জেনে নিন জম জম কুপের অজানা তথ্য
লিখেছেন লিখেছেন মোশারোফ ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:২৮:৪৪ দুপুর
এক্সক্লুসিভ ডেস্ক : ষাটের দশকের কথা। তখন ছিল বাদশাহ্ খালেদের শাসনামল। ওই সময় আধুনিক যন্ত্রপাতির দিয়ে পরিষ্কার কারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল জম জম কুপটি। জম জম কুপটি পরিষ্কারের কাজ তত্বাবধান করেন প্রকৌশলী ইয়াহইয়া কোশক।
ইয়াহইয়া কোশকের প্রদত্ত বিবরণ থেকে বলা যায়, বড় ধরনের কয়েকটি পাথরের তলদেশ থেকে প্রবল বেগে পানি উৎসারিত হচ্ছে। সবচাইতে বড় পাথরের চাঙ্গটির উপর স্পষ্ট আরবী হরফে ’বি-ইসমিল্লাহ্ কথাটি উৎকলিত রয়েছে। আবদুল মুত্তালিব আলাইহি সালাম’র সময় কুপের গভীরতা ছিল মাত্র ১৪ ফুট। খলিফা মামুনুর রশীদের আমলে পুনরায় খনন করা হয় এই জম জম কুপ। এ সময় পানির নিঃসরণ খুব বেড়ে গিয়েছিল। এমনকি কুপের বাইরে উপচে পড়া শুরু করেছিল। দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী পর সৌদি সরকার আধুনিক মেশিনের সাহায্যে কুপকে পুনঃখনন করেন।২৪ জন ডুবুরি কুপের তলদেশে গিয়েছিলেন তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। ডুবুরিরা দেখেন, সেখানে রং-বেরংয়ের মাটির স্তর জমাট বেঁধে আছে, আর অবিরাম নির্গত পানিকে পরিশোধন করছে। তারা আল্লাহর এ কুদরত দেখে বিস্মিত হয়ে যান। বর্তমানে জম জম কুপের গভীরতা ৫১ ফুট।
একটি বিবরণ থেকে জানা যায়, জম জম কুপটি এর মুখ থেকে ৩০ মিটার গভীর। এই কুপরে মাটি তিন স্তর বিশিষ্ট প্রথম স্তর ১৩.৫ মিটার সচ্ছ সাদা পলি মাটিদিয়ে গঠিত যাকে ওদী ইব্রাহীমের পলি বলে। এর পর ০.৫ মিটার ছিদ্রযুক্ত কালোপাথর Permeable Weathered rock দ্বারা গঠিত। এর পর ১৭ মিটার একপ্রকার ধুসর রংএর Diorite Bedrock নামে পাথর দ্বারা গঠিত। কুপটির মুখ থেকে ১২.৮০ মিটার পর্যন্ত ইগনোরাস পাথরের দেয়াল আগ্নয়গীরির লাভা জমে শক্ত হয়ে যে পাথর তৈরী হয় দিয়ে তৈরী। এপাথর সম্ববত আনেক দুরথেকে বয়ে আনা হয়েছিল। জম জম কুপের দেয়াল তৈরীতে যে পাথর ব্যবহা করা হয়েছিল তা খুব বিরল। পৃথিবীর একমাত্র জাভা এলাকায় এ ধরনের পাথর দেখা য়ায়।
জম জম কুপ মুখ হতে নিচ পর্যন্ত ১.৪৬ থেকে ২.৬৬ মিটার ব্যাস। ৫ পানির উৎসের বিভিন্ন মতঃ একটি মত হচ্ছে জম জম কুপটি যেখানে আবস্থিত তা থেকে আশে পাশের এলকা উচু। মোটামুটি জম জম ও তার আশেপাশের আংশটি ৬০ কিল। এই বির্স্তন এলাকায় যে বৃষ্টি হয় তা অত্রঅন্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের কারনে জমজম কুপে পানি আশে। কিন্তু এ মতটি সঠিক নয় কারণ মক্কা শরীফ ও তার আশে পাশের এলাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমান এতকম যে এদ্বারা জমজম কুপে এত পানি আশার কোন কারণ নেই।
দ্বিতীয় মত হচ্ছে লহিত সাগরের পানি দ্বারা জম জম কুপ সবসময় পানি থাকে। কিন্তু ভৌগলিক ভাবে এর কোন সত্যতা নেই।এই সর্ম্পকে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
তৃত্বীয় মত হচ্ছে জমজম কুপের তিন দিকে তিনটি পাথর আছে পূর্বে তিনটি ঘোড়ার খুর/জুতা নামে বলা হত। একরধ্যে বাইতুল্লা বা কাবা ঘরের নিকটে একটি কালো পাথর আছে যে পাথরটি চউড়া ৭৫ সেঃ মিঃ উচ্চতা ৩০ সেঃ মিঃ তার নিচ হতে পানির উৎসের একটি ধারা আন্য দুটি উৎসের মধ্যে এক হল কোবাইস ও জাবাল থেকে অন্যটি হল সাফা ও মারোয়া থেকে।
তবে সাম্প্রতিক কালে এই উৎস মোট ২১টি আবিষ্কৃত হয়েছে। ৬ জম জম কুপ থেকে প্রতিনিয়ত সেকেন্ডে ১১ থেকে ১৮.৫ লিটার বা ৬৬০ লিটার প্রতি মিনিটে অথবা ঘন্টায় ৪০,০০০ লিটার পানি উত্তলন করা হচ্ছে। তার মানে হচ্ছে প্রচুর পানি উত্তলিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। তিনটি পাইপ দিয়ে একুপথেকে পানি উত্তলন করা হচ্ছে। উপরে গোল সাদা বৃত্তরে নিচে জম জম কুপ আবস্হিত। এর পানি উত্তলনের জন্য ব্যবহৃত পানির মটর। ছবি দেখুনঃ সেকেন্ড ৮০০০ লিটার বেগে ২৪ ঘন্টার ও বেশী সময় ধরে জম জম কুপ থেকে পানি উত্তলন করে এর ৩:২৩ মিটার থেকে ১২:৭২ মিটার পর্যন্ত পানির লেয়ার নামানো সম্ভব হয়। এর পর যখন এর লেয়ার ১৩:৩৯ মিটার পর্যন্ত নামে তার পর পাম্প বন্ধকরে দেয়াহয় অতঃপর ৩:৯ মিটার পর্যন্ত পানির উচ্চতা বারতে মাত্র ১১ মিনিট সময় লাগেসুবাহান আল্লাহ। সউদী সরকার ১৪১৫ হিজরী ১৯৯৪ ইসাঈ সনে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সরুখাল খনন করে জম জম এর পানি ধারণ করতে একটি ১৫,০০০ কিউবিক মিটার পানির ট্যাংক তৈরি যাথেকে হাজী ও দর্শনাথীদের জন্য পানি সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া এ পানি বাদশার দরবারে সরবরাহ করা হয়। জম জম কুপের পানি আল্লাহর রহমতস্বরুপ। শিশু হজরত ইসমাইল ও তার মা’কে যখন আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আঃ ) নির্জন মরুভুমিতে পরিত্যাগ করেন। তখন তার পায়ের আঘাতে জমজম কুপের উৎপত্তি হয়।মা হাজেরা কুপের চারপাশে চারটি পাথর দিয়ে সিমানা দিয়ে দেন তা না হলে সারা পৃথিবীতে জমজম কুপ ছড়িয়ে পড়ত।
জমজম কুপের পানি অনেক রোগ নিরাময় করে। যারা হজ্জ করতে যানা তারা বোতলে ভরে জম জম কুপের পানি নিয়ে আসেন। এত মানুষ খায় তবু পানির ফোটা পরিমান ও শেষ হয় না।এভাবে আল্লাহ তার বান্দার জন্য ঐশীবানী নিদর্শন রেখেছেন।
এক নজরে জম জম কুপের তথ্যগুলো-
১) আল্লাহ তা’লার অসীম কুদরতে ৪০০০ বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছিল।
২) ভারী মোটরের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার পানি উত্তোলন করার পরও পানি ঠিক সৃষ্টির সূচনাকালের ন্যায়।
৩) পানির স্বাদ পরিবর্তন হয়নি, জন্মায়নি কোন ছত্রাক বা শৈবাল।
৪) সারাদিন পানি উত্তোলন শেষে, মাত্র ১১ মিনিটেই আবার পূর্ণ হয়ে যায় কূপটি।
৫) এই কূপের পানি কখনও শুকায়নি, সৃষ্টির পর থেকে একই রকম আছে এর পানি প্রবাহ, এমনকি হজ্ব মউসুমে ব্যবহার ক’য়েক গুন বেড়ে যাওয়া সত্বেও এই পানির স্তর কখনও নিচে নামে না।
৬) সৃষ্টির পর থেকে এর গুনাগুন, স্বাদ ও এর মধ্যে বিভিন্ন উপাদান একই পরিমানে আছে।
৮) এই কূপের পানির মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সল্ট এর পরিমান অন্যান্য পানির থেকে বেশী, এজন্য এই পানি শুধু পিপাসা মেটায় তা না, এই পানি ক্ষুধাও নিবারণ করে।
৯) এই পানিতে ফ্লুরাইডের পরিমান বেশী থাকার কারণে এতে কোন জীবানু জন্মায় না ।
১০) এই পানি পান করলে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই পর্যন্ত পড়ে আর পড়তে পারলাম না।
অতিসত্তর জবাব দিবেন,এটা লিখার কারণ কি?
জম জম কুপের পানি আল্লাহর রহমতস্বরুপ। শিশু হজরত ইসমাইল ও তার মা’কে যখন আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আঃ ) নির্জন মরুভুমিতে পরিত্যাগ করেন। তখন তার পায়ের আঘাতে জমজম কুপের উৎপত্তি হয়।মা হাজেরা কুপের চারপাশে চারটি পাথর দিয়ে সিমানা দিয়ে দেন তা না হলে সারা পৃথিবীতে জমজম কুপ ছড়িয়ে পড়ত।
এই তথ্যটা কোথায় পেলেন তা জানাবেন প্লিজ। আমার জানা মতে এই জমজম পানির নহরটি হয়েছিলো ঈশা (আ) এর মা মরিয়মের জন্য। আপনার বিশ্বাস হয়? যদি না হয় তাহলে চলুন কোরআনের সেই আয়াতগুলো দেখি।
সূরা মারইয়াম ১৯:২২-২৬ আয়াত
فَحَمَلَتْهُ فَانتَبَذَتْ بِهِ مَكَانًا قَصِيًّا (22
অতঃপর তিনি গর্ভে সন্তান ধারণ করলেন এবং তৎসহ এক দূরবর্তী স্থানে চলে গেলেন।
فَأَجَاءهَا الْمَخَاضُ إِلَى جِذْعِ النَّخْلَةِ قَالَتْ يَا لَيْتَنِي مِتُّ قَبْلَ هَذَا وَكُنتُ نَسْيًا مَّنسِيًّا (23
প্রসব বেদনা তাঁকে এক খেজুর বৃক্ষ-মূলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করল। তিনি বললেনঃ হায়, আমি যদি কোনরূপে এর পূর্বে মরে যেতাম এবং মানুষের স্মৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে, যেতাম!
فَنَادَاهَا مِن تَحْتِهَا أَلَّا تَحْزَنِي قَدْ جَعَلَ رَبُّكِ تَحْتَكِ سَرِيًّا (24
অতঃপর ফেরেশতা তাকে নিম্নদিক থেকে আওয়ায দিলেন যে, তুমি দুঃখ করো না। তোমার পালনকর্তা তোমার পায়ের তলায় একটি নহর জারি করেছেন।
وَهُزِّي إِلَيْكِ بِجِذْعِ النَّخْلَةِ تُسَاقِطْ عَلَيْكِ رُطَبًا جَنِيًّا (25
আর তুমি নিজের দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও, তা থেকে তোমার উপর সুপক্ক খেজুর পতিত হবে।
فَكُلِي وَاشْرَبِي وَقَرِّي عَيْنًا فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ الْبَشَرِ أَحَدًا فَقُولِي إِنِّي نَذَرْتُ لِلرَّحْمَنِ صَوْمًا فَلَنْ أُكَلِّمَ الْيَوْمَ إِنسِيًّا (26
যখন আহার কর, পান কর এবং চক্ষু শীতল কর। যদি মানুষের মধ্যে কাউকে তুমি দেখ, তবে বলে দিওঃ আমি আল্লাহর উদ্দেশে রোযা মানত করছি। সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না।
আমার ধারনা ভুলও হতে পারে তবে আপনার রেফারেন্স দিবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন