আমাকে কেউ এখন পাত্তা দেয় না: অাকবর
লিখেছেন লিখেছেন মোশারোফ ২৮ আগস্ট, ২০১৪, ০৩:০৭:০৩ দুপুর
বিনোদন ডেস্ক :: ভাগ্যগুণে ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে রিকশাওয়ালা থেকে রাতারাতি তারকা বনে গিয়েছিলেন অাকবর। আর হানিফ সংকেতের কল্যাণে ওই সময় প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো পেয়েছিলেন তিনি। যা ছিল তার কাছে আলাদিনের চেরাগের দৈত্যের মতো। সেই অাকবর নাকি এখন কারোর কাছে পাত্তাই পাচ্ছেন না! আরও পড়ুন এ প্রতিবেদনে। লিখেছেন-এসএস খান
মেঘ-রোদের খেলা। দুপুর তখন ১২টা। মিরপুরের পীরেরবাগ এলাকার ছাপরা মসজিদের পাশে কাঁচা বাজারের আনন্দ সুইটসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। অার মনে মনে ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে আমার প্রাণ জুড়িয়ে আসে…’ গানটি নিজে নিজেই স্মরণ করতে চেষ্টা করছি। ভাবছি এ গানটির কণ্ঠশিল্পী আকবরের কথাও। তার এখানেই অাসার কথা। অার ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর দেখা মিলল আকবরের। আনন্দ সুইটসের ভেতর থেকে হাত নাড়লেন তিনি। পরিপাটিভাবে সাজগোজ করে এসেছেন। চেষ্টা করেছেন রিকশাওয়ালার ছাপটা দূরে সরাতে। কুশল বিনিময় শেষ করে বসে পড়লাম তার সঙ্গে। হোটেলে ভীড় বেশি থাকায় একটু নিরিবিলি জায়গা খুঁজতে থাকলাম। আকবর বললেন, ” চলেন, আমার বাসাতে গিয়েই কথা বলি।”মিষ্টির দোকানটির এক পাশ দিয়ে একটি সিঁড়ি। সেটি ডিঙিয়ে উপরে উঠে এলাম আমরা। ভবনটার দোতলায় একটা ছোট্ট ফ্ল্যাট। এখানেই স্ত্রী আর সন্তান নিয়ে থাকেন আকবর।
জানতে চাওয়া হয়- দীর্ঘদিন আপনার কোনও খোঁজখবর নেই। কারণ কী? কী করছেন এখন? “কিছুই করছি না। টুকটাক স্টেজ শো করি। বেশির ভাগ সময় বাসায় থাকি। অার দীর্ঘদিন না দেখার কারণ আমি আসলে একটা ভুল করেছি। এমন একটা ভুল করেছি, যার কারণেই আমাকে কেউ এখন পাত্তা দেয় না! ডাকেও না।” তার কণ্ঠে অন্যরকম অনুশোচনা।
কোন ধরনের ভুল- যে কারণে আকবর এখন বেকার? প্রশ্ন করতেই অাকবর যেন খানিকটা ভাবনায় পড়লেন। “এটা অামার দ্বিতীয় সংসার।” জানালেন, দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই তার পৃষ্ঠপোষকরা কেউ এখন আর ডাকে না। ওদিকে নিজের টাকায় অ্যালবাম বের করার সামর্থও নেই তার। অার দ্বিতীয় বিয়ে করেন ২০০৭ সালে। গ্রামের বাড়িতে এখনও তার প্রথম স্ত্রী দুটি সন্তান নিয়ে অাছেন। মাঝে মাঝে টাকা পাঠান। প্রথম স্ত্রীর দুই সন্তান নিয়ে বললেন, “দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে পড়ালেখা করলেও আরেকটা হয়েছে বাউণ্ডুলে।”তাহলে কীভাবে চলছে সংসার? কোথায় থেকে জোগাড় করেন ফ্ল্যাটের ভাড়া? জানালেন দ্বিতীয় স্ত্রীর উপার্জিত টাকা আর মাঝে মাঝে স্টেজ শো করে যা পান, তা দিয়েই চলছে তার সংসার। কথা প্রসঙ্গে আকবর জানালেন, কণ্ঠশিল্পী মনির খান একবার তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন গানের পাশাপাশি কিছু একটা করতে। কিন্তু পড়ালেখা না থাকায় তার পক্ষে কোনও কিছুই করা সম্ভব হয়নি। তবে গান গাওয়ার মধ্য দিয়ে একবার পরিচয় হয়েছিল এক গার্মেন্ট মালিকের সঙ্গে। সেই মালিকের কাছেই স্ত্রীকে নিয়ে যান চাকরির জন্য। এভাবে মিলে যায় দ্বিতীয় স্ত্রীর চাকরি। এখন স্ত্রীর আয়ের উপরই নির্ভর।
অাকবরকে তুলে এনেছিলেন জনপ্রিয় উপস্থাপক-নির্মাতা হানিফ সংকেত। দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনার পর থেকে তার সঙ্গেও তৈরি হয়েছে দূরত্ব। সঙ্গে অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। “কী বলব ভাই, অামি নিজের কাছে নিজেকেই দোষী মনে করছি…।” বললেন অাকবর।
পুরনো চ্যাপ্টার থেকে জানান, ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমে কণ্ঠশিল্পী বনে যাওয়ার পর প্রায় ৫০ লাখ টাকা পান আকবর। একজন রিকশাওয়ালার জন্য যা ছিল স্বপ্নের মতো। এত টাকা কি করেছিলেন? প্রশ্ন করতেই খানিকটা হাসলেন তিনি। বললেন, “বসে খেলে রাজার ভাণ্ডারও ফুরিয়ে যায়। আর আমি তো সামান্য একজন মানুষ। হিসেব করে চলতে পারি নাই। এছাড়া আমার পুরো পরিবারটা ছিল ক্ষুধার্ত এক পরিবার। ভাই-বোন সবাই তখন আমার কাছে এসে সাহায্য চাইত। সাধ্যমতো সবাইকে সাহায্য করেছি। ভেবেছি টাকা যখন আসা শুরু করেছে, তখন ভবিষ্যতেও টাকা আসবে। কিন্তু এভাবে সব আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাবে তা কখনও ভাবিনি।”
আকবর জানান, বিদেশের মাটিতে কয়েকটা স্টেজ শো করতে পারলেই আবারো ঘুরে দাঁড়াবেন তিনি। অাকুতি করে বললেন, “চাই আরও একটি সুযোগ। আরেকবারের মতো সাপোর্ট। আমাকে আরেকবার সবাই দয়া করেন।”
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন