১৭ স্মার্ট নকলবাজ আটক ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায়
লিখেছেন লিখেছেন মোশারোফ ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০২:০৫:০০ দুপুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে আটক করা হয়েছে এক বিচারপতির কন্যাসহ সাত শিক্ষার্থীকে। তাদের নকল সরবরাহের জন্য আটক করা হয়েছে আরো তিনজনকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, অভিনব নকলবাজির কৌশল ও হোতাদের পরিচয়। শিক্ষার্থীদের অনেকে দুই-তিন লাখ টাকায় চুক্তি করেছিল নকল সরবরাহকারীদের সঙ্গে। শিক্ষার্থীরা স্মার্টফোন দিয়ে প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে অথবা সেট কোড লিখে পাঠিয়ে দিয়েছিল বাইরে। এরপর দ্রুত সব প্রশ্নের উত্তর লেখা খুদেবার্তা (এসএমএস) চলে আসে শিক্ষার্থীদের কাছে। পরীক্ষার খাতায় তা দেখে পূরণের সময় হাতেনাতে ধরা হয়েছে সাতজনকে। তাদের মোবাইল ফোন চেক করেও মিলেছে প্রমাণ। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে উত্তর সরবরাহকারীদের তিনজনকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে আটক করেছে। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের বিভিন্ন কেন্দ্রে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সময় আটক করা হয়েছে আরো সাত শিক্ষার্থীকে।
সূত্র জানিয়েছে, শেখ বোরহানুদ্দিন কলেজ কেন্দ্র থেকে সানজানা বিনতে বশির, বদরুন্নেসা কলেজ কেন্দ্র থেকে ফয়সাল কবির, আজিমপুর অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে আহাদুর রহমান, ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজ থেকে আরিফুল ইসলাম, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্র থেকে নুরুল আফসার, আজিমপুরের গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ কেন্দ্র থেকে মেহেদী হাসান ও এরশাদ হককে আটক করা হয়। এ ছাড়া কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করা সাগর হোসেনের কাগজপত্র জব্দ করা হলেও সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। নকল সরবরাহের দায়ে আটক করা হয়েছে মামুন, শান্ত ও ইমরান নামের তিনজনকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলীর উপস্থিতিতে পুলিশ বিকেলে লালবাগের গনি মিয়া গলির ৩৮/৫/বি নম্বর বাড়ির সাততলা থেকে ওই তিনজনকে আটক করে। এই সময় তারা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় উত্তর সরবরাহ করছিল। এ ছাড়া তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ, ট্যাব ও তিনটি স্মার্ট মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘প্রতিবছরই ভর্তি পরীক্ষার সময় অসুদপায় অবলম্বনকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে অনুযায়ী আমরা বাড়তি সতর্কতা নিয়েছি।’ আটক এক ছাত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যতদূর শুনেছি মুচলেকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রক্টর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় কোনো ধরনের ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে প্রবেশের অনুমতি না থাকলেও আটককৃতরা লুকিয়ে মোবাইল ফোনসেট নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করে। পরে জালিয়াতচক্রের সঙ্গে চুক্তিমাফিক সেট কোড পাঠানোর পর এসএমএসের মাধ্যমে তাদের কাছে উত্তর আসে। এসএসএস দেখে ওএমআর শিট পূরণ করার সময় শিক্ষকরা তাদের মোবাইল ফোনসেটসহ আটক করেন। তাদের শাহবাগ, লালবাগ, চকবাজার ও নিউ মার্কেট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, আটককৃতদের মধ্যে সানজানা বিনতে বশির হাইকোর্টের বিচারপতি এ এন এম বশিরুল্লাহর মেয়ে। সানজানা জানিয়েছে, তিন লাখ টাকার বিনিময়ে সে ভর্তি পরীক্ষার উত্তরপত্র পেতে চুক্তি করেছিল ইউনিএইড (কিরন-কবির-সুমন) নামের কোচিং সেন্টারের শিক্ষক ও অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ইভিনিং এমবিএর ছাত্র মোহাম্মদ আবদুল্লাহর (০১৮১৯২২১৬৩০) সঙ্গে। চুক্তিমতো আবদুল্লাহ শুক্রবার সকালে অন্য একজন ব্যক্তির ফোন নম্বর (০১৬৭২৪৫৮৪৯২) দিয়ে যোগাযোগ রাখতে বলে। পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগেও তার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। সে কোনো রকম ভয় না করে লুকিয়ে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা হলে ঢুকতে এবং প্রশ্নের সেট কোর্ড জানাতে বলে। তার কথামতো প্রশ্ন পাওয়ার পরপরই ‘সেট কোড’ পাঠিয়ে দিলে কয়েক মিনিট পর পুরো প্রশ্নপত্রের উত্তর এসএমএসের মাধ্যমে চলে আসে। তা দেখে লেখার সময় দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষক তাকে আটক করেন।
এদিকে সানজানাকে আটক করার পর ব্যবসায় প্রশাসনের ডিন অফিসে নিয়ে যোগাযোগ করা হয় সৌদি আরবে হজ পালনের জন্য অবস্থান করা বিচারপতি বশিরুল্লাহর সঙ্গে। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষকদের বলেন। এরপর সানজানাকে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া প্রাইভেট গাড়িতে করে নিয়ে যান শাহবাগ থানায়। অন্যদের পুলিশের গাড়িতে করে নেওয়া হয় থানায়। সেখান থেকে সানজানাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অন্যদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করলে আটকৃতদের সে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আমজাদ আলী বলেন, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উত্তর আদান-প্রদানের সময় সাতজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসেট, অতিরিক্ত সিম, প্রবেশপত্র, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড জব্দ করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছে, ইউসিসি, ইউনিএইড (কিরন-কবির-সুমন) ও প্যারাগন কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের সহায়তায় তারা এই জালিয়াতি করছিল। তাদের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও আটক সাত : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে সাত শিক্ষার্থীকে আটক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে তাদের আটক করা হয়। সূত্র জানায়, বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ২২টি কেন্দ্রে ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে মুঠোফোনে এসএমএসে উত্তর সরবরাহ করার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে সাত শিক্ষার্থীকে আটক করেন শিক্ষকরা। পরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক শিক্ষার্থীরা হলো- প্রীতম চন্দ্র দাস (রোল-১৩১৬৪৭০), রাজন আহমেদ (রোল-১৩১৬৮৩০), মো. ইফসুফ ভুঁইয়া (রোল-১৩১৫৭৮০), আশিকুজ্জামান (রোল-১৩১৫৯৫০), আবুল হাশেম (রোল-১৩১১৩২৯), ইমরান হাসান (রোল-১৩১১৩১০) ও দীপু চন্দ্র রায় (রোল-১৩১০৯৫৬)।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, আটক শিক্ষার্থীদের কোতোয়ালি থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৪০৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
২০১৪-১৫ এর অনার্সে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে !!! রেজাল্ট না গত মাসের ১৩ তারিখে দিয়েছিল !? পুরাই মাথা নষ্ট । পোলাপান পড়াশুনার সুযোগ না পেলে তো এ কাজই করবে ।
আর মাত্র কয়েকদিন পরে ছাত্রলীগ দলীয় কোটার জন্য ৬৫% শতাংশ সিট আবদার করবে। তখন টাকা কড়ি তাদের হাতে দিলেই তো সব ঠ্যালা চুকে যেত। প্রতিবছর তো এভাবেই কত গাধা ছাত্রকে ঢুকিয়ে গরু বানিয়ে বাহির করা হয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন