আমার প্রথম কারাজীবনঃ গ্রেফতার এবং অতঃপর - ১ম পর্বঃ
লিখেছেন লিখেছেন জামিল বিন হোসাইন ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:৫৪:০২ রাত
৫ নভেম্বর , ২০১৪ । সময় দুপুর ১ টা । ঘর থেকে বের হই কেন্দ্রঘোষিত প্রোগ্রামের উদ্যেশ্যে । পথে দেখা হয় Abdullah Russel ভাইয়ের সাথে । রিক্সায় করে দুজন যাই একসাথে । সেদিন প্রোগ্রামস্থলের আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল । তারপর ও তাদেরই অতিক্রম করে যাই । যোহররের পর প্রোগ্রাম শুরুর আগেই কোন কারন ছাড়াই আমাদের দুই ভাই আক্রান্ত হয় কিছু সোনার ছেলের দ্বারা । প্রোগ্রাম শেষ হয় এবং ওই দুই ভাইকে সেইফ করেই প্রোগ্রাম শেষ হয় । যথারীতি আমি আর রাসেল ভাই একসাথে রিক্সায় উঠি বাসায় ফিরার জন্য । কিছুদুর যাওয়ার পর ডাক আসে সামনে মেহমান (পুলিশ) । দুইজনই রিক্সা থেকে নেমে যেই পিছনে দৌড় দিলাম সেখানেই দুজন আলাদা । পিছনে ও ছিল মেহমান । সেখানেই রাসেল ভাই এরেস্ট হন । আমি ডানে এক গলি দিয়ে ঢুকে পড়ি । সেখানে আরো ৩ ভাই সহ সেখানেও মেহমানের সরাসরি দৌড়ানি , আর গালিগালাজ খাই কিছুক্ষন । ধরা খাই খাই করেও খাইনি তখন । এরপর মাঝখানে অনেক নাটকীয়তার পর এক সম্পুর্ন অপরিচিত বিল্ডিং এর মেসে আশ্রয় নেই আল্লাহর অশেষ রহমতে । তারাও আমাদের বিপদ দেখে অনেক সহানুভুতি দেখান ও পুলিশ আসলেও তাদের টেকনিকেলি পার করে দেন । নিরাপদে দেড় ঘন্টা কাটাই সেখানে । সেখানে Salahuddin Nasim ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা হয় এবং জানতে পারি রাসেল ভাই গ্রেফতার । নাসিম ভাইকে বলি ভাই আমরা ৪ জন এখনো নিরাপদ না দোয়া করেন । আমাদের বিপত্তি বাধে এর কিছুক্ষন পরই । বাড়ির মালিক ছিল লীগার। জেনে যায় আমাদের আশ্রয় নেয়া সম্পর্কে । বাধ্য হয়েই ৪ জনই মেস এর ভাইদের সহায়তায় সন্দেহ না করার জন্যই তাদের পরামর্শে ড্রেস চেঞ্জ করে লুঙ্গি পড়ে বের হয়ে যাই ।
মায়ের মন কি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক থেকেও শক্তিশালীঃ ?
আম্মু সাধারনত কখনো প্রোগ্রামে গেলে ফোন করেন না । ওইদিন ওই মেস থেকে বের হওয়ার পরই আম্মুর ফোন ।
- “ কিরে কই তুই ? এতো দুপুরে বাহিরে কেনো ? তাড়াতাড়ি ১০ মিনিটের ভিতর তুই বাসায় আস , আর কোন কাজ করা লাগবেনা , সব ফেলে তাড়াতাড়ি বাসায় আস , বাসায় এসে ভাত খাবি ”
- জ্বী আম্মু আমি খুব তাড়াতাড়ি আসছি বাসায় ১৫-২০ মিনিট লাগবে । এই ছিল গ্রেফতার হওয়ার আগে আম্মুর সাথে শেষ কথা ।
অদৃশ্য একটা শক্তিই মনে হয় আম্মুকে জানিয়ে দিয়েছিল আমার কোন বিপদ হতে যাচ্ছে । তাই আমি গ্রেফতার সম্পর্কে নিশ্চিত না হলেও মনে হয় যেন আম্মু নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। আম্মুর কথা শুনে তাই মনে হল ।
যাই হোক মেস থেকে বের হওয়ার পরই আমাদের ৩ জনকে ওই মালিকের দেয়া তথ্যমতে ৪০-৫০ জন সোনার ছেলে ঘিরে ফেলে । তাদের সংখ্যা কিছুটা কম হলে প্রতিরোধ করার চিন্তা করতে পারতাম । যাই হোক তাদের কাছে আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ি । তারা আমাদের বেশ কিছুক্ষন আটকে রাখে এবং আমার অত্যন্ত শখের , সুন্দর এন্ড্রয়েড মোবাইল খানা নিয়ে যায় । যাই হোক তাদের কোন একজনের এন্ড্রয়েড মোবাইলের চাহিদা পুরন হবে এই ভেবে আনন্দিত হলাম । এরপরই তারা আমাদের পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশের কাছে মোবাইল নেয়ার কথা বেমালুম অস্বীকার করে। জীবনে প্রথমবারের মত গ্রেফতার । তাও আবার ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ভেবেই কেমন জানি একটা অন্যরকম ফিলিংস হচ্ছিল । যেই আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য খোদ রাসুল(স) পর্যন্ত শি’বে আবু তালিবে ৩ বছর অবরুদ্ধ ছিলেন । গাছের পাতা খেয়ে জীবন ধারন করেছেন । সেই আন্দোলনের একজন সামান্য কর্মী হতে পেরেও আনন্দ লাগছিল । এগুলো ভাবতে ভাবতেই পুলিশের গাড়িতে করে থানায় চলে আসলাম । গিয়ে দেখি ওই প্রোগ্রাম থেকে আমরা মোট ৮ জন গ্রেফতার , সবাই চেনা । বেশ ভালোই লাগছিল । জিজ্ঞাসাবাদ , সাংবাদিকদের ছবি তোলা সব কাজ শেষে প্রেরন করা হল থানা হাজতে ।
চলবে……
বিষয়: বিবিধ
১১৯৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মোবাইল এর জন্য একটা জিডি করলে ভাল হয়।
আল হামদুলিল্লাহ্ আপনার এবং অন্য বাইদের ঈমানদীপ্ত সাহসিকতা দেখে আনন্দিত হলাম। আসলে ঐ গ্রেফতারের দিন থেকেই আপনাদের ঈমানের দাবীতে আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা শুরু হয়েছে এবং আজকের লেখা তার প্রমাণ যে, আপনারা সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পরবর্তী পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। আল্লাহ্ তাআলা আমাদের সকলকে তার দ্বীনের জন্য কবুল করুণ। আমিন। আপনাদের কারামুক্তি উপলক্ষে ফুলের শুভেচছা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন