যে কারণে জামায়াত শিবির কোনো ইসলামী দল না
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত আধারে ২৪ নভেম্বর, ২০১৫, ০৯:৫০:২৫ রাত
১৯০৩ সালে ভারতের হায়দারাবাদ প্রদেশের আওরঙ্গবাদ জেলা শহরের আইন ব্যবসায়ী আহমদ হাসান মওদূদীর ঔরসে আবুল আ’লা মওদূদীর জন্ম। আবুল আলা মওদুদী পাকিস্তান ভিত্তিক দল জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা। যা বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের ধর্ম ব্যবসা খুলে বসেছে। প্রথম দিকে মওদূদী পাকিস্তান রাষ্ট্র বিরোধীতা করলেও ১৯৪০ এর দশকে এসে নিজের ভোল পাল্টায় এবং তখন থেকেই সে পাকিস্তানে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়। মওদুদী ১৯৪১ সালের ২৬ আগষ্ট 'জামায়াতে ইসলামী হিন্দ' প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণিত মুসলিম পরিবার আইন অধ্যাদেশের বিরোধিতা করার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারী জামায়াতে ইসলামীর কর্মকান্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। মওদুদী সহ ৬০ জন জামায়াত নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ১৩ জন জামায়াত নেতা ছিলন,গোলাম আযম তাদের একজন। মওদূদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে আলেম তথা ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত। মওদুদী নিজের ভ্রান্ত মতবাদকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ‘তরজমানুল কুরআন’ নামক নিয়মিত মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। মওদুদী তার বইয়ে লিখেছেন, "হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিলেন [1]।" এমনকি শ্রেষ্ঠ মানব মুহম্মদ (স) কে নিয়ে মন গড়া কথা লিখেছেন॥ মউদুদী তার বইয়ে লিখেছে, "মহানবী (স.) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষণ করেছেন [2]।"
আর এই মওদুদীর খাস ভক্ত ও অনুসারী বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী তথা গোলাম আযম, মুজাহিদ, নিজামী ও সাঈদী প্রমুখগণ। আল্লামা হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) মওদূদী মতবাদ এবং জামায়াত-শিবির সম্পর্কে ‘সতর্কবাণী’ শিরোনামে একটি বই লিখেন। তাতে তিনি মওদূদীর ভ্রান্ত মতবাদ ও জামায়াতে ইসলামীকে মুসলমানদের ঈমান ও ধর্ম বিশ্বাস ধ্বংসকারী ফিতনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি মুসলমানদেরকে ইসলামের মুখোশধারী এই দল থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানান। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) এর এই পুস্তকে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় চার শতাধিক আলেম অভিন্ন মত প্রকাশ করে স্বাক্ষর করেন।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমের প্রাক্তন খতিব মাওলানা মুফতী আব্দুল মুয়ীজ বলেছেন, মওদূদী সাহেব প্রকৃতপক্ষে কোনো আলেম নন। কোরআন ও হাদীস সম্পর্কে কোনো সঠিক জ্ঞান তাঁর নেই। এবং বায়তুল মুকাররমের সাবেক খতীব মাওলানা ওবায়দুল হক দৈনিক যুগান্তরে (১২-১২-০৩) ইং তারিখে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মওদুদীর ভ্রান্তিপূর্ণ পুস্তকাদি দ্বারা সাধারণ ও নব্য শিক্ষিত লোকদের মধ্যে গোমরাহী বিস্তার লাভ করছে এমন মুহূর্তে হক কথা না বলে চুপ করে থাকাও অপরাধ। তাছাড়া যখন মওদূদীর পুস্তকাদী সংগঠিত জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে সদা-সর্বদা প্রকাশিত হয়ে চলেছে এবং সেগুলো কর্মীদের অবশ্যকীয় পাঠ্যসূচীতে বেঁধে দেয়া হচ্ছে তখন সাময়িক ভাবে কিছু পুস্তকাদি বা বিবৃতি প্রকাশ করেই এর মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই ক্রমাগত সতর্কতা স্বরূপ ব্যাপক পর্যায়ের কর্মসূচী গ্রহন করা প্রত্যেক হক্কানী আলেমের ঈমানী দায়িত্ব।
যার প্রমাণ হিসেবে শিবিরের ওয়েব সাইটে ঢুকলেই দেখতে পারবেন মওদুদীর বই॥ এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ও তাদের সহযোগী সংগঠন গুলোর ওয়েবসাইটে মওদুদীর বিভিন্ন লেখার সংকলিত রয়েছে। এই সব সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে। শাইখুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক বাঙলা ভাষায় অনূদিত বোখারী শরীফের সপ্তম খন্ডের পরিশিষ্টে বলেন,"আবুল আ’লা মওদূদী ও তাঁর দল জামায়াতে ইসলামীকে খারেজীদের অনুরূপ একটি ফেরকা হিসেবে দেখা যায়। আল্লামা আহমদ শফী সাহেব তার ফতওয়ায় বলেছেন, "মওদূদীপন্থী জামাতে ইসলামী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত বহির্ভূত একটি গোমরাহ্ ফিরকা। এ গোমরাহ্ ফিরকায় যোগদান করা ,সর্ব প্রকার সাহায্য সহযোগিতা করা ও সমর্থন করা এবং ইমাম নিযুক্ত করা,এদের সাথে আত্মীয়তা করা এদেরকে ইসলামের নামে ভোট দেয়া বা ভোট দেয়ার সমর্থনে কথা বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়েজ [3]।" আসলেই ইসলামকে বিভ্রান্ত করতে জামায়াতের কোনো তুলনা নেই॥ ১৯৯৪ সালের ৩ আগস্ট আজকের কাগজ পত্রিকায় শিরোনাম ছিল (গোলাম আজমের খোদার উপর খোদাগিরি) গোলাম আজম বলেছিলেন, সুরা আল বাকারার প্রথম চার আয়াত শেষে দিলে ভালো হতো।
গোলাম আজম তার বইয়ে লিখেছেন,
"নবী করীম সা. আমাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ। তবে পার্থক্য শুধু একটি বিষয়ে, তা হচ্ছে তাঁর কাছে ওহি আসতো, কিন্তু আমাদের কাছে আসে না [4]।"
জামায়াত শিবির ধর্ম বিকৃতি কারি। জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের মগজে এই বুলি সর্বদা ঢুকানো হয় যে, জামায়াত শিবিরের কাজে জীবন দিলে শহীদ হয়ে বেহেস্তে যেতে পারবে, আর বাঁচলে হবে গাজী। তাইতো তাদের শ্লোগান, "মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী, আমরা সবাই মরতে রাজী[5]॥" ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আলহাজ মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেছেন,"জামায়াত কোনো ইসলামী দল নয়', তারা কপট ও ভণ্ড [6]।" "জামায়াতে ইসলামী ধর্মের নামে দেশের মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে [7]।"
চট্টগ্রাম নগরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ "আল্লামা মোহাম্মদ জালালুদ্দিন আলকাদেরী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বিভিন্ন সময়ে তাফসিরে ইসলামের যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা সঠিক নয় [8]।"
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেছেন, "জামায়াত আর আলেম কখনো এক হতে পারে না। সত্যিকারের আলেম তারাই যারা জামায়াত ইসলামের সমর্থক নয়। তিনি বলেন, ‘জামায়াতে ইসলাম সবসময় আলেম সমাজকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে [9]।" এই জামায়াত শিবির ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সুদ কে পর্যন্ত জায়েজ করেছে ।
.
যে দলটির স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শপৎ নিয়েছিল এই বলে যে, I shall bear true allegiance to the constitution of Pakistan as framed by law and shall defend Pakistan, if necessary,with my life." অর্থাৎ, "আমি আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের সংবিধানের প্রতি সত্যিকার আনুগত্য প্রদর্শন করব এবং জীবন দিয়ে হলেও পাকিস্তানকে রক্ষা করব। ১৯৭১ সালে এত খুন, এত অন্যায় ধর্ষণের পরেও তারা কিভাবে নিজেদের ইসলামী দল ভাবে!!! এত অন্যায়ের পরেও তারা আজও টিকে আছে, শুধুমাত্র ধর্মের মুখোশ পরে। এত ঘটনার পরেও কেন জামায়াত শিবিরের এদেশে রাজনীতি করতে লজ্জা করেনা, নিজেদের ইসলামী দল হিসাবে পরিচয় দিতে লজ্জা করেনা??
.
তথ্যসুত্র:
.
[1] তাফহিমুল কোরআন, ৩য় সংস্করণ, ২য় খন্ড, ৩৪৪ পৃষ্ঠা, ১৯৬৪ ইং॥
[2] তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী।
[3] উলামা-মাশায়েখের আহবানঃ মওদূদীপন্থী জামাত-শিবির ফিতনা থেকে সতর্ক থাকুন ,পৃষ্ঠাঃ ৩৭-৩৯,১৯৯৬,প্রকাশকঃ আল্লামা শামসুদ্দিন কাসিমী ও মাওলানা নূর হুসাইন কাসিমী।
[4] অধ্যাপক গোলাম আযমের সিরাতুন্নবী সংকলন, পৃষ্ঠা-১০।
[5] দৈনিক মানবকণ্ঠ, ২০-১১-১২।
দৈনিক চাদপুর কণ্ঠ, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
[6] সমকাল, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩।
[7] বিডি নিউজ, ৬/৩/২০১৩॥
[8] প্রথম আলো, ৩১ আগস্ট ২০১৩।
[9] কালের কণ্ঠ, ৩০ নভেম্বর ০১।
বিষয়: বিবিধ
৫০২৬ বার পঠিত, ২২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কার প্রকৃত ইসলামি আন্দোলন করে তা বাতিলের রাগ দেখেই বুঝা যায়!!
http://m.youtube.com/watch?v=JG-XZMHNihw
কিন্তু উনাদের গীবত আপনাদের মত অনেক মানুষের মুখে ও বই এ পড়েছি ।
উনারা যদি কোন পাপ ও করে থাকেন আপনারা গীবত করে সেগুলো নিয়ে নিয়েছেন ।
son of bitch
এটা শুধু গোলাম আজমের কথা হবে কেন?
দেখুন কুরআনের কথা কি-
(১) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ سُبْحَانَ رَبِّي هَلْ كُنتُ إَلاَّ بَشَراً رَّسُوْلاً
‘বলুন, পবিত্র মহান আমার প্রতিপালক! আমি তো শুধু একজন মানুষ, একজন রাসূল’ (বানী ইসরাঈল ৯৩)।
(২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَمَن كَانَ يَرْجُو لِقَاء رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلاً صَالِحاً وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَداً
‘বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ একজন। সুতরাং যে তাঁর প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে ও তাঁর প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকেও শরীক না করে’ (কাহফ ১১০)।
(৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ
‘বলুন, আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি অহী হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ একমাত্র (সত্য) মা‘বূদ’ (হা-মীম সিজদা ৬)।
জামায়াত-শিবিরের সম্পর্কে জানা আপনার খুবই কম!
ক্বাওমী হুজুরদের মুখ নিসৃত কথাই উপস্হাপন করলেন!
মওদূদীর একটা লেখাও আপনি পড়েন নি-এটা বুঝাই যায়!
মিসবাহুর রহমান-জালালুদ্দিন কাদেরী-শামীম আফজল গংদের রেফারেন্স দিয়ে নিজের ওজন বুঝিয়ে দিলেন!এরা তো ওলামায়ে ছু! আপনিও তাদের পথে ভাল অবস্হানেই আছেন!
আল্লাহ আমাদের সকল কে হেদায়াত দান করুন,আমিন!!
সমকাল, প্রথম আলো আজকাল কে আলেম আর কে আলেম না তার সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এসব না লিখে কৌতুকের বই লিখেন।
আলেম আনে জ্ঞানী। মওদুদী সাহেবের বাতলে দেয়া কোনো পন্থা হয়ত আমি follow করতে নাও পারি।
তবে এতটুকু বুঝি ওনার মত আলেম অন্তত কালে ভদ্রে দুই একজন হয়।
ওনার সব কথা ঠিক না হতে পারে (জানিনা), কিন্তু যতটুকু জেনেছি পড়েছি উনি যথেষ্ঠ জ্ঞানী বা আলেম - সন্দেহ নাই
১। মওদূদীর জন্ম ভারতের হায়দারাবাদ !!!
২। মওদুদী ১৯৪১ সালের ২৬ আগষ্ট 'জামায়াতে ইসলামী হিন্দ' প্রতিষ্ঠিত করে!!!
৩। মওদূদী পাকিস্তান রাষ্ট্র বিরোধীতা করে।
(Base on your provided information)
Now you judge yourself and select a title for you.
গালিগালাজ পাপ্য কিন্তু দিলাম না।
তবে হাতের কাছে পাইলে ঠাস করে একটা থাপ্পড় লাগাইয়া দিমু। থাপ্পড় খাইয়া তবেই গিবত করা ছাড়বি।
মানুষের ভুল হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু ভুলের উপর অটল থাকাই হল গুমরারী। আল্লাহ আমাদের সবাইকে গুমরাহী থেকে হেফাজত করুন, আমীন।
-মিছবাহুর কি আলেম ভাইয়া? আপনি ব্লগার দের মন্তব্যের কোন প্রতি মন্তব্য করছেন না কেন?
মন্তব্য করতে লগইন করুন