আমার প্রথম কারাজীবনঃ থানা হাজতে যে কত্তো মজা খালি খাওন আর খাওন - ২য় পর্বঃ

লিখেছেন লিখেছেন জামিল বিন হোসাইন ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৮:৩০ সন্ধ্যা

গ্রেফতার করে আমাদের নেয়া হলো থানায় । আমরা ৩ জন যেহেতু সন্দেহভাজন গ্রেফতার তাই আমাদের আলাদা কিছু জিজ্ঞাসাবাদঃ আমাকে বললঃ

- কোন সঙ্গঠনের সাথে আছো ? সঙ্গঠনের কি পদে আছো ?

-> আমি সত্যের পক্ষে আছি ।

- ডিপ্লোমেটিক কথাবার্তা বাদ দাও । সত্যের পক্ষে কে আছে শিবির , হিজবুত তাহরির , জেএমবি, তাব্লিগ কে ?

-> যারাই ১০০% সত্যের পক্ষে তাদের আমি সাপোর্ট করি।

- বুঝছি । শিবিরের কি ? কর্মী , সাথী নাকি সদস্য ?

-> আমি এর কোনটাই না । (মিথ্যা বলা হয়নি কারন আমিতো এদের মাঝামাঝি একটা Tongue )

- ওই রোডে কেনো গেছো ?

-> একটা ভাইয়ের মেসে গিয়েছিলাম । চলে যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের ভাইয়েরা শিবির সন্দেহে ধরে আপনাদের হাতে তুলে দেয় ।

(ছাত্রলীগের সেই ভাইয়াদের কাছে শিবির করা অপরাধ কিন্তু মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া এবং এরপর পুলিশের কাছে তা অস্বীকার করা অপরাধ না । ওইদিন মজা করেই এসআই এর জিজ্ঞাসাবাদে বেশি কথা বলেছি । কোন কথা মিথ্যা বলিনি জাস্ট টেকনিকেলী এড়িয়ে গিয়েছি। এই পরিস্থিতিতে কম কথা বলাই বেটার )

কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ হল । তাদের যেসব কথায় বা প্রশ্নে আমি খুব বেশি মজা পেয়েছি বা অবাক হয়েছি তা হলঃ

১। তোমরা সুন্দর সুন্দর যুবক ছেলেরা কেনো যে এই নস্ট দলের সাথে থেকে নিজের জীবন, ক্যারিয়ারটাকে নস্ট করে দিচ্ছ আমরা কোনমতেই বুঝিনা ।

২। এই সঙ্গঠন কি তোমাদের কে চাকরি দিবে ? গুলি খেলে কি তোমাদেরকে সঙ্গঠন টাকা দিবে ? সঙ্গঠন তোমাদের শুধু শুধু রাস্তায় ফেলে গুলি খাওয়ায় ।

৩। এই যে গ্রেফতার হোলা , এই অপমান এর দায়ভার কি সঙ্গঠন নিবে ?

৪। এই অল্প বয়সে দাড়ি রেখেছ বুঝাই যায় সঙ্গঠন তোমাদের মাথা ওয়াশ করে দিয়েছে ।

হায়রে আমাদের প্রতি তাদের সে কি দাওয়াতি কাজ !!

থানা হাজতেঃ

হাজতে গিয়েই ৮ জন ভাই একত্রে মিলিত হলাম । একজন সিনিয়র দায়িত্বশীলকে গ্রেফতার দেখে খুব বেশি খারাপ লেগেছিল । যাই হোক সবাই সবার গ্রেফতারের কাহিনি শুনলাম , শুনালাম । এরপর আসরের সময় হলে সেখানেই ৮ জন একই জামায়াতে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করি । এরপর থেকে থানা হাজতের মজা শুরু । থানা যে কত্ত্ব মজা খালি খাওন আর খাওন । একের পর এক খাওয়া আসতে থাকে এরপর থেকেই । একটা শেষ না করতেই আর একটা এসে হাজির । বিভিন্ন জনের পরিবার থেকে , সঙ্গঠন থেকেই এইসব পাঠানো হয় । সিনিয়র দায়িত্বশীল নিজে না খেয়ে আমাদের বকা দিয়ে দিয়ে খাইয়েছেন শুধু । রাতে সবার জন্য পাঠানো খাবার গুলোও বেশ ভালো মানের ছিল । ৮ জন ভাই সবার সাথে আগে এতটা আন্তরিকতা না থাকলেও সেই রাতেই সবার সাথে খুব ঘনিস্ট হয়ে উঠলাম ।

আম্মু আর খালামনি থানায়ঃ

রাত ৮ টার দিকে আমরা হাজতে খোশ গল্পে মত্ত ছিলাম একরকম বেশ মজায় ছিলাম । হটাত আমার ডাক আসলো । গিয়ে দেখি আম্মু আর খালামনি বসে আছে । পাশে এসআই সাহেব । আরেকদফা জিজ্ঞাসাবাদ হল আমার উপর ।আমি তখনো বিচলিত হইনি একটুও। এতোক্ষন খুবই ভালো ছিলাম । হটাত আম্মুর দিকে তাকিয়ে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো । আম্মুর নেকাবের ফাকে চোখে পানি । নাহ! আর ভালো থাকা গেলো না । এসআই এর সামনেই কোরানের আয়াত দিয়ে আম্মুকে সান্তনা দিলাম । জিজ্ঞাসাবাদ শেষে হাজতে ফিরে গেলাম ।

কমেডি সেলিমঃ

হাজতে আমাদের সাথে ছিল ২ জন মাদকসেবী । ১ জনের নাম সেলিম । ছেলেটা চরম রকম কমেডি । আমাদের পুরো সময়টাতে সেই তার আচরন দ্বারা আমাদের বেশ মাতিয়ে রেখেছিল । ভাত আনা হয়েছিল মাদকসেবী ২ জনের জন্য ।সে একাই ২ জনের ভাতই খেয়ে ফেলসিলো । পরে অন্যজনকে উপোস থাকতে হয় । এরপর আমাদের নাস্তা থেকে না বলেই নাস্তা খেয়ে শেষ করে বলে ,ভাই খিদা লাগসিলো তো তাই একটু খাইসি । বিভিন্ন কাজে সে থানার পুলিশকে চরম থ্রেট এর উপর রাখসিলো এবং তার আচরন অনেক হাস্যকর ছিল । তাকে ৮৮ ধারায় এরেস্ট করা হয় ।

থানা হাজত হতো আরো বেশি উপভোগ্য যদি না থাকতো টর্চার এবং মশার আতংকঃ

- সন্ধ্যা নামার পর হতেই মশা আমাদের ৮ জনকে নিয়ে ভোর পর্যন্ত একটা ভালো মানের মেজবান চালিয়েছিল । এর থেকে পরিত্রানের উপায় ও ছিলনা । কারন কোনমতেই তারা আমাদের মশার কয়েল দিতে রাজী হচ্ছিলনা । বাধ্য হয়েই সবাই সারারাত মশার বলি হয়ে পানির খালি বোতলকে বালিশ বানিয়ে থানা হাজতের নোংরা মেঝেতে ঘুমিয়েছি ।

- টর্চার আতংকে আমরা পরদিন কোর্টে নেয়ার আগ পর্যন্ত ভুগেছি । রাতে কিছুক্ষন পরপরই আমাদের ২-১ জন করে করে ডেকে নিয়ে যাচ্ছিল এবং তাদের কয়েকজনকে বেশ টর্চার করেছিল । আমরা বেশি ভয়ে ছিলাম দায়িত্বশীলকে নিয়ে, কখন তাকে নিয়ে নির্যাতন শুরু করে । রাত ২ টায় একবার তাকে খোজ করেছিলো তখন বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম কারন বড় দায়িত্বশীল পেলে তাদের মাথা ঠিক থাকেনা । আর তিনি সবসময় টেনশান করছিলেন শুধু আমাদের জন্য । যাই হোক টর্চার ও মশার আতংক এবং ২ জন নেশাখোরের জ্বালা সইতে সইতে কোনমতে রাতটা পার হল ।

সকাল হতে না হতেই আবার খাওয়া আসা শুরু । পেট ভরে নাস্তা করেই শুরু করলাম সবাই মিলে ইসলামী সঙ্গীত গাওয়া ।খুব মজা হচ্ছিলো কিন্তু হটাত সকাল ৯ টায় দায়িত্বশীল ভাইকে নিয়ে গেলে আমাদের টেনশান খুব বেশি বেড়ে যায় । ১ ঘন্টা পর ফিরে আসলে তার চেহারা দেখে বুঝলাম তার উপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে , কারেন্টের শক দিয়েছে কারন তাকে খুব দুর্বল দেখাচ্ছিলো। তবুও তিনি আমাদের শক্ত থাকার জন্য কোন কিছুই বলেননি আমাদের কাছে । জিজ্ঞেস করলেও বলেন তেমন কিছুনা এসব হালকা বকা দিয়েছে । অথচ পরে শুনেছিলাম উনাকে খুব বেশি টর্চার করেছিলো ওই ১ ঘন্টায় যা উনি একদম আমাদের বলেননি শুধু আমরা ভয় পাবো বলে। তার ২ -৩ ঘন্টা পরে আমাদের কোটে চালান দিলো সম্পুর্ন মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ।

চলবে……

বিষয়: রাজনীতি

১৪১৬ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

294988
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:১২
আঃ হাকিম চাকলাদার লিখেছেন : ভাল অভিজ্ঞতা।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৪৯
238496
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : একজন ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে সবারই এই অভিজ্ঞতা থাকা উচিত ।
295013
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই পুলিশ দের কথা ভুলে যাবেন নাকিন্তু। এরা দাবি করে স্রেফ চাকরির জন্যই নাকি এই কাজগুলি তারা করে। রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে ঘুষ খাওয়াও তাদের পবিত্র কর্তব্য!!!
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৪৭
238495
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : জ্বী ভাইজান একদম ঠিক বলেছেন । সম্পুর্ন নৈতিকতাবিহীন একটা জেনারেশান গড়ে উঠছে প্রতিনিয়ত । আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন ।
295021
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৫
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : কোন প্রকার অভিজ্ঞতা বলবো বুঝতে পারছি না। তবে বাকি পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:১৯
238459
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খাইরান ।
295022
১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১১:২৫
নিশা৩ লিখেছেন : সত্য পথে চলতে গেলেই বাঁধা আসবে, বাঁধা আসে। আর এর মাধ্যমেই বুঝা যায় কারা সত্যপন্থী। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১২:১৮
238456
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : সবসময় সত্যপন্থীদের জন্য দোয়া করবেন । জাযাকাল্লাহ খাইরান ।
295067
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ০৩:৩৬
আফরা লিখেছেন : আপনারা কত পরিক্ষা দিচ্ছেন সত্য পথে টিকে থাকার জন্য আল্লাহ আপনাদের কবুল করুন ।নিশ্চয় আল্লাহ আপনাদের ভাল করবেন ।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ০৬:৪৩
238494
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : দোয়া করবেন । জাযাকাল্লাহ খাইরান ।
295236
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ দুপুর ০৩:৫৬
ইবনে আহমাদ লিখেছেন : ভাই আপনাদের এই অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য প্রেরণার। আগামীর জন্য এই পথের মানুষগুলোর জন্য পাথেও হবে। লিখে যান। সাথে আছি। আপনাকে প্রিয়তে রাখলাম।
১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ রাত ১০:৪১
238742
জামিল বিন হোসাইন লিখেছেন : জাযাকাল্লাহ খায়ের ভাইজান । দোয়া করবেন ।
296925
২৪ ডিসেম্বর ২০১৪ বিকাল ০৫:০০
আবু নাইম লিখেছেন :
331609
২৬ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:৫২
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন..আমিন..

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File