পুরুষের জন্য হিজাব

লিখেছেন লিখেছেন কে এ মারুফ ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০২:৪৮:৫২ দুপুর

আল্লাহ পুরুষের জন্য ও

পর্দার হকুম দিয়েছেন !!!

আল্লাহ পুরুষের জন্য ও পর্দার হকুম

দিয়েছেন !!!

সম্মানিত ভাই ও

বোনেরা আসসালামুয়ালাইকুম,

আমি আজ পর্দা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ

বক্তব্য আপনাদের

সামনে তুলে ধরতে যাচ্ছি। কারণ

আমাদের সমাজে আমরা নারীদের

অধিকার সম্পর্কে ভুলে বসে আছি।

ভেবে বসে আছি যে, পর্দা শুধু

নারীদের উপর ফরজ। আর নারীদের

পর্দা নিয়েই যত

মাতামাতি করি আমরা। অথচ পর্দার

গুরুত্ব পুরুষদের জন্য অনেক। আসুন কুরআন ও

হাদীসের আলোকে এ

ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।

আল্লাহ পুরুষের জন্য পর্দার হকুম

দিয়েছেন।

তারপর হুকুম এলো নারীদের জন্য।

সুতরাং, পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্য

পর্দা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।

আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন এর সুরা নুর এর ৩০

নং আয়াতে বলেন,

“হে নবী আপনি ইমানদার পুরুষদের বলুন,

তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত

করে আর লজ্জাস্থানের হেফাজত

করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম,

তারা কি করছে আল্লাহ্ এ

ব্যাপারে জানেন”

সুতরাং পুরুষরা পর্দা আগে নিশ্চিত

করতে হবে। পাশা পাশি নারীরা ও

তাদের পর্দা চালিয়ে যাবে। এটা খুব

ই সত্য কথা যে পুরুষরা যদি পবিত্র কুরআন

এর সুরা নুর এর এই আয়াত কে অনুসরণ

করতো আর আল্লাহর এই একটা হুকুম শুধু

পালন করতো, তবে কোন নারী কে আর

উত্যক্ত হতে হতোনা।

নারীরা বিনা পর্দায়

চলাফেরা করতে পারতো। কিন্তু

আমাদের আল্লাহ্ আমাদের এমন

উপাদান দিয়ে বানিয়েছেন

যে আমরা শয়তানের ধোকায়

পড়ে নিজেদের হারিয়ে ফেলি।

স্বাভাবিক আকর্ষণ আল্লাহ্ আমাদের

মধ্যে দিয়ে দিয়েছেন। আর এই আকর্ষণ

দেয়ার কারণ, আল্লাহ্ আমাদের

পরিক্ষা করতে চান।

তিনি দেখতে চান কে আল্লাহ্ কে ভয়

করে আর কে আল্লাহর হুকুম পালন করে। এ

ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেছেন

সুরা আনকাবুত এর ২ নং আয়াতে, “মানুষ

কি মনে করে, তারা একথা বললেই

পার পেয়ে যাবে যে আমরা বিশ্বাস

করি(ইমানদার) আর

তাদেরকে পরীক্ষা করা হবেনা?”

সুতরাং এটা আল্লাহ্ এর

একটা পরীক্ষা মাত্র আমাদের জন্য।

আল্লাহ্ এর পরীক্ষায় পাশ

করতে না পারলে আমরা আখিরাতের

ক্যারিয়ার কে নিজ হাতে নষ্ট

করলাম।

যদিও আমাদের এমন আকর্ষণ করার মত

উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়েছে,

তারপরো আল্লাহ্ আমাদের

মধ্যে নিয়ন্ত্রন শক্তি ও

দিয়ে দিয়েছেন। আর এই নিয়ন্ত্রন

করাটা আল্লাহ্ আপনার এখতিয়ারভুক্ত

করে দিয়েছেন।

আপনি চাইলে শয়তানের চটকদার

প্ররোচনায় উৎসাহিত হতে পারেন, আর

চাইলেই শয়তান এর কথায় কান নাও

দিতে পারেন। এটা আপনার ইচ্ছার

ব্যাপার। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম

যে, আপনাকে আপনার এক বন্ধু মদ পান

করতে বলল, আর আপনি হয় নিষেধ

করে দিলেন আর ইচ্ছা হলে তা গ্রহন

করলেন।

পুরুষদের পর্দার হুকুম আসার পরের

আয়াতেই আল্লাহ্ মেয়েদের পর্দার

হুকুম নাযিল করলেন। তিনি সুরা নূর এর

৩১ নং আয়াতে বলেন, “এবং ইমানদার

নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের

দৃষ্টি নিচু করে আর লজ্জাস্থানের

হেফাজত করে, আর স্বাভাবিক প্রকাশ

হয়ে পড়ে এমন স্থান ছাড়া শরীরের আর

কোন স্থান প্রকাশ না করে,

তারা যেন তাদের বক্ষদেশ আর

মাথা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখে। আর

(স্বামী, পিতা,শশুর, পুত্র,সতপুত্র,

আপনভাই,ভাইয়ের পুত্র,বোনের পুত্র, আপন

স্ত্রীলোক, নিজের ভৃত্য, নারীর

প্রতি লালসাহীন সেবক,নারীদেহ

সম্পর্কে অজ্ঞ বালক) ছাড়া আর

কারো নিকট সৌন্দর্য প্রকাশ না করে,

তারা যেন গোপনে আবরন প্রকাশের

জন্য

সজোরে হেটে না বেড়ায়”আল্লাহ্ শুধু

পুরুষদের উপরই সব চাপিয়ে দেন নি।

বরং সমানভাবে পুরুষ ও নারী উভয়ের

জন্যই বিধান করে দিয়েছেন।

শারীরিক গঠনের কারনে পুরুষদের আবরন

দিয়ে ঢাকার দরকার হয়না বিধায়

অনেক ভাই ই মনে করেন

আমরা তো বেঁচে গেলাম।

পর্দা করবে শুধু মেয়েরা। আর

লম্বা বোরকা পরবে। আমি ভাইদের

মনে করিয়ে দিতে চাই, পর্দার হুকুম

প্রথমে পুরুষদের উপর এসেছে। নারীদের

উপর নয়। পুরুষের পর্দা হল চোখে আর চোখ

হেফাজত

করতে না পারলে আপনি তেমন

শাস্তি পাবেন, যেমন শাস্তি একজন

বোন পর্দা ত্যাগ করার

কারনে পাবেন। পুরুষদের পোশাক এমন

আঁটসাঁট

হতে পারবেনা যেমনটা নারীদের

আকৃষ্ট করে। আর কোন নারীর

পোশাকের সাথে মিলে যায় এমন

পোশাক ও হতে পারবেনা। পুরুষদের চুল

হতে হবে পুরুষদের মত, নারীদের মত

লম্বা নয়।

যেসব ভাই রাস্তায় বের

হলে মনে মনে এডভেঞ্চার অনুভব করেন

আর ভাবেন যে বহু নারী দর্শন হবে আজ,

তাদের কে বলতে চাই, অনিচ্ছাকৃত

প্রথম দৃষ্টি ছাড়া পরের

দৃষ্টি গুলো আপনাকে জাহান্নামে

নিক্ষেপ করার পক্ষে দলিল হবে।

আল্লাহ্ এর

ক্ষমা নিতে না পারলে অবস্থা যে

কি হবে তা সেই বিচারের কঠিন

দিনেই টের পাবেন।সত্যিকার

পুরুষরা কেউ কখনো চায় না তাদের

বউকে বাহিরের কেউ

তাকিয়ে তাকিয়ে দেখুক। অবশ্য সেই

সব পুরুষরা এই দলে নয়, যারা শয়তান এর

কথা মত নিজ স্ত্রীকে লোক

সম্মুখে প্রদর্শন করতে পছন্দ করেন আর

ভাব মারেন যে “আমার

একটা সুন্দরী বউ আছে”, আপনি যদি আজ

একজন

নারীকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন

, তবে আপনার বউয়ের দিকে কেউ

তাকিয়ে থাকলে কেন আপনার চোখ

রাগে লাল হয়ে যায় ???

মনে করিয়ে দিতে চাই ভাইয়েরা,

আপনি আজ একজনের বউয়ের

দিকে তাকাবেন, কাল আরেকজন

আপনার বউকে তাকিয়ে দেখবে।

এটা একটা প্রাকৃতিক শাস্তি।

বোনদের পর্দার ব্যাপারে সূরা নূর এর

৩১ নং আয়াতে “স্বাভাবিক

ভাবে যা প্রকাশ হয়ে পড়ে” এই কথার

অর্থ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ

রয়েছে। অনেকে বলেছেন

“স্বাভাবিক ভাবে প্রকাশ”

বলতে হাতের কব্জি আর পায়ের

পাতা কে বুঝায়। কিন্তু মানুষের

স্বাভাবিক বুদ্ধি আর বিবেচনায়

“স্বাভাবিক প্রকাশিত” বলতে মানুষের

মুখমণ্ডল কেও বুঝায়। আর অনেকেই এই মত

কেই গ্রহন করেছেন। আলেমদের এই দুই

মতামতের উপর

ভিত্তি করে চুলচেরা বিশ্লেষণ

করে আমি আপনাদের সামনে এই

ব্যাপারটা তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

যেসব আলেম বলেন যে মেয়েদের

পর্দায় মুখ ঢাকতে হবে, তাদের

যুক্তিতে ইমানের সতর্ক অবস্থার প্রকাশ

পায়। তারা মুখ না ঢাকাটা ইমানের

জন্য নিরাপদ মনে করেন। আর যারা মুখ

না ঢাকার পক্ষে মত দেন,

তারা কি তাহলে ইমানের

পক্ষে সতর্ক নয় ?? সহীহ মুসলিম এর

একটি হাদীসে এসেছে,রাসুল (সা)

তিন বার বলেছেন, “দ্বীনের

খুটিনাটি বিষয়ে কঠোরতা প্রদর্শন

কারী ধ্বংস হয়ে গেছে”, এই

হাদীসের আলোকে মতবিরোধের এই

ব্যাপারে মুখ না ঢাকার কথা বলা হয়।

এবং সহীহ হাদীস গুলো মতে এটাই

সাব্যস্ত হয় যে মুখ খোলা রাখা যাবে।

“আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভি” ও একই

কথা সমর্থন করেছেন।

তাছাড়া আমরা সূরা নুরের ৩০

নং আয়াতে দেখলাম পুরুষদের পর্দার

ব্যাপারে আল্লাহ্ প্রথম সতর্ক করলেন।

তারপর মেয়েদের বললেন

যে ঢিলেঢালা কাপড় দিয়ে বক্ষদেশ

আর মাথা ঢেকে রাখতে। আল্লাহ্

পুরুষদের চোখ নিচু রাখার আদেশ

দিলেন আর নারীদের পর্দার হুকুম

দিয়ে পুরুষদের এ কাজ কে আরো সহজ

করে দিলেন।

এখন যদি কোন বোন হিজাব পরেন,

ঢিলে-ঢালা কাপড় পরেন আর মুখ

খোলা রাখেন, তবে ওই বোনের

চেহারার দিকে তাকানোর

অনুমতি আমাদের পুরুষদের নেই

এটা সূরা নুরের ৩০ নং আয়াত

দ্বারা প্রমাণিত। আর যদি বলেন

যে বোনদের মুখ ঢাকতে হবে,

তবে বলতে চাই, কোন বোন

যদি মনে করেন তিনি মুখ ঢাকলে তার

সমস্যা হয় বা তিনি মুখ ঢাকতে ইচ্ছুক নয়,

তবে এ ব্যাপারে ইসলামের সহীহ

দলিলগুলো তাকে অনুমতি দেয়। আসল

কথা হলো, কোন নারী পর্দা করুন আর

নাই করুন, পুরুষদের তাদের

দিকে তাকানো নিষেধ। কোন

নারী যদি পর্দা করেন,

তবে তিনি আল্লাহর দেয়া ফরয আদায়

করলেন। আর

পর্দা না করলে শাস্তি পাবেন। ঠিক

একই ভাবে, কোন পুরুষ যদি মাহরাম

(অনুমদিত বা যাদের

দিকে তাকানো বৈধ) ব্যতীত অন্য

কোন নারীর দিকে তাকান,

তবে তিনি শাস্তি পাবেন

যদি না তাওবা করে আল্লাহ্ এর কাছ

থেকে মাফ না নিতে পারেন।

উপরের পর্যালোচনার আলোকে এই

কথা স্পষ্ট যে, পুরুষের চোখ কে অবশ্যই

নিচু আর সংযত রাখতে হবে। পবিত্র

কুরআন সেই কথাই সবার

আগে ঘোষণা করেছে। নারীদের

পর্দার কথা বলে পর্দা প্রথা শুধু

নারীদের উপর চাপিয়ে দেবার কোন

অবকাশ নেই। আর পুরুষরা যদি এ

কথা মনে করেন যে, সব কিছু শুধু

নারীদের উপর ই ফরজ,তবে পুরুষের উপর

তো আর চোখ সংযত করার ই দরকার

পড়েনা। তাইনা?

বরং এটাই পুরুষদের জন্য পরীক্ষা যে মুখ

খোলা রাখা নারীদের

দিকে না তাকিয়ে চোখ কে নিচু

রাখা। আর যেসব বোন মুখ ঢাকেন,

তারা তো তাদের তাকওয়ার পরিচয়

দেন। আর আল্লাহ্ তাদের এই

তাকওয়া আরো বাড়িয়ে দিন এই

দুয়া করি। মুখ ঢাকাটা হল ঐচ্ছিক

ব্যাপার। কোন বোন যদি মনে করেন

যে তিনি মুখ ঢাকবেন, তবে এর জন্য

তিনি বাড়তি পুরুস্কার পাবেন

আল্লাহর কাছ থেকে। আর এটাই

সর্বোত্তম তাকওয়ার পরিচায়ক। আর মুখ

খোলা রাখা বোনের দিকে যে পুরুষ

তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে, তার জন্য

জাহান্নামের শাস্তির সুসংবাদ।

অবশ্যই এজন্য ওই বোনকে আল্লাহ্

শাস্তি দিবেন না যদি না তার নিয়ত

হয় এরকম যে আমি মুখ

খোলা রাখবো আর

পুরুষরা আমাকে দেখবে।

আল্লাহ্ বলেছেন,

“হে নবী আপনি ইমানদার পুরুষদের বলুন,

তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত

করে আর লজ্জাস্থানের হেফাজত

করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম,

তারা কি করছে আল্লাহ্ এ

ব্যাপারে জানেন” – সূরা নুরঃ৩০

আশা করি ভাই ও বোনেরা সঠিক

ধারণা টা বোধে আনতে পারবেন। ইন

শা আল্লাহ্ ! আল্লাহ্ আমাদের বুঝার

তাওফিক দিন। আমীন!!

বিষয়: বিবিধ

১১৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File