প্রহর শেষে আলোয় রাঙ্গা সে দিন চৈত্র মাস, নাহিদ চাচার এক আমলে সকল প্রশ্ন ফাঁস
লিখেছেন লিখেছেন আলোকিত আধারে ১২ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:১৩:৩৮ দুপুর
শিক্ষা হলো জাতির মেরুদণ্ড। দেশের বার্ষিক বাজেটের সবচেয়ে বড় বরাদ্দ দেয়া হয় এই শিক্ষা খাতেই। সেই শিক্ষা ব্যবস্থার অধঃপতন আজ কতটা ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছেছে, তার সঠিক উপলব্ধি আমরা এখনও করতে পারছি না,জানি না কবে করবো! পাবলিক পরীক্ষা গুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়াটা এ দেশে নতুন নয়,খারাপ কাজে আমাদের মেধা যেভাবে খরচ করি, তাতে এই চর্চা নতুন হওয়ার কথা নয়। ১৯৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত পরিচিত হলো অবাধ নকলের সময় হিসেবে। প্রকাশ্য দিবালোকে কোনো রকম রাখঢাক না করে চলতো নকলের নির্লজ্জ মহড়া। নকলে বাধা দেয়ার অভিযোগে অনেক শিক্ষককে সেই সময় লাঞ্ছিত হতে হয়েছিল। একজন আপসহীন অধ্যক্ষ, প্রফেসর এ বি এম আবদুল লতিফকে হেলিকপ্টার পাঠিয়ে উদ্ধার করতে হয়েছিল। ইতিহাসের নাকি পুনরাবৃত্তি ঘটে। কারণ, ইতিহাসের শিক্ষাই হচ্ছে, ‘ইতিহাস থেকে কেউ শেখে না।’
.
বর্তমান সরকারের আমলে প্রশ্নপত্র ফাঁস শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। অথচ সব দেখেও না দেখার ভান করেন আমাদের শিক্ষা মন্ত্রী। সব কিছু জেনেও না জানার ভান করেন তার মন্ত্রনালয় আর শিক্ষা বোর্ড সমুহ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ৬৩ টি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আর ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার সব প্রশ্নপত্রই ফাঁস হয়েছে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী সংসদে দাড়িয়ে বলেছেন," গত ৫ বছরে কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। (২৬ জুন, ২০১৪ বাংলা নিউজ ২৪.কম)। আসলেই খুব সুন্দর কথা!!
২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মহাজোট সরকার গঠিত হওয়ার পর ২০১০ সালে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। এ প্রশ্ন ফাঁস কারী সিন্ডিকেট প্রতি চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা দরে প্রশ্ন বিক্রয় করে কোটি কোটি টাকা সংগ্রহ করে। রংপুর পুলিশ ওই সময় এ ঘটনায় জড়িত ১৬৭ জনকে গ্রেফতার করে তাদের কাছ থেকে ৬৮ লাখ টাকা উদ্ধার করেছিল। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে ২০১২ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় ৩৩ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ২০১৩ সালের মে মাসে অগ্রণী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে কর্তৃপক্ষ ওই পরীক্ষা বাতিল করে দেয়। একই বছর ডিসেম্বরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে বাতিল করা হয়। তবে ওই পরীক্ষা পুনরায় অনুষ্ঠানের সময় কোনো কোনো জেলায় আবারও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়। ২০১১ সালে অডিট বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। ২০১২ সালের ২৭শে জানুয়ারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই খাদ্য অধিদফতরের নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত ওই পরীক্ষা বাতিল করা হয়। ২৭শে জুলাই জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষার আগের রাতে পুরান ঢাকার একটি হোটেল থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নসহ ১৬ জনকে আটক করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১২ বছরের ৩রা আগস্ট জতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা পদে নিয়োগের বাছাই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ফাঁস হয় জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। জেএসসিকে অনুসরণ করে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস করে চড়া দামে বিক্রি করা হয়। একই বছর এপ্রিলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ফাঁসের ঘটনা স্বীকার করে এবং বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস কারীদের ৬০ জনকে গ্রেফতর করে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে ওই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও মাঝে মধ্যে ফাঁস হয়েছে। এ বছর ২০১৫ সালে হল মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ফাঁস। এর আগে ২০১১ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদপুর ও শ্যামলী থেকে মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে Rab ২১ জনকে গ্রেফতার করে মামলা করলেও তাদের একজনকেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হয়নি। এই ২১ জনের একজন এ বছর মেডিকেল প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ১৫ সেপ্টেম্বর আবারও Raber হাতে আটক হয়। গত ৬ বছরে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে ৭০টি মামলা হলেও এসব মামলায় কারও শাস্তি হয়নি। সর্বশেষ ২০১৫–২০১৬ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছে মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন-প্রতিবাদ সমাবেশও করছে তারা। যদিও ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ রবিবার দুপুরে ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আসলেই আমরা সব পারি॥
সাংহাই-ভিত্তিক একাডেমিক রাযাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি ২০১৩ সালে বিশ্বের ৫০০টি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দিয়েছে, তাতেও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ঠাঁই পায়নি। একই সময়ে কিউএস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি নামে আরেকটি সংস্থা ৩০০ এশীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মানক্রম করেছে, তাতে বাংলাদেশের একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঠাঁই পেয়েছে। এই তালিকায় ভারতের ১১টি এবং পাকিস্তানের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আর শীর্ষ ১০০টির মধ্যে একা চীনেরই রয়েছে ২১টি। এ প্রতিবেদনগুলো থেকে সহজেই বোঝা যায়, উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের কী শোচনীয় অবস্থা! পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন- ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি ন্যূনতম ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড সহ অর্থ দণ্ডের বিধান রয়েছে। এই দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি গুলো প্রয়োগের মাধ্যমেই এ অপরাধ দমন সম্ভব। কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ সম্ভব হয়ে উঠছে না কারন এর সাথে জড়িতদের হাত অনেক বড়। আসলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড নষ্ট হয়ে গেছে । এই বিষয় গুলো নিয়ে ছাত্র সমাজের অনেক আগেই সচেতন হওয়া প্রয়োজন ছিলো। কিন্তু বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ বেশি ব্যস্ত ক্রিকেট, সেলফি, ডেটিং আর আনন্দ ফূর্তি নিয়ে। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা মিডিয়াতে প্রকাশ পেলেই মন্ত্রী তাকে ‘গুজব’ বা দেশের স্বার্থ-বিরোধী এবং ক্ষেত্র বিশেষে প্রগতিশীল রাজনীতির বিরোধী কর্মকাণ্ড বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। এভাবে দুর্নীতিবাজদের রেহাই দেওয়ার ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি স্বাভাবিক ঘটনায় দাড়িয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১৬৬৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন