হিন্দু ধর্ম কি মিথ্যা ধর্ম
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত আধারে ১৩ নভেম্বর, ২০১৫, ০২:১৭:২৪ দুপুর
নিশ্চয়ই সব ধর্মই একসাথে সত্য হওয়া সম্ভব নয়॥ আবার এই মহাবিশ্বে একাধিক সৃষ্টিকর্তা থাকাটাও অসম্ভব। কোনো ধর্ম সত্য না মিথ্যা তা প্রমান করার জন্য আমাদেরকে সেই ধর্মের গ্রন্থ গুলোর দিকে ফিরে যেতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন, " যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে প্রমাণ উপস্থাপন করো। (সূরা বাক্বারাহ্ ২:১১১)"
হিন্দু ধর্মের উৎপত্তির বিষয়টা আসলেই ঝাপসা। যদিও হিন্দু ধর্মের আসল নাম সনাতন ধর্ম॥ 'পশ্চিমা পন্ডিতরা হিন্দু ধর্মকে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ এবং সংশ্লেষণ হিসেবে গন্য করেন যার মূলে একক কোন ব্যক্তির অবদান নেই এবং এর একাধিক উৎপত্তি উৎস রয়েছে। [1]'
ভারতের বিশিষ্ট দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন হিন্দুধর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে
বলেছেন, "Hinduism is not just a faith. It is the union of reason and intuition that can not be defined but is only to be experienced."
আসলেই, হিন্দু ধর্মের সংজ্ঞা দান করা অসম্ভব। সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুসারে সকল দেবতা আসলে পরম ব্রহ্মার রূপেরই বহিপ্রকাশ। তাই যে কোনো দেবতাকে, বা স্রস্টাকে পাওয়ার চেষ্টা করা মানে, আসলে ব্রহ্মাকে পাওয়ারই চেষ্টা করা। বর্তমানে শিক্ষিত অশিক্ষিত সকল হিন্দুই বিভিন্ন পুজা অর্চনা করে॥ হিন্দুরা অনেক দেব দেবির পুজা করলেও হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ গুলোতে হিন্দুদের কেবল মাত্র এক জন ইশ্বরের উপাসনা করতে বলা হয়েছে॥ বেদের ‘ব্রহ্ম সুত্র’ তে আছে 'একম ব্রহ্মা দ্বৈত্য নাস্তি নহিনা নাস্তি কিঞ্চন' অর্থাৎ ইশ্বর এক তাঁর মত কেউ নেই কেউ নেই সামান্যও নেই । আরও আছে 'তিনি একজন তাঁরই উপাসনা কর' (ঋকবেদ ২;৪৫;১৬)। “একম এবম অদ্বৈত্তম” অর্থাৎ তিনি একজন তাঁর মত আর দ্বিতীয় কেউ নেই (ঋকবেদ১;২;৩) । কুরআনের সুরা ইখলাসের (১১২:১-৪) আয়াতে আছে, "বলুন – তিনিই আল্লাহ্, এক ও অদ্বিতীয়। সবাই তার মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। এবং কেউই তার সমকক্ষ নয়।"
তাই দেখা যাচ্ছে বেদ এবং সুরা ইখলাস একই কথা বলছে॥ এইরকম অনেক সাদৃশ্য কুরআনের সাথে বেদ, গীতার পাওয়া যায়। সামবেদে বলা হয়েছে - "মদৌ বর্তিতা দেবাদ কারান্তে প্রকৃত্তিতাবৃষাণং ভক্ষয়েৎ সদা সেদা শাস্ত্রের স্মৃতা" অর্থাৎ যে দেবের নামের প্রথম অক্ষর ম ও শেষ অক্ষর দ এবং বৃষমাংস ভক্ষণ সর্ব কালের জন্য বৈধ করবেন। তিনিই হবেন বেদ অনুযায়ী সেই ঋষি। মুহাম্মদ (সা.) এর প্রথম অক্ষর ও শেষ অক্ষর বেদের নির্দেশ মতে ম ও দ তাকেই মান্য করে চলা শাস্ত্রের নির্দেশ। আবার কল্কি পুরাণ ২য় অধ্যায় ২৫ নম্বর শ্লোকেও মুহাম্মদ স. এর কথা বলা হয়েছে॥ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসতে পারে তবে কি বেদ এবং গীতাও আল্লাহর কিতাব! এই বিষয়ে আলোচনা করার আগে হিন্দুদের মুর্তি পুজার বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। হিন্দু ধর্মে মুর্তি পুজা করতে নিষেধ করা হয়েছে॥ ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ - "যাদের বোধশক্তি পার্থিব আকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধু তারাই উপদেবতার নিকটে উপাসনা করে।" যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ –[ অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতি মুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে । অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন- বাতাস,পানি,আগুন । শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন - চেয়ার ,টেবিল,মূর্তি ইত্যাদি।] যেহেতু হিন্দু ধর্ম প্রাচীন ধর্ম, এবং সবার বেদ,গীতা পড়ার অধিকার ছিল না তাই সেই সময়কার কিছু ঋষি মুনির কারনে মুর্তি পুজোর উদ্ভব হয়েছে । বেদে আছে ;'কোনো শুদ্র যদি ইচ্ছা পূর্বক বেদের কথা শুনে তাহলে তার কানে গলানো রাং ঢেলে দিতে হবে, সে যদি বেদ পড়ে তাহলে তার জিহবা কেটে ফেলতে হবে। আর যদি সে বেদকে মুখস্থ করে তবে তার দেহকে দু'টুকরো করতে হবে।’’ (১২:৪-৬)।' সেজন্যই একসময় বেদ পড়ত না নিম্ন জাতের হিন্দুরা। তবে ভাববার বিষয় এই কথাগুলো বেদে প্রথম থেকেই ছিল নাকি পরে ঢোকানো হয়েছে॥
ডা. চমনলাল গৌতম তাঁর বিষ্ণুরহস্য বই এর ১৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-'ঋষিগন মুর্তি পুজার প্রচলন করেছেন॥' ইতিহাস পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় হিন্দু ধর্মে পুজার উদ্ভব মানব সৃষ্ট। খ্রিষ্টীয় ৭ম শতাব্দী হতে বাংলায় কিছু কিছু অঞ্চলে কালী পূজা শুরু হয়॥১৭৬৮ সালে রচিত কাশীনাথের কালী সপর্যাসবিধি গ্রন্থে দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপূজার বিধান পাওয়া যায়। "তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ কে বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক মনে করা হয়। [2]"
পাঁচ হাজার বছর আগে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো নগরে দেবী সরস্বতীর পূজা হতো। বৌদ্ধ সরস্বতীর তিন মুখ ও ছয় হাত। বৌদ্ধ জগতে বাগ্মীশ্বর মঞ্জুশ্রীর শক্তি সরস্বতী। সাধনমালা নামে বৌদ্ধতন্ত্রে মহাসরস্বতী,বজ্রবীণা সরস্বতী, বজ্রসারদা ও আর্য সরস্বতীর ধ্যান আছে। এছাড়া জৈন ধর্মের উত্তর সম্প্রদায়ের মন্দিরে সরস্বতী ও অন্যান্য দেবীর মূর্তি আছে। ডক্টর বিনয় তোষ ভট্টাচার্যের মতে, বাংলার এই জনপ্রিয় দেবী বৌদ্ধতন্ত্রের সৃষ্টি। অপরদিকে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পুজার উৎপত্তির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-
"মূল বাল্মীকির রামায়ণে দূর্গা পূজার কোন অস্থিত্ব নাই। মোগল যুগের কবি তুলসী দাসের 'রামচিত মানস',সেখানেও রাম কর্তৃক দুর্গা পূজার কোন উল্লেখ নেই। মধ্য যুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি কৃত্তিবাস ওঝা সংস্কৃত রামায়ণ বাংলা করার সময় মূল রামায়ণের বাইরের তৎকালীন সমাজে প্রচলিত অনেক গল্প বাংলা রামায়ণে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঢুকিয়েছেন। তাঁর এই অনুবাদকৃত রামায়ণ পরিচিত পায় কৃত্তিবাসী রামায়ণ নামে। সেখানে তিনি কালিকা পুরাণের ঘটনা অনুসরণে ব্রহ্মার পরামর্শে রামের দূর্গা পূজা করার কথা উল্লেখ করেছেন। [3]" '১৭৪২ সালে মারাঠা বর্গিরা যখন ভাস্কর পণ্ডিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আক্রমণ করেছিল, তখন তারাও কাটোয়ার কাছে দাইহাটায় দুর্গাপূজা করেছিল। আরেকটি সূত্রে জানা যায় যে,কলকাতায় সাবর্ণ রায় চৌধুরীর পরিবার ১৬১০ সালে সপরিবারে দুর্গা পুজার প্রচলন করেন।[4]' তবে ঘটা করে দূর্গা পূজার ইতিহাস খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। কখন থেকে ঘটা করে এই পূজা চালু হলো তা নিয়ে পরিষ্কার বিশ্বাসযোগ্য ঐতিহাসিক কোন প্রমান পাওয়া যায় না। 'বাংলাদেশের সাতক্ষীরার কলারোয়ার ১৮ শতকের মঠবাড়িয়ার নবরত্ন মন্দিরে (১৭৬৭) দূর্গা পূজা হত বলে লোকমুখে শোনা যায়। [ তথ্যসূত্রঃ দৈনিক পত্রদূত, সাতক্ষীরা। ]' কারো মতে ১৫০০ খ্রীষ্টাব্দের শেষের দিকে দিনাজপুরের জমিদার প্রথম দূর্গা পূজা করেন, আবার কারো মতে প্রথম দূর্গা পূজা আয়োজন করেন তাহের পুরের রাজা কংস নারায়ন ১৪৮০ খ্রীষ্টাব্দে ৮৮৭ বঙ্গাব্দের শরৎকালে। অনেকে মনে করেন ১৬০৬ নদিয়ার ভবনানন্দ মজুমদার দূর্গা পূজার প্রবর্তক। রাজা হরিনাথ ১৮৩২ সালে বারোইয়ারের এই পূজা কলকাতায় পরিচিত করান। পরে তাদের দেখাদেখি আস্তে আস্তে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে হিন্দু বাঙ্গালী জমিদারদের কাছে।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পুজা মানব সৃষ্ট। ইসলাম এবং হিন্দু উভয় ধর্ম মতেই পুজা পাপ। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য যুগে যুগে অনেক নবী রাসুল পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। সূরা ফাতির ২৫নং আয়াতে বলা আছে 'ওয়া ইম্মিলউম্মাতি ইল্লা খালাফিহা নাজির।' অর্থ- এমন কোন জাতি নেই যার কাছে সতর্ককারী আগমন করে নাই। সূরা রাদ ৮ নং আয়াতে বলা আছেঃ 'ওয়া লিকুল্লে কাওমিন হাদ' - অর্থাৎ প্রত্যেক জাতির জন্য হাদী বা পথ প্রদর্শক রয়েছে। তাই এই সব বর্ণনা থেকে জানা যায় যে,বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে বিভিন্ন যুগে সতর্ককারী, পথ প্রদর্শক রুপে নবী রাসুল আগমন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা শুধু মানুষ নয় জ্বিন জাতির মধ্যে ও নবী পাঠিয়েছেন। মানুষের আগে এই পৃথিবীতে জ্বিন জাতি ছিলো এবং এখনো আছে॥ কুরআনের ৭২তম সুরা 'আল জ্বিন' এ শুধু জ্বিনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাস এর শেষ অংশে জিন জাতির কথা উল্লেখ আছে। কুরআনে আরো বলা আছে হযরত মুহাম্মদ (সা) কে জ্বিন এবং মানব জাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,"অবশ্যই আমি মানুষকে ছাঁচেঢালা শুকনো ঠনঠনে মাটি থেকে পয়দা করেছি, আর (হ্যাঁ,) জ্বিন! তাকে তো আমি আগেই আগুনের উত্তপ্ত শিখা থেকে সৃষ্টি করেছি। (সূরা আল হিজর, আয়াত ২৬-২৭)।" আবার 'মানুষ জ্বিনদের নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম। কেননা এ বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতা কেবল সুলায়মান (আ)-কে প্রদান করা হয়েছিল। এমতাবস্থায় আছর বা আকস্মিক ঘটনা ব্যতীত অধিকাংশ সময় জ্বিনদের সঙ্গে যোগাযোগ সাধারণত ধর্মদ্রোহী ও নিষিদ্ধ কর্মকান্ড সম্পাদনের মাধ্যমে করা হয়।[5]' এবার আমরা খুব সহজেই বুঝলাম জ্বিন জাতি ছিলো এবং এক সময় মানুষ পাপি জ্বিনদের পুজা করতো। এই পৃথিবীর অনেক দেব দেবী ছিল পাপি জ্বিন এবং মানুষ তাদেরকে পুজা করতো। আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি যে প্রত্যেক যুগেই মানুষ এবং জ্বিনদের উপর নবী রাসুল এবং কিতাব প্রেরন হয়েছিল॥ "নূহ (আ) কওমের লোকজন যখন তারা মৃত্যুমুখে পতিত হন তখন শয়তানতাদের গোপনে কুমন্ত্রনা দেয় যে তারা যে সমস্ত স্থানে বসত সেখানে তাদের মূর্তি বানিয়ে রাখ, আর ঐ মূর্তিদেরকে তাদের নামেই পরিচিত কর। তখন তারা তাই করল, কিন্তু তখনও তাদের ইবাদত শুরু হয়নি। তারপর যখন ঐ যামানার লোকেরা ও মারা গেল, তখন তাদের পরের যামানার লোকেরা ভূলে গেল যে,কেন ঐ মূর্তিগুলির সৃষ্টি করা হয়েছিল। তখনই তাদের পুজা শুরু হয়ে গেল। [6]" এই ঘটনা হতে এটাই বোঝা যায় যে এইভাবে মূর্তি এবং পরবর্তীতে দেব দেবীর পুজার প্রচলন হয়॥ পুর্বে নবী রাসুলদের উপর নাজিল করা বিভিন্ন কিতাব বিভিন্ন ভাবে মানুষ বিকৃত করেছে॥ আপনারা লেখার শুরুতেই পড়েছেন যে, হিন্দুদের বেদ এবং গীতায় পুজা করতে বারণ করা হয়েছে॥ হতে পারে বেদ এবং গীতা একসময় আল্লাহর কিতাব ছিলো যা পরবর্তীতে মানুষ বিকৃত করেছে॥ এই বিষয়ে মাওলানা মহিউদ্দিন খান সম্পাদিত পত্রিকায় বলা হয়েছে,"সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, তাওরাত ও ইঞ্জিলের মতই গীতা, বেদ ও আল্লাহ পাকের নাজিল কৃত কিতাব বা সহীফা ছিল এবং ঐ গুলি ঐ যামানার নবী ও রাসুলগণের উপর আল্লাহ্ পাকের তরফ থেকেই নাজিল হয়েছিল॥ [7]" দেওবন্দ মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মোহাম্মদ কাসেম নানুতবী (র), কৃষ্ণ এবং রামচন্দ্রকে সত্য নবী বলেছেন॥ "মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান কোরআনের তাফসিরে লিখেছেন,"স্মরণ রাখা উচিত যে, কৃষ্ণ আল্লাহর এক প্রিয়ও সৎপথ প্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন এবং নিজ যুগ ও জাতীর জন্য খোদার পক্ষ থেকে সতর্ককারী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন॥ [8]"
মাওলানা সোলায়মান নদভী ভারতের রামচন্দ্র, কৃষ্ণ এবং বুদ্ধকে নবীরুপে স্বীকার করেছেন। "বেদের সকল ঋষিই পয়গম্বর॥ [9]" 'হিন্দুদের রাম ও কৃষ্ণ আল্লাহর প্রেরিত নবী হতে পারে॥ [10]'
আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন,
'হু অল্লা হুল্লাজী লা ইলাহা ইল্লা’হুঅ, আল মালেকুল কুদ্দুছুচ্ছালা-মুতাকাব্বেরু; ছুবতানাল্লাহি- ইউসরেক্বুন। [৫৯: ২৩]' অর্থ: তিনি আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনিই পবিত্র, তিনিই শান্তি, তিনিই নিরাপত্তা বিধায়ক, তিনিই রক্ষক, তিনিই পরাক্রমশালী, তিনিই প্রবল। অপরদিকে বেদে বলা হয়েছে, 'বিশ্ব নিখিলের সর্বত্র যে সকল কাজ হয়ে চলছে প্রকৃত পক্ষে তার মূলে কোন দেবতা নেই, আছেন কেবল এক ঈশ্বর। সকল কিছুই তার অধীন, তার নিয়ন্ত্রণে সকল কিছুই। তিনি ছাড়া দ্বিতীয় নেই।[বেদ-১/১৬৪/৬ ]'॥ প্রকৃত পক্ষে কুরআন এবং বেদ শুধু মাত্র একজন সৃষ্টিকর্তার কথাই বলছেন॥ তবে
হিন্দুদের মুল ধর্মগ্রন্থ বেদ যে বিকৃতি হয়েছে সহজেই বোঝা যায়। কারণ বেদ যদি বিকৃতি না হতো বেদে এই ধরনের অজাচার এবং রগরগে বাণী থাকতো না। উদাহরণ হিসেবে -
(1) "Pushan is the lover of his sister Achoda. “Attendant on the Blessed Dame the Blessed one hath come: the Lover followeth his Sister. [Rig Veda X.3.3]"
(2) "Father-daughter incest occurs in the story of Brahma and hisdaughter.Brahma married his own daughter Satarupa.“Wise, teaching, following the thought of Order, the sonless gained a grandson from his daughter”. Fain, as a sire, to see his child prolific, he sped to meet her with an eager spirit.[RigVeda III .31.1-2]." Hiranyakashpu married his daughter Rohini. Vashista married Shatrupa, Janhu married Janhavi, and Surya married Usha.
সেজন্যই বিশিষ্ট প্রত্নতত্ত্ববিদ ও নৃতত্ত্ববিদ ডঃ অতুল সুর লিখেছেন – 'মৈথুন ধর্মটাই সেকালের সনাতন ধর্ম ছিল’ [11]।' বাংলা ডিকশোনারী মতে মৈথুন অর্থ ; রতিক্রিয়া, রমণ, স্ত্রী-পুরুষের যৌন সংসর্গ। [সং. মিথুন + অ]।
.
এখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার: আল্লাহর কাছে একমাত্র ধর্ম হচ্ছে ইসলাম। "নিশ্চয়ই ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ পাক উনার কাছে একমাত্র দ্বীন।[ সূরা আল ইমরান ১৯] " আল্লাহ তায়ালা কোনো ইহুদি বা খ্রিস্টান বা সনাতন ধর্ম পাঠাননি। আবার মহাভারতের মতে কৃষ্ণকে বিষ্ণুর অষ্টমাংশ অবতার এবং কোন কোন পুরাণে তাঁকে ষষ্টাংশ অবতার বলা হয়েছে দেখুন মহাভারত ১৮/৫/২৪, ১২/২৮০/৬২, বায়ু পুরাণ, ১/২৩/২১৭। অতএব হিন্দুরাই তাকে দেবতা কিংবা ভগবান বানিয়েছে, সে নিজে ভগবান সাজে নাই। অতএব কৃষ্ণ ঈশ্বর বা ভগবান ছিলেন না, তিনি ছিলেন ঈশ্বরের প্রেরিত মানব। বিভিন্ন ধর্মের নাম গুলো হয় কোনো মানুষের নামে, না হয় কোনো জায়গার নামে, না হয় কোনও বিখ্যাত মনিষীর উর্বর মস্তিষ্কের ফসল। এগুলোর কোনোটাই আল্লাহর দেওয়া নাম নয়। একজন স্রস্টা এমন একটি ধর্ম পাঠাবেন যেটি সারা পৃথিবীর সব মানুষের জন্য প্রযোজ্য হবে, অথচ তার নাম তিনি দেবেন কোনো এক ভদ্রলোকের নাম অনুসারে, বা কোনো এক জায়গার নাম অনুসারে -- এটা দাবি করাটা হাস্যকর।
.
তথ্যসুত্র:
.
[1] Osborne 2005, পৃ. 9.
.
[2] হিন্দুদের দেবদেবী: উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ, তৃতীয় খণ্ড, হংসনারায়ণ ভট্টাচার্য,কলকাতা, ২০০৭, পৃ.২৮৫-৮৭।
.
[3] রামায়ণ কৃত্তিবাস বিরচিত, ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় লিখিত ভূমিকা সম্বলিত, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ১৯৫৭ সংস্করণ।
.
[4] পূজা- বিজ্ঞান,স্বামী প্রমেয়ানন্দ, কলকাতা, ১৯৯৯,পৃষ্ঠা ৪৩-৪৪।
.
[5] ইবনে তাইমিয়ার রচনা,ঢাকা,তাওহীদ পাবলিকেশন, ১৯৮৯ পৃ. ২১]।
.
[6] ফতহুল বারী, ৬ -৭ পৃষ্ঠা।
.
[7] মাসিক মদীনা পত্রিকা, ডিসেম্বর ১৯৮৯।
.
[8] তফসীরে ওয়াহিদী।
.
[9] মুফতি মোহাম্মদ শফি, তফসীর মা’রেফুল কোরআনে, ৩য় খন্ড।
.
[10] ডাঃ জাকিরের লেকচার সমগ্র ভলিউম নং ২ পৃষ্টা নং ১৬২, পিস পাবলিকেশন।
.
[11] দেবলোকের যৌন জীবন,পৃঃ ৬২।
.. এবং
* Hinduism, the oldest religion in the world, Stevens 2001, পৃ. 191.
.
* oldest living religion,Sarma 1987, পৃ. 3.
বিষয়: বিবিধ
৫৬৫১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর বিশ্লেষণের জন্য ধন্যবাদ আর সনাতন ধর্মীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক এই কামনা করি৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন