জ্ঞান কী?
লিখেছেন লিখেছেন আহমেদ জোবায়ের ০৭ জুলাই, ২০১৪, ১১:১০:৫৭ সকাল
প্রথম আলোর উপ-সম্পাদক আনিসুল হক সম্প্রতি তার এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন যে বুয়েটের ছাত্র হিসেবে যখন পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় যান, তাকে যখন সাবেক বুয়েটের ছাত্রদের সাথে কেউ পরিচয় করিয়ে দেন তখন খুব গর্ব হয়, তাদের অবস্থান, তাদের স্ট্যাটাস, তাদের প্রতিপত্তি দেখে।
একই লেখার অন্যত্র তিনি লিখেছেন, অরিয়েন্টশন ক্লাসে যখন স্যাররা প্রশ্ন করলেন কারা স্ট্যান্ড করেছ, তখন ক্লাসের প্রায় সবাই দাঁড়িয়ে গেল, স্যাররা বললেন- ‘তোমরা হলে সেরাদের সেরা-best of the best’ আবার যখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়ে আসার সময় একটা জরিপ করা হল, সেখানে অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটা - কারা সুযোগ পেলে ঘুষ খাবে, দেখা গেল প্রায় ৯০ শতাংশের উপরে ছেলেরা বলল তারা সুযোগ পেলে ঘুস খাবে।তিনিই প্রশ্ন করেছেন যে, বুয়েটের স্যারদেরকে আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে আপনারা সেরাদের সেরা ছাত্রগুলোকে এনে মাত্র চার বছরে কি এমন শেখালেন যে সেই ছেলেগুলোই ঘুষ খেতে চাইছে।
আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন- ২০০৭ সালের সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ট্রুথ কমিশনের সামনে যে ক’জন নিজেদের কালো টাকার কথা স্বীকার করেছেন তাদের প্রায় অধিকাংশই ইঞ্জিনিয়ার। এখানে তিনি একটু আপসোস করেছেন এই বলে যে, রাজনীতিবিদ, আমলাসহ আরও অনেকেই ঘুষ খেলেও ধরা খায় শুধু ইঞ্জিনিয়াররাই, আমরা ভাল করে ঘুষটাও খেতে পারিনা।
আরেকটি গল্প-
শিক্ষকদের বারবার অভিযোগের ভিত্তিতে শিশু এডিসনকে তার মা স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এলেন, অভিযোগ ছিল এডিসনের পড়ালেখায় মন নেই।
তারপর ছোট্ট এডিসনের মায়ের নিকট পড়াশুনা, শিশু বয়সেই ট্রেনে চড়ে এক ষ্টেশন থেকে অন্য ষ্টেশনে পত্রিকা ও লজেন্স বিক্রি করে টাকা উপার্জন তার পরের কাহিনীতো আমাদের সবার জানা- আপনার ঘর আলোকিত করে রেখেছে যে বৈদ্যুতিক বাতি তা এই এডিসনেরই অবদান আরও অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তুর আবিস্কারক এডিসন।
আনিসুল হকদের মত বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র শিক্ষকদের গর্বের এই জায়গা থেকেই আজকের লেখা শুরু।
এই গর্বটা কেন, নিশ্চয় তাদের জ্ঞান বেশি তাই। তারা অনেক ছেলেমেয়েদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন তাই।
এবার আমরা একটু জানব জ্ঞান কী………………………।।
জ্ঞানের কোন সর্বজন স্বীকৃত সংজ্ঞা নেই। একেক জন একেক ভাবে জ্ঞানকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।
দার্শনিক প্লেটোর মতে, জ্ঞান হল- ‘’Justified True Belief’’
Justified মানে warranted অর্থাৎ গ্যারান্টিযুক্ত, আর true মানে ত সত্য সবশেষে belief মানে বিশ্বাস।
সহজ কথাই বললে প্লেটোর মতে, ওয়ারান্টি/গ্যারান্টিযুক্ত একটি সত্য বিশ্বাস হল জ্ঞান। যদিও অনেকেই এই মতের বিরোধিতা করেছেন এই বলে যে, যিনি গ্যারান্টি দিচ্ছেন তিনি যদি ভুল বিষয়ে গ্যারান্টি দেন অথবা তিনি জানেন সত্য হিসেবে আসলে তা সত্য নয়, তখন তো সেটা জ্ঞান হতে পারেনা।
এখানে যেটা অপুর্নতা তা হল- সত্য বিশ্বাস ঠিক আছে কিন্তু তা হতে হবে নির্ভরযোগ্য/গ্যারান্টিযুক্ত উৎস্য/মাধ্যম থেকে আগত।
অক্সফোর্ড ডিকশনারী মতে জ্ঞান হল-
Facts, information and skills acquired through experience or education; the theoretical or practical understanding of a subject.
Or, awareness or familiarity gained by experience of a fact or situation.
উইকিপিডিয়ার মতে-
Knowledge is a familiarity with someone or something, which can include facts, information,descriptions, or skills acquired through experience or education. It can refer to the theoretical or practical understanding of a subject. It can be implicit (as with practical skill or expertise) or explicit (as with the theoretical understanding of a subject); it can be more or less formal or systematic.[1]
উপরে উল্লিখিত জ্ঞানের সংজ্ঞা থেকে তিনটি বিষয় পাওয়া যায়-
প্রথমত-Skills তথা দক্ষতা
সার্কাসের একটি ছেলের একটি তারের উপর দিয়ে হেটে বা সাইকেল চালিয়ে যাওয়াসহ এরকম হাজারো দক্ষতাকে কিন্তু আমরা জ্ঞান বলিনা।
তাহলে বলা যায় সকল ধরনের দক্ষতাই জ্ঞান নয়।
এবার আসি, information তথা তথ্য
এরিস্টোটল যখন বললেন, সুর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে অর্থাৎ পৃথিবী স্থির তখন সেটাকেই মানুষ সত্য বলে মেনে নিল, কোপার্নিকাসের পৃথিবী ঘোরার তথ্য আসার আগ পর্যন্ত সেটিই ছিল সত্য, সবশেষে বলা হচ্ছে-সুর্য পৃথিবী সবই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুর্নায়মান। তাহলে দেখা যাচ্ছে এভাবেই তথ্য সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়েছে।তাই সকল তথ্যকেই জ্ঞান বলা যাচ্ছেনা।
শুধুমাত্র যুক্তিগ্রাহ্য, মানুষের/জীবের/পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় এমন প্রমানিত তথ্যকেই জ্ঞান বলা যেতে পারে।
এখন শুধু বাকী থাকে সত্য।
Word Web ডিকশনারীতে Fact শব্দটির অর্থ এভাবে দেয়া আছে-
A piece of information about circumstances that exist or events that have occurred
A statement or assertion of verified information about something that is the case or has happened
An event known to have happened or something known to have existed
A concept whose truth can be proved ("scientific hypotheses are not facts")
এখান থেকে জানা যায়, verified/ proved information তথা প্রমানিত তথ্যকে সত্য বলে।
এ পর্যন্ত আলোচনায়, সাধারন দৃষ্টিতে বলা যায়, প্রমানিত সত্যই হল জ্ঞান।
এখন আমরা দেখব যে এই প্রমানিত তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে।
উপরে সত্যের সংজ্ঞাতেই বলা হয়েছে বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিসগুলো সত্য নয়, কেননা এগুলো হচ্ছে বৈজ্ঞানিকদের অনুমান। আর এই অনুমানগুলো হাজারো এবং অদ্ভুত রকমের হয়। এরিস্টোটল যখন বললেন- সুর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে তখন সেটাই ছিল বিজ্ঞান আবার কোপার্নিকাস যখন বললেন না, পৃথিবীই সুর্যের চারদিকে ঘোরে তখন সেটা হল বিজ্ঞান। এমনিভাবে বিজ্ঞানের ধারনাগুলো পরিবর্তিত হয়, অলোড়ন সৃষ্টিকারী আইনস্টাইনের থিউরী অব রিলেটিভিটিকেই কেউ হয়তো একদিন বলবে এটা মস্ত ভুল ছিল। তাই দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানসহ মানুষের এই জ্ঞান তথা তথ্যগুলো অপরিবর্তনীয় নয়, বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। তাই প্রকৃত সত্যের জন্য আমাদেরকে এমন একটি সোর্সের নিকট যেতে হবে যেটা অপরিবর্তনীয়, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়না।
সেই অপরিবর্তনীয় সোর্সটি হল আমদের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা। আসমানী কিতাব এবং নবী/রাসুলদের মাধ্যমে যে তথ্যগুলো আমরা পেয়েছি সেগুলোই পৃথিবীতে শতাব্দীর পর শতাব্দী অপরিবর্তনীয় রূপে বিদ্যমান রয়েছে।এবং এগুলোর মধ্যে সর্বশেষ, প্রমান্য, অবিকৃত ও একমাত্র আসমানী কিতাব হল- কোরআন। কোরআন ছাড়া অন্যসব ধর্ম গ্রন্থ যে অবিকৃত নেই তা ডঃ মরিস বুকইলি তার ‘বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান’ বইতে এবং ডাঃ জাকির নায়েক তার লেকচারে অজস্র বার প্রমান করেছেন। তাই এখানে আমরা আসমানী কিতাব বলতে শুধু কোরআন নিয়েই আলোচনা করব। এই কোরআনই হচ্ছে অপরিবর্তনীয় ও প্রমানিত সত্যের তথা দার্শনিক প্লেটোর-Justified True-এর একমাত্র সোর্স।
কোরআনের শত সহস্র অনন্য বৈশিষ্টের মধ্যে মাত্র ক’টি উল্লেখ করা হলঃ
সাহিত্যক মানঃ
কবি-সাহিত্যিকদের অনেক সময় আমরা জ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করে থাকি সে কবি শিক্ষিত হোক অথবা নজরুলের/আল-মাহমুদের মত আধা-শিক্ষিত। তাই এখন আমরা দেখব কোরানের সাহিত্যিক মান-
কোরানের একটি সুরা/আয়াত রচনার ব্যপারে মানুষের উপরে চ্যালেঞ্জ দেয়া আছে আজ চৌদ্দশ বছর ধরে।কোরানের একটি আয়াত যে সব বৈশিষ্ট বহন করে-
১। প্রত্যেকটি চরন আলাদা আলাদা ভাবে স্বয়ংসম্পুর্ন অর্থ প্রকাশ করে।
২। মানবজাতির জন্য জরুরী বার্তা বহন করে।
৩। সাহিত্যিক মান অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
৪। অনাগত ঘটনার ভবিষ্যত বানী তুলে ধরে।
৫। বর্তমানের কোন বিষয়কে নির্দেশ করে।
৬। এমন বৈজ্ঞানিক তথ্য তুলে ধরে যা আগামী চৌদ্দশ বছর আগে জানা সম্ভব নয়।
৭। প্রতিটি চরন অর্থের দিক দিয়ে পরিপুরক।
৮। ১০ টি ভিন্ন ভিন্ন পঠন পদ্ধতি ও ৭ টি আঞ্চলিক উচ্চারনে পড়া যায়।
বিগত চৌদ্দশ বছর কারো পক্ষেই এমন একটি চরন রচনা সম্ভব হয়নি।
কোরআনে অতীতের ঘটনাঃ
সুরা নুহ আয়াত ৪৯ এ নুহ আঃ এর ব্যাপারে বলা হয়েছে-
এটা গায়েবী সংবাদ যা তোমার কাছে অহির মাধ্যমে পৌছাচ্ছি ইতিপুর্বে এটা না তুমি জানতে না তোমার সম্প্রদায়।
ঈসা আঃ এর ধর্ম প্রচারের বয়স তখনকার আরব ও খৃস্টানদের মতে এবং বাইবেলের(লুক ৩;২৩) মতে ৩০ বছর আর অন্যদিকে কোরান বলছে সুরা মায়িদা আয়াত ১১০- ঈসা আঃ কথা বলেন শিশু ও কাহলান(৩০-৫০ এর মাঝামাঝি) অবস্থায়।
ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায় যে ঈসা আঃ এর বয়স তখন ৩৮ এর কম ছিলনা।
কোরআনে ইউসুফ আঃ এর সময়ে মিশরের অধিপতিদের রাজা আর মুসা আঃ এর সময় ফেরাউন হিসেবে উল্লেখ আছে যা ইতিহাসের দৃষ্টিতে সঠিক।
কেননা ইউসুফ আঃ এর মৃত্যুর ২০০ বছরের ও বেশি সময় পর ফেরউন শব্দের ব্যবহার শুরু হয়। আর বাইবেলে (জেনেসিস ৩৯-৫০) মুসা ও ইউসুফ আঃ উভয়ের আমলের রাজাকেই ফেরাউন হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
তেমনিভাবে হামান শব্দটির ক্ষেত্রেও- যার অর্থ –‘পাথর খনির শ্রমিক নেতা’ কোরআনে(সুরা কাসাস-৩৮) একথা বলা হয়েছে অথচ এই ১৭৯৯ সালে রোসেটা শিলালিপি আবিস্কারের পর প্রায় ৩০ বছর চেষ্টার পর হায়ারোগ্লিফিক শব্দ হামানের অর্থ মানুষ জানতে পেরেছে।
এমনিভাবে আরো অনেক ঘটনা আছে যেমন-নাসারা শব্দ, ইরাম ও এবলা শহর ইত্যাদি যেখান থেকে অতীতের অনেক ঘটনার সত্যতা জানা যায় কোরআন থেকে যেগুলো পৃথিবীর মানুষ জানতে পেরেছে মাত্র কিছুদিন পুর্বে।
বৈজ্ঞানিক তত্বঃ
পাহাড়ের শিকড়ঃ
ভুতত্ববিদ ট্যারবাক ও লুটজেন্স মাত্র কিছুদিন আগে বলেছেন-“পাহাড়ের এ সমস্ত মুলের অস্তিত্ব ভু-কম্পন ও অভিকর্ষজ উপাত্ত থেকে নিশ্চত করা হয়েছে। একটি ৩/৪ মাইল উচু পাহাড়ের পৃথিবীর নীচে ৩০/৪০ মাইল দীর্ঘ শিকড় থাকে”।
এটা না থাকলে ঘন ঘন ভুমিকম্প বা পৃথিবী সদা কম্পমান থাকত।
কোর আন বলেছে-
আমি কি পৃথিবীকে বিছানা বানিয়ে দেইনি? পাহাড় সমুহ কে পেরেক রূপে গেড়ে দেইনি?(সুরা নাবাঃ৬-৭)
আর তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদের নিয়ে আন্দোলিত না হয়।(সুরা নহলঃ১৫)
বিগব্যাং ও বিশ্ব সৃষ্টিঃ
১৯২০ সালে আলেকজান্ডার ফ্রীডম্যান ও জর্জ লেমেয়াতর এর বিগব্যাং মতবাদটি প্রস্তাব করার আগে পৃথিবীবাসী জানত না পৃথিবী সৃষ্টির এমন ধারনা। অথচ কোরান ১৪০০ বছর আগেই বলেছে- আকাশ মন্ডলী ও পৃথিবী মিশে ছিল আমি পৃথক করে দিলাম (সুরা আম্বিয়া-৩০)।
পানিচক্রঃ
কোরানের ১০/১২ স্থানে বা তারও বেশি পানিচক্রের কথা আলোচনা হয়েছে।
সম্প্রতি আবহাওয়াবিদরা বৃষ্টিপাতের জন্য কিউমুলাস মেঘকে দায়ী করেছেন। ছোট ছোট কিউমুলাস মেঘ বাতাসে সঞ্চালিত হয়ে একত্রিত হয়, এভাবে ধীরে ধীরে মেঘের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। একপর্যায়ে জলীয় বাস্পের ভর খড়ের গাদার মত খাড়াভাবে বাড়তে শুরু করে। মেঘপুঞ্জ যখন যথেষ্ট উচুতে লম্বাকার ধারন করে, তখন উপরের বায়ুমন্ডলের শীতল স্পর্শে তা ঘনীভুত হতে থাকে- এরই পরিনাম হল বৃষ্টি।এর জন্য আবহাওয়াবিদদের স্যাটেলাইট ফটোগ্রাফ, এরোপ্লেন, আবহাওয়া বেলুন ও কম্পিউটার সহ অনেক উন্নত মানের যন্ত্রপাতির সাহায্য নিতে হয়েছে।
আর কোরান বলেছে ১৪০০ বছর আগেই-
তুমি কি দেখনা, আল্লাহ সঞ্চালিত করেন মেঘমালাকে, তারপর তাদেরকে একত্রিত করেন এবং পরে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তুমি দেখতে পাও ওর মধ্য হতে নির্গত হয় পানিধারা………(নুর-৪৩)
অথচ ১৭ শতকের বিখ্যাত দার্শনিক রেনে ডেকার্তে বলেছিলেন- সমুদ্রের পানি ভুগর্ভস্থ নানা প্রনালীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অবশেষে পাহাড়ের চুড়ায় জমতে থাকে।
এমনিভাবে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মতবাদের মধ্য দিয়া বর্তমান অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
ফিজিওলজিঃ
সুরা আম্বিয়া-৩০, আল্লাহ বলেছেন, সবকিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে……
অথচ, মাত্র ১৯ শতকে জীবকোষের সাইটোপ্লাজমে যে ৮০-৮৫ ভাগ পানি তা প্রমানিত হয়েছে।
এমনিভাবে, এনাটমি, এস্ট্রনমি, এমব্রায়োলজি, এটমোস্ফিয়ার, জলাশয়, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইত্যাদি ছাড়াও আরো নানান বিষয়ে কোরানে বর্ননা এসেছে যেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর এখনও সঠিক অর্থ আবিস্কার করাই সম্ভব হয়নি।
এ সমস্ত বৈজ্ঞানিক তত্ব ও তথ্য, ঐতিহাসিক বর্ননা এবং ভবিষ্যত বানী যা পরবর্তিতে বাস্তবায়িত হয়েছে বিশ্লেষনে এটাই প্রমানিত হয় যে কোরানই একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে আসা অবিকৃত সত্য তথ্য বা জ্ঞান।
এবার আমরা দেখব, কোরআন কি ও কিভাবে আল্লাহ এটা শিখয়েছেন।
সুরা জাসিয়া-২০ এ আল্লাহ বলেছেন, এটা(কোরআন) সকল মানুষের জন্য জ্ঞান আর বিস্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য পথ-নির্দেশ ও অনুগ্রহ।
সুরা বাকারা-২৬৯ এ আল্লাহ বলছেন, তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন……।
আল্লাহ কিভাবে মানুষকে জ্ঞান শিখিয়েছেন তার একটা উদাহরন দিয়েই এ লেখা শেষ করব।
সুরা বাকারা’র ৩১-৩২ নং আয়াতে আল্লাহ আদম(আঃ) কে কিছু নাম শেখালেন তারপর ফেরেশ্তাদের বলতে বললেন তারা বললেন আল্লাহ তুমি যা শিখিয়েছো এর বেশি তো আমরা কিছুই জানি না। তখন আদম(আঃ) কে বলতে বললেন………
এখানে, আজকে আমরা নোমেনক্লেচার, এইচ এস কোড আবিস্কার করেছি বস্তুকে চিনতে, আল্লাহ যদি এই নেমিং সিস্টমটা না শেখাতেন তাহলে আমরা কারো সম্পর্কে আলোচনা করতে হলে তাকে সামনে নিয়ে এসে আলোচনা করতে হত, যেমন ধরুন আমরা খেজুর গাছ সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই অথবা হাতি তাহলে খেজুর গাছ ও হাতি সামনে নিয়ে করতে হত।
এভাবে আল্লাহ তার নবী-রাসুল(আঃ)দের মাধ্যমে এ পৃথিবীর মানুষদের সত্য তথ্য পাঠিয়েছেন।
পাঠক, প্রথম গল্পে আনিসুল হক তথা বড় বড় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা ছাত্ররা আমরা কত ঠুনকো বিষয় নিয়ে গর্ব করছি। বুয়েটের সবচেয়ে লুক্রেটিভ সাবজেক্ট কি- ধরি কম্পিউটার সায়েন্স । কম্পিউটার সায়েন্সের একটি ছাত্র একটি কম্পিউটারের কতটুকু জানে? আবার সারা পৃথিবীতে কম্পিউটারের মত কত সহস্র ডিভাইস আছে সেগুলো সম্পর্কে সে কি জানে?
নিশ্চয়ই কম্পিউটার সম্পর্কে খুবই অল্প কিছু এগুলো যারা আবিস্কার করেছে তাদের তুলনায়, অবশ্য সাধারন মানুষের তুলনায় অনেক কিছু। অন্যদিকে অন্য কোন ডিভাইস সম্পর্কে কিছুই জানে না যেমন এরোপ্লেন, স্যাটেলাইট, স্মার্ট ফোন, ক্যামেরা ইত্যাদি।
তাহলে কি তার অহংকারের কোন সুযোগ আছে।
স্কুল ছেড়ে চলে আসা এডিসনদের ইলেক্ট্রিক লাইট জ্বালিয়ে আমরা সুখে স্বাচ্ছন্দে জীবন উপভোগ করতে করতে কয়েকটা যোগ-বিয়োগ করে হয়ে যাচ্ছি জ্ঞানী তাহলে এডিসন এ জ্ঞান পেল কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে?
অশিক্ষিত নজরুলের লেখা গল্প-কবিতার উপরে পিএইচডি করে আমরা হয়ে যাচ্ছি জ্ঞানী তাহলে নজরুলকে এ জ্ঞান দিল কে?
বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যাওয়া স্টিভ জবস’দের আবিস্কারগুলো চালানো শিখে আমরা হয়ে যাচ্ছি জ্ঞানী ।
কি হাস্যকর গাড়ীর আবিস্কারকের চেয়ে গাড়ীর ড্রাইভারের জ্ঞান বেশী হয়ে গেল না?
আল্লাহর দেয়া জ্ঞান, বুদ্ধি, সুস্বাস্থ ও সক্ষমতা ব্যবহার করে আমরা কেউ হচ্ছি জ্ঞানী, কেউ হচ্ছি বিজ্ঞানী। আর আল্লাহর এই নেয়ামতটুকু পেয়ে কৃতজ্ঞ হয়ে মানুষের প্রতি নমনীয় না হয়ে হয়ে যাচ্ছি অহংকারী।
আমরা যারা তথাকথিত ভাল ছাত্র, ভাল স্কুল, কলেজ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছি, কিভাবে পেয়েছি, তাদের অহংকারের জায়গাটা কোথায়। আপনি/আমি বুদ্ধি হওয়ার পর দেখি আমরা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ছাত্র, যদি ভাল ছাত্র না হয়ে খারাপ ছাত্র হতাম, কি করার ছিল আপনার আমার। তাহলে ত অন্যান্য হারিয়ে যাওয়া ছাত্রদের নামের সাথে যোগ হত আমাদের নামটিও।
ভার্সিটির এক বন্ধুর কাজিনের কথা শুনেছিলাম, পড়তে পড়তে কেদে ফেলত তবুও একটা লাইনও নাকি মুখস্থ করতে পারত না।
ভাল ছাত্র হিসেবে পড়া বুঝে মুখস্থ করার ও সঠিক সময়ে সঠিকভাবে উপস্থাপন করার এই ক্ষমতাটুকু কে দিয়েছে?
আল্লহর এই অনুগ্রহটুকু নিয়ে আমরা কি স্বেচ্ছাচারী ও অহংকারী হয়ে পড়ছি।
নজরুল, এডিসন, লিউয়েন হুক, স্টিভ জবস’রা আমাদেরকে যা দিয়ে গেছেন তা যদি জ্ঞান হয় তবে সেটি তারা কিভাবে পেলেন?
এটি কি আল্লাহর অনুগ্রহ তথা দয়া ছাড়া আর কিছু?????????
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই কথাটিই প্রমানিত হয় যে, এই কোরআনই হল পৃথিবীতে জ্ঞানের একমাত্র সোর্স আর জ্ঞান হল-Nothing but a grace of Allah-আল্লাহর একটি অনুগ্রহ ছাড়া কিছুই নয়।
বিষয়: বিবিধ
৩৫২০ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এ জ্ঞান ও অবগতি ছাড়া মানুষ নিজে সঠিক পথে চলতে পারে না, অন্যকেও পথ দেখাতে পারে না এবং সমাজ পরিগঠনের জন্যে যথার্থ পথে কোন কাজ করতেও সক্ষম হয় না।
Keep it up
আমি আরেকটু বিস্তৃতভাবে দেখেছি, যাতে সামগ্রিকভাবে ও সার্বজনীনভাবে সব মানুষকে বোঝানো যায় তথা সব ধর্ম ও বিশ্বসের মানুষ। সকলে কি চোখে দেখে জ্ঞান কে।
ধন্যবাদ।
পিপীলিকা,
ধন্যবাদ.।.।.।.।.।।
মন্তব্যের জন্য
ধন্যবাদ.।.।।।
দোয়া চাই
ডঃ মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ প্রায়ই বলতেন শিক্ষার তিনটি আর রিডিং,রাইটিং,এরিথমেটিক এর সাথে যদি আরেকটি ছোট আর রিলিজিওন যুক্ত না থাকে তা হলে সেই শিক্ষিত ব্যাক্তি পরিনিত হয় একটি রাস্কেল এ।
বৃটিশ-ইহুদীদের ফাদে পড়ে আমরা জ্ঞানটাকে দুনিয়া আখেরাতে ভাগ করে মারাত্নক সর্বনাশ করেছি নিজেদের।
মন্তব্য করতে লগইন করুন