনঃ সম্পুর্ন মিথ্যা মামলায় কোর্টে চালান - ৩য় পর্বঃ

লিখেছেন লিখেছেন জামিল বিন হোসাইন ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৮:১০:৪৩ সকাল

অবশেষে টর্চার আতংক আর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে কোর্টে চালানের সময় ঘনিয়ে আসলো । কিন্তু একি !! সবার বিরুদ্ধেই একাধিক সাজানো একেবারে বানোয়াট মিথ্যে মামলা দিয়ে রেখেছে জালিম থানা পুলিশ । কিন্তু কিছুই যে করার নেই । আমরা যে বন্ধি তাদের কাছে । তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ বলে নিজেকে বুঝ দিলাম । হ্যান্ডকার্ফ পড়ানো হোল দুজনকে একসাথে ১টি করে । এরপর জালিম পুলিশ হ্যান্ডকার্ফের ভিতর মোটা রশি দিয়ে বেধে নিল সবাইকে । মানুষকে এরা মানুষ মনে করে না মনে করে পশু । রশি দিয়ে বেধে এই অবস্থায়ই পুলিশ ভ্যানে তুললো । জীবনে প্রথমবারের মত পুলিশ ভ্যানে । তাই ভ্যানের জালি দিয়ে বাহিরে তাকানোর সময় এমন একটা ফিলিংস হচ্ছিল যা কোনমতেই লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না । সেই সময় হটাত গতরাতে থানায় আম্মুর অবস্থার কথা মনে পড়ে একেবারে নস্ট্যালজিক হয়ে গিয়েছিলাম । যাই হোক কিছুক্ষন পরই পৌছলাম কোর্টে । ভ্যান থেকে নামার পর আশপাশের মানুষগুলো এমনভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল যেন, তারা বুঝতেই পারছিলো যে এই নিস্পাপ চেহারার ছেলেগুলো আসলেই গভীর ষড়যন্ত্রের স্বীকার এবং মনে হচ্ছিল এই ছেলেগুলোর প্রতি তারা বিশেষ সহানুভুতিশীল ছিল । তখন এক ভাইয়ের সাথে দেখা হয় এবং হাটতে হাটতেই আম্মুর সাথে তার ফোন দিয়ে কথা বলি । মনটা অনেক হালকা হোল । এরপর আমাদের নেয়া হোল হাজিরা দেয়ার জন্য ।

আমার অবাক এবং প্রশান্তি অনুভব হওয়া শুরু যেখানেঃ

হ্যান্ডকার্ফ পড়িয়ে এবং বেধে নেয়ার কারনে কেমন জানি একটু অসস্থি লাগছিলো । কিন্তু হাজিরা রুমে যাওয়ার সময় দেখি একি কান্ড !!! আমাদের রিসিভ করার জন্য কোর্টে চলে এসেছেন মহানগরীর ছাত্রকল্যানের ভাইয়েরা , সাংগঠনিক উকিল ভাইয়েরা , অসংখ্য সাংগঠনিক ভাই , আমার ভাইয়া সহ আরও অনেকে । যাহ! আর কি মুখ ভার করে থাকা যায় !! জুড়ে দিলাম গল্প সব ভাইদের সাথে হাটতে হাটতেই । মনটা বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠলো ।

হটাত দেখি কিছু উকিল (সংগঠনের না) আমাদের সবার সাথে নিজ থেকে এসে কথা বলার চেস্টা করছে । বুঝলাম না কাহিনি । পরে জানতে পারলাম তারা আমাদের মামলা গুলো নিজেরা মুভ করতে চাইছে টাকার বিনিময়ে। যেটাকে বলে উকিল ধরা মামলা মুভ করার জন্য । পরে এক সিনিয়র ভাই তাদের বললেন আমাদের উকিল আছে আপনাদের লাগবেনা । এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃস্টি । আমরা জানতেও পারিনি ইতোমদ্ধ্যেই আমাদের সাংগঠনিক উকিল ভাইয়েরা আমাদের মামলাগুলো মুভ করার জন্য তা নিজেরাই সুবিধা অনুজায়ী ভাগ করে নিয়েছেন । আলহামদুলিল্লাহ । অথচ এই উকিল ধরার জন্য হাজার হাজার মানুষকে কত কস্ট পেতে দেখেছি । যাই হোক এরপর আমাদের নেয়া হোল কোর্ট হাজতে ।

কোর্ট হাজত ছোট্ট একটা রুম । গাদাগাদি করে বসে আছে ৬০-৭০ এর উপরে মানুষ । বিভিন্ন ক্যাটাগরির আসামী আছে । আমরা ১০ জন গিয়েই নিজেদের মাঝে গল্পে মেতে উঠলাম । এরপর একে একে বাহির থেকে সব প্রানপ্রিয় ভাইয়েরা আসতে থাকল আমাদের দেখার জন্য । কথা বললাম সবার সাথে একেবারে প্রান খুলেই । সবার সাথে বেশ কিছুক্ষন কথা বলা শেষে অনেক কষ্টে একটু যায়গা করে সেখানেই জামায়াতে খাওয়া আর যোহর সালাত সেরে নিলাম । প্রান ওষ্ঠাগত হয় এমনি কক্ষে থাকতে হয়েছে সেই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ।

এই কোর্ট হাজত মাদকসেবীদের জন্য যেন এক অভয়ারন্যঃ

কোর্ট হাজতে আমাদের সবচেয়ে বেশি কস্ট হয়েছে এই মাদকসেবীদের জন্য । সিগারেট , গাজা , ইয়াবাসহ এমন কোন মাদক বাকি নেই যা তারা সেবন করছেনা । সবচেয়ে অবাক লেগেছে তাদের এইসব এনে দিচ্ছে খোদ পুলিশ(!!!) টাকার বিনিময়ে । তারা একদম নাকের কাছে এসে মনে হোল এসব সেবন করছে। একদম পাশেই দলবেধে সেবন করছে ইয়াবা । জীবনে প্রথম ইয়াবা সেবন পদ্ধতি দেখলাম । থানা থেকে এসব কারাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিনব এবং পিকুলিয়ার কিছু পদ্ধতিতে তারা প্যাকেটিং করছিল ইয়াবা ট্যাব্লেট। কারন এসব কারাগারে সরাসরি ঢুকাতে পারবেনা । অত্যন্ত ট্যালেন্ট বলতে হবে তাদের । এই ট্যালেন্সি অন্য কাজে লাগালে তারা বেশ ইম্প্রুভ করতো বলে মনে হয় । দুর্গন্ধে , বিরক্তিতে বমি আসার উপক্রম হয়েছিল বেশ কয়েকবার। একবার পুলিশকে ডেকে বললাম, ভাই খুব কস্ট হচ্ছে । এখানে সবধরনের মাদক নিষিদ্ধ করা যায়না ? তার উত্তরঃ ভাই আপনারা এখানে গুটিকয়েক আর ওরা শয়ে শয়ে। আমরা কাদের কথা শুনবো ? আর ভাই সরকার আমাদের কত টাকা দেয় ? আমাদের ও তো চলতে হবে নাকি ? মুল কথা পেয়ে গেলাম আর কথা বলা অর্থহীন মনে হোল । তাই কস্ট করে সহ্য করতে হোল । মুলত এই পরিবেশ সৃস্টির জন্য পুরোপুরি দায়ী ঐ দুর্নীতিবাজ পুলিশ । পরের আরেকটি পর্বে এই কোর্ট নিয়ে আরো কিছু বলব ইনশা আল্লাহ ।

এরপর সন্ধ্যায় আমাদের পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হোল কারাগারে ।

হুম চট্রগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে ।

বিশাল গেইটের কোনে ছোট্ট একটি পকেট গেইট । গেইটটি এমনভাবে তৈরি যেন মাথা নিচু করে ঢুকতে হয় । আমরা সবাই বসে গিয়ে মাথা উচু করেই ঢুকেছি । এই আদালত কিংবা কারাগারের কাছে আমাদের মাথা কখনোই নিচু হয়নি , হবেনা ইনশা আল্লাহ । হবে একমাত্র আল্লাহর কাছে , আল্লাহর আদালতের কাছে । এরপর নানা আনুষ্ঠানিকতা সেরে গুনে গুনে সোজা ভিতরে । ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে আজ সম্পুর্ন এক ভিন্ন জগতে । আসলেই কারাগারের অভ্যন্তর দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন সম্পুর্ন এক ভিন্ন জগত ।

চলবে ............

বিষয়: রাজনীতি

১১৯২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

296850
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:০০
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : একদিন নতুন সূর্যটি উদিত হবে, তাগুতী শক্তি পরাজিত হবে ইনশাল্লাহ। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় আছি।
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০১:৫৬
240420
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : ইনশাআল্লাহ । অবশ্যই তাগুতী শক্তির পরাজয় একদিন হবেই হবে । জাযাকাল্লাহ খাইরান ।
296852
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০:১৯

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 10348

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : চুরি/টুরি করেন্নি তো?
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:০০
240425
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : অনলাইনেই তো প্লাগিয়ারিজম চেকিং অনেক সাইট বা সফটওয়্যার আছে । চেক করেই দেখুন না । :Thinking
296884
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০২:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : একজন পুলিশে কনস্টেবল এর রেশন সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা হিসাব করলে তার প্রাপ্তি প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক এর আড়াইগুন হয়। খামাখাই তারা মিথ্যা বলে অপরাধ করে।
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
240460
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : এগুলো তাদের স্বভাবজাত কাজ । তাদের স্বভাব এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে তাদের লাখ টাকা দিলেও তারা এই অন্যায় কাজগুলো করবে । তাদের অন্যায় কাজ নিয়ে ইনশা আল্লাহ ডিটেইলস লিখব পরবর্তী কোন এক পর্বে ।
296930
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৮
আবু নাইম লিখেছেন :

296931
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০৯
আবু নাইম লিখেছেন : মাদক সেবন দেখার অজ্ঞিতা শেয়ার করলে আমারা্ও বুঝতে পারতাম.কিভাবে কি হয়।
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৪
240459
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : মাদক সেবন এবং জেলে অভিনব পদ্ধতিতে মাদক পাচার নিয়ে ইনশা আল্লাহ একটা পর্ব হবে । সাথে থাকলে ইনশা আল্লাহ পাবেন ।
331611
২৬ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:৫৮
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : পরবর্তী পর্বের আশায় থাকলাম.. ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File